হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২০
সানা শেখ
রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসে আলভী। কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা ডাইনিং টেবিলের কাছে এগিয়ে আসে। মেড মায়া আর মেহবুবা মেহের সকলের জন্য খাবার বাড়ছেন। আলভী শাশুরি মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
“দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে দাও।”
মেহবুবা মেহের আলভীর দিকে তাকান।
“আমার আর মায়ার জন্য খাবার বেড়ে দাও।”
মেহবুবা মেহের কিছু না বলে দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে দেন। আলভী প্লেট দুটো হাতে তুলে নেয়। উল্টো ঘুরে হাঁটতে হাঁটতে বলে,
“মায়া আক্তার এক জগ পানি নিয়ে আসো।”
মায়া ডাইনিং টেবিলের উপর রাখা পানি ভর্তি জগ টা নিয়ে আলভীর পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করে।
আলভী কারো দিকে না তাকিয়ে সোজা নিজের রুমের সামনে এসে দাঁড়ায়। মায়া চলে যেতে পারে তাই বাইরে থেকে ডোর লক করে রেখে গিয়েছিল।
“ডোর খোলো।”
ডোর খুলে এক পাশে দাঁড়িয়ে থাকে মেড মায়া।
প্লেট দুটো বেডের উপর রেখে মায়ার হাত থেকে জগ নিয়ে ভেতর থেকে ডোর লক করে দেয় আলভী।
জগ রেখে মায়ার সামনে দাঁড়ায়।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“যাও হাত মুখ ধুয়ে আসো।”
“আমি আমার রুমে যাব।”
“তো এটা কার রুম?”
“আপনার।”
“আমি কার?”
মায়া চোখ তুলে আলভীর মুখের দিকে তাকায়। চোখ নামিয়ে নিয়ে চুপ করে বসে থাকে।
“আমার আমি টাই যখন তোমার তখন এই রুম টাও নিশ্চই তোমার।”
“না আপনি আমার, আর না এই রুম আমার।”
“আমিও তোমার, এই রুম টাও তোমার, আর আমার সব কিছুই তোমার। এখন ওঠো হাত মুখ ধুয়ে আসো খিদে পেয়েছে।”
“আপনাকে খেতে নিষেধ করেছি আমি?”
“বউ না খেয়ে থাকলে আমি কিভাবে খাবো?”
মায়া কে উঠছে না দেখে আবার বলে,
“আমার কিন্তু রাগ হচ্ছে মায়া। ধৈর্যের পরীক্ষা নেবে না ওঠো।”
মায়ার হাত ধরে টেনে বেড থেকে নামিয়ে দার করায় আলভী। তারপর হাত ধরে টেনেই ওয়াশরুমে নিয়ে আসে। ওয়াশরুমে এসে চুপ চাপ দাঁড়িয়ে থাকে মায়া। আলভী হাতে পানি নিয়ে মায়ার মুখ ধুইয়ে দিতে শুরু করে।
“আরে কি করছেন? ভিজিয়ে দিচ্ছেন কেন?”
“ভালো ভাবে বলছি শুনছো না কেন?”
“সরুন।”
আলভী কে সরিয়ে দিয়ে মায়া নিজেই হাত মুখ ধুয়ে নেয়। শ য় তা ন লোক দিল জামা টা ভিজিয়ে।
রুমে এসে বেলকনি থেকে টাওয়েল এনে মায়ার দিকে বাড়িয়ে ধরে আলভী।
“হাত মুখ মুছে নাও।”
“লাগবে না।”
“এমন ঘাড় ত্যাড়া কবে থেকে হয়েছো বলো তো! কথায় কথায় ত্যাড়ামি।”
মায়া কিছু বলার আগে আলভী নিজেই মায়ার হাত মুখ
মুছিয়ে দেয় জোর করে। টাওয়েল সোফার উপর ছুঁড়ে দিয়ে মায়া কে পাঁজা কোলে তুলে বেডে বসিয়ে দেয়। খাবার ভর্তি একটা প্লেট মায়ার সামনে দিয়ে অন্য টা নিজে সামনে নিয়ে বসে। মায়া বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে আলভীর মুখের দিকে।
প্লেট থেকে একটা চিংড়ি মাছ তুলে আলভী নিজে এক কা মড় খায় । তারপর মায়ার চোয়াল চেপে ধরে বাকি টা মায়ার মুখের ভেতর পুরে দিয়ে মুখ বন্ধ করে দেয়।
“খাওয়া শুরু করো বউ।”
আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মুখের মাছ টুকু চিবুতে শুরু করে মায়া।
আলভী কয়েক লোকমা ভাত খাওয়ার পরেও দেখে মায়া এখনো নিজের প্লেটে হাত দেয়নি। ভাত মাখিয়ে পুনরায় মায়ার চোয়াল চেপে ধরে মুখের মধ্যে ভাত পুরে দেয়। আবার ভাত মাখতে মাখতে বলে,
“হাত দিয়ে খাবে না, আমার হাতে খাবে বললেই হয় এভাবে চুপ চাপ বসে আছো কেন?”
