হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১৯

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১৯
সানা শেখ

সামসুন্নাহার বেগম দমে না গিয়ে গলার স্বর চড়িয়ে বললেন,
“তুমি মিথ্যে কথা বলছো, মায়ার দোষ চাপা দেওয়ার জন্য।”
আলভী রাগে লাল হয়ে চোয়াল শক্ত করে, নানির দিকে কয়েক কদম এগিয়ে গিয়ে বলে,
“আজ যদি তুমি বুড়ো মানুষ না হতে, তাহলে এক আছাড়ে পেট ফাটিয়ে দিতাম তোমার। বয়স হয়েছে, গায়ের চামড়াও ঝুলে পড়েছে, কিন্তু মাথার ভেতরে এখনো শুধু শ য় তানি। নামাজ কালাম তো বোধহয় কখনো পড়োও না। আল্লাহর ভয়ও নেই মনে, অথচ মুখে ধর্মের বুলি ঝাড়ো। এক পা কবরে, আরেক পা জমিনে তবুও কুৎসা রটাও। মায়া কী করেছে তোমার? তোমার জমির পাকা ধানে মই দিয়েছে? ঘরের টাকা চুরি করে এনেছে? না কি তোমার সংসারে দখল নিতে চেয়েছে? কোনো টাই তো করেনি। তাহলে কেনো সব সময় মায়ার পেছনে লেগে থাকো? ইচ্ছে তো করছে তোমাকে কাচা চিবিয়ে খেতে। বুড়ো মানুষ বলে আজ বেঁচে গেলে, নয়তো খবর ছিল আজ।”
এতক্ষণ চুপ থাকা ঐশী রহমান কাঁপা গলায় বলেন,

“মা, তোমার সমস্যা কী বলো তো? এক কথা তোমাকে কতবার বলেছি, তবুও বোঝো না? তুমি মেয়ের জামাইয়ের বাড়ি এসেছো ঘুরবে, ফিরবে, খাবে, গল্প করবে। অথচ তুমি মায়ার পেছনে লেগে সবার আনন্দ টুকু বিষিয়ে দিচ্ছো। এত মানুষের সামনে তুমি নিজেই নিজের সম্মান নষ্ট করছো এটা কি তোমার ভালো লাগছে? ভবিষ্যতে এদের সামনে মুখ দেখাবে কিভাবে?”
সামসুন্নাহার বেগম মাথা নিচু করে বসে রইলেন। উপরের রুমে যারা যারা ছিল আলভীর রাগী গলার স্বর শুনে সবাই নিচে নেমে এসেছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আলভী রাগে কাপছে। ওর নানি যে এতটা নিচে নামতে পারে দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি। কিভাবে পারলো ওর বউয়ের নামে এসব বলতে? মায়া কে অপছন্দ করে ঠিক আছে তাই বলে এসব বলবে? একজন মানুষের চরিত্রের দিকে আঙ্গুল তোলা ছোট খাটো কোনো কথা নাকি? ওর তো ইচ্ছে করছে ওর নানি কে ধরে মনের রাগ মিটিয়ে উদ্যম মাদ্যম দিতে। একে তো বুড়ো মানুষ তার উপর আবার নানি হয়। রাগ উঠলেও সেভাবে কিছু বলতে পারছে না।
ঘুরে দাঁড়ায় নানার দিকে তাকিয়ে।
“এই বুড়ি কে কিছু করার আগেই আমার চোখের সামনে থেকে সরাও। আর তোমার ছোট নাতনীও যেন আমার চোখের সামনে না আসে।”

