হামিংবার্ড পর্ব ৫৬

হামিংবার্ড পর্ব ৫৬
তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া

রাস্তায় তেমন একটা জ্যাম না থকায় ঘন্টাখানেকের মধ্যে বাসায় এসে পৌঁছল আরিশ। অরা তখনও নিজের রুমে, ডাক্তার শেলিনার সাথে কথা বলছিল। হন্তদন্ত হয়ে বেডরুমে প্রবেশ করতেই বউকে বিছানায় শুয়ে থাকতে দেখে ভদ্রলোক যেন আরও ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠলো।
“ তুমি ঠিক আছো?”
অরার পাশে বসে জিজ্ঞেস করলো আরিশ। শেলিনা আক্তার একটু নড়েচড়ে বসলেন।
“ জি, ঠিক আছি। আপনি শান্ত হয়ে বসুন। “
“ মিসেস শেলিনা, কী হয়েছে অরার? ডেঙ্গু জ্বর? “
“ সন্দেহ করছি, তেমন কিছুই হয়েছে। বাকিটা টেস্ট করানোর পর বলতে পারবো। আপনি আগামীকাল উনাকে নিয়ে হসপিটালে আসুন একবার। তারপর শিওর হয়ে বলতে পারবো। ৷ “
আরিশ ধীরে ধীরে অরার কপালে হাত রাখে। তারপর গলায় স্পর্শ করে দেখে, জ্বরটা নেমেছে কি না বোঝার চেষ্টা। একটু দম নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সে। আঙ্গুলের স্পর্শে মমতা আর অস্থিরতা মিলেমিশে যায়। তার চোখে উদ্বেগ।

বিছানার পাশে বসা ডাক্তার শেলিনা আক্তার চুপচাপ সবকিছু দেখছিলেন। চোখে তার একরাশ প্রশান্তি, ঠোঁটে অল্প একটুকরো মুচকি হাসি। রোগী নয়, যেন দুই ভালোবাসার মানুষকেই একসাথে পর্যবেক্ষণ করছিলেন তিনি।
“ঠিক আছে। আমরা আগামীকাল হসপিটালে যাবো। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। জলিল, মানে আমার ড্রাইভার আপনাকে পৌঁছে দিয়ে আসবে।”
শেলিনা একবার অরার দিকে তাকালেন, তারপর মৃদু হেসে আরিশের দিকে ফিরে বললেন,
“আপনাকেও ধন্যবাদ। আসছি।”
“ওকে।”
সংক্ষেপে বলল আরিশ। তার মন পড়ে আছে অরার জ্বরভেজা মুখে।
ধীর পায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন ডাক্তার শেলিনা আক্তার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরিশ অরাকে নিঃশব্দে কোলে তুলে নেয়। মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নরম কণ্ঠে জিজ্ঞেস করে,
“কান্না করেছিলে কেন, পাখি?”
অরা নিচু গলায় বলল,
“আমার ভয় লাগছিল…”
আরিশ হালকা হেসে গাল ছুঁয়ে বলে,
“তোমাকে ভীতু জানতাম, তবে এতটা ভীতু সেটা তো কল্পনাও করিনি।”
চোখ বড় করে তাকায় অরা। একটু গলা খাঁকারি দিয়ে সোজা হয়ে বলে,
“আমি মোটেও ভীতু নই, মি. খান!”
আরিশ ভ্রু উঁচিয়ে তাকায়, ঠোঁটে চাপা হাসি। ইশারায় মাথা কাত করে কৌতুকের সুরে বলে,
“মি. খান! ওয়াও… বেশ শ্রুতিমধুর লাগলো শুনতে।”
অরা মুখ ফিরিয়ে ফেলে একপাশে। হঠাৎ যেন মনে পড়ে যায় নিজের অসুস্থতা। ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করে,
“বাড়ির মধ্যে তো মশা নেই, তবুও ডেঙ্গু কীভাবে হলো?”
আরিশ গম্ভীর গলায় বলল,

