হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২৬

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২৬
সানা শেখ

সকাল আটটা নাগাদ ঘুম ভেঙ্গে যায় মায়ার।
আলভীর শক্ত বাহু বন্ধনে এখনো আবদ্ধ হয়ে আছে।
আলভী গভীর ঘুমে মগ্ন। ভারী শ্বাস ফেলছে। ধীর গতিতে ছুটে চলেছে হৃদস্পন্দন। বুক থেকে মুখ তুলে আলভীর মুখের দিকে তাকায়। ডিম লাইটের আবছা আলোয় আলভীর চেহারা দেখতে পায়। হাত বাড়িয়ে আলভীর এলোমেলো চুল গুলো পেছনের দিকে ঠেলে দেয়, তবে সাথে সাথেই আবার চুল গুলো কপাল ঢেকে ফেলে। বাড়িয়ে রাখা হাত টা গুটিয়ে নেয়।
আলভীর বাহু বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আলভীর হাত সরিয়ে দিয়ে সরে আসার চেষ্টা করে। নড়াচড়ায় ঘুম ভেঙ্গে যায় আলভীর। মায়া কে আরো একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ঘুম জড়ানো গলায় বলে,

“এমন করে নড়ছো কেন? চুপ চাপ ঘুমাও, রাত ফুরিয়ে যাবে আবার।”
“রাত ফুরিয়েই গেছে, ছাড়ো এখন আমাকে আর নিজের রুমে যাও।”
“এত দ্রুত রাত ফুরিয়ে গেল! একটু আগেই না ঘুমালাম।”
চোখ বন্ধ রেখেই কথা গুলো বলে আলভী।
“চোখ মেলে তাকাও আর দেখো সকাল হয়ে গেছে।”
“হোক।”
“আমাকে ছাড়ো।”
“আর একটু থাকো প্লীজ, আগামী এক সপ্তাহ তো ধারে কাছেও আসতে দেবে না বললে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মায়া কিছু না বলে আলভীর হাত সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। বদ লোক কি শক্ত করেই না ধরেছে এখন। আগামী এক সপ্তাহ বোধহয় এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়েই পাড় করবে। সারা রাত এক মিনিটের জন্য নিজের কাছ থেকে আলাদা করেনি মায়া কে। পুরো রাত জড়িয়ে ধরেই শুয়ে ছিল।
“রাতে তোমার কথা শুনেছি আমি, এখন আমার কথা না শুনলে তোমার কপালে শনি আছে বলে রাখলাম।”
আলভী চোখ মেলে তাকায়। বার কয়েক চোখ ঝামটা দিয়ে বলে,
“বউরা এমন হয়? কথায় কথায় জামাই কে ভয় দেখায়।”
“ভয় দেখালাম কখন?”
“মাত্রই।”
“ছাড়বে না কি?”
“না।”

বলেই মায়া কে চেপে ধরে বুকের মাঝে। ধস্তা ধস্তি করেও আলভীর বাহু বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে না।মায়াও কম কিসে? আলভীর উন্মোক্ত বুকে কা মড় দিয়ে ধরে।
আলভী নিজের বুকের দিকে তাকায়। তারপর আফসোসের সুরে বলে,
“অন্যের বউরা তাদের বর কে সকালে ঘুম থেকে উঠে চুমু খায় আর আমার বউ কা মড় দেয়, আফসোস।”
মায়া মুখ তুলে তাকিয়ে বলে,
“প্রত্যেক দিন সকালে দশ টা করে কা মড় খাবে।”
“আমি তাতেও রাজি আছি, অন্তত তোমার ছোঁয়া তো পাওয়া যাবে।”
আলভীর হাত ছাড়িয়ে বেড থেকে নেমে দাড়ায়। ওয়াশরুমের দিকে এগিয়ে বলে,
“উঠে নিজের রুমে যাও।”

আলভী কিছু না বলে উপুর হয়ে শুয়ে পড়ে। শেষ রাতের দিকে ঘুমিয়েছিল এখন আরো ঘুমের প্রয়োজন।
ফ্রেস হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে মায়া। বেডের দিকে তাকিয়ে দেখে আলভী এখনো ওর রুমেই রয়েছে।
বির বির করতে করতে রুমের বড় লাইট অন করে ডিম লাইট অফ করে দেয়।
উন্মুক্ত গায়ে উপুর হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে আবার।
রেডি হয়ে রুমের লাইট অফ করে রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
করিডোরে আসতেই সানজিদা আর মানতাসার সাথে দেখা হয়।
মায়া কে দেখেই মানতাসা ওর মায়ের কোল থেকে নেমে মায়ার কাছে দৌড়ে আসে।
মায়া মানতাসা কে কোলে তুলে নিয়ে ভাবীর সাথে সিঁড়ি বেয়ে নামতে শুরু করে।
মানতাসা মায়ার মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,

