৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৭+৮

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৭+৮
সারা চৌধুরী

শুভ্র সারাকে বললো তুমি বসো আমি আসসি বলে শুভ্র দরজা খুলে বাইরে চলে যায়…সারা গ্রামে একটা বান্ধবী ছিলো.. যাকে বলে গলাই গলাই ভাব..নাম লামিয়া আরো এক বছর আগে বিয়ে হয়েছে তার সেজন্য৷ সারার সাথে অনেক কিছু শেয়ার করেছিলো..সেহেতু সারা অনেক কিছুই ধারনা রেখেছে..সারার অল্প সল্প ভয় করছে এই তো শুভ্র যখন বাইরে ছিলো তখন একজন কাজের মহিলা এসে বলে গেলো আজ স্বামি যা বলে সব শুনতে কথা বেশি না বলতে..!

সারার ভাবনার মাঝে শুভ্র রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিলো ঠক করে তারপর এলো সারার সামনে দাঁড়িয়ে একটা শপিং ব্যাগ সারার হাতে দিয়ে বল্লো এটা বাসর রাতের গিফট দেখোতো পছন্দ হয় কিনা..?
সারা শুধু হা করে তাকিয়ে আছে..শুভ্র আঙুল দিয়ে তুড়ি দিয়ে সারার ধ্যান ফিরিয়ে বললো এই যে ভাবনার রানী আমি ফ্রেশ হয়ে আসি..পছন্দ হলে জিনিস গুলো পরিও বলে শুভ্র টাওয়েল হাতে নিয়ে ওয়াশরুম এ চলে গেলো..সারা কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো কারন আগে কখোনো কেও তাকে গিফট দেই নি আর এভাবে লজ্জাও দেই নি..সারা ড্রেসিং টেবিল এর সামনে টুল এ বসে শপিং ব্যাগ টা খুললো… ব্যাগ এর ভিতরে তিনটা বক্স..!

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সারা এক এক করে সব বক্স খুললো এক্টাই সোনার কানের..আর এক্টাই সোনার এক জোড়া বালা..আর একটা বক্স এ মেকাপ সামগ্রী।।সারা কিছুটা অবাক হলো যে শুভ্র এত জিনিস চিনলো কি করে তারপর ভাবলো তার তো আগেও স্ত্রী ছিলো অরুর আসল আম্মু.. তাই হয়তো চিনে..সারা চোখে হালকা কাজল দিলো সাথে ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক..আর কিছু দিলো না..তার মতে মানুষ কি রাতে সাজে..রাতে সেজে কাকে দেখাবে..আগে তো শুধু ইদের দিন সারা সাজতো তাও বিকেল এ একটু তা ছাড়া কখোনো বের হতে দিতো না মামি..!

প্রায় পনেরো মিনিট পর লম্বা শাওয়ার নিয়ে বেরোলো শুভ্র..সারা খেয়াল করলো ভিজে চুল গুলো থেকে এখোনো টুপ টুপ করে পানি পড়ছে গায়ে তার ইয়াশ কালারের একটা শার্ট আর আর একটা ফোর কোয়ার্টার এর ব্লাক ট্রাউজার..গলার দিকে কয়েকটা বোতাম খোলা থাকায় শুভ্রর লোমশ বুকের কিছুটা অংশ দৃশ্যমান..শার্টের হাতা ফোল্ড করে কুনুই পর্যন্ত গুটানো টাওয়েল টা গলায় ঝুলিয়ে চুল মুছচে.. সারা মুগ্ধ হয়ে গেলো শুভ্র কে দেখে….!
শুভ্র টাওয়েল টা বারান্দায় দিয়ে এসে সারার দিকে চাইলো শুভ্রর চোখ জোড়া আটকে গেলো সারার মুখে..ইশ কি মায়া শুভ্রর খুব ইচ্ছা করছে মেয়েটাকে নিজের করে পাবার.. ইচ্ছা করবেই বা না কেন মেয়েটা যে মারাত্মক সুন্দরী.. সুন্দর টানাটানা দুটো চোখ.. হালকা গোলাপি চিকন ঠোঁটজোড়া..দুধে আলতা গায়ের রঙ সব মিলিয়ে অসম্ভব সুন্দর লাগছে সারাকে।।

গোলাপি ফ্রকটাতে….
শুভ্র কে অবাক করে দিয়ে সারা বলে উঠলো..
সারা:- আপনি আমার দিকে এভাবে কি দেখছেন….?
শুভ্র শুকনো ঢোক গিলে বললো কই কিছু নাতো..!
তাহলে এভাবে তাকিয়ে ছিলেন যে..?সারা ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো..!
শুভ্র প্রসঙ্গ বদলাতে বলে উঠে তুমি চুরি পরো নাই কেন আসো পরিয়ে দেই..?
সারা বেশ বুঝলো শুভ্র কথা লুকাচ্ছে তাও কিছু বললো না..!
-(বিঃদ্রঃ গ্রামের মেয়েদের শহরের মেয়েদের চেয়ে ম্যাচিউরিটি বেশি হয়.. গ্রামের মেয়েদের বেশির ভাগ বারো-তেরো বছরে বিয়ে হয় আমি নিজে দেখেছি)-

