হামিংবার্ড পর্ব ৬৮

হামিংবার্ড পর্ব ৬৮
তাসমিয়া তাসনিন প্রিয়া

তালহা ডাক্তার শেলিনাকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। বাকিরাও রুম থেকে চলে যাওয়ার পর আরিশ অরাকে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। আচমকা অরাকে ওভাবে পড়ে থাকতে দেখে আরিশের যেন হৃৎস্পন্দন থেমে যাচ্ছিল।
ঘুমন্ত অরার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আরিশ। একহাতে অরার হাত ধরে রেখে অন্য হাত দিয়ে, অরার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে সে।
” আরিশ..ভাইয়া তুমি ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি ততক্ষণ ভাবির সাথে আছি। ”
সাবিহার কথায় কোনো হেলদোল নেই আরিশের। তার সমস্ত মনোযোগ যেনো অরার দিকেই। সাবিহা চুপচাপ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর আবার বলল,

” ভাইয়া?”
” তুমি যাও সাবিহা। আমার ফ্রেশ হওয়ার দরকার নেই। ”
সাবিহা মাথা নেড়ে, ধীরপায়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
আরিশ ওভাবেই বসে রইলো, চোখ ছলছল করছে তার। মনে ভয় কাজ করছে। অরা যদি আবারও তাকে দোষারোপ করে, দূরে সরে যায়? তাহলে আরিশ কী করবে! ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে সে। পাগলের মতো অরার কপালে, হাতে ঠোঁট ছুঁইয়ে দেয় অনেকবার। কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলে,
” পাখি রে আমি বড্ড অসহায়। তোমার সাথে দেখা হওয়ার আগে আমি এমন ছিলাম না। তোমাকে ভালোবেসে আমি এমন হয়েছি৷ আমার… আমার মনে হচ্ছে, তুমি আমার সাথে না থাকলে আমি নিঃশ্বাস নিতে পারবোনা। আমি অনেক ভুল করেছি, জানি এবং মানি। কিন্তু সবকিছুর বিনিময়ে হলেও তোমাকে ছাড়তে পারবোনা আমি। তোমার সাথে দূরত্ব তৈরি হলে আমি সহ্য করতে পারবোনা। ”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরিশ নিজে নিজে অনেক কথা বলতে থাকে। একটা সময় ক্লান্ত শরীরে ওভাবেই ঘুমিয়ে পড়ে। অবচেতন অরা যদি জানতো, তার জন্য এক উন্মাদ কতটা ভাবে, ভালোবাসে!
আলতো করে চোখ খুলল অরা। জানালার ফাঁক গলে ভেতরে ঢুকে পড়েছে সকালের নরম আলো। মাথার পাশে বসে আছে আরিশ, একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। চোখে ক্লান্তি, কিন্তু মুখে একফোঁটা শান্তি।
“আপনি… রাতে ঘুমাওনি?”
আরিশ মৃদু হাসল।
“ঘুমিয়েছি। কিন্তু ঘুমানোর সময় চোখ তো বন্ধ হয়েছিল, মন তো না।”
অরা চোখ নামিয়ে নিল। একটুখানি সময় নীরবতা থাকলো। তারপর আরিশ বলল,

“পাখি, ভয় পেয়েছিলাম খুব। এখন কেমন লাগছে? ”
অরা শোয়া থেকে উঠে বসলো, আরিশ তাকে ধরে আছে।
” এখন ঠিক আছি। ”
” ভয় পেয়ে গেছিলাম আবার যদি আমার থেকে দূরে চলে যাও…”
“না!”
আচমকা বলে উঠল অরা। চোখের কোণে জল জমে উঠেছে।
“আমি আপনাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না। ভয় পেয়েছিলাম আমিও। মনে জমে থাকা রক্তাক্ত স্মৃতিগুলোকে…বড্ড ভয় পেয়েছিলাম আরিশ।
আরিশ নিজের হাতের তালুতে অরার হাত রাখলো।