“অনেক গুমিয়েচো আজ।”
“কে বললো?”
“কত বাজে?”
“কত বাজে বলেই অনেক ঘুমিয়েছি?”
“হুম।”
“তুমি যে দশ টা পর্যন্ত ঘুমাও তখন?”
“গুমাই না।”
“আমি কি তাহলে মিথ্যে বলছি?”
“হ্যাঁ।”
“চাচা ভাতিজী মিলে যে দশ টা থেকে বারোটা পর্যন্ত ঘুমায় তখন কিছুই না। আমি আজকে আটটা পর্যন্ত ঘুমিয়েছি বলেই দোষ হয়ে গেছে।”

“মিত্তা কতা বলো কেন?”
মায়া চোখ বড় বড় করে ভাবীর মুখের দিকে তাকায়। সানজিদা মুচকি মুচকি হাসছে।
“দেখেছেন ভাবী আমি নাকি মিথ্যে কথা বলছি!”
মানতাসা আবার বলে,
“ছোত আব্বু কই?”
“কেন?”
“ছোত আব্বু নাই।”
দুই হাত নাড়িয়েও না বোঝায়।
“ছোট আব্বু আসার পর থেকে তো আমাকে ভুলেই গেছো তুমি। সারাক্ষণ শুধু ছোট আব্বু আর ছোট আব্বু।”
“ছোত আব্বু বালো।”
“তার মানে আমি পঁচা?”
“তুমি ইট্টু বালো।”
“আমি ইট্টু ভালো কেন?”

“তুমি ছোত আব্বু কে বকা দাও।”
ছোট উল্টে কথা গুলো বলে মানতাসা।
মেয়ের কথা শুনে সানজিদা ফিক করে হেসে ওঠে।
মায়া ভাতিজির মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
লোক টা কি বিচ্ছু, এই ছোট বাচ্চা টা কেও নিজের দলে টেনে নিয়েছে। ওকে ছাড়া মানতাসা আগে কিছুই বুঝতো না, সারাক্ষণ ফুপ্পি ফুপ্পি করতো এখন সেই মানতাসা সারাক্ষণ ছোট আব্বু ছোট আব্বু করে।
এগারো দিনেই বাড়ির সবাই কে নিজের দলে টেনে নিয়েছে শুধু পারেনি ওকে আর আলতাফ মাহমুদ কে টানতে। আলভী যেভাবে কথা বলে, ওর কথা শুনলে যে কেউ গোলে পানি হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক।
ব্যাটার মুখ থেকে কথা তো নয় যেন মধু বের হয়।

সানজিদা এক কাপ চা এনে মায়া কে দেয়। ফিডার মানতাসার হাতে দিয়ে ডাইনিং টেবিলের কাছে এগিয়ে যায়। তিন জন খাবার খেয়ে এখন অফিসে চলে যাবে।
উপর থেকে মাহিরের গলার স্বর ভেসে আসে।
সানজিদা বিরক্ত হয়ে আবার রুমের দিকে এগিয়ে যায়। মাত্র সব কিছু করে দিয়ে রুম থেকে আসলো এখনই আবার ডাকাডাকি শুরু করে দিয়েছে।
“কি হয়েছে?”
“ঘড়ি খুঁজে পাচ্ছি না।”
“মাত্র না সব কিছু গুছিয়ে সামনে দিয়ে গেলাম।”

“রাগ দেখাচ্ছো কেন? আবার খুঁজে দাও।”
“একটু পর পর এভাবে ডাকলে বাড়ির সবাই কি ভাববে?”
মাহির টাই বাঁধা শেষ করে সানজিদার সামনে এসে দাঁড়ায়। এক হাত সানজিদার পিঠের পেছনে দিয়ে টেনে এনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। সানজিদার কপালের সাথে নিজের কপাল ঠেকিয়ে বলে,
“কে কি বলবে ভাববে সেটা দিয়ে তো আমার কাজ নেই। আমি আমার বউ আদর করবো ভালোবাসবো এটা ভাববো সব সময়। তখন মানতাসা ছিল সেজন্য আদর করতে পারিনি তাই আবার ডেকেছি আদর করার জন্য।”
“তুমি দিন দিন নির্লজ্জ্ব হয়ে যাচ্ছো।”

