হ্যালো 2441139 পর্ব ১৩

হ্যালো 2441139 পর্ব ১৩
রাজিয়া রহমান

মালিহার বিয়ে ভেঙে গেছে। বিষণ্ণ মনে মালিহা বসে আছে ঘরে। জমিরনের মেজাজ আরও খারাপ হয়ে আছে।
সব প্রায় ঠিকঠাক করে রেখেছেন তিনি গোপনে। তবুও বিয়ে ভেঙে গেছে!
জমিরন বুঝতে পারছে কাদের ছাড়া এই কাজ অন্য কেউ করে নি।
মালিহা ঘরে বসে গুনগুন করে কাঁদছে।পাত্রকে মালিহার ভীষণ মনে ধরেছে।
অথচ সেখানে এরকম বাগড়া আসবে মালিহা ভাবে নি।
জমিরন মালিহার কান্না শুনে ঘরে যায়।মালিহার দুই গালে থা প্প ড় মেরে বলে, “আগে মনে আছিলো না খা ন কি?এখন কান্দস ক্যান?বোইনের জামাইয়ের লগে ঢলাঢলি করার সময় ভালা লাগছে?নিজের পায়ে তো নিজেই কুড়াইল মারছস।এখন ক্যান নাটক দেখাস?আমারে আর শান্তি দিবি না তুই হারামজাদি। ”

মালিহা চুপ করে থাকে।দোষ তার সে জানে। মা শুরু থেকেই তাকে নিষেধ করেছিলো কিন্তু মালিহা দুলাভাইয়ের হাতে অঢেল টাকাপয়সা দেখে লোভ সামলাতে পারে নি। কাদের বিদেশ থেকে আসার পর বউ আর শালীকে নিয়ে শপিং করে আসে।সেদিন মালিহাকে তিনটা থ্রিপিস কিনে দেয়। এতো দামী থ্রিপিস দেখে মালিহার মন ভালো হয়ে যায়।
বিদেশ থেকে আসার সময় কাদের শালীর জন্য মোবাইল ফোন ও আনে।
এতো উপহার পেয়ে মালিহার মন ভীষণ আনন্দিত হয়। সে রাতেই অন্ধকারে কাদের মালিহার বুকে হাত দেয়।শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে কাদেরের হাত লাগতেই মালিহা প্রথমে ভয় পায়।
কাদের ফিসফিস করে বলে, “দোকানে একটা লাল শাড়ি দেইখা আসছি,তুই পরলে তোরে ভীষণ মানাইবো।কাইল গিয়ে নিয়ে আসমু।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মালিহার ভয় এরপর লোভে রূপ নেয়।নিজের শরীরের বিনিময়ে যদি শখ পূর্ণ হয় তাহলে ক্ষতি কি?
লোভ মানুষকে পশুর স্তরে নিয়ে যায়।একটা লোভী মন কখনো জানে না তার লোভের আগুনে পুড়ে যাচ্ছে তার মনুষ্যত্ব, তার বিবেক।
কাদেরের হাত বুক থেকে এরপর আস্তে আস্তে সারা শরীরে ঘুরে বেড়িয়েছে।
বিনিময়ে মালিহা যখন যা চেয়েছে তাই পেয়েছে।
কিন্তু শরীরের এই খেলায় মনের কোনো সংযোগ ছিলো না।
তাই এক সময় মন বিদ্রোহ করে উঠে। শরীরি খেলার আগ্রহে ভাটা পড়ে যায় মালিহার। ভালোবাসাহীন শরীরের প্রতি আকৃষ্ট হয় না এখন আর।কাদেরকে ভীষণ বিরক্তিকর মনে হয়। কিন্তু মালিহা জানে তার হাত পা বাঁধা।কাদেরের সাথে তার নানা রকম ছবি আছে।এসব দেখলে কেউ-ই তাকে বিয়ে করবে না।
মালিহা ভেবে পায় না তার কি করা উচিত!