“তোমাকে আবার সেই রাতের স্মৃতি আঘাত করেছে। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে। ”
” এসব বলবেন না। ভুল তো আমারও ছিলো। আমি তো মা হতাম, মায়ের তো সবচেয়ে বেশি দায়িত্ব থাকে। অথচ আমি…. আমি বাচ্চার কথা না ভেবে আপনাদের ঝামেলার মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালাম। ”
কথা বলতে বলতে ঠুকরে কেঁদে ওঠে অরা। আরিশ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে, কপালে চুমু খায়।
” কান্না করে না, হামিংবার্ড। সবকিছু তকদীর। আমাদের কপালে সে ছিলো না। কিন্তু….. ”
অরা মাথা উঁচু করে তাকিয়ে শুধালো,

” কিন্তু কী?”
“ আমরা আবারও ট্রাই করতে পারি। “
আরিশের দুষ্ট হাসি দেখে অরা লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেলল। আরিশ তাকে বুকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“ চলো, ফ্রেশ হয়ে নেবে। “
“ আপনিও চলুন, গোসল সেরে নিবেন। “
“ গোসল? তুমি অসুস্থ ছিলে। তাহলে গোসল করা জরুরী নয়।“
অরা আরিশের থেকে দূরে সরে বসলো। চোখমুখ কুঁচকে ফেলল।
“ জরুরী না হলেও করতে হবে। সব ঘামের গন্ধ….. “
অরার কথা শুনে আরিশেরও খেয়াল হলো, গতকাল রাতে অফিস থেকে ফেরার পর আর জামাকাপড় চেঞ্জ করা হয়নি তার। নিজের দিকে তাকিয়ে চোখমুখ কুঁচকে ফেলল আরিশ। চেহারায় বিরক্তিকর ছাপ ফুটিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়াল।

“ ভুলেই গিয়েছিলাম। উফ! তুমি এতক্ষণ কীভাবে আমার সাথে ছিলে পাখি? “
“ আমার মন অনেক বড়ো, এজন্য। “
দু’জনেই একসাথে হেসে উঠল।
“ আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। “
“ যান। “
আরিশ ওয়াশরুমে ঢুকতেই অরা বিছানা ত্যাগ করলো। ধীরপায়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোল।
দুপুরের রোদ ঘরের জানালা গলে নরম করে ছুঁয়ে যাচ্ছে ফ্লোর। বাতাসে হালকা গরম ভাব। পাশের রুমে ঘড়ির কাঁটা টিকটিক শব্দ করছে, কিচেন থেকে ভেসে আসছে রান্নার হালকা ঘ্রাণ।
রান্নাঘর থেকে তামান্না খাবার গরম করে আনছে। ডাইনিং টেবিলে অরা বসে আছে,সাবিহার সাথে কথা বলছে সে। আজ আরিশ ঘরে থেকে অফিসের কিছু কাজ সেরে নিচ্ছে। অরাকে রেখে অফিসে যায়নি সে। তাসলিমা খাতুন পাশে বসে বললেন,

“আজ তোমাকে হাসতে দেখে ভালো লাগছে। এখন শরীর কেমন লাগছে? ”
“ আলহামদুলিল্লাহ, চাচি। “
“ যাক আলহামদুলিল্লাহ। ছেলেমেয়ে অসুস্থ থাকলে মায়ের মন বড্ড অস্থির লাগে। “
অরা কিছু বলল না। তার চোখে এখনো অল্প জলের আভা, কিন্তু মুখে একটা দৃঢ়তা।
এমন সময় তালহা ও তামান্না এসে বসলো টেবিলে।
তালহা বলল,
“ ভাবি মা, ঘুরতে গেলেই মনটা ভালো লাগবে… দুইদিনের জন্য ভাইয়াকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসো। তোমার রিফ্রেশমেন্ট দরকার।”
তামান্না চুপচাপ পাশে বসে ছিল। হঠাৎ বলল,