“এটা তো আমি জানি না। তবে আজ থেকে বাড়িতে একটা মাছিও ঢুকতে পারবে না। কালই কড়া ঔষধ আনাচ্ছি। সব জায়গায় স্প্রে করাবো।”
অরা গভীর নিঃশ্বাস ফেলে চুপ করে থাকে। চোখের কোণে জমে থাকা ক্লান্তি আর মনখারাপ যেন সব কিছু ঢেকে দেয়। যা হওয়ার ছিল, হয়ে গেছে। এখন কড়া ঔষধে আর কীই-বা হবে?
ভালো লাগে না কিছুই…
“ঠিক আছে। আপনি অফিস থেকে এত তাড়াতাড়ি ফিরলেন কেন?”
অরা চোখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
আরিশ একদম গম্ভীর মুখ করে বলে,
“যেভাবে ফোন করে ভয় পাওয়ার কথা বললে, আমার তো প্রাণটাই বেরিয়ে যাচ্ছিল। অফিস, কাজ– এসবের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তুমি, হামিংবার্ড।”
অরার ঠোঁটের কোণে হালকা হাসি ফুটে ওঠে। সে বরকে জড়িয়ে ধরে বলে,
“আপনি আমাকে এত ভালোবাসেন!”

“তুমি বাসো না?”
আরিশ চোখে চোখ রাখে। অরা লাজুকভাবে মাথা নিচু করে। কিছু বলতে যাবে, তার আগেই আরিশ হুট করে গালে ছোট্ট একটা কামড় বসায়।
অরা চমকে উঠে বলে,
“এটা কী হলো!”
“উত্তর দিতে দেরি করার শাস্তি।”
ভীষণ গম্ভীর ভঙ্গিতে বলল আরিশ।
“আপনি আর ভালো হবেন না।”
অরা বিরক্ত ভঙ্গিতে চোখ ঘুরিয়ে বলল।
“আমি ভালো হতেও চাই না। ভালোবাসি– এখনই বলো।”
আরিশ নরম গলায় আদেশ দেয়।
“আই লাভ ইউ, রাগী ভূত।”
অরা হাসতে হাসতে বলে।

আরিশ ঠোঁটের কোণে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে ওকে কোলে তুলে নেয়।
অরা আঁতকে উঠে জিজ্ঞেস করে,
“আবার কী হলো?”
“তেমন কিছু না। আমি ফ্রেশ হবো, তুমি পাশে চেয়ারে বসে থাকবে, শুধু আমায় দেখতে দেখতে।”
আরিশ বেশ আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গিতে বলে।
“কী!”
অরা চোখ কপালে তোলে।
“কেন, থাকবে না?”
আরিশ ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে।
“আমার শীত লাগছে। ওয়াশরুমে ঠান্ডা পানি… ভালো লাগছে না। প্লিজ, এখানে বিছানাতেই বসে থাকতে দিন?”
অরা মায়াভরা গলায় অনুনয় করে। আরিশ ওর মুখের দিকে তাকিয়ে একটু নরম হয়ে যায়। সত্যিই তো, মেয়েটার শরীর খারাপ।

“ঠিক আছে। আগে সুস্থ হও, তারপর একদিন হবে।”
“কী হবে?”
অরার কণ্ঠে সন্দেহ।
“নাথিং। বসো। ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
আরিশ বলে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ায়।
“আচ্ছা।”
অরা বিছানায় হেলান দিয়ে বসে পড়ে।
ওর চোখে এখন একরাশ শান্তি। মনে মনে ভাবে— এই ভদ্রলোকের সবকিছুই অতিরিক্ত! কিন্তু তবুও… মানুষটা বড্ড বেশি আপন।

গাড়িতে উঠে বসে স্বামীর নম্বরে কল দিলেন শেলিনা। সামনে বসে চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে জলিল।
“হ্যালো শোয়াইব! আমার না, একদম ভালো লাগছে না।”
কণ্ঠে একটা চাপা অভিমানের ছায়া।
আসলে ইচ্ছা করেই এমন বলেছিলেন তিনি। অপর পাশ থেকে কী উত্তর এলো, তা স্পষ্ট শোনা গেল না। তবে শেলিনার চোখের ভঙ্গিমা বদলে গেল। পর মুহূর্তেই ঠাস করে কল কেটে দিলেন তিনি। ভেতরে ভেতরে রাগে ফুঁসছিলেন। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন– আজ বাড়ি গিয়ে মহা ঝামেলা বাধাবেন। ছাড়বেন না শোয়াইবকে!
মনে মনে তুলনা চলে এলো– খান সাহেব কী পরিমাণ পাগল তাঁর স্ত্রীর জন্য! কী দরদ, কী যত্ন! অথচ শোয়াইব? যার সঙ্গে প্রেম করে বিয়ে হয়েছিল, সেই মানুষটাও আজ আর ভালোবাসার ছায়া ফেলে না তাঁর উপর।
শোয়াইব তো কখনো শেলিনার জন্য আরিশের মতো তো দূরের কথা, তার এক-চুল পরিমাণ কেয়ারও করেনি। আর আরিশ? অপছন্দের বিয়ে করেও বউয়ের পেছনে এতটা পাগল!
শেলিনার বুকের ভেতরটা কেমন করে ওঠে। চোখের পাতা ভার হয়ে আসে, কিন্তু কাঁদেন না। শুধু ঘনঘন নিঃশ্বাস ফেলেন। নিজেকে সংবরণ করতে চান। পৃথিবীর সব অভিমান, সব দুঃখ যেন একা তিনিই বয়ে বেড়াচ্ছেন।