“একদম না, সারা দিন অফিসে থাকি। সন্ধ্যায় বাড়িতে ফিরে দেখি বউ আমার বিজি। রাতে মেয়ে দেরি করে ঘুমায়। মেয়ে ঘুমোতে ঘুমোতে আমার ঘুম পেয়ে যায়।
বউ কে তো আদর করার সময়ই তো পাই না। ছয় টা বাচ্চার বাপ হবো কিভাবে?”
“এক মেয়ে নিয়েই তোমার যা অবস্থা, ছয় বাচ্চা হলে না জানি কি করো!”
“ছয় জন হলে ওরা ওদের মতো থাকবে একসাথে, তখন আমরা দুজন ফ্রি হয়ে আমাদের মতো থাকবো।”
“তোমার চিন্তা ধারা খুবই বাজে। আমাকে ছাড়ো আর নিচে চলো আব্বুরা ওয়েট করছে বোধহয়।”
মাহিরের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে ঘড়ি টা খুজে বের করে দেয় আবার। অফিসের ব্যাগের নিচে রেখে দিয়েছিল ইচ্ছে করেই।

মাহির হাত এগিয়ে দেয় ঘড়ি পরিয়ে দেওয়ার জন্য।
সানজিদা কথা না বাড়িয়ে ঘড়ি টা পড়িয়ে দেয় হাতে।
সানজিদা বাইরের দিকে পা বাড়ালে মাহির আবার ওকে পিছু ডাকে।
“বলো।”
“বিকেলে রেডি হয়ে থাকবে।”
“কেন?”
“লং ড্রাইভে যাব।”
“তখন তুমি ক্লান্ত থাকবে।”
“তুমি থাকলে আর কোনো ক্লান্তি আমার কাছে আসতে পারবে নাকি? রেডি হয়ে থেকো আর মায়া কে বলবে মানতাসা কে রাখতে। ডিনার সেরে বাড়িতে ফিরবো”
“আমি বলতে পারবো না।”
“ঠিক আছে আমি বলে যাব।”
সানজিদা তাকিয়ে থাকে মাহিরের দিকে। এই লোক এমন নির্লজ্জ কেন? দুদিন পর পর বউ নিয়ে ঘুরতে বের হয়। বাড়ির সবাই কি ভাবে কে জানে! আজকে নাকি আবার মেয়ে কে রেখে যাবে।

আলভী বাদে বাকি সবাই সকালের নাস্তা খেতে বসেছে।
রুটি খাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে সকলের মুখের দিকে তাকাচ্ছে মায়া। ওর কেমন লজ্জা লজ্জা লাগছে এখন।
আবার চোখ তুলে তাকাতেই সানজিদার সাথে চোখাচোখি হয়।
“কিছু লাগবে তোমার?”
মায়া প্লেটের দিকে দৃষ্টি রেখে রুটি ছিঁড়তে ছিঁড়তে বলে,
“না আর কিছু লাগবে না।”
“তুমি তো ডিম খেলে না।”
মায়া সিদ্ধ ডিম দুটোর দিকে তাকায়। অন্যমনস্ক হয়ে থাকায় ডিমের কথা ভুলেই গিয়েছিল।
হাতের রুটি রেখে একটা ডিম তুলে নেয় হাতে।
মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে সবাই তাঁকিয়ে আছে ওর দিকে। সাথে সাথেই আবার চোখ নামিয়ে নেয় মায়া।
ডিম দুটো খেয়ে আর রুটি খায় না। পানি খেয়ে দ্রুত ডাইনিং রুম থেকে বেরিয়ে আসে।
এত লজ্জা করছে কেনো আজকে? আজকে বাড়ির সবাই কিভাবে যেন তাকাচ্ছে ওর দিকে। নাকি সবাই স্বাভাবিক ভাবেই তাকাচ্ছে শুধু ওর কাছেই অস্বাভাবিক লাগছে?

