৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩৪
সারা চৌধুরী
শ্রাবন চকিতে বাইরের মানুষের দিকে তাকিয়ে চমকে গেলো সাথে সেও বলে উঠলো….
-“অহনা তুমি এখানে…?
শ্রাবনের কন্ঠ এতো জোরে ছিলো যে সোফাই বসে থাকা অর্ক রা আতকে উঠলো,,,সবাই দরজার সামনে এসে দাড়াতেই অহনা আনিতা কে দেখে তাড়াতাড়ি সালাম করলো পায়ে হাত দিয়ে,, আনিতা বেগম পা শরিয়ে নিলেন।অহনা কে ঠান্ডা কন্ঠে বল্লেন থাক মা।
অহনা সোজা হয়ে দাড়াতেই আনিতা ভ্রু কুচকে অহনাকে পরখ করলো পা থেকে মাথা অব্দি,, কালো থ্রি পিস এর পরা হাতে একটা ব্যাগ ভালোই বড়।অর্ক অহনা কে চিনতে না পেরে শ্রাবন কে বললো কিরে দোস্ত কে এ।।শ্রাবন কিছু না বলেই চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে যেনো বাক হারিয়েছে সে,,।
শুভ্র সারাকে কোনো মতে বুঝিয়ে তাড়াতাড়ি রুম থেকে বেরিয়ে সিড়ি দিয়ে লাবছিলো,,শুভ্র কোনো মতেই অহনা এ বাড়িতে আসুক চাই না,,তাই শুভ্র তাড়াতাড়ি যাচ্ছিলো যাতে রাস্তা থেকে অহনাকে বুজানো যায়,, এ বাড়ি তে আসলে বড় কোনো ভুল বোঝা বুজি সৃষ্টি হবে,, শুভ্র তা চাই না।শুভ্র পিছু পিছু সারা ও রুম থেকে বেরিয়েছে,, সারা মন খচ খচ করছে,,মনে কু ডাকছে তার,,বাম চোখ অসম্ভব লাফাচ্ছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সারা রুম থেকে বেরিয়ে করিডরে এসে দাড়ালো,, মাথায় উড়না ঠিক করতে লাগতো।শুভ্র নিচে এসে দাড়াতেই অহনা দরজার কাছ থেকে সবাইকে সরিয়ে ছুটে এসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরলো।শুভ্র স্তব্ধ,,নির্বিকার ভাবে দাঁড়িয়ে আছে।অহনা জোরে কেদে উঠে বলে…
-“শুভ্র কেমন আছিস, আমারে ভুলে গেলি কিভাবে তুই,,আমাদের মেয়ে কই শুভ্র।
আমাদের মেয়ে কই শুভ্র কথাটা কর্ন হরে পৌছাতেই সারার দুনিয়া থমকে গেলো,,সে সিড়ি দিয়ে নামছিলো হটাৎ ফোনের সেই মেয়েটাকে ছুটে এসে শুভ্রকে জড়িয়ে ধরতে দেখে চমকে গেছিলো এখন পুরোপুরি থমকে গেছে।অহনার বলা কথা শুনতেই দরজার কাছ থেকে সবাই সিড়ির কাছে চলে এলো সোফাই বসে থাকা ফাতিহা সুমনা আর আনিশাও অহনা আর শুভ্রর দিকে তাকালো।
আনিতা এসে অহনাকে টেনে শুভ্রর থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে উঠে তোমার মেয়ে মানে আর এসব কি এটা ভদ্র মানুষের বাড়ি কথ্ব গুলো রেগেই বলে,,অহনা আনিতার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে…
-“আম্মা আমাকে চিনলেন না আমি আপনার অহু..!
আনিতা চমকালো অহনা তো মারা গেছে তবে এ আবার কে..আনিতা শুভ্রর দিকে তাকাতেই শুভ্র শান্ত কন্ঠে বলে উঠলো…
-“তোমার এখানে আসা উচিত হয়নি অহনা…!
-“আমার মেয়েকে দিয়ে দাও শুভ্র..!
-“কিসের মেয়ে…?
-“কিসের মেয়ে মানে কি পুরো নয়টা মাশ আমার গর্ভে বেড়ে উঠা বাচ্চা আমার মেয়ে।
হটাৎ অহনার চোখ গেলো সোফাই বসে থাকা আনিশার দিকে কোলে ছোট্ট অরু,,অহনা সেদিকে একবার দিকে শুভ্রকে বলে উঠলো ওইটা আমাদের মেয়ে শুভ্র বল না,, শুভ্র কিছু বলতে যাবে তার আগেই অহনা আনিশার দিকে এগিয়ে গেলো। শুভ্র স্তব্ধ। অর্কের মাথায় কিছু আসছে না।ফাতিহা অল্প সল্প চিনতে পারছে কন্ঠ শুনে…তবে মনে করতে পারছে না।
অহনা আনিশার সামনে এসে দাঁড়িয়ে অরুর দিকে হাত বাড়িয়ে অরুকে নিতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে সারা খপ করে অহনার হাত ধরে সরিয়ে দিলো,,যেহেতু অহনা উত্তেজনায় ছিলো সেহেতু হাতে তখন শক্তি ছিলো না,,সারা যখন সিড়ি দিয়ে দেখেছে অহনার চোখ অরুর দিকে তখনই সারা বুকের ভিতরে মোচড় দিয়ে উঠে সারা এক মুহুর্ত দেরি না করে ছুটে আসে সোফার পাশে।
অহনা সারার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকাতেই সারা আনিশার কোল থেকে অরুকে তুলে নেই,,বাচ্চাটাকে কোলে নিতে দেখে অহনা রাগী চোখে সারার দিকে হাত বাড়াতেই সারা শাষানোর সুরে বলে উঠে…
-“অরু আমার মেয়ে,, খবদদার ওর গায়ে হাত দিবেন না,,কে আপনি বাইরে থেকে এসেই আমার মেয়ে আমার মেয়ে করছেন..?
