হৃদয়জুড়ে তুমি পর্ব ১৪

হৃদয়জুড়ে তুমি পর্ব ১৪
লেখিকাঃদিশা মনি

নিজের বিয়ের কথা শুনে ইহান আপত্তি করে বলে,
‘আমি এই বিয়ে করতে পারবো না?’
মান্নাত বেগম জানতে চান,
‘কেন পারবি না? তুই তো সিমাকে বউ হিসেবে মানিসই না। তাহলে বিয়ে টা করে নিতে তোর প্রব্লেম কোথায়?’
ইহান ঠান্ডা মাথায় কিছুক্ষণ ভেবে উত্তর দেয়,

‘আমার আর সিমার তো এখনো ডিভোর্স হয়নি। তাহলে আমি দ্বিতীয় বিয়ে কিভাবে করব?’
‘এই নিয়ে কোন চিন্তা করিস না। আমি সিমাকে বলব ও দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতিপত্রে সই করে দিবে। তাহলে তো আর কোন অসুবিধা হবে না।’
‘এভাবে হয়না আম্মু। আমি বিয়ে করতে পারবো না।’
‘কেন পারবি না? তাহলে কি তুই সিমাকে ভালোবাসিস?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইহান কোন উত্তর না দিয়ে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। মান্নাত বেগম পান চিবুতে চিবুতে বলেন,
‘আমি তোর মা ইহান। তোকে আমি জন্ম দিয়েছি। তাই তোকে কিভাবে কাবু করতে হয় সেটা আমার থেকে ভালো আর কেউ জানবে না। এবার দেখ আমি কি বুদ্ধি করেছি। তোর মুখ দিয়ে আমি স্বীকার করিয়েই ছাড়ব যে তুই সিমাকে ভালোবাসিস। তারপর তুই নিজে সিমাকে এই বাড়িতে ফিরিয়ে আনবি। তাহলেই আমি শান্তি পাবো।’
ইনায়া মান্নাত বেগমের সামনে এসে বলে,

‘কিন্তু আম্মু যদি আমাদের পরিকল্পনামাফিক সবকিছু না হয়। ভাইয়া যদি নেহা আপুকেই বিয়ে করে নেয় তাহলে কি হবে?’
‘সেটা ইহান করতে পারবে না। আমি ওর মা, ওর চোখ দেখেই ওর অনুভূতি বুঝতে পারি আমি। ওর চোখে সিমার জন্য অনুভূতি স্পষ্ট দেখেছি আমি। তুই দেখিস ও কিছুতেই নেহাকে বিয়ে করতে পারবে না। আর যদি চায় তাও পারবে না। কারণ নেহার বয়ফ্রেন্ড আছে। আজ নেহার সাথে ওর বয়ফ্রেন্ডেরই বিয়ে হবে।’

ইহান নিজের রুমে এসে সিমার কথাই ভাবছিল। ইহান সিমাকে কিছুতেই যেন ভুলতে পারছে না। না চাইতেও সিমার কথাই তার মনে আসছে বারংবার। এই রকম পরিস্থিতিতে সিমাকে ছেড়ে সে কিভাবে থাকবে? অন্য কাউকে কিভাবে বিয়ে করবে? ইহান নিজের এই প্রশ্নগুলোর কোন উত্তর পায় না।

সামিহাকে নিয়ে সাজ্জাদ চৌধুরীর সম্মুখীন হলো সিমা। সাজ্জাদ চৌধুরীর হাতে সামিহার হাত দিয়ে বলল,
‘ও আমার বোন আব্বু, তোমার নিজের মেয়ে যাকে তুমি এতদিন দূরে ঠেলে রেখেছিলে। আজ ও এসেছে আমাদের কাছে। আমি তোমার কাছে অনুরোধ করে বলছি প্লিজ ওকে আর দূরে ঠেলে দিও না। এবার ওকে আপন করে নাও না আব্বু। মেয়েটা অনেক আশা নিয়ে এসেছে। আশা করছি তুমি ওকে ফিরিয়ে,, ‘

সিমার কথা শেষ হওয়ার আগে সাজ্জাদ চৌধুরী সামিহাকে বুকে টেনে নেন। সামিহাকে জড়িয়ে ক্রন্দনরত অবস্থায় বলেন,
‘তোর কাছে ক্ষমা চাওয়ার মুখ আমার নেই মা। তবুও তোর এই অপরাধী বাবা তোর কাছে ক্ষমা চাইছে। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি বিনা অপরাধে তোকে এতদিন দূরে ঠেলে রেখেছিলাম। বিনা অপরাধে তুই এত শাস্তি ভোগ করলি।’
সামিহা বলে,

