৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৯
সারা চৌধুরী
সারা দরজা খুলতেই দেখলো ফাতিহা দাঁড়িয়ে আছে,,ফাতিহা সারাকে দেখে হেসে হাতে থাকা শপিং ব্যাগ টা সারার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
-“সারা বনু এটা তোমার জন্য..!
-“এতে কি আপি..?
-“পরে খুলে দেখিও এখন ভিতরে জেতে দাও..!
সারা ব্যাগ টা খুলে তার ভিতরে কিছু চকলেট পেলো,, সারা জানে ফাতিহা তার আর অন্তুর জন্য আনে তাই সারা কিছু না বলে অরুকে নিয়ে আর শপিং ব্যাগ নিয়ে উপরে উঠে গেলো।।ফাতিহা ও ক্লান্ত শরীর নিয়ে রুমে চলে গেলো।
নবদিগন্তের সুচনা হয়েছে ধরনীতে। সকাল টা মন মুগ্ধকর,,চারিদিকে মেঘ মেশানো হাল্কা আলো,,বারান্দার দরজাটা খোলা,,সেখান থেকে আলো নির্গত হচ্ছে রুমে,,আড়ামোড়া খেয়ে বিছানায় উঠে বসে ফাতিহা।আজ শুক্রবার,,আর শুক্রবার মানেই বাড়িতে চলছে বিশাল আয়োজন,, আর আজ ফাতিহাদের বাসাই মেহমান আসবে। ফাতিহা নিজের কোমর সমান চুল গুলো হাত খোপা করে উড়না টা বালিশের পাশ থেকে হাতিয়ে নিয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে মোবাইল নিয়ে চেক করলো,,সাতটা বিশ ফাতিহা হামি দিয়ে উটগে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে আসলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ফাতিহা সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে দেখলো সারা অরুকে নিয়ে বসে আছে হাতে একটা বই,,ক্লাস টেন এর বই ফিজিক্স বই,,ফাতিহা খেয়াল করলো অরু নড়াচড়ার জন্য সারা ঠিক মতো পড়াই মনযোগ দিতে পারছে না,,রান্না ঘরে ব্যাস্ত হাতে সকালে নাস্তা বানাচ্ছেন মিসেস আনিতা ও সুমনা,,ফাতিহা সোফার কাছে এসে সারার দিকে তাকিয়ে বলল…
-“সারা অরুকে আমার কাছে দিয়ে তুমি পড়তে বসো সামনে ক্লাস টেস্ট স্যার কাল গ্রুপে বলছে..!
ফাতিহার কন্ঠ শুনে এতক্ষনে সারা ফাতিহার দিকে তাকালো তারপর শান্ত স্নিগ্ধ কন্ঠে বললো..
-“আরে আপু না না সমস্যা নেই,,আমি এভাবে পড়তে পারছি..!
-“বেশি বুজো দাও আমাকে আমি অরুকে নিয়ে বাইরে বাগান থেকে ঘুরে আসি,,তুমি তার ভিতরে পড়া কম্লিট করে নাও..!
-“থাক আপু..!
ফাতিহা সারার কোনো কথা না শুনে অরুকে কোলে তুলে নিলো অরু বেশ বড় হচ্ছে,,বেগত্যা সারা উপরে চলে গেলো বই নিয়ে উদ্দেশ্য পড়ার টেবিল,,কালকে ক্লাস টেস্ট শুরু,, সারার বই শেষ হয়নি যেগুলো টেস্ট নিবে সারা একটুও শেষ করেনি,,এখন মন দিয়ে পড়া লাগবে।
সারা উপরে উঠে শুভ্রর রুমের দরজার সামনে দাড়ালো তারপর একটা বড় দম নিয়ে দরজা ধাক্কালো সাথে সাথে দরহা খুলে গেলো..পুরো রুম জুড়ে অন্ধকার,,সারা অন্ধকার হাতিয়ে সুইচ খুজে লাইট জালালো,,বিছানায় উবুড় হয়ে শুয়ে আছে শুভ্র,,বুক অব্দি কম্বল টানা,, চুল গুলো এলেমেলো,,সারা সেদিকে তাকিয়ে একবার হাসলো তারপর পড়ার টেবিল এ গিয়ে বই এ মুখ ডুবিয়ে পড়ার সাগরে পাড়ি জমালো।।
সামনের সপ্তাহে আনিশার এস এস সি পরিক্ষা শুরু,,মেয়েটা প্রায় দিন রাত এক করে পড়াশোনায় ব্যাস্ত দরকার ছাড়া রুম থেকে বের হয় না বললেই চলে,,আনিশা বই বন্ধ করে বাইরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো খুব খিদে পেয়েছে তার ফজরের নামাজ পড়ে পর্যন্ত পড়ায় মগ্ন ছিলো সে,,আনিশা নিচে এসে রান্না ঘরের সামনে এসে দাড়ালো পুরো ডাইনিং রুম ফাকা,,আনিশা উকি মেরে দেখলো মিসেস সুমনা কি কাটছেন আর মিসেস আনিতা পানি গরম করছেন,,আনিশা মৃদু স্বরে ডেকে উঠলো…
-“আম্মু অনেক খিদে লেগেছে খেতে দাও।
আনিশার কন্ঠ শুনে মিসেস আনিতা এগিয়ে আসলেন সুমনা বেগম কে রান্না সামলাতে বলে তিনি এসে আনিশা কে খেতে দিলেন,,মেয়েটা সেই ভোর থেকে পড়ছে,,আনিশা চেয়ার টেনে টেবিল এ বসলো,,মিসেস আনিতা খাবার দিলো,,আনিশা রুটি ছিড়ে আলু ভাজির সাথে মিশিয়ে গালে দিতে দিতে বললো..
