স্নিগ্ধবিষ পর্ব ৭

স্নিগ্ধবিষ পর্ব ৭
সানজিদা আক্তার মুন্নী

নাজহার গলায় হাত রাখে তৌসির, ওকে ধাক্কা দিয়ে দেয়ালের সাথে ঠেসে ধরে। নাজহার পিঠ ঠেকে গিয়ে দেয়ালে নাজহা বেশ ব্যথা পায়, এতে চোখ কুঁচকে নেয় কষ্টে। তৌসিরের মস্তিষ্ক চায় ওকে জানে মেরে দিতে, কিন্তু মন চায় না; মন বারংবার বাঁধা দেয়। নাজহার একদম মুখোমুখি হয়ে নাজহার কালচে সবুজ নয়নের ন্যায় কঠোর চোখে চেয়ে বলে, “দিতাম গলা টিপে? সাউয়া ফাইরা নিতাম?”
নাজহা জানে তৌসির ওকে মারবে না। কেন জানি একটা আলাদা বিশ্বাস আছে মনে, যে তৌসির ওকে কিছু করবে না। আর করলেও নাজহার ভয় লাগছে না। তাই শান্ত চোখে তৌসিরের চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে বলে, “আপনার মর্যির উপর নির্ভর করে!”

তৌসির নাজহার কথায় কিছু সময় চেষ্টা করে নিজের রাগ দমাতে কিন্তু পারে না। শরীর জ্বলছে রাগে, তাই গলা টিপে ধরেই নেয়। নাজহার গলা চেপে ধরে বলে, “তোর এত সাহস! আজ সাহস বের করে নিমু।”
নাজহা শ্বাস ফেলতে পারছে না, যন্ত্রণায় নিজের সবটুকু শক্তি দিয়ে তৌসিরের হাত চেপে ধরে নিজের দুই হাত দিয়ে যাতে তৌসির ওকে ছেড়ে দেয়। গলা ফেটে যাচ্ছে, রগ মনে হয় বেরিয়ে আসছে ছিঁড়ে এমন অনুভূতি হচ্ছে। তৌসির নাজহার এমন অবস্থা দেখে নিজের রাগ দমন করে নেয়। নাজহার গলা ছেড়ে দেয় আর রুক্ষ গলায় বলে, “যদি বউ না হতি তাইলে আইজ তোরে এনে কবর দিয়া দিতাম লো মাগি।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

নাজহা ছাড়া পেয়ে মাথা ঝুঁকিয়ে গলায় হাত ধরে সমানতালে কাশতে থাকে। চোখ লাল হয়ে গেছে, বুক ধড়ফড় করছে যন্ত্রণায়। নাজহাকে এমন করতে দেখে তৌসির হাত বাড়িয়ে ওকে এক টানে কোলে তুলে নেয়। নাজহা সাথে সাথে ধস্তাধস্তি করতে শুরু করে এতে, আর চিৎকার করে বলে, “আমায় ছাড়ুন বলছি, ছুবেন না আমায়!”
তৌসির নাজহার কথায় কর্ণপাত না করে ওকে বিছানায় নিয়ে বসায়, ওকে এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে গ্লাস ঠোঁটে ঠেকিয়ে ধরতে ধরতে বলে, “আমার বউ হইয়া আমার লগে গাদ্দারি করবি তো এমনেই মরবি, জানুয়ারনি।”
নাজহা পানি খায় না, উল্টো রাগে তৌসিরের হাত থেকে গ্লাসটা নিয়ে ফ্লোরে সজোরে ছুঁড়ে মারে আর বিষভরা নয়নে তৌসিরের ন্যায় তাকিয়ে বলে, “আমি খাব না পানি, প্রয়োজন নেই এসবের।”
তৌসির নাজহার কথায় ওর দিকে একটু ঝুঁকে গিয়ে দাঁত চেপে বলে, “তোমার সাউয়ার এই ঝল থাপড়াইয়া নামামু আমি।”

নাজহা তৌসিরের কথায় ওর দিকে রক্তচোখে চেয়ে রয় কিছু সময়, তারপর হিংস্র বাঘীনির মতো তৌসিরের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে চিৎকার করে বলে, “আজ ফ্লাশ করেছি, না? আর যদি পাই তো ডিরেক্ট পুলিশের কাছে দিব, আমি আপনায় যতক্ষণ না ক্ষয় করব, ততক্ষণ শান্ত হবো না, মনে রাখবেন!”
তৌসির নাজহার সাহস দেখে হতবাক হয়ে চেয়ে রয় ওর পানে। তৌসিরের কলার ধরেছে কত্ত বড় সাহস! তৌসির এক পলক নাজহার দিকে তাকায়, তারপর আবার কলারের দিকে তাকিয়ে বলে, “কলার ছাড়, সাউয়ার মাইয়া!”
নাজহা তৌসিরের কথায় নিজের হাতের দিকে তাকায়, তারপর নিজের শরীরের যত শক্তি আছে তা প্রয়োগ করে দুই হাতে চেপে ধরে তৌসিরের কলার ছিঁড়ে নেয় কিছুটা আর হুংকার দিয়ে বলে, “ছাড়ব না, ছিঁড়ে নিবো।”
তৌসির নাজহার সাহস দেখে হতবাক। ও বাকরুদ্ধ হয়ে চেয়ে থাকে নাজহার পানে। কিছু মুহূর্ত রক্তচোখে চেয়ে নাজহার থুতনি চেপে ধরে বলে, “তোর সাহস বেশি বেরে গেছে, ডাকাইতের বাচ্চা।”
নাজহা নিজের থেকে তৌসিরের হাত ঝারি মেরে সরিয়ে নিয়ে বলে, “আমার সাহস বারেওনি, কমেওনি ঠিকই আছে।”

