হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ১৭
Tahrim Muntahana
ইজি চেয়ারে বসে দোল খাচ্ছে আদিল। সময় টা এখন দশটার কাঁটায় পৌঁছেছে। নেত্রপল্লব বন্ধ, মুখশ্রী গম্ভীর। হাতে শোভা পাচ্ছে রিভল* বার! ড্রয়িং রুম থেকে আসা এক চিলতে আলো এসে যন্ত্রটাই পড়ে চিকচিক করছে কেমন। হুট করে কেউ দেখলে গুপ্তধন ভেবে নিশ্চিত এগিয়ে আসবে, অথচ অন্ধকারে মিশে থাকা সাপ টাকে দেখবে না। না দেখাটাই হয়তো তার জীবনের চরম ভুল হবে। আগুনের লেলিহান শিখা যেমন পুড়িয়ে দেয় ভেতর পর্যন্ত, গুপ্তধনের আড়ালে থাকা সাপা টাও নিজের বিষ দাঁত বসিয়ে দিবে। সারা শরীর বিষে নীল হবে, ছটফট করবে, বাঁচার আসায় এদিক ওদিক ছুটোছুটি করবে; অথচ কিছুক্ষণের অতিথি হয়ে ছটফটানি টুকু অন্ধকারেই মিশিয়ে দিবে।
বন্ধ চোখের পাতা উন্মুক্ত হয়, আদিল রিভল* বার টা কপালে চেপে ধরে। মুখে ফুটে উঠে অদ্ভুত এক ভয়ংকর হাসি। কিছুক্ষণ রিভল*বার টা কপালেই চেপে ধরে রাখে। যেন এই রিভল* বার, ছু* রি, চা* পাটি তার কপালেরই এক অংশ। তারপর হুট করেই উঠে দাঁড়িয়ে রিভল* বার টা প্যান্টের ভাজে লুকিয়ে ফেলে। শক্ত বুটের গাম্ভীর্যতা দেখিয়ে গেইট পেরিয়ে বাইরে চলে যায়। অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা সাপ’টার বুঝি হিংস্রতা বেড়ে গেল। কার রক্ত ঝরবে আজ? কেই বা এই ভয়ংকর মানুষ টার ক্রোধের অনলে পুড়বে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ধুলোবালি উড়িয়ে, ডজন খানেক গাড়ি কে অভারটেক করে আদিল এসে থামে সেই সরু রাস্তাটাই। ওই যে দেখা যাচ্ছে বাড়িটা, আলো জ্বলছে। এখনো জেগে আছে নাকি? গাড়ি থেকে নামে, দু’পা এগিয়ে গিয়ে আবার পিছিয়ে আসে। বাঁধা পড়ছে কেন? কেউ তো বাঁধা দেওয়ার নেই! তাহলে? তার কি মন আছে? যে মন সায় দিবে না? তাহলে কেন সে এগোতে পারছে না? শুধু মাত্র কৌতুহল? মেয়ে দুটোর মাঝে কি এমন আছে? কি এমন উদ্দেশ্য দুটো মেয়ের? কেনই বা তাকে শত্রু ভাবছে? আজ পর্যন্ত কারোর কাছে শত্রুতার কারণ জানার প্রয়োজন মনে করেনি তো। তাহলে এবার কেন কারণ জানতে ইচ্ছে করছে? শুধুমাত্র এরা মেয়ে বলে? মেয়ে হয়ে এতবড় দুঃসাহস দেখিয়েছে বলে?
এতগুলো প্রশ্ন! ঠিকঠাক কোনো জবাব নেই। শুধু একটা জবাবই ক্লিয়ায় মেয়েদুটো তার শত্রু, যাদের সময় মতো জীবন থেকে আউট না করলে তাকে পস্তাতে হবে! আর আদিল মাহমুদ কখনো পস্তাতে পারে না!
কাছ থেকে কথা বলার শব্দ। আদিল ভাবনা থেকে বের হয়। সামনে তাকাতেই আফরা, মিরা কে রাস্তার দিকে আসতেই দেখতে পায়। একটুও বিচলিত ভাব দেখা যায় না মুখশ্রী তে। বরং ক্রুর হেসে পকেট থেকে রিভল* বার টা বের করে শক্ত হাতে। ঠিক সামনের বরাবর তাক করে। জোরে নিঃশ্বাস নেয় সে!
