হামিংবার্ড পর্ব ৪০

হামিংবার্ড পর্ব ৪০
তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া

পাশাপাশি হাঁটছে তেজরিন খান আরিশ ও অরা মেহরিন খান। সামনেই অরার বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে। অরার নজর সেদিকেই। বন্ধুদের সামনে কীভাবে যাবে সে? তাছাড়া আরিশ কি অনুমতি দেবে? কিন্তু এতগুলো মাস পর বন্ধুদের সাথে দেখা হলে, কথা না বলে কীভাবে পারবে সে? নিজেকে ধাতস্থ করে নিয়ে নিচু স্বরে বলল অরা,
“ একটা কথা বলবো?”
“ একটা কেন, পাখি? হাজারটা বলো, লক্ষবার বলো… কী হয়েছে? “
ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো অরা। আরিশকে ভীষণ কিউট লাগছে ওর কাছে। ওই যে রিলসে দেখা যায় না? পুকি হাসবেন্ড না জানি কী? ওরকম পুকি আরিশ। মনে মনে এসব ভেবে ফিক করে হাসল অরা। চমকাল আরিশ। বলল,

“ কী হলো, হামিংবার্ড!”
“ না… মানে কিছু না। ওই যে সামনে আমরা বন্ধুরা, একটু কথা বলে আসি?”
কথাটা বলেই মাথা নিচু করে ফেলল অরা। আরিশ সামনে তাকাল, ভালো করে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করে নিলো একবার। আকাশকে দেখেই মেজাজ বিগড়ে গেলো তার। কিন্তু আকাশের সাথে সে যেটা করেছে সেটাও ভুল। চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ল আরিশ। অরা ভয়ে এখনও চুপ করে মাটিতে তাকিয়ে হাঁটছে।
“ একা যাবে না। আমিও যাবো সাথে। “
মাথা তুলে তাকাল অরা। দিনদিন আরিশের আচরণে বিস্মিত হচ্ছে সে। হয়তো চিকিৎসা কাজে দিচ্ছে।
“ ঠিক আছে, চলুন। “
উচ্ছ্বসিত কণ্ঠে বলল অরা। আরিশ মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো কেবল। হাসি হাসি মুখে বন্ধুদের দিকে এগোতে লাগলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরিশ ও অরাকে এগিয়ে আসতে দেখে সবাই সতর্ক হয়ে উঠলো। ভদ্রলোক সাথে আছে, অরার সাথে মনখুলে কথাও বলতে পারবে না বলে মন খারাপ লাগছে সবার। তবে এটাও স্বস্তির বিষয়, লেখাপড়া চলবে অরার। ইউনিভার্সিটিতে আসবে যখন এমনিতেই সবার সাথে কথাবার্তা লেগে থাকবে।
“ কেমন আছিস তোরা?”
সহাস্য মুখে শুধালো অরা। ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা। আরিশ সেটাই দেখছে। বন্ধুদের সাথে কথা বলতে এসে অরা কতটা আনন্দিত হয়েছে, কিন্তু আরিশের সাথে কথা বলতে গেলে তো কখনো এমন খুশি হয় না সে।
“ আমরা সবাই ভালো আছি। “
লিজা জবাব দিলো। আরিশকে ইশারায় দেখাতে লাগলো রনি। অরা বুঝতে পারলো, তাকে কী করতে হবে। মুচকি হেসে আরিশের দিকে তাকাল সে। আরিশ অরার হাসি মুখখানা দেখে অবাক হলো বটে। কারণ আরিশের দিকে তাকিয়ে হেসেছে সে!