“তুই কোন সাহসে আমার পাঞ্জাবি ছিড়লি?”
“নিজ সাহসে ছিড়েছি।”
তৌসির নাজহার কথায় এক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে ওর পানে, তবে নির্মল চোখে। মনে মনে ভাবে, “এই নাদানের বাচ্চার সাহস বেশি বেরে গেছে। এর একটা ব্যবস্থা করতে হইবো, নয়তো দুদিন পর আমার বুকের উপর উইঠা আযান দিবো।”

তৌসির ধীরে ধীরে নাজহার গালে হাত রাখে। নাজহা বেশ ঘাবড়ে যায় হঠাৎ তৌসিরকে এতটা শান্ত দেখে। তৌসির ওর এতটা কাছে আসছেই বা কেনো? মনে ভয়ের খোরাক জাগে। তৌসির নাজহাকে কিছু করতে যাবে, তখনই ওর চোখ যায় নাজহার গলায় লাল দাগ দেখতে পায় যেটি গলা চেপে ধরার জন্য হয়েছে। তৌসির এটা দেখে স্তব্ধ চোখে তাকিয়ে রয় নাজহার গলা পানে। ফর্সা ধবধবে ত্বকে আঙুলের চাপগুলো লাল দাগ হয়ে আলতো ভাসছে। এটা দেখে তৌসির আর কিছু না বলে নাজহার থেকে ছিটকে দূরে সরে যায়। বুকভরা অশান্তির শ্বাস ছেড়ে টাশ করে বিছানায় নাজহার পাশে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে, হাঁটুর নিচ অবধি পা বিছানার বাইরে ঝুলিয়ে রাখে। নাজহাকে একটুও কষ্ট দিতে চায় না ও। কারণ, যদি নাজহাকে কিছু করে আর নাজহা নিজের বাড়ির লোককে এসব বলে তবে ওরা তৌসিরের সাধাসিধা ফুফুকে শান্তিতে সংসার করতে দিবে না। তাই নিজেকে সংযত করতে হবে। তৌসির কসম খেয়েছে নিজের দাদাজানের কাছে যে ও নাজহাকে আগলে রাখবে। যদি ওয়াদায় আবদ্ধ না থাকতো, তাহলে এতদিনে নাজহার কবর খোঁড়া হয়ে যেতো বা শরীরের বিভিন্ন অংশ বের করে নিয়ে বেচে দিত। এখন কিছুই করতে পারবে না। ভেবেছিল, বউটা একটু নরম টাইপের হবে ও যা বলবে তাই শুনবে। কিন্তু হলো উল্টো এ তো বউ নামের শত্রু। তৌসির তো ভয়ে আছে, নাজহা না কবে ওকে ঘুমের মধ্যে কুপিয়ে নেয়। তৌসির সিলিং-এর দিকে এক দৃষ্টিতে চেয়ে এসব ভাবছে।

এদিকে নাজহার ঘেন্নায় গা ঘিনঘিন করছে কেন জানি। ও বসে আছে অগ্নিনয়নে ফ্লোরের ন্যায় তাকিয়ে। রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে দুই হাতে দাঁত চেপে বিছানার চাদর খাবলে ধরেছে। ফ্লোর থেকে চোখ তুলে আশেপাশে চোখ বুলায় একনজর। তখনই চোখে পড়ে তৌসিরকে। তৌসিরের লুঙ্গি হাঁটুর উপর উঠে গেছে। এতে ওর লোমযুক্ত ধবধবে ফর্সা পুরুষালি পা নাজহার চোখে স্পষ্ট। নাজহা ঘেন্নায় চোখ ফিরিয়ে নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে, “নির্লজ্জ!”
তৌসির নাজহার কথায় মেকি হেসে সিলিং-এর থেকে চোখ ফিরিয়ে নাজহার ন্যায় তাকায় কিছু সময়। চেয়ে আবারো দৃষ্টি নিবদ্ধ করে সিলিং-এর ওপর আর কটাক্ষ করে বলে, “বউয়ের সামনে লুঙ্গি না পড়লেও চলে, আমি তো পড়ে আছি। তাই আমি নির্লজ্জ না রে, গাদ্দারনি।”

