৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২০
সারা চৌধুরী
-“জানিনা ভালোবাসা কি.. শুধুমাত্র চার অক্ষরে নাম নাকি এর পিছনে আছে আর এক রহস্য ভালোবাসা মানুষকে এতো কাদায় কেনো..একটু মন খুলে হাসিয়ে আবার দুঃখের সাগরে ভাসিয়ে দেই..!
পড়ন্ত বিকেল শ্রাবন ছাদের কর্নারে দোলনায় বসে নিজের ডায়রিতে লিখলো নিজের মনে জমিয়ে রাখা কথা গুলো..শ্রাবন জানে না একটা বিবাহিত মেয়েকে সে কিভাবে ভালোবেসে ফেললো..তার রুচি কিভাবে এতো খারাপ হলো..কিন্তু শ্রাবন যে নিরুপায়..তার হৃদয় গহিনে ছোট্ট করে ফুটে উঠেছে সারা নামক মিষ্টি একটা ফুল..তবে চাইলেই তাকে আর আপন করে নিতে পারবে না শ্রাবন..ভালোবাসলেই কি আপন করে নিতে হবে নাকি।। দূর থেকেও ভালোবাসা যায়..আজ ফারুক তালুকদার যখন সারাকে বলেছিলো সে শুভ্রর সাথে থাকতে চাই কিনা তখন সারার উত্তর হ্যা ছিলো..শ্রাবন তখনি বুজতে পেরেছে সারার হৃদয়ে শুভ্র জায়গা পেয়েছে..শ্রাবন এর চোখ বেয়ে পড়ে এক ফোটা নোনাজল।হ্যা শ্রাবন কাদছে। কেন কাদছে..?সারা কে না পাওয়ার জন্য নাকি অন্য কোনো কারন..?হুট করে কান্নার মাঝেই শ্রাবন রহস্য মাখা হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলে উঠে…
-“রাত্রি তুমাকে আমি রাতের মতোই কালো অন্ধকার জীবন থেকে ঘুরিয়ে আনবো..ভালোবেসে ফেলছি তোমায়।তোমাকে আমার করেই ছাড়বো.!
শ্রাবন জোরে জোরে হাসতে শুরু করলো.. ঠিক সে সময় সাদের দরজার পিছন থেকে বেরিয়ে এলো অন্তু আর আনিশা..তারা সাদে গাছে পানি দিতে এসেছে. কিন্তু তাদের শ্রাবন ভাইয়ের এমন হাসি দেখে অবাক না হয়ে পারলো না..আনিশা উড়না কোমরে পেচিয়ে উলটো দিকে ঘুরে দোলবায় বসে থাকা শ্রাবন ভাইকে বলে উঠে…
-“কি বেপার ভোম্বল সাহেব আপনি হাসলেন..তাও আবার এতো জোরে.. এই অন্তু আমরা সত্যি শুনলাম তো..গম্ভীর মুখো ভোম্বল ভাই হেসেছে…?
আনিশার কন্ঠ পেয়ে পিছে ঘুরে তাকায় শ্রাবন পিছনে আনিশা আর অন্তু কে দেখে চোখ মুখ কঠিনকরে ফেলে…তারপর বেশ রাগী কন্ঠেই ধমক দিয়ে বললো..
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“হোয়াট…? ভোম্বল কে..!
শ্রাবন এর কথায় কেপে উঠলো অন্তু আনিশা..অন্তু একটু একটু করে পিছিয়ে ছাদ থেকে দৌড়ে পালালো।কিন্তু আনিশার পা জমে গেছে তার তো সব সময় ভুল যায়গায় ভুল কথা বলা সভাব আজকেও তার কানের নিচে একশ চল্লিশ ভোল্ট এর চড় পড়বে শিউর..আনিশার ভাবনার মাঝেই শ্রাবন হুংকার দিলো….
-“এখানে কি করছিস তুই..?
-“ন..না ম..মানে ভা.ভাইয়া…!
-“কি মানে করছিস এক চড়ে গালের সব দাত ফেলে দিবো এই সব আজে বাজে কথা আর একদিন শুনলে..!