ট্রিগারে চাপ দিতে গিয়েও দেয় না, নামিয়ে নেয় হাত। নিজের উপরই ক্ষোভের সৃষ্টি হয়, বাম হাত দিয়ে চুল খামচে ধরে চিৎকার করে উঠে। আফরা, মিরা দুজনই চমকে যায়। ব্যস্ত পায়ে এগিয়ে এসে আদিল কে দেখে অবাক হয় দুজনই। আবার ফিরে আসার কারণ বুঝতে পারে না। আফরা এগিয়ে এসে কিছু বলবে তার আগেই আদিল পুনরায় চেষ্টা চালিয়ে আফরা’র বুকের বাম পাশ বরাবর রিভল* বার তাক করে। আতকে উঠে মিরা তবে আফরা’র মুখ ভঙ্গিমা আগের মতোই। আদিল হাসে, মেয়েটার দম প্রচুর। তবে তার হাতে সময় কম! এবার আর ট্রিগারে চাপ দিতে গড়িমসি করে না আদিল। বিকট শব্দ, মেয়েলি চিৎকার পরিবেশ কেমন ভারী হয়ে আসে! অন্ধকারে উঁত পেতে থাকা নিশাচর ও যেন ভয় পেয়ে যায়! কারো প্রাণ বুঝি সত্যিই গেল?
গেইটের আড়ালে লুকিয়ে আছে আরাফ। এতক্ষণে শহর ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা ছিল। তবে রাগ, প্রতিশোধ স্পৃহা তাকে শহর ছাড়তে দেয়নি। প্রচন্ড ক্ষোভ নিয়ে বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। এখনো একটা ঘরে আলো জ্বলছে। ঘুমায় নি মনে হয়। গেইটের বাইরে তিনজন কনস্টেবল দন্ডায় মান। নিশ্চিত তার পালানোর খবর পুরো শহর ছড়িয়ে গেছে। নাহলে এত কড়া গার্ড টহাল থাকবে কেন? অপেক্ষা করছে সে বাবার জন্য। লুকিয়ে ফোন দিয়েছিল, বলেছে তো আসবে। তবে আসছে না কেন? ধৈর্য রাখা দায় হয়ে পড়েছে। হাত যেন নিশপিশ করছে ভেতরে ঢুকে মেয়েটার গলা চে* পে ধরতে। মন চাইছে প্রতিশোধের আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিতে। রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে আরাফ আড়াল থেকে বের হয়। ডান হাতে শোভা পাচ্ছে লোহার রড! মে* রে ফেলার পরিকল্পনা করেই এসেছে যেন। রড হাতে ঝুলিয়ে কয়েক পা এগোতেই গাড়ির শব্দ ভেসে আসে। থেমে যায় সে। ধরা পড়ার ভয়ে এক ছুটে আড়ালে চলে যায়। খবর পেয়ে গেল কি? তাকেই খুঁজতে পুলিশ চলে এসেছে নাকি? শকুনের চোখ বের করে দেখার প্রয়াস চালায়। গাড়িটি ঠিক বাড়ি থেকে কিছু দুরত্বে বরাবর থামে। কেউ নেমে আসে না।
সময় অতিবাহিত হয়ে যায় নিজ নিয়মে। আরাফের অপেক্ষা আর শেষ হয় না। মশা ও কেমন বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। লুকিয়ে থাকা মুশকিল। লোহার রড টা সেখানেই রেখে পিছিয়ে আসে আরাফ। কয়েক পা পেছাতেই দাঁড়িয়ে পড়ে সে। ঘাড়ে কারো গরম নিঃশ্বাস বারি খাচ্ছে। শরীরের লোম গুলো দাঁড়িয়ে গিয়ে কাঁটা দিচ্ছে কেমন। ভয়ে গলা শুকিয়ে আসে আরাফের। পেছনে ঘুরে দেখার সাহস হয়ে উঠে না। চিৎকার দিতে গিয়েও মুখ চেপে ধরে, নিজের ভুল সে খুব করে বুঝতে পারছে। পরে কি প্রতিশোধ নেওয়া যেত না?