“ আচ্ছা আলাপ করবি চল, উনি তোদের দুলাভাই। অর্থাৎ আমার হাসবেন্ড – তেজরিন খান আরিশ। “
“ হেলো জিজু। “
আগবাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলো লিজা৷ আরিশ আসলে খুশিতে চুপ করে আছে। অরা তাকে এভাবে পরিচয় করালো? নিজ থেকে, কোনো জোরাজোরি ছাড়াই।
“ হাই এভরি ওয়ান। “
“ হাই দুলাভাই। আপনাদের বিয়েতে দাওয়াত পর্যন্ত করলেন না, হুহ্। আমাদের বিয়েতেও দাওয়াত করবো না, আপনাদের। “
অথৈর কথায় সবাই হেসে উঠল। আরিশও মুচকি হাসল। আকাশ একটু চুপচাপ আছে অবশ্য।
“ সমস্যা নেই। বউয়ের সাথে আরো একবার বিয়ে করে নেবো। তারপর তোমাদের সবাইকে ইনভাইট করবো, ওকে?”
সবাই অবাকই হলো, আরিশের আচরণে। কারণ তার সম্পর্কে যেসব কথা শুনেছিল – আরিশ মোটেও তেমন নয়। যথেষ্ট ভালো মানুষ সে। কত সুন্দর করে কথা বলছে।

“ ঠিক আছে, ভাইয়া৷ আমি রনি….”
“ একদিন রাতে কল করেছিলে অরাকে?”
“ জি। “
“ রাতে আমার বউকে কখনো কল করবে না। বিকজ তখন আমরা ব্যস্ত থাকি। বুঝেছ?”
কিছুটা মজা করেই বলল আরিশ। সবাই হাসল। অরা ভালো করেই বুঝতে পারছে, মজার ছলে সিরিয়াস কথা বলছে লোকটা।
“ ওকে, ভাইয়া। কী রে অরা তুই এতো চুপচাপ কেন?”.
জিজ্ঞেস করলো রনি। অরা বারবার আরিশের দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেদের সাথে কথা বলবে কি-না বুঝতে পারছে না। আরিশ অরার হাতটা শব্দ করে ধরে আছে, যেন একটু আলগা হলেওবছুটে যেতে না পারে এমনভাবে।
“ এমনি। “
আরিশ আকাশের দিকে তাকাল হঠাৎ।
“ আকাশ?”

আঁতকে উঠল ছেলেটা। আর কেউ না জানলেও আকাশ খুব ভালো করেই আরিশকে জেনে গেছে। অরাও কিছুটা বিচলিত হলো। আরিশের হাতে চাপ দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“ প্লিজ ওকে কিছু বলবেন না। মাথা ঠান্ডা রাখুন প্লিজ!”
“ কানের পাশে এসে এভাবে ফিসফিস করে কথা বলছ কেন, হামিংবার্ড? তুমি কি চাও আমি এখানেই কন্ট্রোললেস হয়ে যাই?”
অরাকে কপি করে আরিশও ফিসফিস করে বলল কথাগুলো। শুকনো ঢোক গিলল অরা। আরকিছুই বলল না সে। বজ্জাত স্বভাবের লোক একটা!
“ জি। “
মৃদুস্বরে জবাব দিলো আকাশ। সবাই ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে আছে আরিশের দিকে। আকাশের দিকে আরেকটু এগোল সে। তবে অরার হাত ছাড়লো না।

“ আম সরি ব্রো। ওইদিন ওভাবে স্যুট করা উচিত হয়নি আমার। অরার ব্যাপারে একটু বেশি বেপরোয়া আমি। “
পরিস্থিতি কেমন থমথমে হয়ে গেছে। কেউ কিছু বলছে না। আকাশ ম্লান হাসল।
“ ইট’স ওকে। আমি ভুলে গেছি ওসব। আপনিও ভুলে যান। “
বাঁকা হাসল আরিশ।
“ আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা, আমার স্ত্রী বাড়ি থেকে পালিয়ে তার বন্ধুর কাছে চলে গিয়েছিল। ”
আরিশের কথাটা সকলকে বিব্রত করে তুলল যেন। অরা মাথা নিচু করে ফেলল। সবাইকে এভাবে চুপ করে থাকতে দেখে ফিক করে হেসে উঠল আরিশ।
“ ইট’স ওকে গাইস। কথা শেষ হলে চলো, বের হতে হবে। আমাকে অফিসে যেতেও হবে। “
শেষের কথাগুলো অরাকে উদ্দেশ্য করে বলল আরিশ।
“ চলুন। “
অরা সবাইকে হাত দিয়ে ইশারায় বায় বলে এগোতে লাগলো। পেছনে পড়ে রইলো অরার বন্ধুরা।

