৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩১

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩১
সারা চৌধুরী

অর্কের দৃষ্টি ধরে সবাই পিছে তাকালে দেখতে পাই সারা লাবছে হাতে একটা শাড়ি। পরনে শুভ্রর দেওয়া সেই জামা।সারার কোনো দিকে খেয়াল নেই,,সারা সিড়ি বেয়ে নেমে সোজা মিসেস আনিতার রুমে চলে গেলো কোমর সমান চুল গুলো দুলছে পায়ের নুপুরের রিন রিনে আওয়াজ এ তালে তালে নৃত্য করছে বাতাসে।সারা আনিতার রুমে ঢুকে যেতেই শ্রাবন গলা খাকারি দিয়ে কেশে উঠলো,,শ্রাবনে কাশি দেখে সবাই একটু বিড়ম্বনায় পড়ে গেলো অর্ক একটু লজ্জা পেয়ে গেলো।আনিতা সবাইকে ভেতরে আসতে বললো।সবাই ভিতরে আসার পর শ্রাবন অর্ক কে একটা রুমে নিয়ে গেলো।অর্ক বেশ কিছুদিন এখানে থাকার জন্নই এসেছে।

অর্ক রুমে গিয়ে পিঠে থাকা ব্যাগ টা বিছানায় রাখতে শুভ্র আর শ্রাবন ও রুমে ঢুকলো।অর্ক ওদের বসতে বলে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে এদিকে শ্রাবন এর কেমন রাগ লাগছে অর্কের উপরে।বুজতে পারছে না কেনো।তবে অর্ক কে মেরে সাদ থেকে ফেলে দিতে ইচ্ছা হচ্ছে কারন জানেনা এতে শ্রাবন বিরক্ত।হটাৎ শুভ্রর ফোনে সেই নাম্বার থেকে আবার কল আসায় শুভ্র তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,শ্রাবন জিজ্ঞাসা করলেও শুভ্র শুধু বলেছে এসে বলছে..শ্রাবন ও আর ঘাটে নি শুভ্র কে যেতে দিয়েছে।শ্রাবন পকেট থেকে সিগারেট বের করে বারান্দায় চলে গেলো।
শুভ্র এক ছুটে নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে,,দিয়ে জোরে একটা শ্বাস ফেলে কল রিসিভ করলো তারপর কাপা কাপা কন্ঠে বলে উঠলো….

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-“ক..ক..কি দরকার তো..তোমার ক..কল দি.দিয়েছো কেন।
ওপাশ থেকে একটা সয়তানি হাসি ভেসে আসলো তারপর ওপাশ থেকে মেয়েটা শান্ত কন্ঠেই বলে উঠে…
-“একটা দিন ও খোজ নাও নি আমি বেচে আছি নাকি মরে গেছো,,এই ছিলো তোমার ভালোবাসা তাই না শুভ্র..?
-“দে..দেখো।
-“একি শুভ্র তোতলাচ্ছো কেন তুমি মেইবি এখন ঘামতে শুরু করেছো, যাও আগে ফ্যান ছেড়ে দাও নইতো আবার ঠান্ডা লেগে যাবে।।
বলেই ওপাশের কলে থাকা মেয়েটা হেসে উঠলো,,সত্যিই শুভ্র ঘামছে,, কেনো ঘামছে সে?কারন কি?শুভ্র বেড সাইট থেকে এসির রিমোট নিয়ে এসির চালু করে পাওয়ার কমিয়ে দিলো।তারপর বিছানাই বসে বেড সাইড টেবিল থেকে পানির গ্লাস নিয়ে এক ঢোল এ পুরো গ্লাস পানি খেয়ে নিয়ে গলা পরিষ্কার করে বলে উঠলো…

