৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৮

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৮
সারা চৌধুরী

শীতের মধ্যে খান,,মাঘ মাস চলছে বাংলায়,,চারিদিকে কোয়াশা ভরা,, রাস্তা ঘাট কোয়াশার অন্ধকারে ছেয়ে ঘোলাটে হয়ে গেছে,,রাত পনে তিন্টার দিকে সিলেটের তালুকদার বাড়ির গেট পেরিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকলো শুভ্রদের গাড়ি,,শুভ্র এই শিতেও কেমন ঘামছে সারা বেশ লক্ষ করলো তবে কিছু বললো না।
শুভ্র একমুহুর্ত সারাকে হাত ছাড়া করছে না,,বাড়ির সবাই লক্ষ না করলেও শ্রাবন বেশ লক্ষ করেছে,ব্যাপার টা বুজতে তারও সমস্যা হচ্ছে,,শুভ্র সারাকে রুমে নিয়ে এসে সুয়ে পড়লো,, সারা ঘুমিয়ে গেলো,,কিন্তু শুভ্র যার চোখ সারার ঘুমন্ত মায়াবী মুখে নিবদ্ধ,,এক সময় শুভ্র ও ঘুমিয়ে পড়লো।।

নতুন এক দিনের ঘোষণা হয়েছে ধরনীতে,, আজ কোয়াশা নেই,,সূর্য মামার তেজি আলো ছড়িয়ে পতেছে,,পাখিরা কিচির মিচির করছে,, সবাই ব্যাস্ত সবার কাজে,, ঘড়ির সময় সকাল এগারোটা পঁচিশ,, সারা অরুকে নিয়ে সোফাই বসে আছে,,শুভ্র অফিসে গেছে,,শ্রাবন কোথাই গেছে কেও জানে না বলে জায় নি,,আনিশার পরিক্ষা পড়ছে,,আর ফাতিহা সেই আটটাই কলেজ চলে গেছে,,সারা অরুর সাথে গল্প করছে,,যদিও অরু শুধু হাসছে এতেই সারা আরো মজা পাচ্ছে,,রান্না ঘরে মিসেস আনিতা ও সুমনা রান্নাই ব্যাস্ত।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিসেস আনিতার নাম্বারে হটাৎ কল এলো,,মিসেস আনিতা শাড়ির আচলে হাত মুছে স্ক্রীনে চোখ রাখলো সাথে সাথে ভ্রু কুচকে গেলো,,আন সেভ নাম্বার,,মিসেস আনিতা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরের দিকে হাটা শুরু কতে কল তিসিভ করলেন,,কল রিসিব করার সাথে সাথে ওপাশ থেকে ভেসে এলো মিষ্টি মেয়েলি কন্ঠ…
-“আসসালামু আলাইকুম আম্মা।।
মিসেস আনিতার পা থেমে গেলো,,কন্ঠ টা খুব চেনা তবে মনে করতে পারছে না,,মিসেস আনিতাও সালামের উত্তর দিয়ে বলে উঠলেন…

-“কে মা তুমি আর আমি তোমার আম্মা মানে..?
ওপাশ থেকে বোধহয় হাসলো তারপর বললো…-“আমাকে এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন আম্মা,,আপনি তো বলেছিলেন আমাকে কোনোদিন পর ভাবেন না।
মিসেস আনিতা চিন্তায় পড়ে গেলো খুব চেনা চেনা কন্ঠ তবু মনে করতে পারছে না। মিসেস আনিতার কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে ওপাশ থেকে মেয়েটা বলে উঠলো…