“ মা! ও মা!”
সন্ধ্যা বেলা। মেয়ের হাঁকডাক শুনে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে ড্রইং রুমে এসে উপস্থিত হলেন রোকসানা মল্লিক।
“ কী হয়েছে তোর? এমন ষাঁড়ের মতো চেল্লাচিল্লি করছিস কেন?”
“ আমি ষাঁড়? “
“ কীসের জন্য ডেকেছিস সেটা বল, মা। রাতের রান্নাবান্না সব বাকি তো। “
“ আমার গনিত সাজেশন বইটা খুঁজে পাচ্ছি না, মা। “
“ তোর বই, তুই রেখেছিস– আমি তো রাখিনি। একটু খুঁজে দেখ, ঘরেই পাবি৷ “
মায়ের কথামতো হনহনিয়ে ঘরের দিকে এগোল নয়না। বইপত্র খুঁজে না পেলে মাথা গরম হয়ে যায় তার। আর রোকসানা মল্লিক ভালো করেই জানেন তার মেয়ে জিনিসপত্র সামনে থাকলেও সহজে খুঁজে পায় না। সেজন্য এসব বিষয় তেমন একটা গুরুত্ব দেননা তিনি। মায়ের কথামতো ঘরে এসে আরেক দফা বই খুঁজতে লাগলো নয়না। বালিশের নিচে পেয়েও গেলো বই। কিন্তু কথা হলো ওখানে রাখলো কে? বই নিয়ে আবারও মায়ের কাছে যেতে লাগলো সে। সোজা রান্নাঘরে এসে বলল,

“ বই পেয়েছি কিন্তু বইটা বালিশের নিচে গেলো কীভাবে? “
রোকসানা তরকারি কষাচ্ছেন। খুন্তি নাড়াতে নাড়াতে বললেন,
“ যেমন বাবা তার তেমন মেয়ে। নিজেই এখানে-সেখানে জিনিসপত্র রাখবে, খুঁজে পাবে না। আর পেলেও বলবে ওখানে গেলো কীভাবে? আমি আছি তো ঘরে – তোমাদের জিনিসপত্র সব আমিই এখানে-সেখানে রাখি। “
একনিশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন রোকসানা। নয়না কিছু বললো না। মায়ের সাথে কথা বলা যাবে না এখন। আবহাওয়া গরম এখন। নিঃশব্দে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেলো সে।

ড্রেসিং টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে আছে অরা। চুলগুলো বেশ এলোমেলো লাগছে, সেজন্য আঁচড়ে নিচ্ছে। এখনও বাসায় ফেরেনি আরিশ। দুপুরে অরাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার পরপরই অফিসে চলে গিয়েছিল সে। দুপুরের খাবার পর্যন্ত খায়নি। আজকে আরিশ শান্ত থাকলেও তার আচরণ ছিলো অদ্ভুত, রহস্যময়। বিশেষ করে আকাশকে বলা কথাগুলো। অরা ভয় পাচ্ছে। আরিশকে নয়, নিজের আবেগকে। অদ্ভুতভাবে আরিশের প্রতি আকর্ষিত হচ্ছে সে। এমন জটিলতা তো চায়নি অরা। বিষাক্ততা, অধিকারবোধ, হিংস্রতা, মায়া, সবকিছু নিয়েই তেজরিন খান আরিশের ভালোবাসা। অরা কীভাবে এই ভালোবাসা সহ্য করবে? দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়ল অরা। খুব সম্ভবত মানুষ তখনই সবচেয়ে বেশি অসহায়বোধ করে যখন নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ হয়। অরাও ভীষণ অসহায়বোধ করছে। দরজা খোলার শব্দে নড়েচড়ে উঠল অরা। এমনিতে ভেজানো ছিলো দরজা। আরিশ ফিরেছে। আয়নায় দেখতে পাচ্ছে অরা। কালো রঙের শার্ট পরিহিত এক সুদর্শন পুরুষ তার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখে তার অজানা ভাষা, কেমন ঘোরলাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সে– অরাকেই দেখছে। আরিশ এগিয়ে গেলো অরার দিকে। পেছনে গিয়ে দাঁড়াল। নিঃশ্বাস আঁটকে আসছে যেন অরার। আরিশ তার পেছনে দাঁড়িয়ে আছে, একেবারে কাছাকাছি। অরা আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে, আরিশ অরার দিকে। একটু পর কিছুটা ঝুঁকে অরার কাঁধে থুতনি রাখল আরিশ।

