৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২১
সারা চৌধুরী
সকাল সকাল তালুকদার বাড়িতে হৈ-হুল্লোড় সবার যে যার মতো রেডি হতে ব্যাস্ত…আজ তারা যাবে শত কিলোমিটার দূরে শ্রাবন এর চাচার বাড়ি সেখানে এক সপ্তাহ থাকবে যদিও ফারুক তালুকদার আনিস তালুকদার দুদিন পরেই চলে আসবে বাকিরা সবাই থাকবে..সেখানে শ্রাবন এর বাবা আর দাদার মৃত্যুবার্ষিকি পালন করা হবে..!
সকাল সাতটা পর পর তিনটা প্রাইভেট এ উঠে বসলো তালুকদার বাড়ির সকলে প্রথম গাড়িতে ফারুক তালুকদার ইব্রাহিম শেখ আনিস তালুকদার মনিরা তালুকদার..পরের গাড়িতে মিসেস আনিতা। অরু।শান্তা।ফাতিহা।অন্তু।আর শেষ গাড়িতে শ্রাবন শুভ্র সারা আর আনিশা..!গাড়ি চল লতে শুরু করলো..সারা আজ সাদার উপর লাল কাজ করা গাউন পরেছে..চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া শুভ্র ড্রাইভিং করছে..আনিশা মোবাইল স্ক্রল করছে..শ্রাবন একদৃষ্টে গাড়ির ব্যাক আয়নায় সারার দিকে তাকিয়ে আছে কেনো সে জানেনা।।সারা গাড়ির দরজার সাথে সেটে বসলো পা থেকে জুতো দুটো খুলে সিটের উপর পা তুলে বসলো..শুভ্র ও মিররে খেয়াল করলো সারাকে..দিন দিন মেয়েটার প্রতি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে সে..!
গাড়ি চলছে ফুল স্পিডে ফাকা হাইওয়ে পেয়ে শুভ্র বেশ জোরেই গাড়ি টান দিলো…সারা কিছুক্ষন আগেই ঘুমিয়ে গেছে গাড়ির জানালার সাথে মাথা রেখে..অতিরিক্ত বাতাসের কারনে সারার সিল্কি চুল গুলো উড়ছে..হটাৎ আনিশা বলে উঠে শ্রাবন ভাই একটা গান গাবেন প্লিজ এই বাতাসে আপনার গান শুনতে ইচ্ছা হচ্ছে…আনিশার কথা শুনে সারা ঘুম থেকে জেগে উঠলো…শ্রাবন গম্ভীর মুখে একবার আনিশার দিকে তাকিয়ে গাড়ির সাউন্ড বক্স চালু করে দিলো..আনিশা হতাশ হলো তবুও আবার বলে উঠে ভাইয়া প্লিজ একটা গান প্লিজ. শ্রাবন কিছু বলতে যাবে তখনই সারা বলে উঠে শ্রাবন ভাই প্লিজ আনু আপি যেহেতু বলছে একটা শুনান প্লিজ..শুভ্র এদের কথায় কান দিয়ে গাড়ি ভালো ভাবে ড্রাইভ করছে…!
শ্রাবন রেগে গেলেও সারার কথা ফেলতে পারলো না..শ্রাবন বুকের সাথে লেগে থাকা শার্টের গলায় ঝুলে থাকা সানগ্লাস টা খুলে চোখে দিয়ে গম্ভীর গলাই বললো…
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“ওকে..!
স্রাবন এর কথা শুনে আনিশা বিড়বিড় করে বললো হালা ভোম্বল কথা শুনার আগে ধমক দেই তারপর কাজ করে… আনিশার কথা শুনে শ্রাবন পিছু ফিরে আনিশার দিকে তাকিয়ে বলে…
শ্রাবন:-কিছু বললি..?
আনিশা:- ক..ক..কই নাতো..?
