হামিংবার্ড পর্ব ৪৬
তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া
অরা কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
“ ইয়েস… আই ওয়ান্ট নাথিং মোর দ্যান টু বি দ্য কুইন অব ইয়োর ইউনিভার্স। “
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল আরিশ। এতগুলো মাস পর অরা আজ নিজে থেকে তার জগতের রাণী হতে চেয়েছে। অবশেষে একটা সুস্থ, স্বাভাবিক জীবন পেতে চলছে সে।
“ ওকে, হামিংবার্ড। এখন ছাড়ো, সবাই তাকিয়ে আছে। এসবের জন্য সারা রাত পড়ে আছে। বিশ্বাস করো, আজকে তোমাকে এক সেকেন্ডও ঘুমাতে দেবোনা। “
শেষের কথাগুলো ফিসফিস করেই বলল আরিশ। অরা লজ্জায় তৎক্ষণাৎ তাকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়াল।
তালহা, তামান্না আর নয়না এগিয়ে এলো অরার দিকে। পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আরিশ, ঠোঁটে মুচকি হাসি। অরার চোখে সে স্পষ্ট ভালোবাসার ঝিলিক দেখেছে—এই ভালোবাসা পাওয়া মানে আরিশের জন্য যেন গোটা পৃথিবীটাই জিতে নেওয়া।
“আপু, ভাইয়াকে বলো না, আমাদের ব্ল্যাকহোলটা দেখাক!”
নয়না উচ্ছ্বসিত গলায় বলল।
আরিশ হাতের রিমোটটা তুলে কয়েকটা বোতামে চাপ দিল। মুহূর্তেই দৃশ্যটা বদলে গেল।
ঘরের মাঝখানে এক স্বচ্ছ কাঁচের উপর ভাসছে একটি হলোগ্রাফিক সৌরজগৎ। নক্ষত্রগুলো ধীরে ঘুরছে, মাঝে মাঝে উল্কা ভেঙে পড়ছে প্ল্যানেটে। হঠাৎই একটি ব্ল্যাকহোল তৈরি হয়ে গ্রাস করে নিচ্ছে একটি নীল গ্রহকে। নয়না,তালহা, অরা, তামান্না সবাই চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে, বিস্ময়ের অতলে ডুবে যেতে যেতে। সবকিছু একেবারে বাস্তব মনে হচ্ছে। নয়না তো হা করে তাকিয়ে দেখছে সবকিছু।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ওয়াও! ইট’স অ্যামেইজিং!”
নয়নার চোখে-মুখে বিস্ময়ের ছাপ।
“আরও কিছু দেখাবো, নয়না?”
আরিশ একটু রহস্যময় হাসি হেসে জিজ্ঞেস করলো।
নয়না সঙ্গে সঙ্গে মাথা নেড়ে সায় দিল।
অরাসহ সবার চোখেমুখেই বিস্ময়ের ঝিলিক। অসীম আর অজানার প্রতি তাদের কৌতূহল যেন আরও বেড়ে উঠলো।
আরিশ কিছু না বলে অরার হাত ধরে তাকে নিয়ে গিয়ে একটা নরম সোফায় বসলো। বাকিরাও ওদের দেখাদেখি পাশে এসে বসে পড়লো, যেন সামনে কী আসছে তা জানার আগ্রহে একসাথে অপেক্ষা করছে সবাই।
ঘরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার, অথচ কোথাও একটুও ভয় নেই। বরং যেন মাথার ওপর ছড়িয়ে আছে কোটি কোটি তারা, রঙিন গ্যাস ক্লাউড, ছায়াপথের ঘূর্ণি। নয়না ও অরা দুজনেই নরম সাদা বসে আছে, চোখ উপরের দিকে স্থির।
একটা গভীর নীল নেবুলা আস্তে আস্তে ঘুরতে ঘুরতে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো ছাদজুড়ে। দূরে একটা ব্ল্যাকহোল জন্ম নিচ্ছে—সব আলোকে গিলে নিচ্ছে।
হঠাৎ, নরম অথচ অচেনা এক কণ্ঠ ভেসে এল চারপাশ থেকে। কণ্ঠটা যেন বাতাসেই মিশে আছে।
“আজ আপনি কোন গ্যালাক্সিতে ভ্রমণ করতে চান?”