গাদ্দারনি? কত বড় কথা! নাজহা চোখ বড় বড় করে তৌসিরের দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে শক্ত চোখে তাকিয়ে সংযমদৃপ্ত ভঙ্গিতে বলে, “আমি আপনার সাথে কি গাদ্দারি করেছি? এত বড় তকমা দিচ্ছেন?”
তৌসির দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে নাজহার দিকে ব্যঙ্গদৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে, “এই যে আমার কয়েক হাজার লস করাইলা!”
নাজহা নিজের অন্তর্জ্বালা দমন করে বলে, “ভালো করেছি। এটা যদি গাদ্দারি হয়, তবে আরো করব গাদ্দারি।”
তৌসির তুচ্ছতাচ্ছিল্যভরা গলায় বলে, “হ্যাঁ, তাতো করবি। তুই তো নোবেলপ্রাপ্ত গাদ্দার পরিবারের মাইয়া।”
“নিজের মুখ সামলে নিন, অতিরিক্ত বলছেন!”
“খাঁটি কথা কইতেই ছ্যাত লাইগা গেছে, সাউয়া?”

নাজহা এক লাফে উঠে বসে। রাগে শরীর ফাটছে, মন চাচ্ছে তৌসিরের বুকে এক টানা কুপ মারতে মারতে মারতে কলিজা ছিন্ন করে নিতে। এক গালাগালি, এক গালাগালি। নাজহা রাগ নিয়ে বেডের সাইডের কাবাডের উপর যে পানির জগ রাখাছিল সেটা হাতে নিয়ে কোনো কিছুর পরোয়া না করে তৌসিরের উপর ছুঁড়ে মারে। তৌসিরের উপর পানি পড়তেই ও হকচকিয়ে উঠে, এমনটা আশা করেনি এক ঝটকায় উঠে বসে।

এশার নামাজ শেষে গ্রামের বাজারের একটা টং দোকানে বসে আছেন তালহা ভাই। গায়ে জড়ানো ছাই রঙের একটা শার্ট আর সাথে জিন্সের প্যান্ট। চুলগুলো সবসময়ের মতোই এলোমেলো রূপ নিয়ে কপালে পড়েছে কিছুটা। এক হাতে এক পা গরম চা, আর অন্য হাতে জ্বলছে সিগারেট। এই দুই জিনিসই উনার আপন বর্তমানে আল্লাহ পরে। চায়ের রস এক ফোঁটা না হলেই না হয় চা গিলতে গেলে কম্পার হিসেবে সিগারেটও এক টান দেওয়া লাগে। সিগারেট টানতে টানতে কালচে দাগ পড়ে গেছে ঠোঁটে। উনি এসব খাচ্ছেন আর ভাবছেন একটা মিঠে অতীত নিয়ে আর তা হলো
নাজহার বয়স যখন চৌদ্দ, তালহা ভাই একদিন রাতে আকাশের ন্যায় তাকিয়ে আকাশ দেখছিলেন। তখন নাজহা উনার পাশে এসে দাঁড়িয়ে নিজের সমস্ত সাহস একত্র করে একখানা বাণী ক্ষীণ গলায় উচ্চারণ করেছিল

“তালহা ভাই, আমি আপনাকে পছন্দ করি।”
“আমি আপনাকে পছন্দ করি।” এই বাণী কর্ণগোচর হতেই তালহা ভাই স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলেন সেদিন। তবে তাঁর দৃষ্টি আকাশপানে নিবদ্ধ থেকেছিল। তালহা ভাইয়ের অন্তর উত্তালতায় ভরপুর হয়েছিল, এমন মহাবাণী তিনি তাঁর সুধাসঞ্চারিণীর মুখ থেকে শুনেছিলেন ঐ মুহূর্তে।
তালহা ভাই কথাটি শুনে মনে মনে আনন্দিত হলেও তা বাস্তবতার সঙ্গে মিলিয়ে নেননি সেদিন। তিনি জানতেন, নাজহা শুধুমাত্র আবেগের আবেশে এমন বাণী উচ্চারণ করেছে। সেদিন কিছু সময় চুপ থেকে তিনি ঘাড় ফিরিয়ে তাকিয়েছিলেন সুধাময় চোখে নিজের রুদ্রণীর পানে। তারপর ঠোঁট আগলিয়ে হেসে স্নিগ্ধ সুরে বলেছিলেন,
“আবেগ ঝেড়ে বিবেক দিয়ে ভাব। দেখবি, তোর ঝেড়ে ফেলা আবেগের সাথে এই তালহাও ঝরে যাবে তোর অন্তর হতে।”