আলভীর মুখে শেষের কথা গুলো শুনে সবাই লিরার দিকে তাকায়। এই বজ্জাত মেয়ে টা আবার কি করেছে? লিরা মাথা নিচু করে বড় বোনের পেছনে দাঁড়ায়। সবাই এভাবে তাকাচ্ছে কেন? আর আলভী এমন কথা বললো কেন? সেদিনের পর ওতো কিছু বলেনি মায়া কে। আলভী কেও তো কিছু বলেনি।
লিরার বাবা অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আছে লিরার দিকে। দেখে মনে হচ্ছে ওই চোখ দুটো দিয়েই ভস্ম করে দেবে এখনই। শুকনো ঢোঁক গিলে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো।
আলভী আবার তাকায় নানির দিকে। আগের মতোই রাগী তেজি স্বরে বলে,
“নিজের নাতনী কে যদি এতোই ভালোবাসো তাহলে নিজের জামাইয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে নিজের কাছেই রেখে দাও সারা জীবন। তবুও অন্যের সংসারে আগুন লাগাতে আসবে না।”

ড্রইং রুমে বসে থাকা কারো মুখে কোনো কথা নেই। সবাই চুপ চাপ বসে আছে, দাঁড়িয়ে আছে।
আলভী মায়ার দিকে তাকায়। মায়ার ফর্সা নাক, গাল, চোখের এরিয়া লাল হয়ে গেছে। দুচোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে শ্রাবণধারা। রাগে মাহিরের চোখ মুখও লাল হয়ে আছে।
আলভী মায়ার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
“ওঠো।”
মায়া ওঠেও না, আলভীর দিকে তাকায়ও না।
আলভী হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“সোফা থেকে ওঠো।”
মায়া তবুও কিছু বলে না। আলভীর চড়ে যাওয়া মেজাজ আরো চড়ে যায়। জোড়ে ধমক দিয়ে বলে,
“ওঠ, কি বলছি কানে যাচ্ছে না?”

আলভীর ধমকে ড্রইং রুমের সবাই কেঁপে ওঠে। সামসুন্নাহার বেগম ভয় পেয়ে জড়সড় হয়ে জান।
মায়া শব্দ করে কেঁদে দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। আলভী মায়ার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়।
সিঁড়ির গোড়ায় দাঁড়িয়ে থাকা কয়েক জন সরে দাঁড়ায়।
আলভী লাল চোখে লিরার দিকে একবার তাকায়।
রুমে এসে ধারাম করে ডোর লাগায় আলভী। এত জোড়ে শব্দ হয় যে মনে হচ্ছে পুরো বাড়ি কেঁপে উঠলো। ভয় পেয়ে আবার কেঁপে ওঠে মায়া। নিচে থাকা সকলেই স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে এত জোড়ে লাগানো ডোরের শব্দ।
আলভী মায়া কে টেনে এনে বেডের উপর বসায়। টিস্যু হাতে নিয়ে মায়ার চোখ-গাল মুছিয়ে দেয়।
পানির বোতল হাতে নিয়ে পানি খাওয়ায়। তারপর আগের মতোই রাগী স্বরে বলে,
“আমি কিছু বললেই তো চ্যাটাং চ্যাটাং করে কথা বলো। মুখ খোলার আগেই উত্তর রেডি করে রাখো। তাহলে এখন কি হয়েছিল? ওই বুড়ি যখন এত কিছু বললো উত্তর দিলে না কেন? তখন মুখের মধ্যে সুপার গ্লু লাগানো ছিল?”
মায়া বলে না কিছু।

“বুড়ি যখন এত বড় মিথ্যে কথা বললো সকলের সামনে তখন বুড়ির চুল টেনে ছিঁড়লে না কেন? মানুষের কথা শুনে এমন চুপ করে থাকো বলেই তো তারা কথা বলার সুযোগ পায়।”
“একবার দুবার বললে কি এদের লজ্জা হয়? কত বার বলবো? একবার ছেড়ে দুবার কিছু বললেই তো সবাই হৈহৈ করে বেয়াদব উপাধি দিয়ে দেয়। বাবা মা শিক্ষা দিতে পারেনি সেই কথাও বলে। কি করবো তাহলে?”
“কথায় কাজ না হলে হাত দিয়ে দিবে, হাত দিয়ে কাজ না হলে খু ন করে ফেলবে। পরের টা আমি দেখে নেবো।”
“কি দেখবেন? আমার বদলে আপনি জেল খেটে দেখবেন কেমন লাগে?”