-“মেজো চাচি দা ভাই কোথাই জানো..?
আনিশার মুখে শ্রাবন এর কথা শুনে মিসেস আনিতা বলে উঠলো…
-“নাতো কেনো..?
-“আসলে একটা ম্যাথ সলভ হচ্ছে না,,ভাইয়াকে খুজেও পাই নি।
-‘ওহ শ্রাবন কে বাজারে পাঠিয়েছি এক্ষুনি চলে আসবে ততক্ষন তুই খেয়ে রেস্ট নে মা।।
-“না চাচি অনেক পড়া।
-“আচ্ছা খেয়ে একটু জিরিয়ে পড়িস..!
-“চাচি শুনো..?
মিসেস আনিতা রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছিলো আনিশার কথা শুনে পিছু ঘুরে বলে উঠলেন..
-“কিছু বলবি..?
-“মেজো আপু কই..?
-“ওহ ও দেখ বাইরে অরুকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে,, কেন..?
-“না এমনি আমিও বাইরে যাচ্ছি।।
আনিশা তাড়াতাড়ি খেয়ে বাইরে চলে এলো,,মিসেস আনিতাও হাসি মুখে রান্না ঘরে চলে গেলো।
ফারুক তালুকদার আর আনিস তালুকদার ইন্ডিয়া তে এসে তাদের বিজনেস এর মেইন কালপ্রিট কে পেলেন এখান কার শাখার মেনেজার,,তাকে বের করে দিলেন চাকরি থেকে,,আনিস তালুকদার অফিসের সব কাজ সবাইলে বুজিয়ে দিলেন,,ফারুক তালুকদার চিন্তা মুক্ত,,ফারুক তালুকদার সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলে মেয়েদের জন্য কিছু কেনা কাটা করে দু-একদিনের মাঝেই দেশে ব্যাক করবেন,আনিস তালুকদার ও মত দিলো ভাইয়ের কথায়।
ফোনের ভাইব্রেশনে শুভ্রর ঘুম ভেঙে গেলো ভ্রু কুচকে চোখ খুলতে লাইট এর এর চকচকে আলো চোখে পড়তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো,,বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের মোবাইল এর স্ক্রী ভেসে থাকা সেভ নাম্বারের দিকে চোখ গেলো,,স্ক্রীনে ভেসে আছে ❝BroSoul❞ লেখাটি,,শুভ্র ফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে শ্রাবন বলে উঠে…
-“কিরে কই তুই,,আজ অর্ক আসবে দশটায় এখন সাড়ে আটটা বাজে তাড়াতাড়ি নিচে আই!
শুভ্র কিছু বলার আগেই কল কেটে দিলো শ্রাবন,,শুভ্র শ্রাবন এর সেভ করা নাম এর দিকে তাকিয়ে হাসলো,,আসলে শ্রাবন যখন যেটা চাইতো আকর্ষিত ভাবে শুভ্রের সেটা পছন্দ হয়ে যেতো,, তবে শ্রাবন শুভ্রর খুশির জন্য বার বার নিজের পছন্দ ছেড়ে দিতো,,তবে এক সময় একটা পছন্দের জিনিস শুভ্রর কাছ থেকে কেড়ে নেই শ্রাবন তবে শুভ্রর কষ্ট দেখে আবার শুভ্রকে দিয়ে নিজে হারিয়ে যায়।।সেখান থেকেই নামটা দেওয়া,,নামের অর্থ আত্মার ভাই,,আচ্ছা আসলেই কি শ্রাবন শুভ্রর আত্মার ভাই হওয়ার যোগ্য,, হুম যোগ্য কারন শ্রাবন সব সময় নিজের পছন্দ ত্যাগ করে শুভ্রকে খুশি রেখেছে।।
শুভ্র নিজের উদাম গায়ে একটা টিশার্ট জড়িয়ে বিছানা থেকে লেবে দাড়ালো,, চোখ গেলো পড়ার টেবিল এ বই এ মগ্ন সারার দিকে চুল গুলো ছেড়ে দেয়া,, আর একটু বড় হলে মেঝেতে নুয়ে পড়বে,,শুভ্র সেদিকে আর না তাকিয়ে তোয়ালে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো,,ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করলো কালো শার্ট আর কালো প্যান্ট,, হাতে কালো ফিতের দামি ঘড়ি বেধে আয়নায় চুল ঠিক করতে করতে বলে উঠলো..
