হ্যালো 2441139 পর্ব ২৩

হ্যালো 2441139 পর্ব ২৩
রাজিয়া রহমান

শীতের রিক্ততার অবসান হয়ে প্রকৃতিতে বসন্ত এলো। গাছে গাছে যেনো রঙের বন্যা।কুয়াশাচ্ছন্ন দিন মিলিয়ে গিয়ে আবারও দেখা যাচ্ছে আলো ঝলমলে দিন।
শুধু পরিবর্তন হয় নি পারভীন। তার জীবনে নতুন করে আর বসন্ত আসে নি।
সাদেক আলী আগের মতোই আছে।তার মনের পুরোটা জুড়ে শুধু একটা নাম।তা হলো পারভীন।
সময় কেটে যাচ্ছে তার আপন গতিতে। সাদেক কলেজে ক্লাস শেষ হলে এক মুহূর্ত ও অপেক্ষা করে না আর।সারাক্ষণ তার বুক কাঁপে শঙ্কায়।
পারভীন ঠিক আছে তো এই চিন্তায় সাদেকের সব কিছু থমকে যায়।
পারভীন সে যেনো পাথরের মূর্তি। কোনো অনুভূতি নেই তার।সাদেকের ছায়া ও মাড়ায় না সে।রান্নাঘরের সামনে পর্দা লাগিয়ে দিয়েছে যাতে সাদেক নিজের রুম থেকে পারভীনকে দেখতে না পায়।
পুকুর ঘাটে ও পর্দা লাগিয়েছে।

সাদেকের মনে হচ্ছে তার থেকে পালানোর জন্যই পারভীন এমন করছে।
বুকের ভেতর কেমন ঝড় উঠে। ইচ্ছে করে সব লণ্ডভণ্ড করে দিয়ে পারভীনকে নিয়ে পালিয়ে যায়।তার যত আকুলতা, যত অস্থিরতা কিছুই যেনো পারভীন বুঝে না।
এতো নির্লিপ্ত কিভাবে থাকে একটা মানুষ?
নিয়ম মেনে দিন কেটে রাত আসে,সময় কেটে যায়। বসন্ত পেরিয়ে গ্রীষ্ম এলো।
পহেলা বৈশাখের দিন কলেজের কয়েকজন কলিগের সাথে সাদেক ঘুরতে বের হলো। অনেকক্ষণ ঘুরে ফিরে একটা রেস্টুরেন্টে বসলো খাবার খাওয়ার জন্য।
সাদেক রেস্টুরেন্টের ওয়াশ রুমে গেলো প্রস্রাব করার জন্য। দরজা ফাঁক করতেই দেখতে পেলো কাদের আর মালিহা ঘনিষ্ঠহয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

এবার আর সাদেক ভুল করলো না।মুহূর্তেই ফোন বের করে ভিডিও করে নিলো।তারপর ভিডিও অফ করে বাহিরে থেকে গলা খাঁকারি দিয়ে দরজা ধাক্কা দিতেই দেখে দুজন দুদিকে ছিটকে পড়ে।
সাদেক অবাক হওয়ার ভঙ্গিতে বললো, “আরে আপনারা? ”
কাদের সাদেকের সামনে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। সেদিনের পর কাদের আর সাদেক ঘরে থাকাকালীন শ্বশুর বাড়ি যায় নি।
মালিহা আমতা আমতা করে বললো, “আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো পান্তা-ইলিশ খাওয়ার তাই দুলাভাই নিয়ে এসেছেন। ”
সাদেক আর কিছু না বলে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো। তার মাথায় একটা দুর্দান্ত প্ল্যান এসেছে। এই প্ল্যানটাই সে এক্সিকিউট করবে।
রাতে খাওয়ার পর সাদেক জমিরনকে বললো তার সাথে কথা আছে।
জমিরন ভাবলো সাদেক হয়তো মালিহাকে বিয়ে করার কথা বলবে।

