হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩৬
সানা শেখ
রোজ অফিসে যাওয়ার সময় মায়া কে সাথে নিয়ে অফিসে যায় আলভী। মায়া একা একা সারা দিন কি করবে বাড়িতে? বাড়িতে একা একা থাকলে কেঁদে
কে টে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলবে।
জার্মানিতে এসেছে পনেরো দিন হয়ে গেছে।
প্রতিদিনের মতো জগিং করে বাড়িতে ফিরে আসে আলভী। রুমে এসে দেখে মায়া এখনো ঘুমিয়ে আছে। দুজন গোছল করে একসাথেই ফজরের নামাজ আদায় করেছিল। বাহিরে একটু একটু আলো ফোটার পর আলভী জগিং করতে বেরিয়েছিল আর মায়া আবার ঘুমিয়েছে।
ফ্রেস হয়ে এসে মায়া কে টেনে ওঠায় ঘুম থেকে। উঠে ঝিম ধরে বসে রইলো মায়া। ঘুমে তাকাতে পারছে না এখন। আলভী কোলে তুলে ওয়াশরুমে রেখে আসে মায়া কে। রুমের একপাশে দেয়ালের বদলে পুরোটাই গ্লাস দেওয়া। গ্লাসের সামনে থেকে পর্দা সরিয়ে দিতেই পুরো রুম আলোকিত হয়ে যায় বাইরের আলোয়।
হেঁটে বেডের কাছে এসে দাঁড়ায়। বেড গুছিয়ে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে আসে।
আলভী নিচে নেমে আসতেই কলিং বেল বেজে ওঠে।
একজন কেয়ারটেকার এগিয়ে যায় ডোরের দিকে। ডোর খুলে দিতেই ভেতরে প্রবেশ করে মেরিনা।
আলভী মেরিনা কে দেখে কপাল ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে থাকে। এত সকাল সকাল মেরিনা এখানে কেন? সবে মাত্র সাত টা বাজে এখন।
আলভীর কাছে এসে দাঁড়ায় মেরিনা। হাসি মুখে বলে,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“কেমন আছো আলভী?”
“আলহামদুলিল্লাহ , আপনি?”
“ভালো।”
আলভী সোফার দিকে ইশারা করে বলে,
“বসুন।”
মেরিনা আলভীর সাথেই সোফায় বসে একটু দুরত্ব বজায় রেখে।
মেরিনা বলে,
“মায়া কোথায়? ওকে দেখছি না যে।”
“রুমে রয়েছে, আসছে।”
” তুমি হয়তো ভাবছো আমি এত সকাল সকাল এখানে কেন! আমি তো রাতেই আসতে চেয়েছিলাম তারপর আবার ভাবলাম এত রাতে এসে আর তোমাদের বিরক্ত করবো না তাই সকালের অপেক্ষায় ছিলাম।”
“কিছু হয়েছে?”
“সামনের ত্রিশ তারিখে আমার আর জেমি চৌধুরীর বিয়ে।”
আলভী খুশি হয়ে বলে,
“কনগ্রাচুলেশন।”
মেরিনা বিয়ের ইনভিটেশন কার্ড আলভীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলে,
“আমাদের বিয়ের প্রথম ইনভাইট আমি তোমাদের দুজন কে করতে এসেছি। তোমরা দুজন কিন্তু অবশ্যই আসবে। তোমাদের দুজনের অপেক্ষায় থাকবো আমি।”
“ইনশা আল্লাহ অবশ্যই আসবো।”
“আসি তাহলে ভালো থেকো, আগামী কাল অফিসে দেখা হচ্ছে।”
“ব্রেকফাস্ট করে যাও।”
“নো থ্যাঙ্কস। জেমি অপেক্ষা করছে আমার জন্য।”
মেরিনা বেরিয়ে যায় বাড়ি থেকে। আলভী বিয়ের কার্ডের উপর নজর বুলায়। মেরিনা বিয়ে করছে শুনে খুশিই লাগছে।
মায়া নিচে নেমে এসে আলভীর দিকে তাকায় তারপর আবার হাতে থাকা কার্ডের দিকে তাকায়।
“কিসের কার্ড এটা?”
আলভী মুখ তুলে মায়ার মুখের দিকে তাকায়। মায়া কে টেনে কোলের উপর বসিয়ে ঘাড়ে থুতনি ঠেকিয়ে বলে,
“মেরিনার বিয়ের কার্ড। আমাদের ইনভাইট করে গেল।”
“কখন এসেছিল?”
