৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৫+৬
সারা চৌধুরী
শুভ্র গাড়ি এসে থেমেছে তালুকদার বাড়ির বিশাল গেট এর সামনে.. দারোয়ান গেট খুলে দিতেই শুভ্র
ব্লাক মার্সিটিজ গাড়িটি ভিতরে ঢুকে গেলো…!
শুভ্র গাড়ি থেকে নেমে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে বুক ভরে শ্বাস নিলো.. তারপর সারা হাত ধরে তাকে বের করলো.. আর রহিম কে বলে দিলো কাজির কথা.. রহিম সাথে সাথে কাজি সাহেব কে আনতে গেলো…সারার মাথায় প্রচন্ড ব্যাথা করছে সারা সব জানলেও এটা জানেনা যে তাকে একেবারের জন্য নিয়ে এসেছে শুভ্র…শুভ্রর হাত ধরে বাড়ির ভিতরে ঢুকতে শুনতে পেলো একটা বাচ্চার কান্নার শব্দ..!
শুভ্র সারাকে ডাইনিং এ সোফাই বসেই রিহিম চাচার বউ এর কাছ থেকে দৌড়ে গিয়ে অরু কে নিয়ে আসলো তবুও যেনো অরুর কান্না থামছে না..শুভ্র সমস্ত ডাইনিং পাইচারি করা শুরু করলো বেশ কিছুক্ষন পর কাজি আসলো..ততক্ষনে বাবার কোলে ছোট্ট অরু ঘুমিয়ে গেছে…!
শুভ্র অরুকে রহিম চাচার বউ এর কাছে দিয়ে সোফাই বসে পড়লেন…কাজি সাহেব এর সাথে কথা বলে বিয়ে পড়াতে বললেন..সারা চমকে উঠলো কাপা-কাপা কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলো বিবিয়ে মামানে…!
শুভ্র কিছু না বলে আবারো কাজির সাথে কথা বলা শুরু করলো…সারা আবারো জিজ্ঞাসা করলো কি হলো বললেন না..!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এবার শুভ্র সারার দিকে তাকিয়ে বললো আমি চাই আমার মেয়ে চার টা বছর তার মায়ের কাছেই থাকুক..তাই তোমাকে বিয়ে করছি..আর ওই বাড়ি তো আর তোমার আপন না আমি খুব তাড়াতাড়ি তোমার আসল পরিচয় খুজবো..চিন্তা করিও না আমার মেয়েটাকে একটু আপন করে নিও।।এটুকু হলেই হবে আর এটার জন্যই তোমাকে আনা…শুভ্র কথা শুনে সারার চোখ জলে ভরে উঠে মাথা নিচু করে ফেলে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে এক ফোটা নোনাজল…!
কাজি সাহেব বিয়ে পড়ান…তিন কবুলে আবদ্ধ হয়ে যায় দুটি প্রান..এখানে কি ভালোবাসা আছে নাকি শুধুই টাকার বিনিময়ের চুক্তি…কবুল বলে কাপা কাপা হাতে রেজিস্ট্রি পেপারে সিগনেচার করে দেই সারা..সে কখোনো ভাবে নি তার জিবনেও এমন একটা দিন আসবে..অজানা একটা মানুষকে প্রথম দেখেই সেই প্রথম দিনে তার জন্য চুক্তির বউ হয়ে যাওয়া…!
কাজি চলে গেলো সব কাজ মিটিয়ে..টাকার বিনিময়ে সারার বয়স অল্প হলেও শুভ্র সেটা ঠিক করে দিয়েছে…কারন সে চাইনা পরে তাদের কোনো সমস্যা হোক।শুভ্র কেনো বিয়ে করছে সে নিজেও জানেনা..শুধু এটাই জানে বিয়েটা একমাত্র চুক্তির চার বছর পর সে তার মেয়েকে নিয়ে বিদেশ চলে যাবে..তাই আর কোনো চিন্তা না করে সারার হাত ধরে সোফা থেকে উঠে সোজা দোতলায় চলে আসে…!