“হ্যাঁ।”
মায়া রাগী চোখে আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে।
আলভী এক কদম এগিয়ে এসে মায়া কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে বলে,
“তখন এত জোড়ে ধমক দেওয়ার জন্য সরি। ভালো ভাবে কিছু বললে শোনো না কেন?”
“ছোঁবেন না আমাকে, দূরে সরুন।”
আলভী ছাড়ে তো নাই উল্টো আরো শক্ত করে ধরে।
“আজকের পর কেউ কিছু বললে তার গুষ্টির পিন্ডি চটকে দিয়ে আসবে, সে যেই হোক না কেনো শুধু আমি বাদে।”

ঐশী রহমান কিছু না বলে কিচেনে চলে আসেন। ঝরঝর করে কেঁদে ওঠেন। ওনার পেছন পেছন মেহবুবা মেহেরও কিচেনে চলে এসেছেন। তিনি ঐশী রহমান কে সান্তনা দিয়ে বলেন,
“তুমি কেনো কাদঁছো ঐশী? ভুল তো তুমি করোনি তাহলে তুমি কেনো কাদবে? কান্না বন্ধ করো।”
“মাফ করবেন আপা। আমার মায়ের জন্য মায়া কে এত কষ্ট পেতে হলো। আমি সত্যিই বুঝতে পারিনি মা এমন কিছু করবে বা বলবে।”
মেহবুবা মেহের ঐশী রহমান এর চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলেন,
“পা গ ল মেয়ে এভাবে কেনো কাদঁছো? মাফ চাইতে হবে না। তোমার মা কে পরে বুঝিয়ে বলে দিও পরে যেন এমন কাজ আর না করে। মাহিদ, মাহির আর তোমার ভাইয়া ভীষণ ক্ষেপে আছে।”
“সবাই কে আমি আজকেই পাঠিয়ে দেব এই বাড়ি থেকে। এটাও বলে দেব ওনারা যেন আর কোনো দিন এই বাড়িতে না আসে।”

“পা গ ল হয়েছো নাকি তুমি? ওনারা এমনিতেও আগামী কাল চলে যেতে চাইছে এখন আর এমন কিছু বলবে না তুমি।”
লিরার বাবা ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বলেন,
“যাও ব্যাগ গুছিয়ে নাও আর সবাই কে বলো ব্যাগ গুছিয়ে নিতে। দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে সবাই আমার সামনে আসবে। দশ মিনিটের বেশি সময় লাগলে সবাই কে রেখেই চলে যাব আমি।”

আলতাফ মাহমুদ কিছু বললেন না। রাগে ওনার মস্তিষ্ক টগবগ করে ফুটছে। কত বড় সাহস ওনার বাড়িতে এসে ওনার ছেলের বউ এর চরিত্র নিয়ে কথা বলে। আলতাফ মাহমুদ ঐশী রহমান কে বিয়ে করার প্রথম দিক থেকেই শাশুরি মা কে সেরকম পছন্দ করেন না তার এমন স্বভাবের জন্য। সব সময় অন্যকে নিয়ে সমালোচনা করা, খুত ধরা, খোটা দিয়ে কথা বলা সহ আরো অনেক খারাপ অভ্যাস ওনার মধ্যে ছিল এখনো আছে। এর আগে আলতাফ মাহমুদ নিজে শাশুরি মা কে সাবধান করে দিয়েছিলেন যেন দ্বিতীয় বার মায়া কে কিছু বলার সাহস না করে। কিন্তু এবারেও এসে এমন কিছুই করলেন। এই মহিলা জীবনেও শুধরাবে না।
আহনাফ মাহমুদ গম্ভীর স্বরে বলেন,

“এখন কেউ যেতে পারবেন না। আগামী কাল যাবেন সবাই।”
লিরার বাবা মাথা নিচু করে বলেন,
“মাফ করবেন বেয়াই।”
“এরকম কথা বলবেন না।”
“আর থাকা সম্ভব না। যদি ভাগ্য নিয়ে আসে তাহলে আবার কোনো একদিন আসবো। আজকে যেতে দিন।”
“কোনো কথা শুনতে চাই না আমি, আপনারা আজকে যাচ্ছেন না।”
আলভীর নানা সোফা ছেড়ে উঠে এসে আহনাফ মাহমুদের পাশে বসেন। আহনাফ মাহমুদের দুই হাত ধরে অপরাধীর ন্যায় বলেন,