অরা চমকে তাকাল আরিশের দিকে। আরিশ হেসে বলল,
“এটা AI কনসিয়ার্জ। ঘরেরই অংশ।”
AI আবার বলল,
“আপনার হৃদস্পন্দন কিছুটা ধীর… আপনি কি শান্ত কোনও ভ্রমণ পছন্দ করবেন? নাকি আজ একটু ঝড়ের মধ্যে হারিয়ে যেতে চান?”
অরা চুপচাপ বসে রইলো। নয়না হালকা গলায় বলল,
“আমরা কিছু নতুন কিছু চাই। খুব পুরনো কোনো গ্যালাক্সি—যেটা হয়তো এখন আর অস্তিত্বেই নেই।”
ঘরের আলো বদলে যেতে লাগল। আগের শান্ত নীল এখন রূপ নিচ্ছে আগুনে লাল আর গাঢ় সবুজে। কোথা থেকে যেন বাজ পড়ার শব্দ এল, যেন হাজার বছর আগের কোনো নক্ষত্রের বিস্ফোরণ।
AI কণ্ঠ আবার ভেসে এলো,
“স্বাগতম—GN-Z11-তে। এই গ্যালাক্সি জন্ম নিয়েছিল বিগ ব্যাংয়ের মাত্র ৪০০ মিলিয়ন বছর পরে। এটি আজ আর নেই… কিন্তু আজ রাত আপনারা সেখানে ফিরে যাচ্ছেন।”
অরা ধীরে ধীরে আরিশের হাত ধরল। চোখে জল চলে এসেছে তার। আরিশ অরার গালে হাত রাখল, শান্তভাবে।
“এটা এখন শুধু ঘর না, অরা… এটা এখন একটা টাইম মেশিন ভাবতে পারো। নয়না আর তুমি এসব পছন্দ করো। সেজন্য ভাবলাম, তোমার স্পেশাল রাতটা আরেকটু স্পেশাল করা যাক।”
“ এসব কীভাবে করলেন? আমাদের দেশে এসব প্রযুক্তি আছে? “
“ ই-মার-সিভ থ্রি সিক্সটি ডিগ্রি প্রোজেকশান ম্যাপিং সিসটেম এর মাধ্যমে করেছি। আছে তবে , এগুলো আমেরিকা থেকে আনিয়েছি। “
নয়না মুচকি হেসে বলল,
“ আপুরে ভাইয়া তো পারলে তোর জন্য চাঁদটাও নিয়ে আসতো!”
অরা লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ল। সত্যি আজ নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে। আরিশের হাতে হাত রেখে বসে রইলো অরা। এক এক করে মহাবিশ্বের অনেককিছু দেখা হলো তাদের।
রাত একটার দিকে সবাই সবার জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে ঘুমোতে গেলো। আগামীকাল সন্ধ্যায় অরার জন্মদিন উপলক্ষে খান বাড়িতে পার্টি আছে। তাই মল্লিক পরিবারের সবাইকে এই দু’দিন এ বাড়িতেই থাকতে হবে।
নিজেদের ঘরে ফিরল আরিচ আর অরা। ঘরটা হালকা আবছা আলোয় ভরে আছে। জানালার পর্দা নরম হাওয়ায় একটু একটু দুলছে। বাইরে হয়তো চাঁদ উঠেছে, কিন্তু আরিশের চোখে এখন একটাই আলো– অরা।
অরা ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে গয়নাগুলো একে একে খুলে রাখছিল। সব গুছিয়ে নিয়ে এবার চুলে ব্রাশ চালাচ্ছে ধীরে ধীরে।
হঠাৎ আয়নায় চোখ পড়ে গেল—পেছনে দাঁড়িয়ে আছে আরিশ।
একটু চমকে উঠলেও ভেতরের আবেগ চাপা দিয়ে নিচু গলায় বলল,
“এভাবে দাঁড়িয়ে কী দেখছেন?”
অরার প্রশ্নে আরিশ মুচকি হাসল। তার পরনে শুধু একটা শর্টস।
“আমার পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য দেখছি।,”
চোখ না সরিয়েই বলল সে।
ধক করে কেঁপে উঠলো অরার বুক। আরিশ যখন এভাবে বলে, তখন সত্যিই যেন ডুবে যেতে ইচ্ছে করে মেয়েটার।
অরা চুপচাপ, মাথা নিচু করে বসে আছে। পরনে কালো রঙের একটা নরম, কোমল নাইটি—যেটা আরিশই তাকে উপহার দিয়েছে।
আরিশ ধীর পায়ে এসে দাঁড়াল ওর পেছনে। অরার বুক ধুকপুক করতে লাগলো—মনে হলো, এখনই ছুঁয়ে দেবে সে। ঠিক তাই হলো। আরিশ তার কাঁধে থুতনি রাখল। তারপর হাতে আলতো করে অরার থুতনি তুলে আয়নার দিকে তাকাতে ইশারা করল।নঅরা তাকাল। আয়নায় স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে তাদের দু’জনকে একসাথে, এক ফ্রেমে। মুচকি হাসল অরা। আয়নাটাও যেন সেই মুহূর্তে ভালোবাসায় ভরে উঠল।
“কেমন লাগছে, আমাদের?”
