৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩+৪

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩+৪
সারা চৌধুরী

সারা ধিরে ধিরে সিড়ি বেয়ে উপরে চলে আসলো.. সমস্ত শরী*র তার অসম্ভব রকমের ব্যা*থা তবুও সারা কোনো কিছুর তোয়াক্কা শুভ্রর রুমের সামনে এসে রুমে দরজায় নক করলো…!
শুভ্র তখন রুমের ভিতরে অরুর কান্না থামানোর চেষ্টা করছে..সেই কখন থেকে অরু কান্না করে যাচ্ছে একা ধারে.. এতে করে শুভ্র বেশ উত্তেজিত কারন তার মেয়ের কান্না দেখলে তার বুকের ভিতর কস্টে ছিড়ে যায়।।দরজায় কারোর উপস্থিতি টের পেয়ে শুভ্র ভিতরে আসতে বলে সাথে সাথে সারা ঘরের ভিতরে ঢুকে যায়..সারা কে দেখে শুভ্র বলে উঠে…

শুভ্র:- আজকের পর থেকে রুমে আসার সময় দরজায় নক করার দরকার নাই এটা তুমার ও রুম তুমার ও সম্পুর্ণ অধিকার আছে,, যখন ইচ্ছা আসবা যাবা..!
শুভ্র কথার প্রতি উত্তরে সারা কিছু না বলে শুভ্র কাছ থেকে অরুকে নেয়.. শুভ্র মানা করলেও সারা অরু একটু জোর করেই নেই.. আর নেওয়ার পরেই অরুর কান্না থেমে যায় হয়তো এটাই মায়ের স্পর্শের ভালোবাসা..!
শুভ্র কিছুটা অবাক হয় কিন্তু পরপরি তার মন খুশিতে ভরে উঠে.. এটাই তো চেয়েছিলো সে..আধা ঘন্টা ধরে যে মেয়ের কান্না থামাতে পারলো না শুভ্র আর সারার কোলে যাওয়ার সাথে সাথে কান্না থেমে গেলো..!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সারা ফিডারে দু*ধ পুরে অরুকে ফিডিং করাতে থাকলো সুয়ে সুয়ে যেনো মনে হয় নিজের স্ত*ন এর দু*ধ পান করাচ্ছে সে..এটাই দ্বিতীয় চুক্তি তে লেখা ছিলো অরু যেনো কখোনো না জানে সারা তার আসল মা না..!
কিছুক্ষনের ভিতরে অরু ঘুমিয়ে গেলো.. সারার খুব জানতে ইচ্ছা করছে.. বাচ্চাটির মা কই।।আর শুভ্রর পরিবার ই বা কই..সে কেনো একা থাকে তার স্ত্রী কই..আচ্ছা শুভ্রর প্রথম স্ত্রী কি এখন সারার সতীন..এসব ভাবতে ভাবতে সারার মাথার কাছে এক পা ভাজ করে আর এক পা ঝুলিয়ে খাটের উপর বসলো শুভ্র..চোখ তার অরুর দিকে নিবদ্ধ..কি মায়াবী তার মেয়েটা..মেয়ের মুখের দিকে তাকালে তার সব কস্ট বায়ু হয়ে আকাশে উড়ে যায়..কুয়াশা হয়ে শিশিরের মতো ঝরে পড়ে বিন্দু বিন্ধু ছোট্ট ঘাসের উপরে..শীতল নদীর স্রোতের পানির মতো বয়ে যায় তার সকল কস্ট..!
শুভ্র সারার চুলের মাঝে হাত বুলাতে লাগলো সারা চমকে উঠলো তবুও একটুও নড়লো না কারন অরু তার বু*ক ঘেসে ঘুমিয়ে আছে.. অরুর ঘুম মোটামুটি বেশি একটা শব্দ হলেই ঘুম ভেঙে যায়।। সারা আস্তে করে শুভ্র মুখের দিকে তাকালো শুভ্র করুনাময় চোখের দিকে তাকিয়ে সারা আরেক দফায় চমকে উঠলো সেতো চোখের ভাষা পড়তে পারে না.. শুভ্রর চোখে কি আছে..যা এক অন্য অনুভুতির জন্ম দেই…!

সারার এমন অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকা দেখে শুভ্র মাথা নিচু করে বলে উঠলো….
-আই এম রিয়েলি সরি লিটল বার্ড মাই বেবিস মাদার..!-
-মমানে…..?সারা কিছুটা অবাক হলো এমন কিছু সে আসা করে নাই..!
-আমি সত্যিই লজ্জিত আমি কাল রাতে তোমার সাথে যা করছি তার জন্য আমাকে মাফ করে দেও পিচ্চি পাখি..!আমি নিজের কন্ট্রোলে ছিলাম না!শুভ্র মাথা নিচু করে করুন গলায় বললো..!
-শুভ্রর কথা শুনে সারার এখন লজ্জায় লাল নিল হয়ে যেতে ইচ্ছা করছে..!মাথা ফাক করে তার ভিতর চলে যেতে ইচ্ছা করছে..সে কি একবারো বলছে এই লোকটাকে এসব বলতে সে কি কিছু বলছে…!
-কি হলো..?