কিন্তু সাদেক যা বললো তা শুনে জমিরন চমকে উঠে। সাদেক কি-না পারভীনকে বিয়ে করতে চাইছে!
জমিরনকে অবাক করে দিয়ে সাদেক বললো, “মালিহার সাথে যে আপনার বড় জামাইয়ের একটা ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে তা আমি জানি।এরপর পুরো দুনিয়াকে জানাবো আমি।প্রমাণ ও আছে আমার কাছে। আপনাদের কাছে পারভীনের কোনো দাম নেই।অথচ তাকে পেলে আমি বেঁচে যাই।আপনার ছেলে তাকে চায় না।এই পরিবারে আপনারা কেউ-ই তাকে চান না।তাকে আমাকে ভিক্ষা দিন।
তা না হলে আমি আপনাদের জীবন ধ্বংস করে দিবো।”

জমিরন নিজের রুমে গিয়ে শাহেদকে কল দিতে গেলেন।পরক্ষণে মনে হলো তার শাহেদের ফোন হারিয়ে গেছে।
জমিরন চোখের উপর দেখতে পেলো সাবিহা আর তার বাচ্চাদের দুর্দশা।
সময় মতো ছোট মেয়েকে তিনি শাসন করেন নি।
থলের বেড়াল বের হয়ে যাওয়ার আগেই তাকে থলেতেই মেরে ফেলতে হবে।
জমিরন সিদ্ধান্ত নিলো লাগলে পারভীনকে তুলে দিবে সাদেকের হাতে তবুও এই ব্যাপারটা গোপন রাখতে হবে তার।তা না হলে সব কিছু হারাবেন। সাবিহার সংসার ভেঙে যাবে।তার বড় মেয়েটা বোকাসোকা বলেই চোখের সামনে ঘটে যাওয়া ঘটনার কিছুই বুঝতে পারছে না।
কিন্তু ছোট মেয়েটা ও তার আদরের।

দুই মেয়ের জীবনটাই নষ্ট হয়ে যাবে।ছোট মেয়েটা যে কখনোই কাদেরকে বিয়ে করবে না তা তিনি জানেন।
জমিরনের ইচ্ছে করলো মালিহাকে গিয়ে উত্তম মধ্যম দেয়।রাগে হনহন করে মালিহার রুমে গেলেন।
মালিহা মাকে দেখে বললো, “মা দেখো,দুলাভাই কি দিয়ে গেছে। আসো খাই।”
কাদের দুইটা পার্সেল হালিম দিয়ে গেছে।
জমিরন ভাবলো শুধু শুধু মেয়েকে বকাঝকা করে কি লাভ।
যে খাওয়াচ্ছে সে ও তার মেয়ের জামাই,যে খাচ্ছে সে ও তার মেয়ে।
রাগারাগি করে কি লাভ।
তাছাড়া পারভীনকে এমনিতে ও তো তার পছন্দ না।তাকেই বরং বের করে দিবে বাড়ি থেকে।
খেতে খেতে জমিরন মালিহাকে বললো, “সাদেক জেনে গেছে তোর আর কাদেরে ব্যাপার। ”
মালিহা তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে বললো, “জানারই কথা। এক ঘরে থাকি যখন। ”
জামিরন ভাবলো পারভীন ও জানে,সাদেক ও জানে।দুজনকে যদি সরিয়ে দেওয়া যায় তাহলে আর কেউ জানবে না।কয়দিন পর কাদের দেশের বাহিরে চলে গেলে মালিহাকে দেখেশুনে বিয়ে দিয়ে দিবেন।
জমিরন সাদেককে জানালো সে চাইলে পারভীনকে বিয়ে করতে পারে। পারভীনের সাথে এম্নিতেও শাহেদের বিয়েটা বৈধ নেই।তিনি তো শুনেন শাহেদ কল দিকেই গালাগালির মধ্যে প্রতিদিনই পারভীনকে তালাকের কথা বলে।
তালাক সর্বদা,সব অবস্থায় কার্যকর হয়ে যায়।