কেন সে রাগটাকে দমিয়ে রাখতে পারলো না? নিজেকে প্রশ্ন করতে করতেই আরাফ টের পায় তার পেছনে কেউ নেই। চট করে ঘুরে দাঁড়ায়, আশেপাশে কারোর অস্তিত্বের দেখা মিলে না। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বুকে হাত রাখে সে। সবটাই তার মনের ভুল। ভয় মনের মধ্যে একদম জেঁকে বসেছে, তাই হয়তো ভুলভাল দেখছে! মন কে নিজের মতো বুঝ দিয়ে সাবধানে পা ফেলে এগিয়ে যায় আরাফ। সিদ্ধান্ত কিছু দিনের জন্য শহর ছেড়ে অন্যত্র লুকিয়ে থাকবে। পরিবেশ ধীরে ধীরে ঠান্ডা হলে আবার ফিরে আসবে সে। নিজের প্রতিশোধ নিতে ঠিক ফিরে আসবে। বাড়িটার দিকে আবার ঘুরে তাকায় আরাফ। চোখ যেন জ্বলে উঠে। দাঁতে দাঁত চেপে বিড়বিড় করে বলে উঠে,
~ খুব শান্তিতে আছিস না আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে? কতদিন থাকবি? একমাস? দুই মাস? ছয়মাস? বড়জোর এক-দুই বছর? তারপর? আমি ফিরবো! তোদের মা মেয়ের জীবন অতিষ্ঠ করতে আমি আবার ফিরবো। তোকে কলঙ্কিত করে সমাজের চোখে নিচে নামিয়ে এমন কেচ্ছা রটনা করবো, তুই নিজে থেকে আত্ম* হত্যা করতে চাইবি। বারবার! তবে আমি তোকে এত সহজে ছেড়ে দিবো না! মনের ক্ষোভ না মেটা পর্যন্ত তুই আমার বন্দিনী হয়েই থাকবি! তখন বুঝবি কি ভু.….
বলতে পারে না। কথা আপনাআপনিই থেমে যায়। ডান হাত চলে যায় মাথার পেছন সাইডে। চোখ বড় বড় করে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষ টাকে দেখে আরাফ। যার হাতে তারই নিয়ে আসা লোহার রড়। তার রক্তেই যেন তাজা হয়ে উঠলো, প্রাণ ফিরে পেল। মস্তিষ্কের নিউরন গুলো স্নায়ুকোষে ঠিকভাবে প্রভাব ফেলতে পারে না। নরম হয়ে যায় আরাফের শরীর। চিৎকার করতে নিলেই পেছন থেকে কেউ মুখ চেপে ধরে। হাঁসফাঁস করে আরাফ, নিভু নিভু চোখ নিয়ে নিজেকে ছুটানোর চেষ্টা করে। শেষমেষ পেরে উঠে না।
জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়ে রাস্তায়। মুখ চেপে ধরা হাতের অধিকারী মেয়েটি আকাশ সমান ক্ষোভ নিয়ে প্রচন্ড বেগে লাথি বসায় আরাফের পেটে। কি বিশ্রী তার মুখের ভাষা। কোনো সজ্ঞানে থাকা ব্যক্তি শুনলে হয়তো তার শিরা উপশিরায় রক্ত চলাচলের বেগ বেড়ে যাবে। যা হয়তো মস্তিষ্কে বারবার বারি খাবে। একসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গালি প্রদানকারী লোকের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তেও দ্বিধা করবে না। বাঙালি’র রক্ত বলে কথা! গরম তো থাকবেই। লোকটি উন্মাদের মতো একের পর এক আঘাত করতে থাকে। কত দিনের আক্রোশ মেটাচ্ছে কে জানে? লোহার রড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা লোকটি রড নিয়েই দৌড়ে যায়। সরিয়ে নিয়ে আসে সাথের জন কে। আশে পাশে তাকায়, নির্জন রাস্তা। বেওয়ারিশ কুকুরও দেখা যাচ্ছে না। তবে বেশীক্ষণ থাকা সেইফ হবে না। তাড়াহুড়ো করে আরাফ কে মাটি থেকে তুলে বাইকের মাঝখানটাই বসিয়ে দেয়। হাওয়ার বেগে ছুটে যায় বাইক। দুজনের ঠোঁটের ভাজেই তৃপ্তির হাসি। চোখে মুখে আকাঙ্ক্ষা। তা হয়তো রক্তের স্বাদ নেওয়ার!