-“আম্মা চিন্তাই পড়লেন নাকি আমি কে..চিন্তা করবেন না আমি যেই হয় না কেন আপনি আমার আম্মা।
আনিতার হাত কাপছে,,বুজছে না লেন তবে ওপাশের মেয়েটার কথা শুনে,, মেয়েটা হয়তো বুজলো মিসেস আনিতার সমস্যা,, ফোনের ওপাশ থেকে হেসে বলে খুব তাড়াতাড়ি দেখা হবে আম্মা আজ রাখি আল্লাহ হাফেজ।।
পিক পিক করে লাইন কেটে গেলো,,মিসেস আনিতার মাথার উপর দিয়ে গেলো ঘটনাটা,,কি হলো,,তাকে আম্মা বলে কেন ডাকলো,,মিসেস আনিতার ভাবনার মাঝেই মিসেস সুমনার আপা ডাক শুনে রান্না ঘরে ছুটে যায় আনিতা,,রান্না ঘরে গিয়ে রান্নায় মনযোগ দেই, আপাতত এসব ভেবে ল্যাব নেই,,এখন ছেলে মেয়েরা কি সব ট্রুথ ডেয়ার খেলে, হয়তো ডেয়ার নিয়েছে তাই রঙ নাম্বারে কল করে মজা নিলো।।কিন্তু মিসেস আনিতার মনে খটকা থেকে গেলো মেয়েটার কন্ঠ খুব চেনা।।

ফাতিহা আর রিহান কফি শপের একে বারে শেষ কোনার টেবিলে সামনা সামনি মুখো মুখি হয়ে বসে আছে,,ফাতিহার পাশে বসে আছে রিহানের বোন রাহি,,,যদিও রাহির মুখ হিজাব দিয়ে ঢাকা,,সেজন্য ফাতিহা মুখ দেখতে পাচ্ছে না,,তবে এটা বুজেছে রিহান আর রিহানের বোন খুব আন্তরিক,, তাদের ব্যাবহার এ ফাতিহা মুগ্ধ।।ফাতিহার ক্লাস টাইম শেষ হয়ে যাবে তাড়াতাড়ি উঠে গেলো সাথে সাথে।

রাহি আর ফাতিহা কফি শপ থেকে বের হলো আর রিহান বিল পে করে দিয়ে আসলো,,রিহান তাকিয়ে বললো,, এখনই ননদ ভাবির কি মিল আহা,,বিয়ের পর আমাকে আবার ভুলে যাস না,,রাহি হেসে বললো আমার একমাত্র ছোট ভাইয়ের বউ আমার ভাবি তো ভাব হবে না আজব।। ফাতিহার লজ্জায় কান গরম হয়ে যাচ্ছে,,রাহি বিষয় টা বুজে হাসলো তার পর বললো ছোট ভাইয়ের বউ তাই নাম ধরে ডাকবো ভাবি বলবো না,, আর আমি তোমারও আপু বুজলে ফাতিহার গাল টেনে দিয়ে।। ফাতিহা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বুজায়।।

রিহান গিয়ে ফাতিহাকে রিকশায় তুলে দেই,, তারপর রাহি আর রিহান অন্য একটা রিক্সায় উঠে বসে বিপরীত দিকে যায়,,রাহি ফাতিহার অনেক প্রশংসা করছে যেটা রিহানের খুব ভালো লাগছে,,আসলেই ফাতিহা মেয়েটা খুব সভ্য আর বিনয়ী,,কারোর সাথে উচু গলায় কথাই বলে না,,আর কাকে কেমন সম্মান দিতে হবে তাও জানে,,রাহি হেসে রিহান কে বললো তাড়াতাড়ি বিয়ে টা করে ফেল,,ভাবির হাতের রান্না খাওয়া যাবে,,রিহান মুখ গোমরা করে বলে উঠে ফাতুর আব্বা তো রাজি না আপু,,এইচ এস সি পরিক্ষার আগে বিয়ে দিতে,,রাহি এবার হেসে বললো তাজলে অপেক্ষা কর,, রিকশা এসে একটা ফাকা গলির সামনে থামলো দুজনে লেবে দাড়ালো,, রিহান ভাড়া মিটিয়ে নিজের বোন এর হাত ধরে পা বাড়ালো ফাকা গলির রাস্তায়।।