“ হ্যাঁ ভাবি, সাজেক থেকে ঘুরে আসুন। ”
সাবিহাও তালে তাল মিলিয়ে বলল,
“ হ্যাঁ ভাবি, তোমরা ঘুরে এসো। “

ইতিমধ্যে আরিশ এসে উপস্থিত হয়েছে। সবার কথাবার্তা শুনে কথার সারমর্ম কী সেটা বুঝতে সময় লাগেনি তার৷
“ তোমাদের ভাইয়াকে বলবো। “
আরিশ ধীরপায়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে এসে দাঁড়াল, অরার পাশের চেয়ারটা টেনে বসতে বসতে বলল,
“ ঠিক আছে। তুমি বললে আগামীকালই যাবো। “
অরা কেবল মাথা নেড়ে সম্মতি জানাল। সবাই মুচকি মুচকি হাসল। অরা চাইবে আর আরিশ তাতে ‘না’বলবে এটা কখনো সম্ভব? সম্ভব না। তাসলিমা খাতুন এতক্ষণে খাওয়া শেষ করে ফেলেছেন।
“ তাহলে তাই করো আরিশ। তোমরা ফিরে আসার পরই ওদের দুই ভাইবোনের বিয়ে নিয়ে ভাববো। “
সবাই খাবার খেতে খেতে কথা বলছে। আরিশ বলল,
“ আমি মেহরাবের সাথে কথা বলেছিলাম। বলল, অফিসে কীসব ঝামেলা হয়েছে ওর৷ কিছুদিন যাক, তারপর জানাবে। “

সাবিহার মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেলো। মেহরাব যতই বলুক কিছু হয়নি, সাবিহা ভালো করেই বুঝতে পারে সব। মেহরাবের মা একটু অন্যরকম মানুষ। উনাকে মানানো ঝামেলা । প্রথমে বিয়ের জন্য রাজি হলেও উনার অপারেশনের সময় সাবিহার না যাওয়াতে বেঁকে বসেছেন। অবশ্য এখানে সাবিহার তেমন দোষ নেই, আবার আছেও বলা যায়। মেহরাব যেমন নিজে থেকে কিছু বলেনি, তেমনই সাবিহাও কখনো তার পরিবারের লোকজনের বিষয় তেমন খোঁজ নেয়নি। ফলশ্রুতিতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
“ ঠিক আছে। “
তাসলিমা খাতুন কথা শেষে নিঃশব্দে ডাইনিং রুম থেকে চলে গেলেন। আরিশ, অরার ঘুরতে যাওয়া নিয়ে বাকিরা নিজেদের মধ্যে কথা বলতে থাকলো।

পড়ন্ত বিকেল। শহর থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত গ্রাম। সেই গ্রামের এক প্রকাণ্ড বড় বটবৃক্ষের নিচে বসে আছে পলাশ। পরনে তার সাদামাটা লুঙ্গি, সাথে টি-শার্ট। আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। মনটা বড্ড খারাপ লাগছে। কতগুলো মাস পেরিয়ে গেলো, কতকিছু ঘটে গেলো তার জীবনে। মানুষের জীবন বড় অদ্ভুত। কখন কী ঘটে যায় বলা যায় না। সময় বয়ে চলে যাচ্ছে অথচ আজ পর্যন্ত নয়না কোনো যোগাযোগ করলোনা। ভেবেছিল নয়নাও তাকে পছন্দ করে, ভালোবাসে। কিন্তু তার ধারণা কতটা ভুল সেটা এতদিনে বুঝে গেছে পলাশ।
“ পলাশ! “