-“দেখো কি কারনে কল করেছো সরাসরি বলো..?
মেয়েটা এতোক্ষন হাসছিলো শুভ্রর শান্ত কন্ঠ শুনে সেও শান্ত কন্ঠে বলে উঠে…
-“আমার বাচ্চা কই শুভ্র..?
শুভ্রর চোখ কপালে উঠে যায়,, কোন বাচ্চার কথা বলছে এই মেয়ে আর কেন বলছে তাকে..শুভ্র শুকনো ঢোক গিলে বলে….
-“বাচ্চা মানে..?
-“আমার বাচ্চাকে নিয়ে নিয়োছো তুমি বলো আমার বাচ্চা কই..?
-“তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে। তোমার বাচ্চা আমি কেন নিবো।
মেয়েটা বোধহয় হাসলো তারপর হাসতে হাসতেই বলে উঠলো…-“মিঃ ফারিস তালুকদার শুভ্র নাটক বন্ধ করো আমি আসছি আমার মেয়েকে নিতে।

-“কে তোমার মেয়ে…?
-“যাকে তুমি সিটি হসপিটাল থেকে এডাপ্ট করেছো আর যার মাকে মৃত ভেবেছো।আমি আসছি আমার মেয়েকে নিতে।
-“অ..অহনা ত..তুমি ভুল করছো..?
-“আমার নাম মনে আছে তোমার আমি তো ভেবেছিলাম ভুলে গেছো,, তবে শুধু আমি আমার মেয়েটাকে নিয়েই চলে আসবো তোমার জিবনে ফিরবো না প্রমিচ।।
পিক পিক আওয়াজে কল কেটে। শুভ্র ধপাশ করে বিছানায় বসে পড়লো,,অহনার মানষিক ভারসাম্য চলে যাওয়ার পরে সে অরুকে নিয়ে এসেছিলো। হ্যা অরু তার নিজের সন্তান না,, তবে সে বাদে পুরো সবাই জানে তার মেয়ে অরু। তার রক্ত। তার জীবন। শুভ্র ঘামছে অরুকে সে খুব ভালোবাসে।অরুকে না দেখলে তার হৃদয় মুচড়ে উঠে।আর অহনা বললো অরুকে নিতে আসবে।না এ হতে পারে না।শুভ্র নিজের মাথার চুল নিজে খামছে ধরলো।পাগল এর মতো লাগছে তার নিজেকে।শুভ্র বিছানায় টান টান হয়ে সুয়ে পড়লো।কি ভাবে কি করবে সেই ভাবনায় ব্যাস্ত সে।এখাত চোখের উপর দিয়ে সুয়ে রইলো।

কল কাটার পরে অহনার চোখ দিয়েও পানি গড়িয়ে পড়লো,,সে জানে তার মেয়ে শুভ্রর কাছে খুব ভালো আছে,,যেখানে শুভ্রর মতো কেয়ারিং মানুষের কাছে সে এতো সেফ ছিলো সেখানে তার ওই বাচ্চা মেয়েটা কতোই না ভালো আছে।অহনা কল্পনায় আকে তার ছোট্ট নাড়ি ছেড়া ধন কে,,অহনা তার মেয়েকে নিয়ে দেশ ছাড়বে,, সে চাইনা এখানে থেকে পিতার পরিচয় হীন তার মেয়ে বড় হোক।ফরেইন কান্ট্রি গুলোতে বাপ না থাকলেও সন্তান কে খুব সহজেই মানুষ করে তোলা যায়। তবে আমাদের দেশ এ সমাজ এ টিকতে পারাও কষ্ট হয়ে যায়।অহনা ভাবতে থাকে কিছুক্ষন আগের ঘটনা…..