এতো দিন পরে আজ মালিহার ভীষণ অনুশোচনা হচ্ছে। কিছুই ভালো লাগছে না।মা’য়ের গালাগাল শুনে মনে হচ্ছে আগে যদি মা এরকম কড়াভাবে শাসন করতো তাহলে হয়তো মালিহা এতটা নষ্ট হতো না।
কাদের রাতে চলে যাবে।সাবিহাকে সাথে নিয়ে শ্বশুর বাড়ি এসেছে শাশুড়ীর থেকে বিদায় নিতে।
বোনের কথা শুনে মালিহা ঘর থেকে বের হয়।আল্লাহ আল্লাহ করে কাদের দেশ থেকে চলে গেলে মালিহার শান্তি।এরপর আর সে কিছু করতে পারবে না।একবার বিয়ে হয়ে গেলে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে।
শ্বশুর বাড়ি এসে কাদের সাবিহাকে বললো, “তোমারে জরুলি কিছু কথা কওনের আছে।তোমার বোইনের সামনেই কইতেছি।
আইজ এইখানে তোমারে আমি তালাক দিলাম।এক তালাক,দুই তালাক,তিন তালাক।তালাক ক্যান দিলাম এইটা তোমার না বোইনের থাইকা জাইনা নিও।এইখান থাইকা আর আমার সংসারে তোমার কোনো জায়গা নাই।তুমি আমার কেউ না আর।”

সাবিহার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। কি বলছে কাদের এসব?এই তো এদিকে আসার আগেও তো সব ঠিক ছিলো। চলে যাবে বলে কাদের শেষ বারের মতো সাবিহার সাথে মিলিত হয়েছিলো।
আসার পথে ও তো কতো কথা বলছিলো।তাহলে হুট করে কেনো এসব বলছে?
জমিরন পাথরের মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার আর কোনো কিছুতেই কোনো অনুভূতি হচ্ছে না। কি করবেন তিনি?
কিছুই তার হাতে নেই।
মালিহা আতংকিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বোনের দিকে।এই প্রথম তার মনে হচ্ছে বোনের দুটো বাচ্চা আছে,কি হবে তাদের?
সাবিহা কান্নায় ভেঙে পড়ে কাদেরের পা জড়িয়ে ধরে। কাদের সরে যায়। তারপর বলে, “আমি বিদ্যাশ গিয়ে ডিভোর্স পেপার পাঠাই দিমু।পোলাপান আমি রাখতে পারমু না।পোলাপান নিয়ে আসিস গিয়ে। আমি আবার বিয়া করমু।সুন্দরী, অল্প বয়সী একটা মাইয়া বিয়া করমু।তোর এই শাস্তি তোর মা বোইনের কর্মফল বুঝলি।”
কাদের চলে গেলো।

সাবিহা মা’কে জড়িয়ে ধরে বললো, “মা কি হইছে?আমার সংসার এম্নে ভাঙ্গলো ক্যান মা?”
জমিরন মালিহার দিকে তাকিয়ে বললো, “এই ডাইনিরে জিগা।বোইনের জামাইয়ের লগে যে ফষ্টিনষ্টি করছে তারে জিগা।আল্লাহ আমার মরন দেয় না ক্যান?বাচাইয়া রাখছে এইসব দেখনের জন্য? ”
সাবিহা অবাক হয়ে বোনের দিকে তাকায়। মালিহার দৃষ্টিতে অপরাধবোধ আর সাবিহার দৃষ্টিতে অবিশ্বাস।
সাবিহার মাথার ভেতর কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।বারবার মনে হচ্ছে এসব কিছু তার স্বপ্ন। মিথ্যা স্বপ্ন।
কিন্তু না,এটা স্বপ্ন হয় নি।সাবিহা বাড়িতে যেতেই দেখে সাবিহার বড় ননদ শিল্পী এসে দাঁড়িয়ে আছে। সাবিহাকে দেখে বললো, “তোমার যা কিছু আছে সেসব নিয়ে বাইর হও ঘর থাইকা।কাদের বলে গেছে তোমারে তালাক দিছে।তোমারে ঘর থাইকা বাইর কইরা ঘরে তালা দিতে।”