অরার শরীর খারাপের খবর শুনে তামান্নার মন একেবারে ভেঙে গেছে। বিয়ের মতো আনন্দের সময়ে যদি ভাবি অসুস্থ থাকেন, তাহলে তো কিছুই ঠিকভাবে উপভোগ করা যাবে না।
আনমনে ছাদে দাঁড়িয়ে ছিল তামান্না। চাঁদের আলোয় চারদিক নিঃশব্দ, সাদা এক নিস্তব্ধতা যেন চারপাশে ছড়িয়ে আছে।
“এই তামু!”
তামান্না চমকে তাকায়। পাশে এসে দাঁড়িয়েছে তালহা।
“হুম…”
ওর কণ্ঠে অন্যমনস্কতা।
তালহা ওর পাশেই দাঁড়িয়ে কাঁধে হাত রাখে, তারপর নিজের দিকে একটু ঘুরিয়ে নেয় তামান্নাকে।
“এত মন খারাপ করে আছো কেন?”
“ভাবির শরীর খারাপ। আর জানো, আমার মনটা কেমন কু’ডাকছে।”
তালহা স্নেহভরে বলে,
“কিছু হবে না। ভাবি ঠিক হয়ে যাবে। তুমি একটু বেশি টেনশন করছো।”

তামান্না দীর্ঘশ্বাস ফেলে। তালহা সে সুযোগে ওকে আলতো করে বুকে জড়িয়ে নেয়। আচমকা তালহার এমন স্পর্শে কিছুটা বিস্মিত হয়ে ওঠে তামান্না। ছেলেটা যে দিন দিন কতটা দুষ্টু হয়ে যাচ্ছে! লাজে মাথা নিচু করে রইল সে।
“ এয়ারপোর্টে গেলেন, না? আপা একাই আসবেন? “
“তামান্না প্রশ্ন করল, গলা ভিজে কিছুটা।
“সাবিহা নিজেই মানা করেছে যেতে। বলল, গাড়ি পাঠালেই চলে আসবে। জলিল গেছে। এতক্ষণে হয়তো বাসার কাছাকাছি পৌঁছেও গেছে।”
“তাহলে তো ভালোই।”
“হুম… তামু, শোনো…”
“জি বলুন।”
“উম্মাহ…”

তালহা মুখ দিয়ে শব্দটুকু করে। চুমু দেয়নি, কেবল শব্দ করেছে।
তামান্না লজ্জায় সরে দাঁড়ায়। ভুরু কুঁচকে বলে,
“এসব কী?”
তালহা খিলখিলিয়ে হেসে উঠে বলে,
“ মনের চুমু বড়ো, চুমু৷ টাচ তো করিনি– মুখেই একটু শব্দ করলাম। এই আরকি! “
তামান্না এবার আর নিজেকে ধরে রাখতে পারল না। ফিক করে হেসে ওঠে। তারপর না কিছু বলেই ছাদ থেকে একা একা নেমে যেতে থাকে।
আর তালহা? দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। তামান্না ভাটিয়া বড্ড লাজুক। তাকে ঠিক কবে, কীভাবে নিজের করে পাবে—এই চিন্তাতেই ডুবে গেলো ছেলেটা।

রাত দশটার দিকে খান বাড়িতে এসে পৌঁছল সাবিহা। এতগুলো মাস পর একমাত্র মেয়েকে কাছে পেয়ে তাসলিমা খাতুনের খুশি আর কে দেখে! তালহাও বোনের আসাতে অনেক খুশি হয়েছে। বিয়েতে এবার পুরো আনন্দ করতে পারবে সে। সাবিহার আগমনে আরিশের অবশ্য কোনো নড়নচড়ন নেই। সাবিহার যাওয়া-আসায় তার কিছু যায় আসে না। পুরনো সবকিছু ভুলে অরা সাবিহার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নেওয়ার চেষ্টা করছে। সাবিহাও অরাকে নিজের ভাবি হিসেবে মেনে নিয়েছে।