মাগরিবের পর বাড়ির সবাই ড্রইং রুমে উপস্থিত হয়।
মাহির সানজিদা কে নিয়ে লং ড্রাইভে যেতে চাইলেও বাপ চাচার কথা শুনে আগেই সানজিদা কে জানিয়ে দিয়েছিল আজকে যাচ্ছে না বাইরে। অন্য কোনো দিন যাবে।
মায়া চুপ চাপ বসে আছে দাদির পাশে। মানতাসা আলভীর কোলে। বাকি সবাই ও চুপ চাপ বসে আছে।
আলতাফ মাহমুদ আলভীর দিকে তাকিয়ে বলেন,
“তোমাদের বিয়েটা তো শুধু ধর্মীয় ভাবে হয়েছিল, তখন তোমরা ছোট ছিলে। আমরা আবার তোমাদের দুজনের বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আইনি আর ধর্মীয় ভাবে আয়োজন করে।”

“কবে?”
“আগামী শুক্র বারের পরের শুক্র বার।”
“আজকে মঙ্গল বার, এখনো তো অনেক দেরি।”
“সব কিছুর জন্য তো সময় লাগবে।”
“হুম।”
“তত দিন তোমরা দুজন আগের মতোই আলাদা আলাদা রুমে থাকবে। আবার বিয়ে হওয়ার পর থেকে একসাথে থাকবে।”
“এটা কেমন কথা?”
দ্রুত কথা গুলো বলে আলভী। সবাই অবাক হয়ে আলতাফ মাহমুদ এর দিকে তাকায়।
আলতাফ মাহমুদ আয়েশি ভঙ্গিতে সোফায় হেলান দিয়ে বলেন,
“কেমন কথা আবার! বিয়ের আগ পর্যন্ত আলাদা রুমেই থাকতে হবে।”

“মানি না আমি এই কথা।”
“মায়া তুই কি বলিস?”
“তুমি যা বলো তাই।”
আলভী একবার মায়া তো আরেক বার বাবার দিকে তাকায়। মায়া বললো আগামী সোম বার সকাল পর্যন্ত ওর কাছ থেকে দূরে থাকতে হবে। আর এখন ওর বাপ বলছে আগামী শুক্র বারের পরের শুক্র বারের আগে বউয়ের সাথে থাকতে পারবে না।
এই দুজন মিলে ওর সাথে এইভাবে প্রতি শোধ নিচ্ছে?
আলভী বাপের কথার বিরোধিতা করে বলে,
“বিয়ে তো হয়েছেই আমাদের। একসাথে থাকলে সমস্যা কোথায়? আবার কেনো বিয়ে হবে? শুধু রেজিস্ট্রি হলেই তো হবে।”

“বেশি কথা বলবে তো মায়া কে ওর নানীর বাড়িতে পাঠিয়ে দেব। একে বারে বিয়ের দিন নিয়ে আসবো।”
“তোমার মতো মীরজাফর বাপ যেন কোনো ছেলের না হয়।”
“তোমার মতন বদ মেজাজি ছেলে যেন কোনো বাপের না হয়।”
“প্রতি শোধ নিচ্ছো?”
“যেটা ভাবো তুমি।”
“আচ্ছা সমস্যা নেই।”
আলতাফ মাহমুদ বড় ভাই আর বড় ছেলের সাথে কথা বলতে শুরু করেন।
আলভী মায়ার দিকে তাকায়। আলভীর মুখের এক্সপ্রেশন দেখে মায়া মুচকি মুচকি হাসছে।
আলভী মনে মনে বলে,
“খুব হাসি পাচ্ছে না? হেসে নাও, সময় আমারো আসবে। তখন দেখাব মজা।”
বিয়ে নিয়ে বাড়ির সকলের মধ্যে আলোচনা শুরু হয়।
আলভী মানতাসার সাথে খেলছে আর একটু পর পর মায়ার দিকে তাকাচ্ছে। মায়াও তাকাচ্ছে ওর দিকে। সকলের পর থেকে একটা বারের জন্য মায়া কে ছুঁয়েও দেখতে পারেনি। বাপ আর বউ মিলে কি যে শুরু করেছে ওর সাথে।

রাতের খাবার খেতে খেতে এগারোটা বেজে যায় সকলের।
খাওয়া শেষ হলে আলভী দফায় এসে বসে।
আলতাফ মাহমুদ নিজের রুমের দিকে এগিয়ে জান। বাকি সবাই ও আস্তে আস্তে নিজেদের রুমের দিকে এগিয়ে যায়।
ডাইনিং রুমে এখন শুধু ঐশী রহমান, মেহবুবা মেহের আর মেড মায়া রয়েছে।
মেহবুবা মেহের মেড মায়া কে রুমে পাঠিয়ে দেন ঘুমোনোর জন্য। বাড়তি খাবার গুলো ফ্রিজে তুলে রাখেন। ঐশী রহমান এটো প্লেট বাটি গুছিয়ে ধুয়ে রাখেন।
সব শেষে ঐশী রহমান নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই পিছু ডাকে আলভী।
“কিছু বলবে?”
“অনেক গুলো বছর তোমার কাছ থেকে দূরে ছিলাম তাই আজকে আমি তোমার সাথে ঘুমাব।”
ঐশী রহমান অবাক হয়ে ছেলের মুখের দিকে তাকান।