তালহা ভাইয়ের উক্তি শুনে নাজহা অসহায় দৃষ্টিতে তাঁর দিকে চেয়েছিল। আজ কেন জানি সেই অসহায় মুখটা বারবার তালহা ভাইয়ের চোখের সামনে ভেসে ওঠছে। চোখ দিয়ে দু’ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো উনার। তালহা ভাই মানেই বাস্তবতার খোরাক। তালুকদার পরিবারের এত মারামারি এটা ওটা এসবে উনি নেই। উনি আলগোছে বাঁচেন বাবা থেকেও নেই, পরিবার থাকলেও তারা কখনো তালহা ভাই কেমন আছেন বা কী প্রয়োজন খুঁজ নেয়নি। নিজ মতো যেমন-তেমন করে বেঁচে আছেন। দাদীজান আর দাদাজান খেয়াল রাখেন যদিও। বাবার সাথে তালহা ভাই কথা বলেন না আজ বাইশ বছর ধরে। উনার মায়ের মৃত্যুর ত্রিশ দিন পরই উনার বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করেছিলেন। সেই অভিমানে আজও কথা বলেন না বাবার সাথে।

যদিও বাবা সবসময় চান কথা বলতে, কিন্তু তালহা ভাই কথা বলেন না। উনার অন্তরে ঘৃণা জন্ম নিয়েছে এই ভাবনা থেকে যে চল্লিশটা দিনও অপেক্ষা করতে পারলেন না উনার বাবা! এতটা কম ভালোবাসায় সংসার করছিলেন তাঁর মা? মা চলে যাওয়ার পর বাবাও পর হয়ে গেলেন। উনার আপন বলতে তিনি নাজহাকেই মনে করতেন। নাজহাই খেয়াল রাখত উনার, চা বানিয়ে দিত, বাইরে থেকে এলে পানি দিত। মা যেমন সন্তানকে আগলে রাখতেন, সেভাবেই নাজহা আগলে রাখত উনাকে। তাঁর কাপড় পর্যন্ত নাজহা ধুয়ে দিত, অনেক দিন উনার মুখে ভাত তুলেও দিয়েছে। খুব খেয়াল রাখত উনার। এই অগোছালো তালহা ভাইকে গোছানোর জন্য নাজহাই ছিল। কিন্তু আফসোস, তালহা ভাইয়ের এত আপন মানুষটাও উনার হয়ে থাকল না।
তালহা ভাই নিজেকে সামলে চারপাশে চোখ বুলান। চোখ দুটো লাল হয়ে আছে, তিন চারদিন ধরে ঠিক মতো ঘুম নেই বিধায়। এমন সময় চার-পাঁচটে ছেলে এসে তালহা ভাইয়ের পাশে বসে তাঁর দিকে একটা গিটার এগিয়ে দিয়ে একজন আবদার এঁটে বসে,

“তালহা ভাই, একটা গান।”
তালহা ভাই নীরব চোখে ওদের দিকে তাকান। উনার গানের গলা ভালো বিধায় গ্রামের প্রায় সবাই উনার গলায় গান শুনতে চায়। কি আর করা, ছোট ভাইদের আবদার। সিগারেটটা হাত থেকে ফেলে দিয়ে সবটুকু চা একবারে গিলে নিয়ে গিটারটা হাতে তুলে নিলেন। অতঃপর গিটারের তারে সুর তুললেন আহত গলায়,

তোমার আকাশ ধরার শখ,
আমার সমুদ্রের চোখ,
আমি কি আর দেবো বলো?
তোমার শুধুই ভালো হোক।
তোমার ভোলা ভালো হাসি,
আমার বুকের ভেতর ঝড়,
তুমি চলতি ট্রেনের হাওয়া,
আমি কাঁপি থরথর।
তোমার নানান বাহানায়,
আমার জায়গাটা কোথায়?
আমি কি এক ঘোরে থাকি?
ছিল কত কথা বাকি।
তোমার গোপন সবই রয়,
আমার আপন মনে হয়।
আমি ভোরের ঝরা পাতা,
আমার মরার কিসের ভয়!

এতটুকু গেয়ে তালহা ভাই থেমে যান। বুক টেনে শ্বাস নিতে পারছেন না, বড্ড কষ্ট হচ্ছে উনার। নাজহার মুখটা বারবার ভাসছে চোখের সামনে। নাজহার বলা “তালহা ভাই, মৃত্যুর আগ অবধি মনে থাকবে, আমার চোখের অসহায় পানিগুলোও আপনার মন গলাতে পারেনি।” এই কথাটা পুড়িয়ে খাচ্ছে তালহা ভাইয়ের অন্তর, কুঁড়ে নিচ্ছে নাজহাকে না পাওয়ার দহন। সবাই মন দিয়ে শুনছিল। হঠাৎ বন্ধ হওয়ায় সবাই স্তব্ধ হয়ে যায়। তালহা ভাই চোখ বুজে বুক ভরে শ্বাস নেন। চোখ বুজতেই নাজহার চাঁদমুখখানা আবারও ভেসে ওঠে। দহনে দগ্ধ হয়ে আবারও গেয়ে উঠেন,