“একটু আগেই।”
মায়া কার্ড টা হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখে।
আলভী মায়া কে আরেকটু চেপে ধরে বলে,
“চলো লং ড্রাইভে যাই।”
“কোথায়?”
“তুমি যেখানে যাবে।”
“আমি কি কিছু চিনি নাকি এখানকার?”
“আচ্ছা আমিই নিয়ে যাব আমার পছন্দের জায়গায়। এখন চলো খেয়ে নিই, খিদে পেয়েছে।”
মায়া আলভীর কোল থেকে নেমে দাড়ায়। কার্ড টা টিটেবিলের উপর রেখে ডাইনিং রুমের দিকে এগিয়ে যায়। ওদের দুজনের জন্য ব্রেকফাস্ট তৈরি করে সব কিছু গুছিয়ে রাখা হয়েছে ডাইনিং রুমে।
আলভী মায়া কে নিজ হাতে খাইয়ে দেয় নিজেও খায়।
খাওয়া শেষ করে রুমে এসে দুজনেই তৈরি হয়ে নেয়। মায়া লাইট পিঙ্ক আর হোয়াইট কম্বিনেশনের গাউন পড়ে হোয়াইট কালার হিজাব বেঁধেছে। আলভী হোয়াইট শার্ট আর ব্ল্যাক প্যান্ট পড়েছে।
দুজন এক সাথেই বাড়ি থেকে বের হয়। আলভী গ্যারেজ থেকে কার বের করে আনে। মায়া উঠে বসতেই কার ছুটে চলে অজানা গন্তব্যে।
কার অটো ড্রাইভিং মুডে দিয়ে মায়া কে টেনে আনে নিজের কাছে। মায়া ছটফট করে বলে,
“কি করছো ছাড়ো। এটা রাস্তা তোমার বেড রুম না।”
“চুমু খাওয়ার জন্য বেড রুমের প্রয়োজন হয় না মায়া পরী।”
“আমার এখন চুমু চাই না, ছাড়ো আমাকে।”
“তুমি না চাইলে কি হবে, আমি তো চাই।”
মায়ার কোনো কথা শোনে না আলভী। জোর করেই মায়ার অধর যুগল চেপে ধরে নিজের অধর জোড়া দিয়ে। কয়েক মিনিট পর ছেড়ে দিয়ে বলে,
“ঘোরাঘুরি বাদ, চলো বাড়ি ফিরে যাই।”
মায়া কপাল ভ্রু কুঁচকে বলে,
“কেন? তুমি না বললে লং ড্রাইভে যাবে!”
“আর লং ড্রাইভ, আমার এখন আদর করতে ইচ্ছে করছে।”
মায়া আলভীর কাছ থেকে দূরে সরে এসে নিজের সিটে বসে আবার সিট বেল্ট লাগাতে লাগাতে বলে,
“এমন কিছু করলে আগামী এক মাস তুমি আমার ধারে কাছেও আসবে না। ভদ্র লোকের মত যেখানে যেতে চেয়েছো সেখানে নিয়ে চলো।”
“বউ টা বাঙ্গালী হয়েও ব্রিটিশ দের মতোন আচরণ করে।”
মায়া কিছু না বলে বাইরের দিকে তাঁকিয়ে থাকে।
আলভী হতাশার শ্বাস ছেড়ে নিজে কার ড্রাইভ করতে করতে বলে,
“আজকে শুধু বাড়ি ফিরে নেই।”
মায়া ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায়।
“বাড়ি ফিরে কি করবে?”