শুভ্রর কথায় সারা আবার শুভ্র দিকে তাকালো পরপরি মাথা নামিয়ে নিলো..কেন জানি তার খুব লজ্জা লাগছে কান থেকে গরম হাওয়া উড়ছে.সারা ভাবতে লাগলো কালকের সেই কথা গুলো……
জ্ঞান ফেরার পরেই নিজেকে গাড়িতে আবিষ্কার করলো সারা..চোখ খুলতেই চোখা-চোখি হলো শুভ্রর সাথে সাথে সাথে।।শুভ্র নিজেই চোখ সরিয়ে নিলো..সারার মাথা টা প্রচন্ড ভার লাগছে উঠে বসতে চাইলেও পারছে না….
কোনোমতে জিজ্ঞাসা করলো আমি কোথায় আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন…?
আমার বাড়ি যাচ্ছো আমার মেয়েকে দেখার জন্য চুক্তি দিয়েছি দেখো নি..শুভ্র ঠান্ডা গলায় বলে উঠলো..!
সারা ধিরে ধিরে উঠে বসলো তার শুভ্রর থেকে তফাৎ এ গিয়ে জানালার গা ঘেসে বসলো আমি যাবোনা আমি বাড়ি যাবো আমাকে বাড়ি নিয়ে চলেন.. বের করেন আমাকে বলে কেদে উঠলো সারা।।

সারার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিতে চোখ কুচকে নিলো শুভ্র তার পর সারাকে উদ্দেশ্য করে বললো….
কোন বাড়ির কথা বলছো.. যে বাড়িতে কিনা কাজের মানুষ হয়ে ছিলে..যারা কিনা তোমার আসল মামা মামি না.. যারা কিনা পুরো পঞ্চাশ লক্ষ টাকা দিয়ে তোমাকে আমার কাছে বিক্রি করে দিয়েছে সারা-জীবন এর জন্য.. ”
মামানেহহহহ..কি বলছেন এসব.. আওনার মাথা ঠিক আছে.. এসব আমি বিশ্বাস করি না।।আমাকে যেতে দিন সারা ভয়াতুর কন্ঠে বললো শুভ্র কে উদ্দেশ্য করে..!
শুভ্র একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সারার সামনে নিজের মোবাইল এ চলমান ভিডিও টা ধরলো…..

সারার হৃদয় ভেঙে কান্না আসছে..কান্না করতে করতে তার চোখ ফুলে গেছে তাও জেনো চোখের পানির বাধ সাজছে না..শুভ্র এতে প্রচুর বিরক্ত..একটা মেয়ে এতোটা কান্না করে কিভাবে সামান্য কারনে..শুভ্র বিরক্তিতে চোখ কুচকে সারার দিকে একটা পানির বোতল এগিয়ে দিলো..সারা দেখেও না দেখার মতো করে আবার কান্না শুরু করলো..সে তো কল্পনাও করেনি এমন এক নিষ্ঠুরতম চরম সত্যি তার জিবনে আসবে…!
কিছুক্ষন আগে শুভ্র তার মোবাইল এ ধারন করা একটা ভিডিও দেখায় সারাকে। সেখানে স্পষ্ট দেকা যাচ্ছে যে সারার মামা বলছে যে সে তার আসল মামা না বা রক্তের কেও না…!
সারা জ্ঞান হারানোর আগেই শুভ্র দরজার পাশে এসে দাড়িয়েছিলো..তার উদ্দেশ্য ছিলো নাজমুল হুদা কে ডাকা.. কিন্তু এসে সে সামনা সামনি হয় আর এক সত্তির..!

নাজমুল হুদা রুম থেকে বের হতেই শুভ্রর মুখোমুখি হয়ে একটু চমকে উঠে কিন্তু কিছু না বলে তিনি শুভ্র কে বলেন সামনে সোফাই আসতে মারজিয়া বেগম সারা কে গুছিয়ে নিয়ে আসছে..!
শুভ্র কিছু না বলে নাজমুল হুদার পিছনে চলে আসে কারন তার মেয়েদের প্রতি একটা আলাদা ঘৃনা আছে আর সে এখন তার মেয়ের জন্য চুক্তির মা নিতে এসেছে সেহেতু তার পাস্ট জানা শুভ্রর উচিত বলে মনে হয় না..!
শুভ্র সোফাই গিয়ে বসতেই নাজমুল হুদা বলে উঠে…
-আসলে একটা কথা বলার ছিলো বাবা…?
-শুভ্র কিছু গম্ভীর স্বরে বলে উঠে..হুম বলেন…?
-আসলে সারা আমার আপন বোনের মেয়ে না বা আমি ওর কোনো মামা না…..?
-শুভ্র ভাবলেশহীন ভাবে বলে.. ওহ…!