আনিশা কেপে উঠলো ভয়ে..শ্রাবন রাগে চোখ লাল করে পাশ থেকে চলে গেলো..শ্রাবন চলে যেতেই আনিশা মুখ ভেংচি কেটে বিড়বিড় করে বললো..
-“গম্ভীর মুখো বাদর কে ভোম্বল বলায় খেপে গেছে তাতে আমার কি আমি আরো একশ দশ বার বলবো.. ভোম্বল শ্রাবন ভাই..কথাটা বেশ জোরেই বললো আনিশা।।বলে পিছন ঘুরতেই কারোর বুকের সাথে ধাক্কা খেলো..আনিশা মুখ উচু করে দেখলো শ্রাবন রাগী চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে..আনিশা শুকনো ঢোক গিললো…সে নিজের মনে নিজেকেই গালি দেওয়া শুরু করলো..শ্রাবন এসেছিলো দোলনায় পড়ে থাকা তার ডায়রিটা নিতে কিন্তু এসেই শুনতে পেলো আনিশার কথা মুহুর্তে আরো বেশি রাগ চেপে গেলো মাথায়..আনিশা কিছু বলতে নিতেই শ্রাবন আনিশাকে ধাক্কা দিয়ে ঠাস করে চড় বসিয়ে দিলো আমিশার গালে..আনিশা ছিটকে পড়ে গেলো..সাথে সাথে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কেদে উঠলো আনিশা..শ্রাবন হাটু ভাজ করে বসে আনিশার সামনে তারপর আনিশাকে উদ্দেশ্য করে বলে লাস্ট টাইম ওয়ার্নিং দিলাম তোরে..এর পর মামা রে বলবো..বিয়াদোপ কোথাগার..বলেই শ্রাবন রাগে হিসহিস করতে করতে নিচে চলে আসলো..নিচে আসতেই তার মাথা আরো গরম হয়ে গেলো..তার চাচা এসেছে.. শ্রাবন তার বাবার গোষ্ঠীর কাওকে সহ্য করতে পারে না..তার মতে তার চাচা দের জন্য তার বাবা স্ট্রোক করে মারা গেছে..!
রুমে বসে সারা ব্যাগ থেকে এক একটা করে জিনিস বের করছে যা সব ই বাদ দেওয়ার মতো জিনিস..সব মামারা তার ব্যাগ এ গুজে দিয়েছে..সারার সব জিনিসের মধ্যে নিজের ডাইরিটা পেয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠে..শুভ্র ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করে এটা কি..সারা শুভ্রর ইশারা অনুসারে তাকাতেই দেখে ছোট আর একটা পেন্সিল বক্স..সারার মনে নেই এই বক্সের কথা প্রায় ভুলতে বসেছে.. শুভ্র সারার হাত থেকে পেন্সিল বক্স টা নিয়ে বেশ কৌতুহল নিয়ে খুললো সেটা..কিন্তু খুলার পর হতাশ হলো..সামান্য একটা রোপার চেন আর একটা লকেট..কিন্তু বক্সের অন্য পাশ খুলতেই শুভ্র বেশ অবাক হয়…সেখানে সারার ছোট বেলার কয়েকটি ছবি.. সারা এগুলা খুব যত্নে রেখেছে…শুভ্র ছবিগুলো হাতে নিয়ে ভাবতে লাগলো তার মনে হচ্ছে সে এই বাচ্চাকে দেখেছে কিন্তু মনে করতে পারছে না..শুভ্রর ভাবনার মাঝেই সারা হাত থেকে ছবি গুলো নিয়ে আবার বক্স এ রাখে তারপর চেইন টা শুভ্রর হাতে দিয়ে বলে পরিয়ে দিতে..শুভ্র চুপচাপ পরিয়ে দেই।। কিন্তু তারপর মন ছবিটার দিকে সে এই ছবি আগেও দেখছে…!