আরিশের কণ্ঠে মিশে আছে গভীর আবেগ।
“সুন্দর।”
অরা আস্তে বলল, চোখ নামিয়ে।
“কতটা সুন্দর?”
আরিশ একটু ঝুঁকে প্রশ্নটা করতেই থমকে গেল অরা।
ঘাবড়ে গেল সে। কী বলবে, বুঝে উঠতে পারছে না। বুকের ভিতর হালকা ধকধক শুরু হয়ে গেছে। আরিশ যতই সুস্থ হোক, তার ভেতরের পাগলামি যে একটুও কমেনি।
“সুন্দরের আবার পরিমাণ হয়?”
অরা চোখ না তুলে জিজ্ঞেস করল।
“আলবাত হয়।”
আরিশ মুচকি হাসল।
“আমি জানি না…”
অরার গলা নরম হয়ে এলো, যেন নিজের অনুভবটুকু সে নিজেও পুরো বুঝে উঠতে পারছে না।
আরিশ হঠাৎই অরাকে কোলে তুলে নিলো। অরা চমকে উঠলেও প্রতিবাদ করল না। সত্যি বলতে, আজ সে নিজেও অপেক্ষায় ছিল – আরিশের স্পর্শ, তার উষ্ণতা, তার ভালোবাসার কাছে নিজেকে সঁপে দেওয়ার। এই দূরত্বের সময়টুকু অরার বুকের ভেতর অনেক শূন্যতা তৈরি করেছে।
“তাহলে তুমি কী জানো, হামিংবার্ড?”
আরিশের কণ্ঠে আবেশ।
বিছানার কিনারে এসে তাকে শুইয়ে দিতে চাইল, কিন্তু অরা হঠাৎই আরিশের গলা জড়িয়ে ধরল।ফলে আরিশ কিছুটা ঝুঁকে ওর ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে রইল। চোখে চোখ পড়তেই সময়টা যেন থেমে গেল। অরা আরিশের কানের পাশে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
“কংগ্রাচুলেশনস, মি. তেজরিন খান আরিশ – আই লাভ ইউ।”
এক মুহূর্তে সব শব্দ যেন থেমে গেলো।
আরিশ চুপ করে রইলো, তার চোখে-মুখে নীরব বিস্ময়। শব্দহীন ভালোবাসার ভারে যেন চারপাশ নিঃশব্দ হয়ে এলো। সবকিছু তার কাছে এক মুহূর্তে বরফের মতো স্থির হয়ে গেছে – গলে যাওয়ার আগ মুহূর্তের মতো নিঃশব্দ।
অরা তার গালের পাশে নরম করে একটা চুমু দিল। তবেই যেন চেতনায় ফিরলো আরিশ। নড়েচড়ে উঠল সে। অরাকে নিজের সামনে বসিয়ে, চোখে চোখ রেখে ধীরে বসে পড়ল।
“সে, এগেইন, জান প্লিজ!”
আরিশ মুচকি হাসল, কাঁধ একটু ঝাঁকিয়ে বলে উঠল।
“আই লাভ ইউ।”
অরা লজ্জায় মুখ চেপে ধরে গলাও ভেসে আসছিল।
“আরেকবার বলো, প্লিজ!”