আচমকা মামির কণ্ঠস্বর শুনে আঁতকে উঠল ছেলেটা। বসা থেকে দ্রুত উঠে বাড়ির দিকে এগোল। মনের ভেতর ভয় তার। হয়তো আবারও তার মা পাগলামি শুরু করেছে!
ঢাকার গরম আর একঘেয়ে ধুলোবালির শহুরে ক্লান্তি থেকে খানিকটা মুক্তি পেতে এবং অরার ইচ্ছে পূর্ণ করতেই আরিশ সাজেক যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। আগামীকাল সকালে তারা রওনা হবে। সেজন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু প্যাক করে নিচ্ছে অরা। আরিশ বিছানায় বসে আছে।
” সবকিছু ঠিক আছে? ”
” ঠিকই তো দেখছি!”
আরিশ অরার দিকে গভীরভাবে তাকিয়ে বলল। অরা নিজের দিকে তাকাতেই দেখল, পেটের শাড়ি সরে গিয়ে কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে। দ্রুত সেটা ঠিক করে ফেলে অরা। কিন্তু আরিশ উঠে তার কাছে গিয়ে শাড়িটা আবারও সরিয়ে ফেলল।

” আপনি ভালো হোন। ”
” সরি,বেবি। যা বলো সবকিছুই করবো কিন্তু ভালো হতে পারবোনা। ”
ভেংচি কাটল অরা। আরিশ মুচকি হেসে অরার একটা হাত ধরে টেনে নিল নিজের দিকে, তারপর সেটি আলতো করে অরারই পিঠে চেপে ধরল। এরপর সে অরার ঘাড়ের ওপর থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিল এক পাশে।
” আরিশ! এখন কাজ করছি….”
” আমিও কাজ করছি, ডার্লিং। ইট’স ভেরি ইম্পর্ট্যান্ট। ”
হাল ছেড়ে দিলো অরা। আরিশ তার ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শ ছড়িয়ে দিলো তার ঘাড়ে।
” আউচ! আরিশ… লাগছে আমার। ”

অসাবধানতাবশত আরিশ একটু কামড়ে ফেলেছে, দাঁতের চাপে ঘাড়ে লালচে দাগ পড়ে গেছে। ব্যাপারটা বুঝতে পেরে আরিশ সঙ্গে সঙ্গে অরাকে ছেড়ে দিল। অরা মুখ গোমড়া করে রইলো।
” সরি, পাখি! আমি.. আমি আসলে বুঝতে পারিনি। ”
” আপনার স্বভাব আর বদলাতে পারলেন না। মাঝখানে যে কিছুদিন রেহাই পেয়েছিলাম সেটাই অনেক। ”
অরার এমন কথা শুনে শব্দ করে হেসে ফেলল আরিশ।
” যাক অবশেষে তুমি আমাকে মেনে নিয়েছো। ”
ড্রেসিং টেবিলের সামনে থেকে ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে এলো আরিশ। চুপচাপ এসে দাঁড়াল অরার পেছনে, তারপর এক হাতে তার চুল সরিয়ে দিল কাঁধের এক পাশে। ঘাড়ের লালচে দাগটা দেখে তার চোখে খেলে গেল অনুশোচনা।
“সরি, পাখি, আজকে একটু বেশিই হয়ে গেল।”

মৃদু স্বরে বলল সে। কথা না বলে অরা বসে রইল। আরিশ হাতের আঙুলে একটু মলম নিয়ে ঘাড়ে আলতো করে লাগাতে লাগল। তার স্পর্শে অরার শরীর কেঁপে উঠল এক অজানা শিহরণে।
ঘাড়ে মলম লাগানোর সময়, আরিশের মুখটা খুব কাছে চলে এলো।
“তোমাকে ব্যথা দেওয়া আমার ইচ্ছা ছিল না পাখি। কিন্তু তুমি জানো আমার ভালোবাসা এমনই, বিষাক্ত।
অরার ঠোঁট কেঁপে উঠল, কিন্তু কিছু বলল না। চোখে তার এখনও অভিমান। আরিশ তখন খুব ধীরে ঘাড়ে একটা চুমু খেলে দিল।
” ইট’স ওকে। কী আর করার… এরপর থেকে এমন করলে দাঁত ভেঙে ফেলবো হু। ”
অরার কথায় হাসতে লাগলো আরিশ। অরা কিছু বলল না। আরিশের সাথে কথা বলা বন্ধ করে আবারও ল্যাগেজ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে উঠলো সে।