মায়া কিছু না বলে নিজের প্লেটের দিকে তাকায়। এত খাবার কিভাবে খাবে?
আলভী আবার ভাত তুলে ধরে মায়ার মুখের সামনে।
“আমার হাত আছে।”
“তো খাচ্ছো না কেন তাহলে?”
“এই যে খাচ্ছি এখন।”
মায়া নিজের হাতে খেতে শুরু করে।
আলভী আর কথা না বলে খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।
খেতে খেতে মায়ার মুখের দিকে তাকায়। মায়া মাথা নিচু করে চুপ চাপ খেয়ে চলেছে। মায়ার ভাবমূর্তি এমন যে, ও ব্যতীত আর কেউ নেই এই রুমে। ওর সামনে যে আস্ত একটা মানুষ বসে আছে সেদিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত। গল্পের রাইটার সানা শেখ। পরবর্তী পার্ট আগে আগে পড়তে সানা শেখ • পেজ টি লাইক ফলো দিয়ে রাখবেন সবাই।
আলভীর নানার বাড়ির সবাই রেডি হয়ে ড্রইং রুমে এসে দাঁড়িয়েছে। সামসুন্নাহার বেগমের মধ্যে সেরকম কোনো ভাবান্তর নেই এখনো। লজ্জায় অপমানে তার ছেলে মেয়ে সহ সবাই নুইয়ে গেছে আর তিনি এখনো শিনা টান টান করে দাঁড়িয়ে আছেন।
আলভীর নানা সবাই কে দাঁড়াতে বলে আলভীর রুমের দিকে এগিয়ে আসেন। ডোর নক করতেই ভেতর থেকে আলভীর গলার স্বর শোনা যায়।
“নানা ভাই আমি এসেছি।”
আলভী মায়ার দিকে তাকায়। মায়া বেডের উপর গুটিয়ে বসে আছে চুপ চাপ।
বেড থেকে নেমে ডোর খুলে দেয়।
“কোথায় যাচ্ছো?”
“চলে যাচ্ছি।”
“আজকেই? আগামী কাল না যাওয়ার কথা ছিল।”
“মায়া কোথায়?”