আরিশের চোখে ছিল খুনসুটি আর মায়া মিশ্রিত আবেদন।
“আই… লাভ ইউ, আরিশ।”
আরিশ কিছু বলতে পারল না। অরার মুখে পরপর তিনবার “আই লাভ ইউ” শুনে আরিশের চোখ হঠাৎ বিস্তৃত হয়ে গেলো, মনে হলো যেন জগৎ থমকে গেলো এক মুহূর্তের জন্য।
শরীরটা নিস্তব্ধ হয়ে পড়লো, মনের ভিতরে এক অজানা ধাক্কা অনুভব করলো,পুরো পৃথিবী যেন থেমে গেছে। তার মাথায় আবেগ আর পাগলামির এক অদ্ভুত মিশেল বইতে শুরু করলো। হঠাৎ করে আরিশ অরার কোলে পড়ে গেলো, পুরো দেহ কাঁপছে। অরা আতঙ্কিত হয়ে টি-টেবিলের ওপর রাখা পানির গ্লাস থেকে কিছুটা পানি হাতে ঢেলে আরিশের চোখেমুখে ছিটাতে লাগলো।
“ জ্ঞান হারাইনি, হামিংবার্ড। ঠিক আছি আমি। “
মিনিট পাঁচেক পর স্বাভাবিক হলো আরিশ। অরা তো ভয়ে ভয়ে বসেছিল এতক্ষণ। আরিশ এবার শোয়া থেকে উঠে বসলো। অরাকে শক্ত করে জাপ্টে ধরে কপালে, গালে, চোখের পাপড়িতে, নাকের ডগায় অজস্র চুমু খেলো সে।
“ আমি জানি না, বউয়ের মুখে ভালোবাসি কথা শোনার পর আর কোনো পুরুষের এমন অবস্থা হয়েছিল কি-না । “
“ সে তো ঠিক আছে। কিন্তু আপনি আমার কথার জবাব দিলেন না।”
মুখ গোমড়া করে বলল অরা। আরিশ জোরে হেসে উঠল।
“ আই লাভ ইউ টু, হামিংবার্ড। “
অরার ঠোঁটের কোণে এক ধীরে ধীরে, সুন্দর একটা হাসি ফুটল। আরিশ তাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে নিলো, নিজের শরীরের প্রতিটা স্পন্দন দিয়ে ধরে রাখলো। তার হাত যখন অরার কোমর ঘিরে গেলো, মনে হলো যেন ওকে ছেড়ে দেওয়ার কোনো ইচ্ছাই নেই আর। অজস্র গভীর, দাবালো চুমু খেলো আরিশ অরার গালে, কপালে, নাকের ডগায় – একেবারে নিজের হওয়ার দাবিতে।
অরা চোখ বন্ধ করে দিলো, লম্বা লম্বা নিঃশ্বাস নিচ্ছে, যেন এক মুহূর্তে পুরো শরীরই আগুনে ঝলসে উঠছে। হঠাৎ করেই আরিশ অরাকে কোলে তুলে নিলো, শক্তপোক্ত বাহুতে জোরে জোরে জড়িয়ে ধরে। অরার দুই পা আরিশের পিঠে বাচ্চাদের মতো ছুঁয়ে ধরেছে, যেন সে সম্পূর্ণরূপে তার উপর নির্ভরশীল। আরিশের বুকের স্পন্দন তীব্র, শরীর জুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ছে।
“এভাবে কোলে নিলেন কেন?”
অরা থেমে গিয়েছিলো, গলার স্বর কাঁপছে হালকা।
আরিশ ঠোঁটের কোণে অদ্ভুত এক হাসি নিয়ে ওকে সোজা কোলে রেখেই গিয়ে ঠেকাল দেয়ালে। চমকে উঠলো অরা। বুক ধুকপুক করছে, চোখে স্পষ্ট কৌতূহল আর ভয়মিশ্রিত উত্তেজনা।
আরিশ ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করল,
“এখন দেখো… কেনো নিলাম।”
দেয়ালে ঠেকা অরার পিঠে আরিশের হাত, আর তাদের দুজনের মাঝে নিঃশ্বাসের তাপ… মুহূর্তটায় তীব্র উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ল।
আরিশ অরাকে আর এক মুহূর্তও কথা বলার সুযোগ দিলো না। চুপিসারে ঠোঁটের ওপর ঠোঁট রাখল, যেন কোনো শব্দ নয়, শুধু অনুভবের ভাষা বলার সময় এখন। আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলল অরা। মুহূর্তেই সমস্ত চিন্তা, সমস্ত সংশয় বিলীন হয়ে গেল। এক হাতে ও আরিশের গলা জড়িয়ে ধরেছে, আর অন্য হাতে ওর চুল খামচে ধরেছে, তীব্র ভালোবাসা আর অভিমান একসাথে ছুঁয়ে দিচ্ছে চুমুর গভীরে।
তারপর যখন সময়টা একটুও আর নিয়ন্ত্রণে থাকে না, আরিশ ধীরে ধীরে ওকে চুমু থেকে আলগা করল, এবং আচমকাই কোমরে হাত দিয়ে নরমভাবে অরাকে দাঁড় করিয়ে দিলো। তাদের নিঃশ্বাস ভারী, চোখে চোখ লেগে আছে, যেন পরের মুহূর্তে ঝড় উঠবে।
“ কী হলো?”