হেলেদুলে গেইট পর্যন্ত আসতেই আশরাফ উদ্দিনের পা থেমে যায়। তিনজন লোক এদিক ওদিক পাইচারি করছে। বিরক্তিতে ‘চ’ শব্দ করেন তিনি। এই ঝামেলা টা আবার কে নিয়ে এসেছে। সরকারের আর কাজ নেই! বের হতে দিবে কিনা সন্দেহ হচ্ছে। তবুও এগিয়ে যান, তাকে দেখেই কনস্টেবল তিনজন দাঁড়িয়ে যায়। একজন অপর নিচ ভালো ভাবে দেখে বলে উঠে,
~ এত রাতে কোথায় যাচ্ছেন আপনি?
ঘাবড়ে যান আশরাফ উদ্দিন। কি বলবে? সে তো ছোট ছেলের সাথে দেখা করতে যাচ্ছে। বলবে, আমি তোমাদের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়া আসামীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছি? যেতে দিবে তাকে? তাকে সহ না থানায় ধরে নিয়ে যাবে! আমতা আমতা করে সে, কিছু খুঁজে পায় না। চট করে কিছু একটা মাথায় আসতেই, মুখের ভঙ্গিমায় ব্যাথার ছাপ ফুটিয়ে তুলেন। কান্না ভেজা গলায় বলেন,
~ ছেলের কবর টা একটু দেখতে যাচ্ছি। আমার ছেলেটা অন্ধকারে ভয় পেত, কষ্ট হচ্ছে তো ওর। আমি গিয়ে বসে থাকলে ও আর ভয় পাবে না!
কি করুণ কন্ঠস্বর। বাবার হাহাকার! বাঙালি আবেগপ্রবণ, এমন কথায় তাদের মন গলবে না তা কি করে হয়? কনস্ট্রেবল তিনজনের মুখশ্রী কঠিন থেকে নরম হয়ে আসে। একে অপরের মুখ চাওয়াচাওয়ি করে মতামতের আদান প্রদান করে। আশরাফ উদ্দিন আড়চোখে তা পরখ করেন। কিভাবে ফাঁদে ফেললো! একজন কনস্টেবল নরম কন্ঠে বলে উঠে,
~ বৃদ্ধ বয়সে এমন দখল নিবেন না চাচা। ছেলে হারানোর কষ্ট হয়তো আমরা বুঝি তবে আপনার মতো উপলব্ধি করতে পারবো না। মন কে বুঝান।
তবে চাচা, আপনাকে একা যেতে দিতে পারবো না আমরা। হুকুম নেই। চলুন আপনার সাথে আমি যাচ্ছি।
চমকে উঠেন আশরাফ উদ্দিন। সাথে আমি যাচ্ছি মানে? এ গেলে সে দেখা করবে কি করে? উপায় খুঁজে পায় না, ওদিকে বেশ দেরি হয়ে গেছে। বাড়িটার দিকে একপলক তাকিয়ে বললেন,
~ যাচ্ছি মানে? তুমি কোথায় যাবা? দুজনে এখানে হবে না। কুলা* ঙ্গার টা আমার ছেলে কে মে* রে ফেলেছে, আবার পালিয়েও গেছে। রাগে ও আবার আসবে না তার গ্যারান্টি আছে? তোমরা দুজন ওর বদ বুদ্ধির কাছে কিছুই না। ওদের ক্ষতি হলে কি জবাব দিবে? আমাকে ও কিছুই করবে না, কারণ আমাকে খুব মান্য করে। আর বেশী দূরে নয় তো, এই তো এখানেই। আমি তাড়াতাড়িই চলে আসবো।
কনস্টেবল তিনজন বিপাকে পড়ে যান। কোন দিকে যাবে? বৃদ্ধের কথাগুলোও ভুল না। মা মেয়ের কিছু হলে তাদের চাকরি যে যাবে নিশ্চিত। এর থেকে ভালো বুড়ো একাই যাক, এমনিও মনে হয় না ছেলের শোকে বেশী দিন বাঁচবেন। মাঝবয়সী কনস্টেবল নিজের মতো ভেবে অনুমতি দেয়,
~ তাড়াতাড়ি ফিরবেন কিন্তু। আপনার কিছু হলে আমরা কিন্তু দায়ী থাকবো না!