সব ভেবে সেই রাতেই সাদেক আর জমিরন পরিকল্পনা করে ফেললো।
পরদিন সকালে জমিরন পারভীনকে তার ঔষধের প্রেসক্রিপশন দিয়ে বললো তার জন্য ঔষধ নিয়ে আসতে।সাথে পিয়াসাকে ও নিয়ে যেতে বাজারে।
পারভীন পিয়াসাকে নিলো না সাথে। মেয়েটাকে সাথে নিলে যদি একটু কিছু না খাওয়াতে পারে তাহলে নিজেরই কষ্ট লাগবে।পিয়াসাকে ঘুম পাড়িয়ে পারভীন জমিরনের জন্য ঔষধ আনতে গেলো।
সাদেক তৈরিই ছিলো। পারভেজ সিএনজির জন্য অপেক্ষা করছিলো, সেই মুহূর্তে একটা খালি সিএনজি এলো।
পারভীন সিএনজিতে উঠে বসে।একটু পরে সাদেক ও উঠে সেই সিএনজিতে।
পারভীন যখন বুঝতে পারলো সাদেক তাকে নিয়ে যাচ্ছে তখন চিৎকার করে ও কোনো লাভ হলো না।
কিছুক্ষণ কান্নাকাটি, চিৎকার চেঁচামেচি করে পারভীন যখন শান্ত হলো তখন সাদেক পারভীনকে কিছু রেকর্ড শোনায়।
শাহেদের সেই রাতের ভয়েস মেসেজ সাদেক নিজের ফোনে রেকর্ড করে রেখেছিলো ডিলিট করার আগে।
পারভীন হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো।
এসব কি শুনছে সে!

কিন্তু তার মেয়েকে যে ওই পাষাণপুরীতে রেখে এসেছে!
সাদেক বললো, “পিয়াসাকে আমি কিছুদিন পরে নিয়ে আসবো পারভীন।আগে আমার বাড়িতে ব্যাপারটা সামাল দিয়ে নিই।আমার বাবা মা ব্যাপারটা সহজে মেনে নিতে চাইবে না প্রথমে। আমি চাই না পিয়াসার সামনে সিনক্রিয়েট হোক।পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আমি তোমার মেয়েকে নিয়ে আসবো।তাছাড়া, আজকে তোমাকে তোমার শাশুড়ী ইচ্ছে করেই পাঠিয়েছে আমার সাথে মিলে।ওই বাড়িতে ফিরে গেলে তোমাকে ওরা মেনে নিবে না পারভীন। ”
পারভীন কেঁদে উঠে। এ কি জীবন তার!
এ কোন অনিশ্চয়তা এক জীবনে!
সাদেকের পরিবারে একটা ঝড় উঠে গেলো। ২ সপ্তাহ পর সাদেক যখন পিয়াসাকে আনতে গেলো তখন গিয়ে জানতে পারলো পিয়াসাকে লিগ্যালি দত্তক দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পারভীন আকুল হয়ে কান্না করে শারমিনকে জড়িয়ে ধরে।
শারমিন বললো, “তুমি কি তোমার মেয়েকে ফেরত নিতে চাও?”
পারভীন মলিন হেসে বললো, “না ম্যাডাম,আমি জানি ও আপনার কাছে আছে।আমার উপর মেয়ের যে অভিমান তা এই জন্মে ও দূর হবে না।সব আগের মতো কখনোই হবে না।অযথা আপনার মেয়ের উপর একটা ঝড় উঠবে আবার। আমি চাই ও ভালো থাকুক।আপনার চাইতে বেশি ওকে কেউ ভালো রাখতে পারবে না।”
পিংকি এসে বললো, “আন্টি পিয়াসা আপনাকে খুঁজছে। ”

শারমিন পারভীনের দিকে তাকায়। পারভীন বললো, “এই জীবনের মতো আর কখনো আমি আপনাদের সামনে আসবো না ম্যাডাম।আমি মা হয়ে আমার মেয়েকে যে কষ্ট দিয়েছি,ওর সামনে এসে সেই কষ্ট আমি আর দ্বিগুণ করতে চাই না।ও আপনার কাছে ভালো আছে,ভালো থাকুক এটাই চাই।”
শারমিন ধীর পায়ে মেয়ের কাছে আসে।পিয়াসা মা’কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, “মা তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না।তুমি আর বাবা আমাকে ছেড়ে গেলে আমি আর বাঁচতে পারবো না।আমার ছোট্ট বুকে এতো আঘাতের ভার সইবে না।”

হ্যালো 2441139 পর্ব ২২

শারমিন মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে। এই মেয়েটা তার। আজ আবারও তার মনে হচ্ছে এই মেয়েটা শুধু তার। তার বলেই আজকে তিনি জিতে এসেছেন।

হ্যালো 2441139 পর্ব ২৪