‘আমি এইজন্য তোমাকে কখনো করব না। তোমার জন্য আমি এতদিন নিজের পরিবার থেকে দূরে ছিলাম। আচ্ছা ড্যাড, তুমি বলো আমার কি দোষ ছিল? মায়ের মৃত্যুর জন্য কিভাবে আমি দায়ী হই? আমি তো একটা নিষ্পাপ মাছুম বাচ্চা ছিলাম।’
সাজ্জাদ চৌধুরী বলার মতো কিছু খুজে পান না। কারণ তিনি সত্যিই অনেক বড় একটা অন্যায় করেছেন। যার কোন ক্ষমা হয়না। সিমা তখন এগিয়ে এসে সামিহাকে বলে,

‘কেউ নিজের ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হলে তাকে ক্ষমা করে দিতে হয় বোন। আমি জানি, তুই তোর হারানো শৈশব, হারিয়ে যাওয়া সময়গুলো আর কখনো ফেরত পাবি না। কিন্তু এখান থেকে তো আমরা সবকিছু নতুন ভাবে শুরু করতে পারি তাইনা? কি দরকার রাগ পুষে রাখার? চল না এখন আমরা সবাই মিলে একটা সুখী পরিবার গঠন করি।’
তিন বাবা-মেয়ে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে। আজ যেন সম্পূর্ণ হলো একটি পরিবার।

সামিহা ও সিমা একই রুমে বসে ছিল। সামিহা সিমার কাছ থেকে তার ও ইহানের ব্যাপারে সবকিছু শুনল। সব শুনে তার রাগ হলো ইহানের উপর। সামিহা বলল,
‘কেমন মানুষ ইহান? যে রূপ দিয়ে মানুষকে বিবেচনা করে।’
সিমা তখন বলে,
‘বাদ দে সেসব কথা। উনি ওনার মতো সুখী হন। আজ ওনার পছন্দমতো মেয়ের সাথে ওনার বিয়ে হওয়ার কথা। আশা করব এবার উনি সুখী হবেন।’

ইনায়া ও জিসানের বিয়ে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হলো। অতঃপর নেহা ও ইহানের বিয়ের বন্দবস্ত করা হলো। নেহা বিয়ের আসরে আসার কিছুক্ষণ পর ইহান এসে বলল,
‘আমি এই বিয়ে করতে পারব না।’
রায়হান খান জানতে চান,
‘কেন পারবে না তুমি এই বিয়ে করতে?’

‘কারণ আমি বিবাহিত। আমি আমার স্ত্রীকে সিমাকে ভালোবাসি। আমার হৃদয়জুড়ে একজনই রয়েছে সে হলো সিমা। তাই অন্য কাউকে বিয়ে করা আমার কাছে সম্ভব নয়।’
মান্নাত বেগম খুশিতে উচ্ছ্বসিত হয়ে বলে ওঠেন,

‘বাহ, এটাই তো শুনতে চেয়েছিলাম তোর মুখ থেকে। যাক শেষপর্যন্ত তুই নিজের মনের কথা বুঝতে পারলি। আমার পরিকল্পনা সফল। এখন যা আর দেরি করিস না, আমার বাড়ির বউকে বাড়িতে সসম্মানে ফিরিয়ে নিয়ে আয়।’
ইহান সাথে সাথে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। অতঃপর নেহার সাথে তার বয়ফ্রেন্ডের বিয়েটা হয়ে যায়। সবকিছু ভালোয় ভালোয় মিটে যাওয়ার পর মান্নাত বেগম ভাবতে থাকেন,
‘সিমা আর ইহান এক হলেই এখন সবকিছু ভালোয় ভালোয় মিটে যাবে।’

হৃদয়জুড়ে তুমি পর্ব ১৩

আসসালামু আলাইকুম। আগামীকাল আমি একটু বাইরে যাব তাই গল্প দিতে পারব না। সবাইকে আগে থেকেই জানিয়ে রাখলাম। সবকিছু ঠিক থাকলে পরশুদিন মানে শুক্রবার গল্প দিবো ইনশাআল্লাহ। ততক্ষণ পর্যন্ত আপনারা ভাবতে থাকুন গল্পে শেষ পর্যন্ত সিমা ও ইহানের মিল হবে কিনা

হৃদয়জুড়ে তুমি পর্ব ১৫