তোমার নরম কাতর হাত,
আমার দিনের মতো রাত।
তুমি ঝিনুক কুড়াও যদি,
আমি হব শান্ত নদী।
আবারও থেমে যান তালহা ভাই। আর গাওয়া সম্ভব হচ্ছে না উনার পক্ষে। নাজহাকে বড্ড মনে পড়ছে, খুব বেশি মনে পড়ছে। উনার কানে ভাসছে সেই চার বছর আগে নাজহার বলা কথা “তালহা ভাই, আমি আপনাকে পছন্দ করি।” এটা মনে হলেই কলিজা ছিঁড়ে যায়, মনে হয় কেউ মনে হয় পুড়িয়ে দিচ্ছে।তালহা ভাই কিছু সময় চুপ থেকে আবারও জোর গলায় গেয়ে উঠেন,
আমার আসার সময় হলে,
তুমি হাত ফসকে গেলে।
তোমার যাওয়ার পায়তারা,
আমি হই যে দিশেহারা।
তুমি অন্য গ্রহের চাঁদ,
আমার একলা থাকার ছাঁদ।
তোমার ফেরার সম্ভাবনা,
অমাবস্যায় জোছনা।
তোমার গোপন সবই রয়,
আমার আপন মনে হয়।
আমি ভোরের ঝরা পাতা,
আমার মরার কিসের ভয়?

তৌসির, নাযেম চাচা, মিনহাজ মামা, তৌসিরের মেঝো চাচা তন্ময় চাচা সাথে আছে ওদের কিছু কাছের লোকজন: কেরামত আলী, নুহাম শাহ, রুদ্র দেওয়ান।
তৌসির নাজহাকে কিছু করেনি আর না কিছু বলেছে। নাজহা পানি মেরে চুপচাপ বেরিয়ে এসেছে রুম থেকে, কারণ নাজহার সামনে থাকলেই নাজহাকে আচড় মেরে ফেলতো। রাগ কন্ট্রোল করতে হবে, তাই কিছু বলেনি পরে প্রতিশোধ নেওয়া যাবে। তৌসির রাগ কমাতে এই আড্ডায় যোগ দিয়েছে।
তন্ময় চাচা সিগারেট টানতে টানতে বলেন,

“কি রে নটবর, তুই ভিজা ক্যান?”
তৌসির সোফায় হেলান দিয়ে বিরক্তির স্বরে বলে,
“আর কইও না, এক সাউয়া আইনা দিছো গলায় ঝুলাইয়া।”
মিনহাজ মামা ভুরু কুঁচকে বলেন,
“ক্যান, ও তোরে ভিজাইছে নাকি?”
“ভিজাইছে কি শুধু? ঐ আফ্রিকান মালের জন্য যে মাল রাখছি, ঐডাও দিছে বাথরুমের ট্যাংকিতে।”
তন্ময় চাচা এটা শুনে কটাক্ষ করে হেসে বলেন,
“আরে নতুন নতুন এমন করবো, বুঝাইস বাইচ্চা মাইয়াডা!”
নাযেম চাচা মদের গ্লাসে বরফ নিতে নিতে বলেন,
” বুঝাইস মাইয়াডারে। আর না বুঝলে জায়গায় জিন্দা গাইড়া নিস!”
তৌসির খাপছাড়া স্বরে উত্তর দেয়,
“এত সুন্দর বউ মাইরা নিতাম কস, পরে তোর মারে হাঙ্গা দিবি আমার কাছে?”
মিনহাজ মামা হেসে বলে,
“আমার মারে দিমু করবি? দাদীরে না কইরা নানিরে করলে লাভ হইবো ভালা!”
তৌসির তাচ্ছিল্যপূর্ণ স্বরে বলে,
“আমার আর কাউরে লাগতো না, আমি আমার নাদান বউরে নিয়াই বাচমু।”
তন্ময় চাচা হেসে বলেন,

“একজন বেডা মানুষের সবচেয়ে আপন তার বউ এই জগৎ সংসারে। বেচারি নিজের সব ছেড়ে নিঃস্বার্থে সারাটা জীবন কাটাইয়া তুমি দেয়। তাই বউরে কলিজার ভেতর লুকাইয়া রাইখো, নিজে না খেয়ে তাকে খাওয়াইও, ঘাড়ত্যাড়ামি করলে একটু বুঝাইও, তার হাতে দু-একটা মাইরও খাইও, তারপরও বউরে কষ্ট দিও না।”
তৌসির তন্ময় চাচার লেকচার শুনে তাচ্ছিল্যপূর্ণ স্বরে বলে,
“মেঝো চাচা, বউরে বেশি ফস দিতে নাই, এগুলো বাদ দাও কামের কথা কও!”
নাযেম চাচা বলেন,
“কি আর কামের কথা কমু, আইজ একটারে কুপাইছি ইচ্ছামত, কুপাইতে কুপাইতে ভেতরের সব কিছু ক্ষয় কইরা নিছি, তাই আর এর শরীরের কিছু বেচা যাইত না!”
তৌসির এটা শুনে কটাক্ষ করে বলে,