সারার কথা শুনে অহনার কাছে কিছু অপমানিত মনে হয় ফলে অহনা রেগে বলে উঠে…
-“এই মেয়ে কে তুই…?
ও আমার স্ত্রী..তালুকদার শুভ্রর স্ত্রী এটাই ওর পরিচয় এ বাড়ির মেজো বউ সে। অহনার পিছন থেকে বলে উঠে শুভ্র..সবাই শুভ্রর দিকে তাকাই..শুভ্র সারার দিকে এগিয়ে এসে সারার হাত ধরতে চাইলে সারা সরে যায়। শুভ্র অবাক হয় না সে বুজে গেছে তার পিচ্চি পাখি ভুল বুজছে,, কিন্তু শুভ্র চাই ভুল বুঝুক,, তাই শুভ্র আর কিছু না বলে সারার থেকে অরুকে নিয়ে নেই যদিও সারা দিতে চাচ্ছিলো না।
অহনা চোখ বড় বড় করে অবাক হওয়া কন্ঠে বলে..
-“শু.শুভ্র তুই বিয়ে করছিস…?
শুভ্র অরুর দিকে তাকায়,,অরু শুভ্রর দিকেই তাকিয়ে আছে,,সে তো এসব ঝামেলার কিছু বুজ্ঝে না, শুভ্র অরুর দিকে তাকিয়ে থেকেই নির্বিকার কন্ঠে বলে উঠে….
-“আশা করি এখন স সম্মানে বের হয়ে যাবি,, মেজাজ খারাপ করিস না অহনা।তুই যা চাস তা কোনোদিন পাবি না বের হো।
শুভ্রর কথা শুনে অহনা হাসলো বেশ জোরেই হেসে উঠলো.. সবাই অহনার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালে অহনা শান্ত কন্ঠেই বলে উঠে..
-“দেখ শুভ্র এসব বেইমানির খেলা আমিও খেলতে পারি,, আর আমি তোর থেকে বেইমানি জিনিস টা সহ্য করতে পারবো না,,কোনো ঝামেলা চাচ্ছি না বিয়ে করেছিস বউ নিয়ে থাক আমার মেয়েকে দিয়ে দে…?
অহনার কথা শেষ হতেই আনিতা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে অহনাকে প্রশ্ন করলো…
-“তুমি অহনা আমাদের অরু গর্ভে থাকতে এসেছিলে তাইতো..?
-“জি আম্মা আমি আপনার সেই অহু যাকে আপনি নিজের মেয়ের যায়গায় বসিয়েছিলেন..এতো তাড়াতাড়ি ভুকে গেলেন আমাকে -(বলে অহনা একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো)-
তাদের কথার মাঝেই সুমনা বলে উঠে আমি ভুল না করলে তুমি আমাদের শুভ্র বউ,, আর অরুর মা।
অহনা সুমনার দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে উঠলো হুম ছোট মা ঠিক ধরেছেন।অহনার কথাটা সারার মস্তিষ্কে গিয়ে বাড়ি খেলো..-(জি ছোট মা)-অর্কের বিরক্ত লাগছে শ্রাবন রুমে চলে গেছে এসব তার ভালো লাগছে না।
শুভ্র আড়চোখে সারার দিকে তাকালো আনিশার পাশে মাথা নিচু করে চুপ চাপ দাড়িয়ে আছে।শুভ্র এখান থেকেই বুজে গেলো অনেক কিছু।অহনা আবারো অরুকে কোলে নিতে চাইলে শুভ্র এবার বেশ ভারী কন্ঠেই বলে উঠে…
-“আমার মেয়েকে আমি দিবো না..ও শুধু আমার মেয়ে দিবো না আমি বলেই শুভ্র অরুকে নিয়ে ফটাফট সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো,, অহনা পিছু পিছু কয়েক পা যেতেই ফাতিহা হাত টেনে ধরলো,,এতক্ষন ফাতিহা চুপ করে ছিলো,,কিন্তু সারার দিকে চেয়ে সারার মনের অবস্থা আন্দাজ করতে পেরে আর চুপ থাকতে পারলো না,ফাতিহা অহনার হাত টেনে ধরে বলে উঠে….
-“এইজে আপু কোথাই জান..?