“এভাবে তাকাচ্ছো কেন?”
“তুমি আমাদের সাথে ঘুমাবে?”
“না, তুমি আমার সাথে ঘুমাবে আমার রুমে চলো এখন।”
বলেই মায়ের হাত ধরে টেনে নিজের রুমের দিকে এগিয়ে যায়। ঐশী রহমান নিজেও আর কিছু না বলে ছেলের সাথে এগিয়ে জান।
আলভী মনে মনে বিশ্ব জয়ের হাসি হাসে। ওর বউ কে ওর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে না? এবার ও ওর বাপের বউ কে বাপের কাছ থেকে সরিয়ে নিল। ওর বিয়ের আগে আর বউ পাচ্ছে না আলতাফ মাহমুদ।
বুড়ো বয়সে বউ ছাড়া থাকতে কেমন লাগে বুঝুক এখন।
রুমে এসে ডোর লক করে দেয় আলভী। ঐশী রহমান বেডের উপর বসেন। আলভী বেডের উপর থেকে ফোন হাতে তুলে নেয়।

আলতাফ মাহমুদ এর নাম্বার খুঁজে বের করে ম্যাসেজ পাঠায়।
ঐশী রহমান এর জন্য অপেক্ষা করছিলেন আলতাফ মাহমুদ। ম্যাসেজ টোন বেজে ওঠায় ফোন হাতে নিয়ে ম্যাসেজ ওপেন করেন।
“মিস্টার আব্বা জান বউয়ের জন্য অপেক্ষা না করে ঘুমিয়ে পড়ুন। আগামী শুক্র বারের পরের শুক্র বার সকালে বউ ফেরত পাবেন তত দিন আম্মু আমার সাথে থাকবে আমার রুমে। রিল্যাক্স মুডে ঘুমিয়ে পড়ুন, গুড নাইট।”
ছেলের ম্যাসেজ দেখে হতভম্ভ আলতাফ মাহমুদ। এই ছেলে বলে কি? ঐশী রহমান ওর কাছে থাকবে মানে কি? বেড থেকে নেমে দ্রুত আলভীর রুমের সামনে এসে দাঁড়ান। ডোর নক করে ঐশী রহমান এর নাম ধরে ডাকেন।
আলভী ডোর খুলে মাথা টা বের করে শুধু।

“কি হয়েছে? রাতের বেলা এমন করে ডোর নক করছো কেন?”
“ঐশী কোথায়? ওকে বের হতে বলো।”
“আম্মু ওয়াশরুমে।”
“ডোরের সামনে থেকে সরো।”
“কেন?”
“তোমার মা কে বাইরে আসতে বলো।”
“জীবনেও না।”
“বেশি বাড়াবাড়ি করলে কিন্তু মায়া কে ওর নানার বাড়িতে রেখে আসবো। এখন তাও চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছো তখন তাও পারবে না।”
“আই ডোন্ট কেয়ার আব্বা জান। আমিও আমার আম্মু কে আমার নানার বাড়িতে রেখে আসবো। একে বারে আমার বিয়ের দিন নিয়ে আসবো।”

“রিভেঞ্জ নিচ্ছো?”
“যা ভাবো তুমি।”
বলেই ডোর বন্ধ করে দেয় আলতাফ মাহমুদ এর মুখের উপর। তারপর চাবি এনে চাবি দিয়ে ডোর লক করে দেয়। বলা তো যায় না ও ঘুমিয়ে পড়লে ওর মা যদি রুম থেকে বেরিয়ে যায়? কোনো রিস্ক নেবে না আলভী।
প্রতি শোধ কি শুধু আলতাফ মাহমুদ নিতে জানে নাকি? আলভীও প্রতি শোধ নিতে জানে। প্রতি শোধ হবে সমান সমান।

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২৫

আলতাফ মাহমুদ হা করে বন্ধ ডোরের দিকে তাকিয়ে থাকেন কিছু সময়। তারপর বির বির করে বলেন,
“ব্যাপার টা এমন হয়ে গেল না! আমার ছাও আমাকেই ধরে খাও।”

হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ২৭