“বালের রাগ সামলাইতে পারো না? জানে মারলেই তো হয়, এমনে সব নষ্ট করার কি আছিলো?”
মিনহাজ মামা বিয়ারের বোতলে ঠোঁট লাগাতে লাগাতে বলেন,”আরে আমি ওর জায়গায় হইলে তো ওর শরীরের অংশও খুঁজে পেত না কেউ। ভালো করছে মারছে। আরে, স**রের বাচ্চা নিজের সৎ বইনরে রেপ করছে! ১৫ ডা পোলা নিয়া মাইয়াডা মারাই গেছে কত বড় জানুয়ার।”
তৌসির এটা শুনে বলে,”ঐ পনেরোডা এখনও বাইচা আছে?”
“হ, আছে। ধরতে পারে নাই পুলিশ। এই আসল কালপিটরে রুদ্র ধইরা আনছিল।”
তৌসির রুদ্রের দিকে তাকিয়ে বলে,
“আগামিকাল ঐ সবগুলারে ধরবি। তোর লগে ওসিও থাকবো, ওগো ধইরা আইনা আমারে কল দিস। আমি মারমু বেশ কয়েকটা কিডনি পামু এতে।”
রুদ্র দেওয়ান বলে,”আইচ্ছা, কিন্তু দুইডা কিডনি আমার লাগবো!”
“চাইরাডাই নিবি, নে।”
“আইচ্ছা!”
নুহাম শাহ বলে,”আমার চোখ দুই জোড়া লাগবো!”
নাযেম চাচা ওর দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেন,”গতকালি না দুইডা নিলি?”

“আরে লাগবো, ছোট চাচা, আরো দুইডা।”
তৌসির বলে,”আইচ্ছা, নিবি নে। আগে ঐ খানকির পোলাগো ধইরা তো আন।”
কেরামত আলী মদের গ্লাসে মদ ঢালতে ঢালতে নিয়ে বলে,”তন্ময় চাচা, আফনার আগামিকাল সমাবেশ আছে কয়ডায় বের হইবেন?”
তৌসির হাসতে হাসতে বলে,”সমাবেশে গিয়া কি করবা মেঝো চাচা? আখেরি জনগণ যেমনে চিল্লায়, মাঝেমধ্যে মন চায় সবগুলারে বোমা মাইরা উড়ায়া দেই।”
তন্ময় চাচা সিগারেট টানতে টানতে বলেন,”হ রে, এইডা আমারও মাইন্ডে আয়। কিন্তু কি করমু ক তো? না গেলে তো আর ভোট পামু না।”
তৌসির হেসে বলে,”যাও যাও, আর রাজনীতিবিদ এর নামে বড় দুর্নীতিবাজ হও।”
মিনহাজ মামা তাচ্ছিল্যপূর্ণ স্বরে বলেন,”এইবার যত টেন্ডারের টাকা আইবো, সব বেশঅর্ধেক মাইরা দিবা, মেঝো ভাইসাব!”
নাযেম চাচা বলেন,
“বেশঅর্ধেক ক্যান, পুরোটাই খাইয়া নিও। কি করবা মাইনষের লাগি কইরা? মানুষ তো আর ভালা কইতো না।”

তৌসির রুমে আসে, এখন রাত তিনটে। নাজহা পানি মারার পর যে গিয়েছিল আর এই এলো। ড্রাগস নিয়েছে, হালকা উপর ঝাপসা একটু, তাই কিছু সময় বসে ওটার নেশা কাটিয়ে ঘরে এলো। নেশা কাটার আগ অবধি রুমে প্রবেশ করেনি, কারণ এখানে নাজহা আছে নিজের কন্ট্রোল হারিয়ে অসহ্য কিছু হয়ে যায় তবে কি হবে? নাজহার সামনে নিজের পুরুষত্বের নিয়ন্ত্রণের সম্মানটা পানসে হয়ে যাবে, সারাজীবনের দাগ থেকে যাবে। আর যে নাজহা, তৌসির এ ক’দিনে এটা বুঝে গেছে যদি কিছু হয় ওদের মধ্যে ওমন রকম, তবে নাজহ তৌসিরকে সারাজীবন খোঁটা দেবে।তৌসির দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ধীরে ধীরে সামনে এগিয়ে নাজহার পাশে এসক দাঁড়িয়ে নাজহাকে দেখতে শুরু করে। নাজহা ডান কাত হয়ে শুয়ে আছে, ওর মাথার কাছে একটা সাদা বিড়াল পেট উল্টে শুয়ে আছে, ওর ডান হাতের বাহুতে একটা ব্রিটিশ লংহেয়ার বিড়াল শুয়ে আছে যার চোখ নাজহার মতোই সবুজ, আর ওর বা পাশে ক্যালিকো বিড়াল শুয়ে আছে। এটা আবার অন্যরকম। এ বিড়াল ত্রিবর্ণের পশমওয়ালা সাদা রঙের উপর কমলা বর্ন। এ বিড়ালগুলো বিদেশি। নাজহার বাদামি কোঁকড়ানো চুলগুলো ওর ওপর এলোমেলো হয়ে ছিটিয়ে আছে। এই চুলগুলো দেখলে মনে হয় শিউলি ভেজা ভোরের মতো বাদামি কোঁকড়া কেশ। তৌসিরের নাজহার এই আবেশঘেরা মুগ্ধতার সৌন্দর্যে চোখ জুড়িয়ে আসে, মুগ্ধতার মোহজাল তৌসির অতল নয়নে চেয়ে রয় কিছু সময় নাজহার পানে। আর মনে মনে শোধায়,“ছিদ্দিক তালুকদার একখানা ঝিঝ জন্ম দিছে রে, এক্কেরে মনের মতো!”