শুভ্র এবার হেসে বলে উঠে আরে শ্রাবন বাদ দে পিচ্চি মানুষ কি না কি বলছে..শ্রাবন কিছু বলতে যাবে তার আগেই সারা বলে উঠে ভাইয়া এসব বাদ দিয়ে প্লিজ একটা গান শুনান…শ্রাবন বললো স্যাড নাকি হ্যাপি..!সারা বেশ কিছুক্ষন ভেবে বল্লো স্যাড।। শুভ্র ভ্র কুচকে বললো আজ হ্যাপি দিবে স্যাড গান শুনবা..সারা বেংচি কেটে বলে ভাইয়ার গাওয়া হয়ে গেলে আওনি হ্যাপি গান গাইবেন..দেখবো কে জিতে..শুভ্র হাসলো সে জানে তার আধপাগল বউ কখন কি বলে জানে না..সারা এবার বেশ তাড়াহুড়ো করেই বলে উঠে কই শ্রাবন ভাই শুরু করেন…আনিশা চুপ করে বসে আছে..শ্রাবন আর কিছু না বলে সোজা হয়ে বসলো তারপর খালি গলায় গেয়ে উঠলো……
-“যদি তোমার মনে ধরে..!
-“আরো ব্যাথা দিও মোরে..!
-“দোহাই লাগে ভুইলা যাইয়ো না..!
-“হাইরে যদি তোনার মনে ধরে..!
-“আরো ব্যাথা দিও মোরে..!
-“দোহাই লাগে ভুইলা যাইয়ো না..!
-“একদিন আইবা একদিন আইবারে..!
-“সেদিন আইসা আমায় পাইবা না..!
-“একদিন আইবা তুমি আইবারে..!
-“সেদিন আইসা আমায় পাইবা না..!
শ্রাবন থামলো..সারা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো ভাইয়া একটা সত্যি কথা বলবেন..শ্রাবন ভ্রু কুচকে পিছন ফিরে সারার দিকে তাকালো তার মাঝেই সারাকে পরখ করে নিলো.. চুল গুলো এলোমেলো.. চুলের ক্লিপ ঝুলে আছে..শ্রাবন ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো..?
-“কী..?
-“আসলে ভাইয়া আপনি কি আগে পেম করছিলেন..আসলে আমি মামা বাড়ি থাকতে এক জনের গলাই শুনছিলান এই গান সে প্রেম করেছিলো কিন্তু তার সেই প্রেমিকা চলে গেছিলো অন্য কারোর সাথে বিয়ে করে তাই সে এসব গান গাইতো..!
-“বিশ্বাস করো সারা আমিও এই প্রশ্ন করতাম শ্রাবন ভাই কি ছেকা খেয়ে বেকা হয়ে গেলো..আনিশা রশিকতার কন্ঠে বলে উঠে..!
শুভ্র খুক খুক করে কেশে উঠে শ্রাবন সবার দিকে একবার তাকিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায়।। তারপর বেশ গম্ভীর কন্ঠেই বলে…..
রাত দশটা ছুই ছুই শুভ্রদের গাড়ি এসে থামলো শ্রাবন এর চাচার বাড়ি বা তার পৈতিক নিবাশ এ..বাড়ির নাম শেখ বাড়ি একতলা চারিপাশ কাঠের বেড়া দিয়ে বাড়ির আশেপাশে ঘেরা..শ্রাবন এর চাচা বাড়ি বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর ও উন্নত যশোর জেলাই অবস্থিত.. শুভ্রদের গাড়ি পর পর বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলো…শুভ্ররা গাড়ি থেকে লাবতেই চোখে পড়লো একতলা বিষিষ্ঠ বাড়িটি।।শুভ্র আগেও এসেছে শুধু সারাই এই প্রথম এসেছে…!
সবাই বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করলো সেখানে শ্রাবন এর চাচী হাফিজা বেগম আর শ্রাবন দুই চাচতো ভাই নাহিদ আর নাফিজ সবাইকে সাগত জানালো।।সবাইকে জার জার রুম দেখিয়ে দিলো.. যেহেতু বাড়িটা ছোট তাই আনিশা অরু আর সারাকে এক রুমে দিলো..আর অন্য রুমে শান্তা মিসেস মনিরা আর ফাতিহা।।আর শুভ্র শ্রাবন আর অন্তু কে এক রুমে দেওয়া হলো…সবাই যে যার দেখানো রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে রাতে খেয়ে নিলো।।তারপর ঘুমাতে চলে গেলো..সারা রুমের দিকে যেতেই..মিসেস আনিতা পিছন থেকেডেকে এসে বললো…
-“সারা অরু দাদুভাইকে আমার কাছে দাও..এই শীতে রাতে বার বার উঠে তোমার খাওয়ানো লাগবে না..!