শ্রাবন আজ অফিসে যায় নি,,জব ছেড়ে দিবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে,,তারপর ব্যাবসা৷ সামলাবে,,শ্রাবনের চোখ লাল,, সেই ভোর বেলা বের হয়েছে,,, আগেও বের হতো তবে আজ একটা কারনে,,শ্রাবন নিজের গাড়ি সাইড করে এক হাজার টাকার তিনটা নোট একজন কে দিলো সে সাথে সাথে সাদা ঢব এর ভিতরে কিছু একটা তরল ভরে বোজায় করে দিলো,,ঢব টা পাচ লিটার হবে,,শ্রাবন সেটা গাড়ির ডিকির ভিতরে রেখে দিলো সকাল হয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি বাসাই পৌছানো লাগবে বলে গাড়ি স্টার্ট দিলো।।

শ্রাবন এসেছিলো গ্রামের সাইটে খেজুরের রস কিনতে,,সেজন্য কনকনে ঠান্ডার ভিতরে ভোর বেলায় গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলো,,কাল যখন ঢাকা ব্যাক করার সময় অন্তু বলেছিলো সারা আপু রসের চিতই পিঠা খুব পছন্দ করে,,তখন ই শ্রাবন এর মাথায় গেথে যায় কথাটা,,সারা রারমত না ঘুমিয়ে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি এসে রেস্ট না নিয়ে শীতের ভিতরে ঠান্ডা টাংকির পানি দিয়ে গোসল করে নামাজ পড়েই বের হয়েছিলো,,সময় বারোটা পাচ,,শ্রাবন বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো প্রায় তিন ঘন্টা লাগে গ্রাম এ যেতে,,।।

শ্রাবন গাড়ি থেকে লেবে রসের ঢব নিয়ে বাড়ির ভিতরে গেলো,,সাথে সাথে চোখ গেলো সোফার উপর বসে থাকা সারার দিকে তখন মিসেস আনিতাও আসলো,,মিসেস আনিতা কিছু বলার আগেই শ্রাবন বলে উঠে মামুনি খুব খিদে পেয়েছে খেতে দাও,, সকাল থেকে খাই নি,,,মিসেস আনিতা বললেন,, -“যা বাবা ফ্রেশ হয়ে আই দিচ্ছি,,কিন্তু হাতে ওটা কি..?

শ্রাবন সোফার সামনে গিয়ে দাড়ালো সারা বোতল টার দিকে লক্ষ করে শ্রাবন এর দিকে তাকালো,,পাতলা ফিরফিরে শার্ট,, চোখ লাল,, কেমন উন্মাদ লাগছে দেখতে শ্রাবন টি টেবিলের উপর ঢব রেখে সারার দিকে একবার তাকিয়ে থেকে তার মিসেস আনিতার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো…
-“মামুনি শীত তো চলে গেলো,, রসের পিঠা খাওয়া হলো না,, আজ সন্ধাই বানিয়ো,,সবার পছন্দ হবে।।
মিসেস আনিতা ভ্রু কুচকে বললো,, -“কিন্তু তুই তো পিঠা খাস না হটাৎ কি হলো..?

শ্রাবন লজ্জায় পড়লো,,তারপর ইনিয়ে বিনিয়ে বললো আসলে খেতে ইচ্ছা করছে বানিয়ো,, মিসেস আনিতা রসের বোতল টা নিয়ে রান্না ঘরে যেতেই সারা উঠে চকে যেতে চাইলো,,শ্রাবন কে তার মোটেই সহ্য হয় না,,বিবাহিত ভাইয়ের স্ত্রীর দিকে কু নজর দেই,, কেমন লাগে তার কাছে,,সারা চলে যেতে নিয়ে পা বাড়ালেই শ্রাবন গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে…

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৭

-“কিছু খেতে ইচ্ছা হলে আমাকে না হয় শুভ্রকে বলবে,, এমন লুকিয়ে রাখার প্র‍য়োজন নেই।।বলেই শ্রাবন ফটাফট উপরে চলে গেলো,,সারাএ পা থেমে গেলো,,শ্রাবন কি বলে গেলো সারার মাথায় ঢুকছে না,,তখনই দরজায় কলিং বেল বেজে উঠে,,সারা এসে দরজা খুলে দিতেই……

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৯

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here