তৌসির নাজহাকে দেখা ছেড়ে টেবিলের দিকে যায় টর্চ লাইট নিতে, কারণ ও আর কেরামত আলী মিলে আলো শিকারে যাবে মাছ ধরতে বিলে। আজ বিকেলেই পশ্চিমের দোষি বিলে বড় বড় গজার মাছ দেখেছে। মাছগুলো একদম পোক্ত, কারণ এই বিল দোষি বলে কেউ ওতটা যায় না। কেউ যাক আর না যাক, তৌসির যায় মাঝেমধ্যে, গিয়ে রাত্তিরের বেলা ধরে আনে মাছ। ওর মা আর বিবিজান চিল্লান যেনো না যায়, কিন্তু তৌসির এসবের তোয়াক্কা না কখনও করেছিল আর না করবে ও নিজে যেটা ভালো মনে করবে সেটাই করবে।
লাইট নিয়ে সাথে ভ্যাসলিনের কৌটাটাও নিয়ে নেয় হাতে। তারপর নাজহার পাশে এসে বসে, বা পাশ থেকে বিড়ালটাকে অতি সাবধানে সরাতে সরাতে মন মন বলে ওঠে,“যেমন বিলাইরে নিয়া ঘুমাইতাছিস, ভবিষ্যতে ওমনে আমার বাইচ্ছা কাইচ্ছা নিয়া ঘুমাইলেই হইলো।”

এ বলে আপন মনে মেকি হেসে নাজহার উপর থেকে ওর চুলগুলো হাত বাড়িয়ে সরিয়ে নেয়। নাজহার গলায় আলতো করে হাত রাখে। হাত রেখে বুঝতে পারে নাজহা ঘেমে গেছে আর যাবেই তো! এত গরমের মধ্যে চুল ছেড়ে ঘুমিয়েছে যে।
তৌসির ধীরে ধীরে নাজহার ডান পাশে এসে দুই হাঁটু ঘিরে বসে। ওর ডান পাশ থেকে বিড়ালটা সরিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে ওর দুই কাঁধে হাত রেখে ওকে ঘুমের মধ্যে তুলে বসায়। নাজহার মাথা এসে ঠেকে তৌসিরের বক্ষে। তৌসির কেঁপে ওঠে অল্প, কারণ নাজহার নাক মুখ ঘেঁষে যাচ্ছে বারংবার ওর গলায়। নাজহার ঘুমন্ত উষ্ণ শ্বাস তৌসিরকে এলোমেলো করে দিচ্ছে ভেতর থেকে।
ঘুমের ঘোরে নাজহা ঠোঁট নাড়িয়ে বিরবির করে বলে,“আব্বা… আমি যাব না ঐ বাড়িতে।”

তৌসির নাজহার কথায় ওর দিকে মুখ নামিয়ে তাকায়। একটুর জন্য তাকিয়েও চোখ আঁটকে যাচ্ছে নাজহার নিষ্পাপ মুখখানায়। তৌসির নিজের মনকে সামলিয়ে দুই হাতের মুঠোয় বন্দি করে নেয় নাজহার তাকে বিমোহিত করে রাখা বাদামি কেশকুণ্ডলীগুলোকে। তারপর ধীরে ধীরে সেগুলোকে অন্তর থেকে বোনা যত্নের জালে খোঁপা করতে থাকে অতল মনোযোগী হয়ে। খোঁপা করা শেষ হলে আপন মনেই বুনে,“সাউয়ার মাইয়ার এক চুল মাইরি পাটের মতো আমায় হেরান কইরা দিল।”

এ বলে নাজহার কাঁধে হাত রেখে ওকে শোয়াতে যায় ফের। তখনই আবারো নজর আটকায় নাজহার আছদা চাঁদের আলোয় ঝলমল করা শশীময় চেহারায়। তৌসির মোহাবিষ্টতায় চেয়ে রয় নাজহার এই চাঁদের আভায় মোহময় চেহারায়। কি একটা ভেবে ধীরে ধীরে নাজহার বা গালে নিজের নাক মুখ ঠেসে ধরে চোখ বুঁজে রয়। নিজের স্ত্রীকে প্রথম চুম্বন করল তৌসির। ভেতরটা ফেঁপে উঠছে এই অনুভূতিতে, বুক ধড়ফড় করার পরও তৌসির নিজের নাক মুখ ঘেঁষে রয় অনেক সময় নাজহার নরম গালখানায়। মন চায় না নাজহাকে ছাড়তে। যদি নাজহাকে আপন বক্ষে টেনে নিয়ে কয়েক কোটি বছর ঘুমাতে পারতো তবে হয়তো শান্তি লাগতো তৌসিরের এই অশান্ত মনে।
নাজহা মাইগ্রেন ব্যথার ঔষধ খেয়ে ঘুমিয়েছে, বিধায় এসবের খবরে ও নেই ঘুমের দেশেই তলিয়ে আছে। আর এমনতেও ওকে ঘুমের মধ্যে কেউ উড়িয়ে নিলেও ও ঠের পায় না এমন বেজাতি ঘুম ঘুমায় ও।নাজহাকে আলগোছে শুইয়ে দিয়ে ওর গলায় ভ্যাসলিন লাগিয়ে দেয়। তৌসিরের মনটা এখনও বড্ড অশান্ত হয়ে আছে। নাজহাকে ছাড়তেই ইচ্ছে হচ্ছে না। ভেতরটা কেমন কেমন করছে, কিলবিলিয়ে উঠছে। নিজের মনের এই বেহাল দশায় তৌসির বিরক্ত হয়ে সোদায় আপন মনে,