“ভেতরে আসো।”
ভেতরে প্রবেশ করে দেখেন মায়া মাথা নিচু করে বসে আছে। নাম ধরে ডাক দিতেই মুখ তুলে তাকায়। চোখ মুখ এখনো ফোলা ফোলা। মায়া কে দেখলে ওনার ভীষণ মায়া হয় সেই প্রথম থেকেই। আগে যখনই মেয়ের বাড়িতে আসতেন তখনই দেখতেন মায়া মলিন মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে, চুপ চাপ এক কোণায় বসে আছে। মেয়েটা মাঝে মধ্যে হাসতো, হাসলে কি সুন্দর যে দেখায় বলার বাইরে। রাইটার সানা শেখ।
“মায়া আমরা চলে যাচ্ছি পারলে তোমার এই বুড়ো নানা কে মাফ করে দিও। আমাদের জন্য তোমাকে এত কথা শুনতে হলো, কষ্ট পেতে হলো। আগে যা হয়েছে ভুলে যাও, নতুন করে সব কিছু শুরু করো। তখন তুমিও ছোট ছিলে, আলভীও ছোট ছিল। ভুল টা ছিল তোমাদের পরিবারের। ভুল আলভীর ও ছিল এটা সত্যি কথা। আলভী যখন সব কিছু ঠিক করতে চাইছে ওকে একটা সুযোগ দাও। এভাবে আর জেদ ধরে থেকো না।”
মায়া শোনে সব কথা কিন্তু বলে না কিছু। একবার শুধু আলভীর দিকে তাকায়। আলভী ওর দিকেই তাকিয়ে আছে।
“আমার সাথে একটু নিচে আসো।”
মায়া তাঁকিয়ে রইলো মুখের দিকে।
“একটু দরকার আছে, দুই মিনিট সময় দিলেই হবে।”
মায়া বেড থেকে নেমে দাড়ায়। ওড়না ঠিক করে নেয়। তিন জন একসাথে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসে। মায়া কে সামসুন্নাহার বেগমের সামনে দাঁড় করান আলভীর নানা।
“সব কিছুর জন্য মায়ার কাছে মাফ চাও।”
সামসুন্নাহার বেগম কিছু না বলে সরে জান।
“কি বলছি কথা কানে যাচ্ছে না? মাফ চাও মায়ার কাছে।”
সামসুন্নাহার বেগম কিছু না বলে গেটের দিকে এগিয়ে জান। কিছুতেই এত গুলো মানুষের সামনে এই মেয়ের কাছে মাফ চাইবেন না। মায়া মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। আলভী গলা ছেড়ে বলে,
“বুড়ো বয়সে এখনো মনের মধ্যে শ য় তা নি আর অহংকারে পরিপূর্ণ। বাঁচবে আর কয় দিন, ম রা র আগে তওবা করে আল্লাহর কাছে মাফ চেয়ে নিও। নামাজ কালাম পড়ে দ্বীনের পথে এসো। বেঁচে থাকতে যা করছো কবরেও জায়গা হবে কিনা আল্লাহ তায়ালা ভালো জানেন। মানুষের নামে গীবত গাওয়া, সমালোচনা করা, মিথ্যা দোষারোপ করা, চরিত্র নিয়ে কথা বলা ছেড়ে দিও এখনো সময় আছে।”
সামসুন্নাহার বেগম বাড়ি থেকে বেরিয়ে জান।
আস্তে আস্তে সবাই বেরিয়ে যায় বাড়ির থেকে। ঐশী রহমান বাবার কাছে এগিয়ে আসেন।
“মা’রে মাফ করে দিও, আমরা তোমার মাথা নিচু করে দিলাম পুরো বাড়ির মানুষের সামনে। যদি কোনো দিন আমাকে দেখার ইচ্ছে জাগে তাহলে জেও আমার বাড়িতে।”
“তুমি আবার এসো।”
“সেই মুখ তোমার মা রাখেনি আর। ভালো থেকো সকলের খেয়াল রেখো।”
ঐশী রহমান এর চোখ দুটো টলমল করে ওঠে।
“নানা ভাই এদিকে আসো।”
আলভী এগিয়ে আসে নানার কাছে।
বাইরের দিকে এগিয়ে যেতে যেতে বলেন,
“মায়া কে বেশি চাপ দিও না, ওকে একটু সময় দাও।অনেক দিনের ক্ষত তো শুকাতে একটু সময় লাগবে। তোমার মায়ের কাছে যা শুনলাম তাতে আমি এটাই বুঝতে পারলাম তোমার অনুপস্থিতে ওকে অনেক কিছু সহ্য করতে হয়েছে। এটা বাংলাদেশ, এখান কার কিছু সংখ্যক মানুষদের স্বভাবই অন্য কে খোঁচা দিয়ে, কষ্ট দিয়ে কথা বলা। এসব করে হয়তো এরা পৈশাচিক আনন্দ পায়। জোর যবরদস্তি কিছু না করে আস্তে আস্তে ঠান্ডা মাথায় ওকে বোঝাও।”
“আমার কোনো কথা শুনতেই চায় না। আমার সামনেও আসতে চায় না।”
“তাহলে তুমি কিছু না বলে মায়ার কথা গুলো শোনার চেষ্টা করো। ওর অভিযোগ, অভিমান, কষ্ট গুলো বোঝার চেষ্টা করো। ওর মন হালকা করার চেষ্টা করো। মন হালকা হলেই মন নরম হবে।”
কথা বলতে বলতে গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ান।
সব শ য় তা নের কারখানা এক গাড়িতে উঠে বসেছে।
গাড়ি বেরিয়ে যায় বাড়ির গেট পেরিয়ে।
বাড়ির সবাই ড্রইং রুমে এসে বসে। মায়া নিজের রুমে চলে যেতে চাইলেও আহনাফ মাহমুদ যেতে দেননি। আলভী এসে বসতেই তিনি আলভীর মুখের দিকে তাকান। বাকি সবাই ও আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আলভী কপাল ভ্রু কুঁচকে সকলের দিকে একবার দৃষ্টি বুলিয়ে নেয়। এভাবে তাঁকিয়ে আছে কেনো সবাই? মায়া মাথা নিচু করে বসে আছে।
আহনাফ মাহমুদ আলভী কে বলেন,
“গত রাতে মায়া সত্যি সত্যিই তোমার রুমে ছিল?”