সারা উঠে আলমারির ভিতরে তার ডাইরি আর নক্স টা রেখে দিলো..তারপর বাকি জামা কাপড় গুলো আর ব্যাগ গুলা নিয়ে গিয়ে এক সাইট রেখে দিলো কাল ফেলে দিবে..কারন শুভ্র এসব রাখতে দিবে না..সারার কাছে তার ডাইরিটা অনেক আবেগের..ছোট বেলায় তার এক দাদু তাকে উপহার দিয়েছিলো..পাতলা একটা ডাইরি..সারা বুঝ মতে শেখার পর সেখানেই তার সুখ দুঃখ লিখে রাখে..ডাইরি লেখা তার শখও হতো কিন্তু কাজের চাপে পারতো না তাও রাতে জেগে জেগে সারাদিন এর সব কিছুই লিখে রাখতো..!
সারা বিছানার এক কোনায় বসে আছে অরুকে নিয়ে এসেছিলো কিন্তু মেয়ে তার ঘুম-পাগল এক্ষুনি ঘুমিয়ে গেছে..অরুকে দোলনায় দিয়ে সারা অরুর দোলনার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে..শুভ্র সারার পাশে এসে সারার ঘাড় থেকে চুল সরিয়ে একটা চুমু খাই..সারার হুস ফেরে চমকে উঠে তাকায় শুভ্রর দিকে..শুভ্র মুচকি হেসে সারার ঘাড়ে থুতনি রেখে দুই হাত দিয়ে আক মড়ে ধরে সারাকে।। তারপর ফিসফিস করে বলে উঠে..
-“পিচ্চি পাখি এতো কি ভাবছো..?
-“আচ্ছা আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি রাগ করবেন নাতো..!
-“উহু না আমিতো প্রমিচ করেছি তোমার কোনো কথায় রাগ করবো না..!
-“তাহলে বলী..?
-“হুম বলো..!
-“আচ্ছা আমি কি একটু বেশিই ছোট.. আপনার সাথে কি আমার মানাই না..শান্তা আপু আজকেও আমারে বলছে আমি নাকি পিচ্চি বলে দয়া করছেন..!
শান্তার কথা শুনে শুভ্রর মাথায় আগুন ধরে গেল. সে সারাকে ছেড়ে দিয়ে বললো…
-“তোমারে বলেছি শান্তার কোনো কথায় কান দিবা না।।আর আজাইরা চিন্তা বাদ দাও.. আমি আসছি.. বকেই রুম থেকে রবগে বেরিয়ে যায় শুভ্র…!
সারা অবাক হয়ে যায়..হলোটা কি মানুষটার.. সারা তো শুধু এমনি তে জিজ্ঞাসা করলো..শান্তা আপুর কথা সে এক কান দিয়ে নিয়ে অন্য কান দিয়ে বের করে দেয়..সারা আর কিছু না ভাবে ঘুমন্ত অরুকে কোলে নিয়ে শাশুড়ীর রুমের দিকে যাওয়ার উদ্দেশ্য পা বাড়ালো..!
ড্রয়িং রুমে বসে আছে ইব্রাহিম শেখ..শ্রাবন এর চাচা.. ফারুক তালুকদার এর সাথে কথা বলছে সে মুলতো আজ এসেছে সবাইকে নিয়ে জেতে..তাই তিনি ফারুক তালুকদার কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন…..
-“ভাই সাব আজ কিন্তু সবাইকে আমার সাথে যেতেই হবে..আমি অনেক আশা নিয়ে এসেছি..যেতেই হবে..!
ফারুক তালুকদার:- মাফ করবেন..আপনি চাইলে শ্রাবম শান্তা বা ছেলে মেয়েদের নিয়ে জান সমস্যা নেই আমার ব্যাবসার জন্য যেতে পারবো না..!
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১৯
ইব্রাহিম:-তা বললে হচ্ছে না আমার ছোট ভাইয়ের আর বাবার মৃত্যুবার্ষিকি এই সপ্তাহে আপনাদের যেতেই হবে..!
বেশ খানিক্ষন তর্কাতর্কির পর ফারুক তালুকদার যেতে রাজি হলেন কিন্তু আজ নয় কাল সকালে বের হবে তারা.. তাই ইব্রাহীম শেখ কে আজ রাতে থাকতে বললেন.. তিনিও রাজি হয়ে গেছেন..তাই ফারুক তালুকদার এবার বেশ জোরেই স্বাভাবিক কন্ঠে শান্তা কে ডেকে বলে উঠেন….