দিন আসে দিন যায়। বয়ে চলে সময়। অরাকে নিয়ে বেশ হন্তদন্ত হয়ে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছিল আরিশ। ডাক্তারের প্রাথমিক পরীক্ষা ও রক্ত পরীক্ষার রিপোর্ট দেখে তারা শিওর হোন, অরা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত।
তবে ভয়ের কিছু নেই– এখনো প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়েছে। ডাক্তার শেলিনা আক্তার পর্যাপ্ত বিশ্রাম, তরলজাত খাবার আর নিয়মিত পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছেন। ভালোভাবে যত্ন নিলে অরা দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
ডাক্তার শেলিনা বললেন,

“মি. খান, টেনশন করবেন না। আশা করি নিয়মমাফিক ওষুধ নিলে অরা শিগগিরই সুস্থ হয়ে যাবে।”
ডাক্তারের কেবিনে বসে আছে অরা আর আরিশ। অরার মুখ চুপচাপ, চোখে ক্লান্তির ছাপ। রক্তপরীক্ষার সময় সে ভীষণ ভয় পিয়েছিল।
“ওকে, মিসেস শেলিনা। আসছি।”
শেলিনা কিছু বলতে চাইলেও চুপ রইলেন। পরে অরার সাথে ফোনে কথা বলে নিবেন, এমনটা ভাবলেন।
অরাকে নিয়ে ডাক্তারের কেবিন থেকে বেরিয়ে এলো আরিশ। কেবিনের বাইরে আসতেই হুট করেই অরাকে কোলে তুলে নিলো। অরা একটু চমকলো।

“ কী করছেন এসব! আরে এটা বাড়ি নয়, হসপিটাল! “
“তাতে কী? তুমি দুর্বল, হেঁটে গেলে কষ্ট হবে।”
অরা জানে, এই ভদ্রলোককে বারণ করা যায় না। তাই চুপ করে থাকল। হাসপাতালের লোকজন আরিশের এই আচরণ দেখে হাসতে লাগলো, আর আরিশ তাতে পাত্তা দিলো না।
গাড়িতে বসিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল সে।
“এতো কেয়ার করেন অথচ নিজের হাতেই মাঝে মধ্যে আঘাতও করেন। অদ্ভুত মানুষ!”
আরিশ ড্রাইভিং সিটে বসে অরার হাত পেছনে চেপে ধরে বললো,
“তোমাকে সুখ দিলেও দেবো, কষ্ট দিলেও আমিই দেবো, হামিংবার্ড। অন্য কাউকে তোমার কাছে আসতে দেব না।”
“হুম… ঠিক বলো। চলুন, বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে।”
আরিশ ধীরে ধীরে অরার হাত ছেড়ে দিলো এবং শান্ত কণ্ঠে বললো,
“বিয়েতে বেশি হইচই করবে না। ডাক্তার বলেছে বিশ্রাম নিতে।”
“হুম, আমি জানি।”

গাড়ি এগিয়ে চলল, আর অরা আরিশের কথা চলতে থাকল।
সকালটা আজ হালকা মেঘলা। সূর্যের কিরণ ধীরে ধীরে আকাশ ছুঁয়ে উঠছে। পাখির কূজন ভোরের নীরবতায় মধুর সুর তোলা শুরু করেছে। বাতাসে লেগে আছে সুগন্ধি ফুলের মিষ্টি গন্ধ। শহরজুড়ে ধীরে ধীরে মানুষের কর্মব্যস্ততা শুরু হয়েছে।
“ এই যে, সুন্দরী! তোমার ফোন বন্ধ ছিলো কেন? গতকাল রাতে ঘুমের ঘোরে কী বলেছি, নিজেও জানি না। “
কল রিসিভ হতেই একনাগাড়ে কথা বলে একটু দম নিলো মেহরাব। সাবিহা ডাইনিং রুমে বসে আছে। সকালের নাস্তা করছে সবাই।
“ আমি আপনার সাথে একটু পরে কথা বলছি। “
“ পরে? পরে কেন? শোনো সাবিহা, আমি যদি কিছু ভুলভাল বকে থাকি তারজন্য সরি। “
সাবিহা সবার দিকে দেখে নিলো একবার। মৃদু হেসে বলল,