-“পিচ্চি পাখি আড়ে আড়ে না তাকিয়ে পুরোপুরি ঘুরে তাকাও।
শুভ্রর কথায় সারা লজ্জায় পড়ে গেলো,,শুভ্র ঘুম থেকে উঠার পর থেকে সারা বই এর মধ্যে মুখ রেখেই শুভ্রর চাল চলন দেখছিলো আড় চোখে।শুভ্র সারার লজ্জা পাওয়া দেখে বলে উঠে…
-“পিচ্চি পাখি কিছু তো খাওয়া হয়নি নিচে চলো,, খেয়ে এসে পড়বা।।
সারা মিনিমিয়ে বললো..-“আমি সকালে লুডুস খেয়েছি এখন খাবো না,, আপনি গিয়ে খেয়ে নেন।
শুভ্র সারার কথা শুনে আর কিছু বললো না কারন সে জানে ইদানিং সারার জেদ হয়েছে খুব যা না বলে তা আর হ্যা হয় না,,তাই শুভ্র একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বিছানা থেকে ফোনটা তুলে পকেট এ পুরতে পুরতে বলে….
-“কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞাসা করলে নাতো..!
সারা বই থেকে চোখ সরিয়ে পিছু ঘুরে শুভ্রকে ভালো করে পরখ করে বলে উঠলো….
-“আপনি যেখানেই যান না কেনো,, যাওয়ার আগে আমাকে বলে যান তাই আর জিজ্ঞাসা করলাম না।
-“খুব বুদ্ধি হয়ে গেছে তো,,তার মানে বড় হচ্ছো দিন দিন.!
-“হুম কোথাই যাচ্ছেন এবার বলেন..?
-“আমার ছোট বেলার এক ফ্রেন্ড অর্ক,,আট বছর আগে বিদেশ চলে গেছিলো পরিবার এর সাথে,,ওর পরিবার দেশে এসেছে বেশ কয়েক বছর আগে কিন্তু ও এক সপ্তাহ আগে ফিরলো তাই আজ এখানে আসবে।
সারা শান্ত কন্ঠে বললো.. -“আপনি একা নিতে যাচ্ছেন..?
শুভ্র হাতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করব বেরোতে বেরোতে বলে উঠলো…
-“পিচ্চি পাখি টাইম নেই,, আমি আর শ্রাবন যাচ্ছি,,কাবার্ড এ শপিং ব্যাগ আছে সেটা খুলে দেখো আমি গেলাম।।
সারা কিছু বলার সুজোগ পেলো না তার আগে শুভ্র রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।শুভ্র নিচে এসে দেখে সবাই ডাইনিং টেবিল এ বসে আছে মিসেস আনিতা খাবার বেড়ে দিচ্ছে,,মিসেস সুমনা সিড়ির পাশে অরুকে নিয়ে হাটাহাটি করছেন,,শুভ্র গিয়ে অরুকে কোলে নিয়ে কয়েকটা চু*মু খেলো,,অরু ও নিজের বাবার চেনা মুখটা দেখে হেসে উঠলো,,শুভ্র অরুকে কোলে নিয়েই খেতে বসলো,,দশ মিনিটে খাওয়া শেষ করে অরুকে মিসেস সুমনার কাছে দিয়ে বেসিনে হাত ধুয়ার জন্য এগিয়ে গিয়ে মিসেস আনিতা কে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো…
-“আম্মু আজ অর্ক আসছে কিন্তু জানো তো..?
মিসেস আনিতা সাবলিল ভাবে বলে উঠে হুম জানি ছেলেটার পছন্দের সব রান্নায় করছি এখন।শুভ্র হাত ধুয়ে টিস্যু দিয়ে হাত মুছে শ্রাবনের সাথে বেরিয়ে গেলো অর্ক কে নিয়ে আসতে,,যদিও অর্ক একাই চলে আসতো তবে এতোদিন পর চিনতে সমস্যা হচ্ছে,,প্রত্যেক বারের মতো শুভ্র ড্রাইভিং সিটে বসলো আর শ্রাবন পাশের সিটে।।শুভ্র গাড়ির স্ট্রিয়ারিং ঘুরিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো গন্তব্য অর্ক কে বাস স্টান্ড থেকে নিয়ে আসা।
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ২৮
রাহি সকাল থেকে গুচাচ্ছে,,রিহান জিজ্ঞাসা করতেই রাহি বললো আজ কেও হসপিটালে জেতে হবে তাকে,,রাহি বর্তমানে হসপিটালে জব করে,,রিহান বাইক বের করলো নিজের বোন এগিয়ে দেওয়ার জন্য,, কিন্তু রাহি নিষেধ করে রিকশায় উঠে চলে গেলো,,রাহির আজ কোনো কাজ নেই তবে আজ একজনের সাথে তার দেখা করতে হবে,, আসল কিছু সত্যি বের করার জন্য তাকে একটু দৌড়াতে হবে,,এগুলা রিহান জানলে রাগ করবে তাই তাকে বলেনি।।
রিকশা এসে থামে একটা ক্লিনিকের সামনে রাহি রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে কোথা থেকে একটা মেয়ে দৌড়ে এসে রাহিকে বলে উঠে….