-আসলে এগারো বছর আগে সিলেট এর এক মেলায় ঘুরতে গিয়েছিলাম আমি আর মারজিয়া.. সেখানেই এই মেয়েকে পাই..মেয়েটি হারিয়ে গিয়েছিলো…আমরা ওর পরিবার খুজে ছিলাম তবে পাইনি.. বাচ্চা টা নিজের নাম অব্দি বলতে পারছিলো না।।তিন বছরের একটা বাচ্চা মেয়েকে তো ফেলে আসা যায় না..তাই সাথে নিয়ে এসেছিলাম..!
বলে দোম ছাড়লো নাজমুল হুদা..এবার শুভ্রর ভ্রু কুচকে গেলো..শুভ্র ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো তাহলে মেয়েটা আপনার রক্তের ই কেও না..?
-নাহ…(নাজমুল হুদা শান্ত কন্ঠে বলেন)
-আমিতো মনে করলাম আপনার সৎ কোনো বোনের মেয়ে তাই আপনি ওর মামা লাগেন দূর সম্পর্কের হলেও..!
-নাহ বাবা..আমরা ভেবেছিলাম ওকে আমাদের মেয়ের মতোই রাখবো তবে ও আসার পর রাস্তায় ও আমাকে বলে ডাকে আর আমার কোনো বোন ছিলো না তাই আমিও ভাবলাম আমার কোনো বোন থাকলে আমার ভাগ্না ভাগ্নি ও আমাকে মামা বলে ডাকতো..!
-তাহলে আপনি ওকে যে টাকার বিনিময়ে কাজ করতে পাঠাচ্ছেন…?শুভ্র চোখ কুচকে জিজ্ঞাস করলো নাজমুল হুদাকে..!
-নাজমুল হুদা হতাশার নিশ্বাস ছেড়ে বললেন..আমরা ওকে এত বছর বড় করলেও ওর প্রতি এক ফোটা মায়া জন্মে নি..!দেখতে সুন্দর হওয়াই অনেক পাত্র আসে কিন্তু যৌতুক চাই এখন কার যুগে..আর সেখানে তুমি ওকে বিশ লক্ষ টাকায় নিয়ে যাচ্ছো চার বছরের জন্য আমারি তো লাভ চার বছর পর আসার পর ওকে কোনো বুড়োর সাথে বিয়ে দিবো তখন আরো লাভ..!
নাজমুল হুদার এমন নিচু মন মানুষিকতা দেখে শুভ্র র মাথায় রাগ উঠে গেলো তবুও শান্ত কন্ঠে নাজমুল হুদাকে বললো…

-ওকে একেবারে নিয়ে যেতে হলে কত টাকা নিবেন মি.নাজমুল হুদা..?
-শুভ্রর মুখে নিজের নাম শুনে চমকে উঠলো নাজমুল হুদা তবুও বললেন..নাহ থাক একে বারে কি করতে দিবো..!আছে থাক এই চুক্তি যা আছে থাক পরের তা পরে ভাববো..!
-শুভ্র জানে নাজমুল হুদা প্রচন্ড লোভি একজন মানুষ তা এতক্ষনে বুজে গেছে সে..তাই শুভ্র বুদ্ধি করে বল্লো ভেবে দেখেন ত্রিশ লাখ দিবো একে বারে নিয়ে যায়..!আর সমস্যা নাই না দিলেও কি চার বছরের জন্য নিয়ে যাচ্ছি এখন আপনার বেপার..!
-শুভ্রর কথা সুনার পর লোভে চোখ চিক চিক করে উঠলো নাজমুল হুদার কোনো কিছু না ভেবেই বলে দিলেন হ্যা নিয়ে যাও আমি বাচি..!

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১+২

শুভ্র তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে একটা স্টাম্প আর একটা চেক এগিয়ে দিলো নাজমুল হুদা চেক হাতে নিয়ে দেখলো বড় বড় করে লিখা ত্রিশ লক্ষ টাকা..তাই সে আর কিছু না পড়েই স্টাম্প এ স্বাক্ষর করে দিলো…!
শুভ্র রহিম কে চোখের ইশারা করে সারার রুমে চলে গেলো দপা দপ পা ফেলে.. রুমের ভিতরে গিয়ে দেখলো মারজিয়া চেয়ারে বসে বসে নক কাটছে আর মেজেতে পড়ে আছে সারা..শুভ্রর রাগ তর তর করে বেড়ে গেলো তবুও কিছু না বলে সারাকে কোলে তুলে নিলো…….

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৫+৬

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here