“হ্যাঁ।”
“সারা রাত ছিল?”
“হ্যাঁ।”
মাহিদ বলে,
“ভাইয়া তুমি না বললে তোমার রুমে পরী গিয়েছিল রাতে। তাহলে মায়া কখন গেল?”
“পরী চলে যাওয়ার পর আমি ব্যাথা পেয়ে তোমাদের সবাই কে ডেকেছিলাম কিন্তু কেউ শুনতে পাওনি আমার কথা। মায়া শুনতে পেয়ে গিয়েছিল রুমে। তারপর আমার সাথেই ছিল, সেজন্যই তো ওই দুষ্ট পরী দ্বিতীয় বার আর আসার সাহস পায়নি।”
মায়া আলভীর মুখের দিকে তাকায়। কত সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে যে মিথ্যে কথা বলে এই লোক টা। কেউ বুঝতেই পারবে না সত্যি বলছে নাকি মিথ্যে বলছে।
“আমি রুমে যাই এখন?”
“যা।”
মায়া সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। দ্রুত পায়ে সিঁড়ির কাছে এগিয়ে যায়। পেছন পেছন আলভী নিজেও দ্রুত এগিয়ে যায়। করিডোরে এসে মায়া কে ধরে জোর করে নিজের রুমে নিয়ে আসে।
মায়া রেগে তাকায় আলভীর মুখের দিকে।
“এখানে নিয়ে আসলেন কেন আমাকে?”
“আজ থেকে তুমি এই রুমে আমার সাথে আমার কাছে থাকবে।”
“থাকবো না আমি।”
“থাকতেই হবে।”
“সকলের সামনে মিথ্যে কেনো বললেন?”
“মিথ্যে কোথায় বললাম? তুমি তো গত রাতে সারা রাত আমার সাথেই ছিলে।”
“ছিলাম সেটা তো আমিও জানি। সবাই কে ডেকেছেন এটা মিথ্যে কথা ছিল না? পরী এসে মে/রে/ছে এটা মিথ্যে কথা না?”
“তো কি বলবো? আমার বউ আমাকে মে রে ছে, আমি বউয়ের ধাক্কা খেয়ে চিৎপটাং হয়ে পড়ে গিয়েছিলাম। বউ কা ম ড় দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছে। আমাকে
পা গ ল মনে হয় তোমার? বউয়ের হাতে মা/র খেয়েছি বলে নিজের মান ইজ্জত নিজেই পাঞ্চার করবো এত গুলো মানুষের সামনে?”
মায়া কিছু না বলে বেডের উপর উঠে বসে রইলো।
আলভী আকাশের দিকে তাকিয়ে বির বির করে বলে,
হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ১৯
“আমার কেনো মনে হচ্ছে আমার বউ কে আমার বাপ উস্কানি দেয়। বউয়ের পেছনে কলকাঠি আমার বাপে নাড়ে। আমার বাপে কিছু তো একটা নিশ্চই করে।”