ফ্লাসব্যাক……
ডাক্তার ফারজানা নিজের কম্পিউটারে সেদিনে সকল এডাপ্ট হওয়া বাচ্চার লিস্ট বের করলেন এবং সেই লিস্টে হটাৎ চোখ আটকে যায় রাহীর।।পিতার নামের জায়গায় ফারিস তালুকদার আর মাতার জায়গায় অহনা মোল্লা। হ্যা অহনার পুরো নাম অহনা মোল্লা রাহি।ফারিস তালুকদার এর ছবি দেখার পর অহনা পুরো শিউর হয়ে যায় এটাই তার মেয়ে।আর শুভ্র সেই মেয়েকেই নিয়ে গেছে,,তবে তার কগোজ কেন নিলো না সে,,সেদিন তো শুভ্রর আসতে দেরি হচ্ছিলো বলেই ডাক্তার ফারজানার স্বামির গাড়িতে উঠেছিলো তারা।

অহনার ভালো লাগে যে তার মেয়েটা খুব ভালো আছে তবে মুহুর্তেই মন বিষিয়ে যাই,,কারন তার মেয়েটাকে তার কাছ থেকে দূরে নিয়ে গেছে তার খোজ একবারো নেই নি সে,, সে বেচে আছে নাকি মরে গেছে কোনোদিন যানতে চাইনি।একে তো তার ভাইটাকেও শেষ করেছিলো ওদের পরিবার এর মানুষজন,,তাকেও শেষ করেছে,,আবার তার মেয়েটাকেও তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে,,ভেবেছিলো শুধু মেয়েটাকে খুজে পেলে তাকে নিয়ে দেশ ছাড়বে তবে এবার অতীত এর সাথেও দেখা হবে হয়তো।অহনা দেরি না করে শুভ্রর নাম্বারে ফোন লাগিয়েছিলো তখন।।
আনিশার হৃদয় দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে,,ভালো লাগছে না তার,, বাইরে শুনতে পেয়েছে শ্রাবন ভাইরা অর্ক ভাইকে নিয়ে চলে এসেছে,,সেই ক্লাস ওয়ান এ থাকতে শেষবার দেখেছিলো অর্ক ভাইকে।তবে এখন কোনো ইন্টারেস্ট নেই তার সাথে দেখা করে ভালো মন্দ জিজ্ঞাসা করার।।আনিশার এখন একটা চিন্তা শ্রাবন ভাইয়ের বিয়ে হয়ে যাবে,, তার সামনে শ্রাবন ভাইকে অন্য কোনো মেয়ে তার শ্রাবন কে ভালোবাসবে এলোমেলো চুল গুলো সোজা করে দেবে সে চাইলেও কিছু করতে পারবে না।তার ভালোবাসা তো অপ্রকাশিত।

আনিশার ভাবনার মাঝেই সারার গলা শোনা দরজার বাইরে থেকে।সারা দরজা ধাক্কাচ্ছে,,আনিশার কেন জানি সারার সাথে সব দুঃখ মন খুলে বলতে ইচ্ছা করে,, আনিশা চোখ মুছে উঠে দাঁড়িয়ে দরজা খুলে দিয়ে আবার বিছানায় এসে সুয়ে পড়ে।সারা দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দেখে আনিশা আবার উবুড় হয়ে সুয়ে পড়েছে,,সারা ভ্রু উচিয়ে কিছু আন্দাজ করতে পেরে বলে উঠে..আপু কাদছো কেন…?
সারার কথা শুনে জেনো আনিশার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো। তবে সে সারার সামনে নিজের কান্না দেখাতে চাই না।তায় চোখ মুখ মুছে উঠে বসে এলোমেলো চুল গুলো হাত খোপা করে হেসে বলে উঠে…

-“আরে কাদছি না বলো কি বলবা…?
সারা আনিশার মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝলো এখন কিছু জানতে চাইলেও আনিশা বলবে না কিন্তু যখন মন ভালো হবে তখন সব আপনা আপনি বলে দেবে,সারাও আনিশার কান্না করার কথা শুনেছে ফাতিহার কাছ থেকে তাইতো সে এখানে এসেছে।।সারা আনিশার পাশে বসে হাতে থাকা একটা ব্যাগ আনিশার সামনে ধরে বলে উঠে,,
-“আপু সারপ্রাইজ..!
আনিশা ব্যাগের দিকে তাকিয়ে বলে উঠে..-“কিসের বনু..?
-“আগে বলো কাওকে বলবা না…?
-“আচ্ছা বলবো না বলো..?
-“চলো সাদে যাই তারপর বলবো..?
-“সাদে যেতে হবে কেন…?
-“নইতো বুঝবা না আসো..!