শুভ্র নিজের রুমে সারাকে নিয়ে এসে সারার হাতে একটা সপিং ব্যাগ দেই..সারা খুলে দেখে তার ভিতর একটা লং ফ্রক.. হালকা গোলাপি রঙের সাথে উড়নাও আছে..সারা শুভ্রর দিকে তাকাতেই শুভ্র বলে উঠে তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও আমি তোমার খাওয়ার ব্যাবস্থা করতে বলি দুপুরে তো না খেয়ে ঘুমিয়ে ছিলে শুনলাম..তাড়াতাড়ি যাও ড্রেস চেঞ্জ করে আসো..!
শুভ্রর কথায় যেমন সারা লজ্জা পেলো তার চেয়ে বেশি কস্ট হলো তার..সারা ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো.. শুভ্র ও চলে গেলো নিজের মেয়ের কাছে…সারা ওয়াশরুম এর দরজায় পিঠ ঘেসে ডাড়িয়ে আছে আর ভাবছে…আর কখোনো ওই বাড়িতে যাওয়া হবে না..মামা বলেছিলো আমার নাকি বাবা মা মারা গেছে কিন্তু তারা তো আমাকে
মেলায় পেয়েছিলো.. তাহলে কি আমার পরিবার এখোনো আছে.. আচ্ছা শুভ্র আমাকে বিয়ে কেন করলো.. আচ্ছা আমি বাচ্চাটার মা হয়ে উঠতে পারবো তো গ্রামে থাকতে তো পাপিয়া আফার মেয়ে কতো রেখেছি কতো গালে তুলে খাওয়াইছি..আমি নাকি বড় গেছি সবাই বলতো আমিতো সব পারি..নিজের মনের কথায় নিজেই হাসলো সারা….!
তারপর হাতমুখ ধুয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো শুভ্র দেওয়া জামাটি…তারপর মনে মনে একটু হাসলো আজ থেকে তার নতুন জিবন অভিনয় এর জীবন… মা হওয়ার অভিনয়..!
সারা ওয়াশ রুম থেকে বেরিয়ে দেখলো শুভ্রর কোলে বাচ্চাটি..সারা বাচ্চাটির দিকে যেতে গেলেই শুভ্র বলে যাও চুল গুলো আচড়িয়ে খেয়ে নেও.. সারা তাই করলো তবে খেলোনা..শুভ্র জিজ্ঞাসা করলে বললো না খাওয়ার অভ্যাস আছে খিদে নাই..তারপর বাচ্চাটির দিকে হাত বাড়ালে শুভ্র অরুকে সারার কোলে দেই..ছোট্ট এক মাস বয়সের অরু তখন ড্যাবড্যাব করে সারার দিকে তাকিয়ে আছে হটাৎ মুচকি হেসে উঠলো সারা সাথে সাথে অরুও হাসলো..শুভ্র সারার উদ্দেশ্য বললো আজ থেকে ও তোমার মেয়ে তুমি ওর আম্মু বুজছো..!
সারা অরুর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো এক দৃষ্টে..শুভ্র বললো ওর নাম কি বলোতো..?
সারা এবার শুভ্রর দিকে তাকিয়ে মৃদু কন্ঠে বলে উঠে যেহেতু আমাকে ওর মা হতে নিয়ে এসেছেন সেহেতু ওর নাম যেনে কি করবো এক্টাই পরিচয় ও আমার মেয়ে..এটুকু বলতেই যেনো নিজের সমস্ত শক্তি ফুরিয়ে গেলো সারার..শুভ্র বুজে মুচকি হাসলো..মনে মনে ভাবলো মেয়েটা ছোট হলেও ম্যাচিউর আছে..আমার ছোট্ট রাজকন্যাকে ভালো রাখলেই হলো..!