“আদর।”
সুর ধরে টেনে টেনে বলে কথাটা। মায়া আবার বাইরের দিকে তাকিয়ে বলে,
“জিকির শুরু করেছে আদর আদর। আল্লাহর নাম টাও তো নিতে পারো।”
“ও আল্লাহ তোমার এই বান্দির মনে একটু দয়া মায়া দাও। জামাই কে শুধু ব্ল্যাকমেইল করে কথায় কথায়। আমার একটা কথাও শোনে না। খালি ভয় দেখায় আমাকে।”
বড় বড় চোখ করে তাকায় মায়া। বোঝাই যাচ্ছে আলভীর কথা শুনে সেই লেভেলের অবাক হয়েছে।
ঘুরে ফিরে মাঝরাতে বাড়ি ফিরে আসে দুজন।
ডিনার সেরেই এসেছে এখন শুধু ফ্রেস হয়ে শুতে পারলেই হয়, দুজনেই ভীষণ টায়ার্ড।
দুজনের সারা দিন আজ অনেক ভালো কে টে ছে।
দুজন একসাথেই শাওয়ার নেয়।
মায়া ভেজা চুল নিয়েই শুয়ে পড়তে চাইলেও আলভী শুতে দেয় না। হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে চুল শুকিয়ে তারপর শুতে দেয়। ওর ছোট ছোট চুল গুলো ফ্যানের বাতাসেই শুকিয়ে গেছে। লাইট অফ করে মায়া কে বুকে জড়িয়ে ধরে নিশ্চুপ হয়ে যায়।
আজ ত্রিশ তারিখ, মেরিনা আর জেমির বিয়ে। কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে।
মায়া আলভী সেন্টারের ভেতর প্রবেশ করে একে অপরের হাত ধরে।
বিয়ে পড়ানোর সময় হয়ে আসে। মেরিনার হাত ধরে ওর বাবা স্টেজে নিয়ে আসে মেরিনা কে।
মেরিনা আজ পশ্চিমা দের মতো করে বউ সেজেছে তবে ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখতে। সকলের নজর মেরিনার দিকে। মেরিনা জেমির দিকে একবার তাকিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা সকলের দিকে তাকায়। সকলের সামনেই মায়া আলভী একে অপরের হাত ধরে দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
দুজন কে ম্যাচিং ড্রেসে ভীষণ সুন্দর লাগছে দেখতে। দুজন কে পাশাপাশি সব সময় সুন্দর লাগে। এরা দুজন একে অপরের জন্যই তৈরি।
মেরিনার আজও মনে হচ্ছে আলভী ওর হলে কি এমন ক্ষতি হতো!
এরকম ভাবা টাও এখন অন্যায়। দুজনের দিক থেকে চোখ সরিয়ে জেমির দিকে তাকায় আবার।
এখন থেকে ওর সব ভাবনায় সব সময় জেমি থাকবে। ও যাকে ভালোবেসেছে তাকে না পেল, ওকে যে ভালোবেসেছে সে তো ওকে পাবে।
বিয়ে শেষ করে নয়টার পর পর মেরিনা জেমি আর ওদের পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সেন্টার থেকে বেরিয়ে আসে আলভী মায়া।
শুভ ওদের দুজন কে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে নিজের ফ্যামিলি নিয়ে নিজেদের বাড়িতে ফিরে যায়।
মায়া ফ্রেস হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে মুখে ক্রিম লাগাচ্ছিল। আলভী এসে মায়ার পেছনে দাঁড়ায়। মায়ার উন্মুক্ত ঘাড়ে আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করে।
মায়া বিরক্তি ভঙ্গিতে ঘাড় ঘুরিয়ে আলভীর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
“তোমার সমস্যা কি? সব সময় এমন করো কেন? দূরে সরো।”
আলভী দূরে সরে না, উল্টো মায়া কে জাপটে ধরে। মায়ার ঘাড়ে ঠোঁটে ছুঁইয়ে কানের লতিতে চুমু খায়। ফিসফিস করে বলে,
“বাবু চাই।”
“বাবুর নাম করে বার বার কাছে আসার বাহানা আমি কি বুঝি না নাকি?”
“এত বুজে কি হবে যদি হাসবেন্ডের মন বুঝতে না পারো!”
“সবই বুঝি আমি, এখন আমার ঘুম পেয়েছে ডোন্ট ডিস্টার্ব মি।”
আলভীর কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বেডের দিকে আগায়। আলভী দ্রুত গিয়ে মায়ার জামার জিপার খুলে দেয়। মায়া ঘুরে দাঁড়িয়ে বলে,
হৃদয় মাঝে হঠাৎ তুমি পর্ব ৩৫
“তুমি দিন দিন অশ্লীল হয়ে যাচ্ছ।”
“বউয়ের সাথে রোম্যান্স করলে যদি অশ্লীল হয়ে যাই তাহলে আমি অশ্লীলই। এখন বেশি কথা না বলে কাছে আসো আদর করি।”
মায়া কে টেনে নিজের উন্মুক্ত বুকের সাথে মিশিয়ে উঁচু করে বেডের দিকে আগায়।