ভোর চারটায় এলার্ম ঘড়ি বেজে ওঠার আগেই অরা উঠে পড়েছে। গতকাল রাতেই স্যুটকেস গোছানো, তবুও মনে হচ্ছে – কিছু ভুলে গেল না তো? আরিশ ঘুমঘুম চোখে দাঁড়িয়ে ব্রাশ করে, ফ্রেশ হয়ে রুমে এলো। অরা দাঁড়িয়ে সবকিছু দেখছে। ঢাকা শহরের ব্যস্ত সড়ক এড়াতেই সকাল সকাল বের হবে তারা। কারণ সকালবেলা তূলনামূলক রাস্তা ফাঁকা থাকে।
” সবকিছু গোছানো হয়েছে। আমি হালকা নাস্তা তৈরি করে সাথে নিচ্ছি, আপনি রেডি হোন। ”
“তোমার যা সাথে নেওয়ার নাও, আমি শুধু তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি। বাকিটা ভুললেও চলবে।”
অরা মুচকি হাসল শুধু।

ভোর সাড়ে পাঁচটায় তারা বেরিয়ে পড়লো। রোদের ঝিলিক এখনও ওঠেনি, আকাশ কেবল ফ্যাকাশে হয়ে উঠছে। গাড়িতে বসে অরা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে। শহর এখনো ঘুমিয়ে।
আরিশ ড্রাইভ করছে, পাশের সিটে অরা হালকা ঘুমে ঢুলছে। রাস্তায় চলতে চলতে কুমিল্লা পর্যন্ত এসে নাশতার বিরতি। পরোটা, ভুনা মাংস আর গরম চা। অরার চোখ তখনও আধো ঘুমে, কিন্তু মন ফুরফুরে।
“ জানেন, আমি সাজেকে কখনো যাইনি।” বলল অরা।
“ তাহলে তো ভালোই হলো। আমার সাথে প্রথম যাবে। ” মুচকি হেসে উত্তর দিল আরিশ।
দুপুর নাগাদ তারা পৌঁছে গেল খাগড়াছড়ি হয়ে সাজেক যাওয়ার রিজার্ভ জিপ স্ট্যান্ডে।
পাহাড়ি পথে ঝাঁকুনি খেতে খেতে চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সবুজের মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলো তারা। পথের বাঁকে বাঁকে মেঘ হাত ছুঁয়ে যাচ্ছে। কখনও ঝিরঝির বৃষ্টি, কখনও গাঢ় রোদ।

সাজেক পৌঁছে কটেজে চেক-ইন করার সময় পাহাড়ের ঢালু বেয়ে বাতাস বয়ে আসছিল। কাঠের রুম, জানালার বাইরে সবুজে ঢাকা পাহাড় আর নিচে মেঘের সাদা আস্তরণ।
অরা বারান্দায় দাঁড়িয়ে বলল,
“এটা যেন কোনো স্বপ্নপুরী!”
আরিশ তার পেছনে গিয়ে হাত রাখলো কাঁধে, বলল,

হামিংবার্ড পর্ব ৬৭

“স্বপ্ন নয়, এটা আমাদের নিজের করে নেওয়া একটা শান্তির জায়গা। তুমি আর আমি।”
রাতে তারা আগুন জ্বালিয়ে বসলো কটেজের সামনে। পাহাড়ি কফি আর ঝিরঝির ঠান্ডা বাতাসে জমে উঠল কথাবার্তা। তারা দুইজনে পাশাপাশি বসে মেঘে ভেসে যাওয়া চাঁদের আলো দেখল। কল্পনার থেকেও বেশি শান্ত লাগছিল।

হামিংবার্ড পর্ব ৬৯