“ আয়না দেখার দরকার নেই। “
“ কেন?”
আরিশ কী বলবে বুঝতে পারছে না। অরাকে কীভাবে বলবে আয়নাতে তার বউয়ের সৌন্দর্য দেখলেও হিংসা লাগে তার।
“ কিছু না। শোনো। “
“ জি বলুন। “
“ তোমার ভার্সিটিতে গিয়ে ক্লাস করার দরকার নেই। “
হুট করে এমন কথা আশা করেনি অরা। তবে কিছু যে বলবে না আরিশ, এটাও আশা করেনি। তাই সরাসরি জিজ্ঞেস করলো অরা,
“ কী হয়েছে? ক্লাস না করলে পরীক্ষায় লিখবো কী?”
“ অনলাইনে ক্লাস করবে। “
“ কিন্তু কেন?”
“ তুমি ক্লাস করতে গেলে সবাই তোমাকে দেখবে। মানে যারা তোমাকে পছন্দ করে তারা দেখবে, ছেলেরা তোমাকে নিয়ে কল্পনা করবে। সেসব আমার সহ্য হবে না। “
আজকে প্রথম আরিশের পাগলামিতে হাসি পেলো অরার। একেবারে বাচ্চাদের মতো মুখের হাবভাব তার। দেখলেই হাসি পায় এমন।

“ আপনি এতো হিংসুটে কেন?”
কপাল কুঁচকে ফেলল আরিশ। অরা আয়নায় তার চেহারা দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।
“ আমি যেমনই হই, আমি ছাড়া তোমার গতি নেই হামিংবার্ড। “
“ তাহলে লেখাপড়ার দরকার নেই। পড়বো না আর। এমনিতেই তো পড়তাম না৷ সমস্যা নেই। “
স্বাভাবিকভাবেই বলল অরা। আরিশ ক্ষেপে গেলো তাতে। দিলো কাঁধে এক কামড় বসিয়ে। মাঝে মধ্যে আরিশকে অরা মনে মনে অনেককিছু বলে গালি দেয়। আর দিবে না কেন? কামড়ের ফলে রক্ত বের করে দেওয়া কি কোনো মানুষের কাজ?

“ তাহলে প্রতিদিন আমি তোমাকে ইউনিভার্সিটিতে পৌঁছে দিয়ে আসবো। “
“ আপনার লেট হবে না?”
“ সবার আগে তুমি, তারপর সব। “
আরিশের এমন সরাসরি কথায় কিছুটা লজ্জা পেলো অরা। মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো কেবল।
“ আচ্ছা। “
আরিশ সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পোশাক খুলতে লাগলো। অরা আয়নায় আঁড়চোখে তাকিয়ে দেখছে।
“ আয়নার দিকে না তাকিয়ে সরাসরি আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেন, হামিংবার্ড? “
থতমত খেলো অরা। চুরি করতে গিয়ে ধরা পড়ে যাওয়ার মতো করে আমতা আমতা করে বলল,
“ আমি… আমি তো আয়না দেখছিলাম। “
আরিশের মেজাজ বিগড়ে গেলো এবার। মিথ্যা কেন বলল হামিংবার্ড? খালি গায়ে এগিয়ে গেলো অরার দিকে। হুট করেই অরার দুই হাত পেছনে নিয়ে এসে চেপে ধরে জিজ্ঞেস করলো,