সাবিহা কিছু বললো না।কাউকে তার কিছু বলার নেই। বোনের পাপের ফল তাকে ভোগ করতে হবে।
দুই বাচ্চাকে নিয়ে একটা কাপড়ের ব্যাগ গুছিয়ে নেয় সাবিহা।নিজের জামাকাপড় বাচ্চাদের কাপড় ছাড়া আর কিছু নেয় না।শিল্পী সাবিহার কান গলার জিনিস ও খুলে নেয়।
সাবিহা প্রতিবাদ করে না।যে মানুষটাই আর তার নেই সেখানে তার দেওয়া গহনা রাখার মানে নেই কোনো।
সাবিহা বের হতে নিলে শিল্পী একটা খাম ধরিয়ে দেয় সাবিহার হাতে।
কিসের খাম সেটা সাবিহা জিজ্ঞেস করতেই শিল্পী বললো, “তোমার দেনমোহরের টাকা।কাদের গত রাইতে আমার কাছে দিয়া আসছে।বলছে তুমি যাওনের সময় তোমারে দিয়ে দিতে।”
সাবিহা টাকাটা নিলো।সামনে তার জীবন ভীষণ কঠিন। কিছু টাকা হাতে না থাকলে সে টিকতে পারবে না। ”
কামিনী আর সজীবকে হাতে নিয়ে সাবিহা বের হলো।

তারপর বাচ্চাদের হাতে নিয়ে মায়ের বাড়িতে এসে হাজির হলো।
সাবিহার দুনিয়া খুবই ছোট। তার যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।
জমিরন কি করবে বুঝতে পারছে না। এতো বড় ঘটনা ঘটে গেলো অথচ সবাই কেমন নির্লিপ্ত।
সাবিহা মা’কে বললো, “তোমাকে মা কইতে আমার গা ঘিনঘিন করে মা।আমার যাওয়ার জায়গা নাই।থাকলে এই জীবনের মতো তোমার আর তোমার মাইয়ার মুখ আমি দেখতাম না।”
জমিরন চুপ করে থাকে।বলার মুখ নেই তার।এখন চিন্তা হচ্ছে ছেলেকে নিয়ে। ছেলেটা দেশে আসবে কিছুদিনের মধ্যে। দুই মেয়েকে ঘরে রেখে ছেলেকে বিয়ে করাবেন কীভাবে? লোকে কতো কথা বলবে!
জমিরনের ভাবনার মধ্যে গ্রামের মহিলা তিন চার জন এলো।এসে সাবিহারে বললো, “কাদিরা নাকি তোরে তালাক দিছে?ঘটনা কি সত্য না-কি? ”

জমিরন শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, “কে বলছে?”
মহিলা একজন আরেকজনের গা টিপে হেসে বললো, “সবাই সব জানে।মালিহার লগে যে কাদিরার লাইন ছিলো সেইটাও কাদিরা বইলা গেছে। কতো রকমের ছবি আছিলো সবই গেরামের পোলাগো মোবাইলে দিয়ে গেছে। ছি ছি ছি!আপনের ছোট মাইয়ার এত বি ষ!
দুলাভাইয়ের লগে এইসব ছবি!
মাগো,আমরা হইলে মাইয়ারে জ বা ই কইরা দিতাম। এরকম লেংটাপুংটা হইয়া ছবি!
গেরামের সবাই হাসাহাসি করতেছে।”
সাবিহার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে।কি শুনছে এসব!

মালিহার মনে হচ্ছে তার কানে কেউ গরম সীসা ঢেলে দিচ্ছে।এতো যন্ত্রণা হচ্ছে কেনো আজ?
ছবির কথা মনে পড়তেই মালিহা আতংকিত হয়ে উঠে।
না ভেবে কতো রকম ছবি পাঠিয়েছিলো সে।এখন কি হবে?
জমিরন ঘরের সামনে চুপ করে বসে পড়ে। কিছু করার নেই তার।
সাবিহা বাচ্চাদের নিয়ে একটা রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেয়।আস্তে আস্তে উঠানে মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে।
একজন এসে জমিরনকে ছবিগুলো দেখায়।

হ্যালো 2441139 পর্ব ১২

গা গুলিয়ে উঠে জমিরনের।
রাতে পিয়াসার বাবা শাহেদ কল করে বাড়িতে।মালিহার কয়েকটা ছবি কে জানি তারে ইমোতে পাঠিয়েছে।
শাহেদ মা’কে কল করে চিল্লাচিল্লি করে জানায়,আজ থেকে সে আর বাড়ির কোনো খবর জানে না।তার স্ত্রী, কন্যা তো বিদায় করেছে আগেই এবার মা বোন ও বিদায় করলো।দেশেই ফিরবে না।বিদেশেই বিয়েসাদী করে স্থির হবে।

হ্যালো 2441139 পর্ব ১৪