সারা শুভ্র কে অরুর মায়ের কথা জিজ্ঞাসা করলে শুভ্র কিছু বললো না.. শুধু বল্লো সময় হলে বলবো বলেই খাবারের প্লেট টা হাতে নীলো শুভ্র..তরকারি দিয়ে ভাত মেখে সারা মুখের সামনে ধরতেই সারা অবাকদৃষ্টে শুভ্রর দিকে তাকালো..!
শুভ্র সারার দিকে তাকিয়ে বাম হাত দিয়ে সারার হাতে অরুর ফিডার টা এগিয়ে দিয়ে বল্লো তুমি আমার মেয়েকে খাওয়াও আর আমার মেয়ের মাকে খাওয়াই..আজ থেকে আমার মাকেও দেখে রাখতে হবে নয়তো আমার মেয়ের খেয়াল রাখবা কি করে..শুভ্রর কথা শুনে সারার চোখ দিয়ে আপনা আপনি পানি পড়তে থাকলো..!
শুভ্র সারার দিকে তাকিয়ে একটু গম্ভীর কন্ঠে বললো এই মেয়ে শুধু কথাই প্যাচ প্যাচ করে কাদবা না এটা বদ অভ্যাস আমার মেয়ের ও কিন্তু অভ্যাস হবে..এবার হা করো..শুভ্র কথা শেষ হতেই সারার গালে এক লোকমা ভাত তুলে দিলো শুভ্র..সারা চুপ করে খাবার চুবুতে থাক্লো আর অন্য হাত দিয়ে অরুকে খাওয়াতে থাক্লো..শুভ্র মুচকি হাসি দিয়ে বলে উঠলো……..
রাত এগারোটা ছুই ছুই।। চারপাশে নেমে এসেছে এক অদ্ভুত নিরবতা বাতাসে মিশে আছে হাল্কা শীতলতা যেনো অজানা কোনো কিছুগায়ের উপর দিয়ে ছুয়ে চলে যাচ্ছে..দূরে কোথাও কুকুর ডাকছে অন বরত হয়তো খিদের কারনে..কুকুরের সেই ঘেউ ঘেউ ডাকটা পরিবেশের নিরবতা কিছুটা ভেঙে দেই..!
কিন্তু মুহুর্তেই সব আবার শান্ত হয়ে যাই আকাশ টা আজ অপরুপ সুন্দর তারা গুলা ঝিকঝিক করছে..মাঝে মাঝে কালো মেঘ এসে তারা গুলোকে আড়াল করে দিচ্ছে..রাস্তার পাশে ল্যাম্পপোস্ট এর আলো কাপা কাপা জলছে সেও ক্লান্তিতে ঢলে পড়ছে..!
এ সুন্দর পরিবেশেও ভাসছে এক অজানা লজ্জার শিহরন..দুরের আকাশে কে জানে তাকিয়ে আছে সব কিছুই সে দেখছে.. লজ্জায় নিজের হৃদস্পন্দন আরো বেড়ে যাচ্ছে ক্রমসে…!
সারাদিনের কথা সারার এক এক করে মনে পড়ছে সে ততই লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে.. তার ছোট্ট বুকে তার অরু ঘুমিয়ে আছে পরম আবেশে.. যেনো সে নিজের মায়ের বুক এর গরম আভা পেয়েছে..সেই রাতে শুভ্র খাইয়ে দেওয়ার পর থেকে এখোনো পর্যন্ত একই ভাবে অরুকে নিয়ে খোলা বারান্দার দোলনায় বসে আছে সে..!
তাকিয়ে আছে দুরের আকাশে..হালকা ঠান্ডা বাতাস এসে তার মাথায় দেওয়া কাপড় টা ফেলে দিলো সাথে সাথে এলোমেলো হয়ে গেলো তার ঘন কালো রেশমি চুল গুলো..কিছু চুল মুখের সামনে পড়লো কিন্তু সারা সরালো না চোখের কোনে কোনো এক দুঃখের জল এসেও আসছে না শুভ্রর দেওয়া লজ্জার কারনে….