“ আপনি কোথায়? “
“ বাসায়। “
“ ওকে। “
সাবিহা এতটুকু বলেই কল কেটে দিলো। মুখের ওপর কল কাটাতে মন খারাপ হয়ে গেছে মেহরাবের। কী করবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ ফোনের নোটিফিকেশনের শব্দে চমকে উঠল সে। সাবিহা টেক্সট করেছে – একটা কফিশপের ঠিকানা।
“ কার সাথে কথা হচ্ছিল, তোর?”
ভাইয়ের প্রশ্নে কিছুটা বিব্রত হলো সাবিহা। আরিশ খাওয়া শেষ করে অরার খাওয়ার দিকে নজরদারি করতে ব্যস্ত। তালহা সতর্ক দৃষ্টিতে বোনের দিকে তাকিয়ে আছে।

“ মেহরাবের সাথে, আরিশ ভাইয়ার বন্ধু। “
ভ্রু উঁচিয়ে শুধালো তালহা,
“ উনার সাথে তোর কীসের কথা?”
“ এমনি মাঝে মধ্যে কথা হয়। বিশেষ কিছু না। “
“ ওহ। “
তাসলিমা খাতুন বললেন,
“ কথা বলে সময় নষ্ট না করে, তাড়াতাড়ি খাওয়াদাওয়া শেষ কর তালহা। বিয়ের মাত্র দু’টো দিন বাকি। তোরা এতসব কেনাকাটা করবি কখন?”
মাঝখানে আরিশ বলে,
“ চাচি আপনি এতো চিন্তা করবেন না। সময়মতো সবকিছু হয়ে যাবে। “

স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন তাসলিমা। আরিশ যখন বলেছে, তখন সত্যি চিন্তার কিছু নেই।
খাওয়া শেষে অরা সোজা নিজের রুমে চলে গেলো। আরিশ সাতদিন অফিস বন্ধ করে দিয়েছে। বিকেলে সবাই শপিং করতে যাবে, আপাতত কোথাও যাবার কোনো পরিকল্পনা নেই।
“আচ্ছা পাখি, তুমি কি আমার ওপর বিরক্ত হও?”
হঠাৎ এমন প্রশ্ন শুনে অরা একটু অবাক হয়ে বলল,
“আপনার মাথায় এমন প্রশ্ন কোথা থেকে এলো?”
“কী জানি! হঠাৎ মনে হলো।”
“আপনার মনের ভুল ওগুলো।”
“হয়তো।”

আরিশ কথা বলতে বলতে অরাকে বিছানায় ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দিলো। অরা আরিশের দিকে তাকিয়ে রইলো কেবল। কী করবে সে? দিনদুপুরে এসব!
“দরজা খোলা আছে।”
“থাকুক।”
আরিশের চোখ-মুখে ছিল এক অদ্ভুত নেশা, যা অরার মনে জটিল অনুভূতি তৈরি করল। সে বুঝতে পারছিলো না কী করবে—এত কাছে আসা তার ভালো লাগছে না। ‘যদি কেউ চলে আসে?’ চিন্তাটা লাজলজ্জার সাথে মিশে অরাকে আরও অস্থির করে তুললো।
“আরিশ! প্লিজ…”
কিন্তু কথা শেষ করার আগেই আরিশ তার ঠোঁট নিজের দখলে নিয়ে নিলো। বিছানার সাথে দু হাত চেপে ধরে অরার সামান্য নড়াচড়া পর্যন্ত ঠেকিয়ে দিলো সে। অরা কিছু বলতে চাইলেও শব্দ যেন আটকে গেলো গলায়। আরিশ যেন তার সমস্ত শক্তি এক জায়গায় ছড়িয়ে দিলো। ধীরে ধীরে তার স্পর্শ কমিয়ে হাত ছেড়ে দিলো। অরার শরীর নেতিয়ে পড়লো।

হামিংবার্ড পর্ব ৫৫

আর এবার আরিশ অরার দুই হাত মাথার ওপরে তুলে ধরে বলল,
“আমি বাড়িতে থাকতে কেউ রুমে আসবে না, ডার্লিং। অহেতুক মুড নষ্ট করছো।”
“দিনদুপুরেও আপনার মুড আসে?”
“মুড আসার জন্য দিন-রাত, সকাল-সন্ধ্যা, কিংবা মধ্যরাতের কোনো সীমা নেই।”
কথা শেষ করে আবারও অরাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে উঠলো আরিশ। তার স্পর্শে অরার ঠোঁট, গাল, গলা থেকে ঘাড় পর্যন্ত যেন মুচড়ে যেতে লাগলো। ভদ্রলোকের সবকিছু ঠিক আছে, শুধু কাছে আসার সেই অতিরিক্ত ধরণটা ব্যতীত।

হামিংবার্ড পর্ব ৫৭