অরার অস্থির লাগছে। অনুভূতি সামলাতে হিমসিম খাচ্ছে সে। আরিশের ঠোঁটের কোণে রহস্যময়ী হাসি। অরার গাল টেনে দিয়ে বলল সে,
“ আজকে নয়, পাখি। এটা তোমার ইচ্ছেতে, ফার্স্ট টাইম। সুতরাং স্পেশাল ফিল করাবো তোমায়। এজন্য অপেক্ষা করতে হবে, চলো আজ ঘুমিয়ে যাই। ‘
অরা মুখ ফুটে বলতে পারছে না কিছু। ভদ্রলোকের ওপর ভীষণ রাগ হচ্ছে তার। এমন তো নয়, এটা প্রথমবার! নিজে জোর করে কতবার কী করেছে এখন আবার স্পেশাল দরকার তার! তপ্ত নিঃশ্বাস ছাড়ল অরা। আরিশ তাকে নিয়ে বিছানায় গেলো।
“ কী হয়েছে? খারাপ লাগছে? “
“ না তো! খুব উৎফুল্লবোধ করছি, একেবারে আনন্দে ভেসে যাচ্ছি। “
অরা রাগে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল কথাগুলো। আরিশ অরার মুখের এক্সপ্রেশন দেখে শব্দ করে হেসে উঠল তাতে।
“ এতো এক্সাইটেড? দেখবো, কতক্ষণ সহ্য করতে পারো আমাকে। “
অরা পাশ ফিরে শুয়ে রইলো। আরিশ হাতে ফোন নিয়েছে কেবল। নিউজফিড স্ক্রোল করতে করতে আচমকা একটা পোস্টে চোখ আঁটকে গেলো তার। মুহুর্তেই মেজাজ বিগড়ে গেলো। অরা অন্য দিকে ফিরে শুয়ে থাকায় কিছু টের পেলো না। আরিশ নড়েচড়ে শোয়াতে, অরা তার দিকে ফিরলো। তখনই আরিশের রাগান্বিত চোখমুখ দেখে কিছুটা ঘাবড়ে গেলো মেয়েটা।
“ কী হয়েছে আপনার? “
“ পাশের বাসার আন্টি!”
“ কী?”
“ পাশের বাসার আন্টি নামে একটা পেইজ তোমার নাম নিয়ে বাজে কথা বলেছে। “
অরা ফোনের স্ক্রিনে তাকাল। পেইজের নাম খেয়াল করলো, তারপর পোস্ট।
“ ওটা পাশের বাসার আন্টিদের কাজই এগুলো। সে হোক অনলাইন কিংবা অফলাইন! “
“ অরাকে বড়া বলেছে সে। হাউ ডেয়ার হিম! কোথায়, কোন দেশে থাকে ওই পেজের মালিক, আগামীকাল দেখবো বিষয়টা। “
অরা শুকনো ঢোক গিলল। আরিশ বেশ রেগে গেছে। আধ পাগল জামাই নিয়ে এই এক সমস্যা! হুটহাট পাগলামি শুরু করে।
“ শুনুন, সব বিষয় মাথা ঘামাতে নেই। কে কী বলল এতকিছু খেয়াল করার কী দরকার? আপনি কিছু করতে গেলে বা বলতে গেলে লোকজন আরো পাত্তা পেয়ে বসবে। মজা হিসেবে নিন, প্লিজ। “
আরিশের রাগ কমলো না। অরা আলতো করে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
“ তোমার নামে আজেবাজে কিছু বললে তাকে….”
“ অরা নামটা আমার একার নয়, সবার জন্য উন্মুক্ত। “
অরার কথায় যুক্তি আছে। চুপ করে গেলো আরিশ।
হামিংবার্ড পর্ব ৪৫
“ চলুন ঘুমাই। আগামীকাল আবার অনেক কাজ আছে তো।”
আরিশ অরাকে নিজের হাতের ওপর শোয়াল। নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে লম্বা নিঃশ্বাস ছাড়ল কয়েকবার।
“ হুম। গুড নাইট, হামিংবার্ড।”
“ গুড নাইট। “
স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ল অরা। ভদ্রলোক ঘুমালেই শান্তি।