কিন্তু মুহুর্তেই সারার লজ্জা রাঙা মুখখানি চুপসে গেলো মনে পড়লো মামা বাড়ির কথা তার ক্ষ্যে যাওয়া শৈশব এর কথা….সারা মনের অজান্তেই বিড়বিড়িয়ে বললো…
আমি মেয়েটা আসলে বোকা..এই অল্প বয়সে এমন খারাপ অনুভুতি যন্ত্রণার সাথে লড়তে হচ্ছে আমাকে..আমি কেন কখোনো আমার বাবা মার বাড়ি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করি নাই মামা মামিকে..কেন জিজ্ঞাসা করি নাই তাদের কোথাই সমাধিস্ত করা হয়েছে..আসলেই বোকা আমি বলেই উঠে দাড়ালো…!
বারান্দার শেষ প্রান্তের গ্রিল ঘেশে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকালো বুকের ভিতরে খুব সুনিপুণ ভাবে জড়িয়ে রেখেছে অরুকে এক দিনেই খুব আপন মনে হচ্ছে বাচ্চাটাকে…!
ঠান্ডা বাতাশ ছুয়ে দিচ্ছে সারাকে চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি হটাৎ কোমরে কারোর স্পর্শ পেয়ে হকচকিয়ে যায় সারা..সারা পিছনে ঘরতে যেতেই সারার কাধে উপ্র মুখ রাখে..সারা বুজতে পারে শুভ্র এসেছে..খোচা খোচা দাড়ির স্পর্শ সারার মনের মধ্যে কাল রাতের কথা সরন করিয়ে দিচ্ছে…!
সারা কাপা কাপা কন্ঠে বলে উঠে..
সারা:- ক..ক…কি..কি কর..করছেন…?
শুভ্র:-কই কি করলাম আমার মেয়ে কি করছে তাই দেখতে আসলাম..!
সারা:-ও ঘুমাচ্ছে..!কিছুক্ষন আগেই ঘুমিয়েছে..!
শুভ্র:- সেতো আমি জানি আমার মেয়ে দশটার পরেই ঘুমিয়ে যায়..!তো আমার তুমি কাদছো কেন..?
সারা:-ককই কাদছি বাতাসে এমন হচ্ছে সরেন ঘরে যাবো..!
শুভ্র মুচকি হেসে বলে উঠলো…
শুভ্র:-উহু সত্যি টা বলো আমি কথা লুকানো পছন্দ করি না..!
সারা কিছু না বলে শুভ্রর হাত মাজা থেকে সরিয়ে ঘুরে দাড়াতেই শুভ্র একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো চলো রুমে যায়.. সারা ও সম্মতি জানাতেই শুভ্র কোলে তুলে নেই সারা কে.. সারা হতভম্ব হয়ে যায় জাপটে ধরে ঘুমন্ত অরু কে..!
শুভ্র বিছানায় এনে লাবিয়ে দেই সারা কে তারপর অরুকে খাটের একপাশে সুয়িয়ে দেই তারপর সারাকে বলে…
শুভ্র:-বলবা কেন কান্না করছো..?
সারা:-নাহ..?
শুভ্র:-তাহলে শুরু করা যাক…?
সারা:-ক…ক..কি শুরু করবেন..?
শুভ্র :- ওই যে কালকের মতো কান্নার সিনারি..বলেই হেসে উঠে শুভ্র…!
৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৩+৪
সারা লজ্জায় লাল নীল আকাশে উঠে যায় কান দিয়ে গরম ধোয়া উড়ছে কি লজ্জা টা না দিলো লোকটা..ইশ সারার এখন লজ্জায় মাটি ফাক করে ঢুকে যেতে ইচ্ছা করছে..সারা এক এক মনে পড়তে থাকলো কাল রাতের সব ঘটনা..সারা আবার কল্পনায় ডুব দিলো ভাবতে লাগলো সেই ঘয়াতনা গুলো……!
ফ্লাসব্যাক…..
অরু অনেক্ষন ঘুমিয়ে গেছে..শুভ্র সারাকে বললো…….