“মাফ করবেন বাবা, অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছে।”
আহনাফ মাহমুদ আলভীর নানার হাত ধরে বলেন,
“এভাবে বলবেন না, আপনি আমার বাবার বয়সী।”
“এখানে আর থাকতে পারবো না বাবা, সেই মুখ নেই আমাদের। আপনি আর থাকার জন্য বলবেন না।”
“তাহলে অন্তত খাবার খেয়ে জান সবাই। রান্না প্রায় হয়েই এসেছে বোধহয়।”
“আচ্ছা।”

আলভীর নানা স্ত্রীর দিকে আগুন চোখে তাকান। একবার বাড়ি ফিরতে পারলে হয়, তারপর এই বুড়ি কে গরম তেলে ভাজবেন। জীবনে আজ অব্দি কারো সামনে কখনো মাথা নিচু করতে হয়নি। কারো কাছে মাফ চাইতে হয়নি আল্লাহ তায়ালা ব্যতীত। এই বুড়ির কথার জন্য পুরো বাড়ির মানুষের মাথা নিচু হয়ে গেছে।

মেয়ে টা কেও ছোট হতে হলো শশুর বাড়ির মানুষ গুলোর সামনে। কাদতে কাদতে কিভাবে চলে গেল রান্না ঘরে। বাড়ির কেউ কিছু না বললেও আলতাফ মাহমুদ কিছু না কিছু ঠিকই বলবেন ঐশী রহমান কে। মায়া মেয়েটাও কিভাবে বাবার কাছে ধমক খেলো। ছোট বেলা থেকেই মেয়ে মানুষের কত কথা শুনে বড় হয়েছে। রাগে ওনার ইচ্ছে করছে সামসুন্নাহার বেগম কে এখানেই মে রে পুঁতে রেখে যেতে। এই শ য় তা নের কারখানা কে বাড়ি বয়ে নিয়ে গিয়ে কি করবেন?রাইটার সানা শেখ। গল্প টি আগে আগে পড়তে সানা শেখ পেজ টি লাইক ফলো দিয়ে রাখবেন সবাই। তাহলে পরবর্তী পার্ট পোষ্ট করার সাথে সাথেই পেয়ে যাবেন।
লিরার বাবা সোফা ছেড়ে উঠে লিরা কে টেনে নিয়ে গেস্ট রুমে আসেন। সবাই তাঁকিয়ে তাঁকিয়ে দেখে কেউ কিছু বলে না।

“বল আলভী কে কি বলেছিস তুই?”
লিরা ভয়ে আতঙ্কে জড়ানো গলায় বলে,
“আ আমি কিছু বলিনি আলভী কে।”
শক্ত হাতে আদরের মেয়ের গালে চড় বসান সাথে সাথেই।
“বেয়াদপ মেয়ে, আলভী তোর ছোট না বড়? তোর বড় বোন আলভী কে ভাইয়া বলে ডাকে তুই কেনো নাম ধরে ডাকিস? এখানে আসার পর থেকে তোর চাল চলন শুধু দেখছিলাম। অন্যের বাড়ি তাই কিছু না বলে চুপ ছিলাম। দাদি নাতনী মিলে কি প্ল্যান করেছিলি বল।”
লিরা কোনো কথা না বলে চুপ করে থাকে।

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১৮

চুপ থাকতে দেখে রাগ সামলাতে না পেরে অপর গালেও চড় বসিয়ে দেন।
“আজকে বাড়ি ফিরে নেই তারপর তোর ব্যবস্থা করবো। আদরে আদরে শ য় তা ন তৈরি হয়েছিস তাইনা? কাঁচা কঞ্চি দিয়ে মে রে তোর শ য় তা ন দূর করবো।

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২০