আশরাফ উদ্দিন আর কথা বাড়ান না, মাথা নাড়িয়ে গেইটের বাইরে চলে আসেন। প্রাণ ফিরে পেলেন যেন, স্বস্তির শ্বাস ফেলে হেসে উঠেন। কিভাবে বোকা বানালো! কত বড় বড় লোক কে কথার জ্বালে ফাঁসিয়েছে সে, এই তিন জন তো সেসবের কাছে কিছুই না। এ আর এমন কি! নিজের কাজে নিজেই গর্বিত হন তিনি। হাঁটতে হাঁটতে কখন ছেলের কবরের পাশে চলে আসেন, টেরই পান না। ছেলের কবর দেখে বুকটা ভারও হয়ে আসে তার। তাড়াতাড়ি চলে আসেন সেখান থেকে। যে মরে গেছে তাকে নিয়ে ভেবে লাভ নেই, যে বেঁচে আছে তাকে ভালোভাবে বাঁচাতে হবে। বড় রাস্তা না ধরে সরু রাস্তা ধরে হাঁটতে থাকেন তিনি। বেশী দূর যাওয়া হয়ে উঠে না। কারো গম্ভীর কন্ঠস্বর শুনে থেমে যান,
~ আশরাফ উদ্দিন যে! কতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছি। এত দেরী হয় আসতে? আপনি সত্যিই সবসময় লেট করে ফেলেন। কত বিজি একটা মানুষ আমি, জানেন নিশ্চয়ই? কত কাজ থাকে! আসুন তো, একটু বসে কথা বলি!
মোটা আকৃতির দেহ টা থরথর করে কেঁপে উঠে। অবিশ্বাস্য চোখে সামনে মানুষটা কে দেখে আশরাফ উদ্দিন। এই মুহূর্তে এখানে এই মানুষটাকে একদম আশা করেনি সে। তবে সে কি হুমকি দিয়ে ভুল করে ফেলেছে? ছেলের শোকে মাথা এতটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল? আশরাফ উদ্দিন মাথা নিচু করে এগিয়ে আসে। হাত জোড় করে বলে উঠে,
~ আমার ভুল হয়ে গেছে স্যার। ছেলের শোকে ঠিক ভুল বুঝতে পারি নি। এইবারের মতো ক্ষমা করে দিন। আর এমন ভুল আর হবে ন…
কথা বুঝি ফুরিয়ে গেল? কন্ঠনালি একদম বন্ধ হয়ে গেল। শরীরের থেকে একটু বেশী বেড়ে উঠা পেট থেকে টপটপ রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। পরপর দুটো বুলেট ঢুকে গিয়ে দু জায়গায় ফুটো হয়ে গেছে। জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বসে পড়েন আশরাফ উদ্দিন। দুহাত তার রক্তাক্ত স্থানে। আগন্তক লোকটি এক পা ভাজ করে বসে। মুখ কিছুটা এগিয়ে নিয়ে আশরাফ উদ্দিনের কানে কানে বলে উঠে,
~ আমার কাছে দ্বিতীয় অপশন বলে কিছু নেই। যে আমার সাথে একবার উঁচু গলায় কথা বলেছে তার জীবন ঠিক এভাবেই থেমে গেছে। তুমি বড্ড বোকা, আমার বিষয়ে এত কিছু জানার পরেও এমন ভুল করলে কি করে? আফসোস হচ্ছে এখন? তবে সময় নেই যে!
হয়তো নায়ক নয়তো খলনায়ক পর্ব ১৬
হিসহিসিয়ে হেসে উঠে দাঁড়ায় আগন্তুক। কিছুক্ষণ আশরাফ উদ্দিনের নিভু নিভু চোখের দিকে তাকিয়ে ঠিক কাঁধ বরাবর লাথি বসায়। জমিনে লুটিয়ে পড়ে মাটির দেহ খানা! আগন্তক হাসতে হাসতেই হাঁটা ধরে। লম্বাটে দেহ খানা কেমন একটু পর দুলে উঠে। তা কি নিজের জয়ের উল্লাসে? নাকি কুটিল হাসির মধ্যেও আরো কুটিলতা জড়িয়ে আছে?