-“সারা মুচকি হাসি দিয়ে ঘর থেকে অরুকে নিয়ে এসে মিসেস আনিতার কোলে দিয়ে দিলো..!
-“যাও মা ঘুমিয়ে পড়ো..!
-“জি মা আপ্নিও যান..!
বলেই সারা রুমে চলে আসলো সত্যিই তার ঘুম আসছে দশ – বারো ঘন্টা জার্নি করে সে ক্লান্ত..হটাৎ তার মনে হলো শুভ্রর কথা…শুভ্র তো ড্রাইভিং করেছে তাহলে তার কি অবস্থা নিশ্চয় হাত পা বেথা করছে।।নিশ্চয় আজ ঘুমাতে পারবে না..সারার চিন্তায় সারা নিজেই লজ্জা পেলো..ইশ সে একটু বেশিই চিন্তা করে শুভ্রকে নিয়ে..সারা বিছানায় সুয়ে পড়লো আনিশা কম্বলের মধ্যে মুড়ি দিয়ে মোবাইল দেখছে..সারার মোবাইল দেখতে ইচ্ছা করছে না তাই ঘুমিয়ে পড়লো..!
রাত বারোটা ছুই ছুই হাতের সিগারেটের শেষ টান দিয়ে ফেলে দিয়ে পা দিয়ে পিছে নাক দিয়ে ধোয়া ছাড়ে শ্রাবন। তারপর নাহিদ এর দিকে তাকিয়ে বললো কি বলছি বুজতে পারছিস..নাহিদ মাথা ঝাকালো মানে সে বুজেছে..নাহিদ ছোট থেকে শ্রাবন এর পাগল গুরু মনে করে এক রকম..শ্রাবন কিছুটা নাহিদ এর দিকে ঝুকে বলে উঠে…
-“সাবধান শরীরে যেনো স্পর্শ করবি.. সি ইজ অনলি মাই…তাই যা করবি শুধু ভুল বুঝানোর জন্যই…!
-“ঠিক আছে ভাই আপনি চিন্তা করবেন না..কিন্তু…?
-“কিন্তু আবার কি…?
-“মেয়েটা কে আগে তো কখোনো দেখি নি..?
-“তুই চুপচাপ কাজ কর..করতে পারলে আনুর লগে তোর বিয়ে পাক্কা..!
-“সত্যি তো ভাই..?
-“আমারে বিশ্বাস করিস না..?
-“অনেক করি..!
-“তাহলে..?
-“কবে করবো কাজটা…?
-“মামারা পরশু চলে যাবে সেদিন রাতেই..!
-“আচ্ছা ভাই..!
শ্রাবন আর কিছু বললো না এখন তার শান্তা কে খুব দরকার.. তার মনে কি চলছে সে বাদে কেও জানে না..কিন্তু সে শিউর যে নায়ক না হলেও সারার জিবনে ভিলেন হয়ে হলেও তাকে নিজের করে ছাড়বে..শ্রাবন দীর্ঘশ্বাস ফেললো তারপর বিড়বিড়ালো…
-“শুভ্র ভাই আমার জানিস তুই আর তোর পিচ্চি পাখি না খুব বোকা.. দেখিস তোদের বোকামিতে তোরা কেমন ভালো থাকিস..!
শ্রাবন রহস্যেভরা একটু হাসলো।। নাহিদ এতক্ষন শ্রাবন কে পর্যবেক্ষন করছে. সেও বুজতে পারছে শুভ্র ভাইয়ের বউ এর প্রতি শ্রাবন ভাইয়ের কিসের এতো টান..তার মা একটু আগেই বললো উপরে আসার আগে সেটা শুভ্র ভাইয়ের বউ. আর এখন শ্রাবন ভাই তার সাথেই কিনা..নাহিদ আর ভাবলো না সে জানে কাজটা ঠিক মতো করতে পারলে শ্রাবন ভাই তার ভালোবাসার মানুষের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে.নাহিদ আর কিছু না ভেবে শ্রাবন ভাইকে সাথে নিয়ে সাদের গেট লাগিয়ে নিচে চলে আসলো..!