“সরের বাইচ্চার একটু কাছে আইলেই ভিত্তরে কুত্তা দৌড়ানি শুরু হইয়া যায়।”
এ বলে উঠতে উঠতে আবার বলে,
“এই আরেক সাউয়ার যন্ত্রণা!”
হাতে লাইট নিয়ে কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসে। তবে দরজার কাছে এসে আরেকবার পিছনে তাকায় ঘুমন্ত নাজহাকে দেখে অজান্তেই মুচকি হেসে বলে,“মাউয়াডা সুন্দর আছে!”
এ বলে বেরিয়ে আসে।বাড়ির বাইরে এসে হাতের টর্চটা জ্বালিয়ে কেরামত আলীকে নিয়ে বের হয় বিলের উদ্দেশ্যে। কেরামত আলী পা ফেলতে ফেলতে বলে,
“ভাইজান, কোচ আনছি, নয়ডা।”
তৌসির লুঙ্গির কোণ তুলে ধরতে ধরতে বলে,
“হ, ভালাই করছিস, আগের টায় ধার ছিল না।”
কেরামত আলী এবার জিজ্ঞেস করে,
“ভাইজান, এত দেরি হইলো ক্যান আফনার?”
তৌসির উত্তর দেয়,

“আর কইস না, তোর ভাবির লাগি দেরি হইয়া গেছে!”
এটা শুনে কেরামত আলী আর কিছু বলে না। চুপচাপ কিছু সময় পার করে। তারপর আবার প্রশ্ন করে,“আইচ্ছা ভাইজান, একটা কথা কই?”
“ক, কি কবু? তুই তো কথাই কস খালি!”
কেরামত অনুমতি পেয়ে জিজ্ঞেস করে,
“আফনার সাধু কর্ম সম্পর্কে সব জাইনাও, ভাবি আফনারে কিছু কয় না?”
তৌসির কেরামতের প্রশ্নে অল্প হাসে, অতঃপর উত্তর দেয়,“কিছু কয় না মানে? আমারে জেলে দিবার ডর দেখায়, আর কিতা কমু তোরে।”
কেরামত আলী এটা শুনে বুক টেনে শ্বাস ছেড়ে বলে,
“সাবধানে থাকইকেন ভাই, খবিসদের মাইয়া আনছেন।”
কথা বলতে বলতে এতক্ষণে বিলের কাছে চলে এসেছে ওরা। তৌসির কোচটা কেরামতের হাত থেকে নিতে নিতে বলে,

“জানি, ও খবিসের ঘরে খবিস নোবেলপ্রাপ্ত গাদ্দারনি। কিন্তু কি করমু? বউ তো আমার, আর বউয়ের বেলা সব গাদ্দারি মাফ।”
কেরামত এটা শুনে হাবলার মতো হেসে বলে,
“হ, বউয়ের বেলায় সব মাফ। বউ মনের রাণী।”
“বউরে মনের রাণী কইরলেও রাজত্ব বউয়ের হাতে দেওয়া উচিত না।”
“ক্যান?”
“বউদের রাজত্ব দিলেই জীবন শেষ। ওরা রাজত্ব পাইয়া রাজার কলিজার উপরি উইঠা আযান দেয়।”

স্নিগ্ধবিষ পর্ব ৬

এ বলে তৌসির লুঙ্গির নিচের অংশের কোণ কোমরে গুঁজে কোচটা ধরে সামনে আগায়। কেরামত আলী আর কিছু না বলে চুপচাপ ওর পিছনে পিছনে যায়।
তৌসির হঠাৎ থেমে যায়, কি একটা ভেবে আশেপাশে চোখ বড় বড় করে তাকায়। তারপর হাতে থাকা মাছ ধরার লোহার কোচটা শক্ত করে ধরে পিছনে তাকিয়ে এক মুহূর্ত দেরি না করে সোজা কেরামত আলীর বুকে ফ্যাত করে লোহার কোচের আগাগুলো ঢুকিয়ে দেয়।

স্নিগ্ধবিষ পর্ব ৮

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here