অহনা দাঁড়িয়ে যায় বিরক্ত হয়ে পিছু ফিরে দেখে অহনা ভাবলেশহীন ভাবে হাত ধরে রেখেছে..অহনা ফাতিহাকে চিনা সত্তেও নাটক করে বলে উঠে…
-“আরে তুমি ফাতিহা না..?তোমার কথা অনেক শুনেছি খুব সুইট।
ফাতিহা বিরক্ত হয়ে বলে উঠে…
-“আপনি খুব চালাক,, বাট আপনার চেয়েও আমি চালাক,, আমি আপনাকে আগে কখোনো দেখি নাই,,কবে এসেছিলেন জানি না।আমার ভাইয়ের পিছনে কেনো জাচ্ছেন আপনি…?
অহনা ফাতিহার কথায় ভড়কালো সে ভেবেছিলো ফাতিহা তাকে চিনে ফেলেছে কিন্তু না বোকা ফাতিহা তাকে চিনে নাই..অহনা নির্বিকার ভাবে বলে উঠলো…
-“মানুষ স্বামি সন্তান এর পিছনেই যায় তবে আমি এখন আমার সন্তানে পিছনে যাচ্ছি তাতে তোমার কি সমস্যা..?
অহনার কথাটাই ফাতিহা বেশ রেগে যায়। ফাতিহা কিছু বলতে যাবে সেই মুহুর্তে সারার চিৎকারে সবাই সোফার দিকে তাকায়,,সারা এতো কিছুর মানষিক চাপ একসাথে নিতে পারছিলো না,, সে সব সময় যেটা ভয় পাই সেটায় হয়েছে,,তারা চিন্তা আর কথায় প্রচুর আঘাত পায় প্রথম বার তার মামা র কথা হয়েছিলো আর আজ আবার,, সারা নুচের দিকে তাকিয়ে ছিলো অহনার বলা কথা -(আমার স্বামি সন্তান) – কথাটা কানে গিয়ে বাজতে থাকে সারার।
সারা মাথা উচু করে অহনার দিকে তাকাতে যাবে ঠিক সেই মুহুর্তে সারার পুরো দুনিয়া ঘুরে আসে সবাইকে দুটো করে দেখতে থাকে কিছু বলতে গিয়ে ঠাস করে পড়ে যায় জোরে চিৎকার দিয়ে।
ঘরের ভিতরে নিরবতা সবারই মুখ কালো,,ডাক্তার এসে স্যালাইন দিয়ে গেছে,, আনিতার মুখ থেকে সব কথা শুনে ডাক্তার বেশ ভালো ভাবে বলে গেছে রোগী ব্রেনে বেশি চাপ দিলে বড় কোনো বিপদ হয়ে যাবে আপনারা সাবধান হয়ে জান,,শুভ্র রাগী দৃষ্টিতে অহনার দিকে তাকিয়ে আছে শ্রাবন বাড়ি থেকে বের হয়ে গেছে,, বাড়ি সবার চোখ অহনার দিকে রাগী ভাব নিয়ে চেয়ে আছে,,এই অহনার জন্যই সব হলো।
অহনা মাথা নিচু করে রুমের এক কোনে টুল এ বসে আছে সবার দৃষ্টি অনুসরণ করে মিনমিনিয়ে বলে…
-“আমার দিকে এমন ভাবে তাকাচ্ছেন জেনো আমার জন্য এই মেয়েটা অসুস্থ। আমার মেয়েকে দিয়ে দেন আমি চলে যাচ্ছি।
অহনার কথা শেষ হতে না হতেই শুভ্র উঠে গিয়ে অহনার গাল চেপে ধরে রক্তচক্ষু নিয়ে বলে…
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩৩
-“কসম খোদার,, তোর জন্য সারার কিছু হলে জ্যান্ত পুতে ফেলতাম আজ তোরে।
অর্ক এসে শুভ্রকে ছাড়িয়ে নেই বাকি মানুষ গুলো স্তব্ধ হয়ে গেছে,,কোনো কথা নেই কারো মুখে.কিছুক্ষন আগে সারা যখন চিৎকার দিয়ে পড়ে গেলো অর্ক সাথে সাথে গিয়ে সারার মাথার নিচে হাত রেখেছিলো নয়তো মেজেতে মাথা পড়লে আজ বড় একটা এক্সিডেন্ট হতো।সারা সেন্সলেস হওয়ার সাথে সাথে সবাই সারাকে ঘিরে ধরে কিন্তু অহনা দুরেই দাঁড়িয়ে ছিলো,,সুমনা সারার চোখে মুখে পানি সিটিয়েও জ্ঞান ফিরাতে না পেরে ভয় পেয়ে যায় সকলে।
নিচে জ্ঞাঞ্জাম শুনে শুভ্র অরুকে রুমে সুইয়ে দিয়ে নিচে আসতে আসতে সিড়ি দিয়ে দেখে অহনা দাঁড়িয়ে আছে আর সবাই এক জাইগায় দাঁড়িয়ে আছে,, শুভ্রর মনের ভিতর কেমন হয়ে উঠে তাড়াহুড়ো করে নিচে লেবে সোফার পাশে আসতে যাবে ঠিক তখনই……