বেগত্যা আনিশা সারার পিছনে সাদে উঠে এলো তারপর দোলনায় গিয়ে বসলো,,সারা হাতে থাকা ব্যাগ টা আনিশার সামনে উপুড় করে ঢেলে দিলো সাথে কতগুলো ভিন্ন ভিন্ন চকলেট বেরিয়ে এলো ব্যাগ থেকে। আনিশা ভ্রু কুচকে তাকাতেই সারা বলে উঠলো..
-“এগুলা তোমার দা ভাই তোমাকে দিয়েছে,, বলেছে আনুকে দিবা আর একটা তুমার,,কাওকে বলতে নিষেধ করেছে।

আনিশা ভ্রু কুচকে তাকালো মুহুর্তেই মন খুশি হয়ে গেলো,,চকলেট তার ভিষন প্রিয় আর শুভ্র ভাই যানে আনিশা রেগে গেলে চকলেট দিলে রাগ কমে যায়।।আনিশা চকলেট খুলে খেতে শুরু করলো,,সারা ও একটা খুলে কামড় বসিয়ে আকাশের পানে তাকিয়ে খেতে শুরু করলো আর আনিশার সাথে গল্প করা শুরু করলো এটা সেটা নিয়ে।।আসলে চকলেট গুলো সারার কাল ফাতিহা আপু দিয়েছিলো,,কিন্তু এখন আনিশার রাগ ভাঙাতে চকলেট গুলো কাযে লেগেছে,,সারা জানে শুভ্র কাওকে কিছু দিলে সবাই কোনো বাক্য ছাড়াই গ্রহন করে সেদিক থেকে আনিশাও শুভ্র ভাই বলতে পাগল,, আনিশার দুঃখ কমে গেছে,, প্রায় ভুলে গেছে। সারার সাথে গল্পে ব্যাস্ত সে।।

এদিকে অর্ক ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে রুমে কাওকে দেখতে পেলো না।।বারান্দার দিকে তাকিয়ে দেখলো শ্রাবন উলটো দিকে ফিরে সিগারেটের ধোঁয়া উড়াচ্ছে,,অর্ক হেসে শ্রাবন এর পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে শ্রাবনের ঘাড়ে হাত রাখলো,,শ্রাবনের কোনো ভাবাবেগ হলো না,, অর্ক হেসে বললো তোর স্মোকিং করার অভ্যাস গেলো না এখোনো..?শ্রাবন আড়ে তাকিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বলে উঠলো মাত্র দু বছর ধরে খাই,, এমন ভাবে বলছিস যেনো আমি ছোট থেকে খাই আর তুই সেটা দেখে অভ্যাস্ত। অর্ক হেসে উড়িয়ে দিলো কথাটা তারপর বেশ সিরিয়াস ভঙি তে বলে উঠলো..

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩০

আচ্ছা শ্রাবন একটা কথা বলি।”হু বল শ্রাবন বাইরে দৃষ্টি রেখেই বলে উঠে।অর্ক হেসে বলে উঠে..আচ্ছা আমি বাড়ি তে ঢুকতেই একটা গোলাপি পরিকে দেখলাম,, সেটা কে রে,, শ্রাবন অর্কের দিকে ফিরে তাকিয়ে বলে উঠলো মানে?অর্ক হেসে বলে উঠলো. ওইজে পিংক কালারের ড্রেস পরে পায়ে নুপুর পরা চুল গুলো ছেড়ে দেওয়া সিড়ি দিয়ে নেমে ঘরে চলে গেলো,,বিশ্বাস কর শ্রাবন এক মুহুর্তের জন্য আমার ধমনি কাজ করা বন্ধ করে দিছিলো মেয়েটা জাস্ট আমার… আর কিছু বলার আগেই শ্রাবন নিজের রক্ত চক্ষু নিয়ে অর্কের কলার চেপে ধরে বলে উঠলো….

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here