সকাল সাতটা গ্রামে শীতের প্রকোপ বেশি..জানুয়ারি মাসের এই সময় টা খুব ঠান্ডা পড়ে..চারিদিকে কোয়াশা ভরা এক হাত দুরের জিনিস ও স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না..পুরো বাড়ি ঘুমিয়ে আছে গভীর ঘুমে..এদিকে আনিশা নামাজ পড়ে শান্তা আপুর সাথে রান্না ঘরে শান্তা আপুর চাচির পিঠা তৈরি দেখছে..সারা এখোনোঘুমাচ্ছে।।কম্বল মুড়ি দিয়ে।।
সারা হটাৎ ঘুমের মধ্যেই অনুভব করলো তার পেটের উপর কারোর হাতের স্পর্শ.. সারা কেপে উঠলো সারা চোখ মেলে তাকাতে যাবে তাকাতে পারছে না..সারা এবার আরো বেশি স্পষ্ট অনুভব করলো তার শরীরের সাথে সেটে কেও সুয়ে আছে..সারা ঘুমের মধ্যে কেপে উঠলো..মানুষটি সারার কম্বলের মাঝে ঢুকে সারাকে জড়িয়ে ধরলো ফট করে চোখ খুললো..সামনে থাকা মানুষটিকে দেখে চিল্লানি দিতে যাবে তার আগেই মানুষটি তার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নেই..সারার চোখ বড় বড় হয়ে যায়..ছোটাছুটি করতে শুরু করে তবে শ্রাবন কে এক চুল পরিমান ও সরাতে পারে না..স্রাবন এবার সারাকে আরো জোরে চেপে ধরে নিজের শরীরের সাথে মিশিয়ে নেই সারার ছোট্ট শরীর..সারার চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনাজল…শ্রাবন সারার ঠোঁট ছেড়ে দিলো..সাথে সারে চিল্লানি দিলো কিন্তু একি তার গলা দিয়ে কথা বের হচ্ছে না..শ্রাবন ফিসফিস করে বলে উঠে..
-“রাত্রি।।
সারা কেপে উঠে শ্রাবন আর কোনো কথা না বকে সারার ঠোঁট জোড়া আবার নিজের দখলে নিয়ে নেয়।।শ্রাবন সারা উড়না টেনে নেয়।। সারা ফুফিয়ে উঠে শ্রাবন নিজের ভর সারার উপর ছেড়ে দেয়…হুট করে সারা লাফিয়ে উঠে ঘুম থেকে..সারা শরীর ঘেমে একাকার..চারিদিকে তাকিয়ে দেখলো।রুমের দরজা চাপানো।।লাইট নিভানো লাল আলো জলছে…জানালার কাছে কোয়াশার শিশির বিন্দু গড়িয়ে পড়ছে..সারা ভয়ে কাপা কাপা চোখে ভালো করে দেখে নিলো চারিপাশ.. না কেও নেই..খুব খারাপ দুঃসপ্ন ছিলো তার এটা..সারা কাপা কাপা হাতে বেড সাইট টেবিল থেকে পানির বোতল নিয়ে পানি খেয়ে নিলো তার গা হাত পা প্রচন্ড কাপছে…এই শিতের মাঝে সে ঘেমে শেষ।।
তার মাথায় আসছে না শ্রাবন ভাই কে নিয়ে এসব সপ্ন দেখলো কেন..সারা কাপা চোখে নিজের দিকে তাকালো।। না উড়না বালিশের পাশেই আছে..সব ঠিক ঠাক..তবুও সারা ভয়ে ঘোরে চলে গেলো..বিছানা থেকে ওয়াশরুমে গিয়ে কাওয়া কাপা হাতে চোখে মুখে পানি দিলো তার পর রুমে এসে ফ্যান ছেড়ে দিয়ে সুয়ে পড়লো আবার হাটার শক্তি নেই যে এখন উঠে বাইরে যাবে..সে মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো একটু পর উঠে গিয়ে শুভ্রকে সব বলবে…!
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২০
শীতের সকাল হওয়ায় সবাই দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছে..সারা আর ঘুমাতে পারে নাই..চোখ বুজে সুয়ে ছিলো ঘড়িতে দশটা বাজতেই উঠে বসলো চুল গুলো ঠিক করে মাথাই উড়না ঠিক করে দিয়ে বেরিয়ে গেলো রুম থেকে..রুম থেকে বেরোতেই সারা ভয়ে চোখ বড় বড় করে বললো……

খুব ভালো লাগছে উপন্যাস ঠি পরের পর্ব দেন
খুব ভালো লাগছে উপন্যাস ঠি পরের পর্ব দেন ২২ নম্বর পব