“ আমাকে কেন দেখছো না?”
“ আপনাকে দেখিনি সেটাও তো বলিনি আমি। আয়নার মধ্যেই তো আপনি ছিলেন। “
“ ওহ! তাই তো। “
“ জি। যান ফ্রেশ হয়ে আসুন। আমি বিছানা গোছগাছ করছি। “
আরিশ অরাকে ছাড়লো না। ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে নিঃশ্বাস নিতে লাগলো।
“ আজকে আদর করি, পাখি? “
নেশা ভরা কণ্ঠে শুধালো আরিশ। অরার সমস্ত শরীরে যেন বিদ্যুৎ বয়ে গেলো। তবে সে এখনও দ্বিধায় আছে।
“ অনুমতি চাইছেন? “
“ হ্যাঁ। “
“ আমি এসবের জন্য প্রস্তুত নই এখন। আমার মতামত এটা, বাকিটা আপনার ইচ্ছে। “

চোখ বন্ধ করে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ল আরিশ। তারপর সোজা ওয়াশরুমের দিকে এগোল। মন ও শরীর দুই উত্তপ্ত এখন। লম্বা শাওয়ার দরকার তার। অরা চুপচাপ বসে রইলো। কী হচ্ছে, কী করা উচিত সে বুঝতে পারছে না।
টরেন্টো, কানাডা
১৫-০৫-২৫ | দুপুর ২টা
টরেন্টোর আকাশটা আজ একটু বেশি নীল লাগছে সাবিহার চোখে, যদিও তার ভিতরটা ঠিক ততটাই ধূসর। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সে দৃষ্টির আড়ালে হারিয়ে যাচ্ছে যেন। চারদিকে এত কিছু নতুন– নতুন শহর, নতুন ভাষা, নতুন নিয়ম। অথচ তার ভিতরটা আটকে আছে কোথাও, খুব চেনা কোনো জায়গায়।

এখানে আসাটা তার স্বপ্ন ছিল না। বাংলাদেশে গ্র্যাজুয়েশন শেষ করে সে তো ভেবেছিল, হয়তো একটা চাকরি করবে, আরিশের সাথে সংসার করবে । কিন্তু আরিশ একপ্রকার জোর করেই পাঠিয়ে দিলো কানাডা। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে ঠেলে দেওয়া এই জীবনকে সে সহজে আপন করতে পারছে না। নতুন শুরু ঠিকই, কিন্তু সব শুরু আনন্দের হয় না। কিছু কিছু শুরু হয় নিঃশব্দ অভিমানে, কিছুটা অভিমান নিজেকেও নিয়ে।
আজ ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রথম দিন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সাবিহা নিজের চোখের দিকে তাকায়। গ্রামে বেড়ে ওঠা মেয়েটি আজ দেশ ছেড়ে এতটা দূরে চলে এসেছে! আরিশকে ভালোবাসার শাস্তি পেয়েছে, না কি পুরস্কার – এখনো ঠিক বুঝে উঠতে পারে না সে।
হঠাৎ হোয়াটসঅ্যাপে কলের শব্দে চমকে ওঠে সাবিহা। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে, অপরিচিত একটি নম্বর। কে হতে পারে? – মনে মনে ভাবতে ভাবতেই কলটি কেটে যায়।
এক মুহূর্তের দ্বিধা শেষে, নিজেই কলব্যাক করে সাবিহা।

হামিংবার্ড পর্ব ৩৯

“ হাই বিউটি কুইন! “
চমকাল সাবিহা, মেহরাব কল করেছে! কিন্তু কেন?
“ আপনি! আপনি আমার নম্বর পেলেন কোথায়? “
“ সুন্দরীদের নম্বর জোগাড় করে, নিতেই হয়। “
“ ওহ আচ্ছা। “
“ তারপর? তোমার সবকিছু কেমন চলছে? “
“ ভালোই। আপনি এখন কল দিলেন? মানে বাংলাদেশে তো রাত বারোটা বেজেছে মেবি। “
“ হ্যাঁ। ঘুম আসছে না। তো ভাবলাম একবার কথা বলি। “
“ বুঝলাম। আমাকে একটু বেরোতে হবে, অন্য কোনো সময় কথা হবে। “
“ ওকে। বায়। “
“ বায়।”

হামিংবার্ড পর্ব ৪১