শুভ্র আবার বললো কই দাও পরিয়ে দেই বলে শুভ্র ড্রেসিং টেবিল এর সামনে এসে দাড়ালো..সারার দিকে তাকাতেই সারা বলে উঠে চুরি পরলে বাবুর গায়ে লাগবে আমি দেখেছি যাদের ছোট বাবু থাকে তারা চুরি পরে না.. আর আমিও চাই না বাবুর বেথ্যা লাগুক..সারার কথা শুনে শুভ্র একটু অবাক হলো সাথে খুশিতে তার মন ভরে গেলো..!
কেনোনা এই ছোট্ট মেয়েটা তার অরুর কথা ভাবছে বিয়ে হয়েছে ছয় ঘন্টাও হয় নি তার আগেই..সারা উঠে দাঁড়িয়ে শুভ্র সামনে থেকে যেতে নিবে ঠিক তখনই শুভ্র সারার হাত ধরলো সারা চমকে উঠলো..শুভ্র সারাকে জিজ্ঞাসা করলো..

-আমি তোমার কি হই..?
-সারা কাপা কাপা কন্ঠে উত্তর দিলো..আপনি তো আমার স্বামি..শুভ্র স্পর্শে সারার সমস্ত শরীর কাপছে.!
-শুভ্র আবার জিজ্ঞাসা করলো অরু তোমার কি হয়..?
-সারা এবার একটু বিব্রত বোধ করলো সে কি উত্ত্র দেবে ভেবে পেলোনা ঠিক তখনই শুভ্র সারার কাধে হাত দিলো সারা সারা শরীর বিদ্যুৎ বেগে কেপে উঠলো তারপর শুভ্র বললো…
-নিজের না ভাবলেও মেয়ে ভেবো..ও এখোনো ছোট আমি জানি তুমি অনেক বুঝো..মেয়েটা আমার মা হারা তুমি ওর সেই মা হয়ে থেকো..আমার আর কিচ্ছু চাই না তুমি ওকে কখোনো বুজতে দিও না ওর মা নেই..তুমি যা চাইবে তাই পেয়ে যাবে শুধু এই কথাটা রেখো..!

-সারা মিহি কন্ঠে বললো আমি নিজের মেয়ের মতোই বড় করবো..শুভ্র কথাটা শুনতে পেয়ে মুচকি হাসলো…!
শুভ্র সারাকে বল্লো যাও সব গুছিয়ে সুয়ে পড়ো আমি বারান্দায় যাচ্ছি..সারা কিছু না বলে ড্রেসিং টেবিল এর উপর থাকা বক্স গুলো গুছিয়ে রাখতে যেতেই.. শুভ্র সারার চাল চলন খুব মনযোগ দিয়ে দেখে নিলো..!
না শুভ্র আর পারছে না নিজের প্রতি কন্টোললেস হয়ে যাচ্ছে..নিজের বিবেক যতই বোঝাক মেয়েটা বাচ্চা.. কিন্তু মন তো অবাধ্য শুভ্রর মাথায় নেশা চড়ে গেলো..এ কোনো খারাপ নেশা না এ হলো নিজের বিবাহিত হালাল স্ত্রী কে কাছে পাওয়ার নেশা..!
সারা ড্রেসিং টেবিল এর থেকে পিছনে ফিরতেই….

সারা শুভ্রর বুকের সাথে ধাক্কা খেলো লম্বাই সারা শুভ্রর বুক পর্যন্ত..সারা কিছু বুঝে উঠার আগে শুভ্র সারাকে হুট করে কোলে তুলে নিলো..সারা কিছুটা চমকে গেলো..কিছু বলার আগেই শুভ্র তাকে খাটে শুইয়ে দিলো।।
শুভ্র উঠে অরুকে আস্তে করে তুলে বেড সাইট এ রাখা দোলনার মাঝে রেখে দিলো..পরম শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে অরু..শুভ্র নিজের শার্টের বোতাম খুলছে আর এদিকে সারার সমস্ত শরীর কাপছে অজানা এক আতঙ্কে..!
সারার ঠোঁট জোড়া তিরতির করে কাপছে সরে যাবে সেই বুদ্ধি ছিলো না..নিশুতি রাতকে শাক্ষি রেখে মিলিত হলো দুটি মন..সারা এক সময় শুভ্রর দেওয়া ভালোবাসা নামক যন্ত্রনায় জ্ঞান হারালো..!

সূর্য মামা এখোনো উঠে নাই…চারিদিকে ঘোর অন্ধকার শরীরের অসম্ভব ব্যাথার কারনে ঘুম ভেঙে যায় সারার.. শুভ্র ঘুমিয়ে আছে সারার ছোট্ট বুকে উপর..সারা হাতের পাশেই ঘুমাচ্ছে অরু তবে অবাক হলো এটা দেখে যে সারার হাতের উপর ঘুমে বাচ্চাটি..সে বুজলো অরু কোথা থেকে এলোকারন রাতে তো দোলনায় ছিলো..এখন বেশ বুজতে পারছে এটা শুভ্রর কাজ..সারা একটু বিরক্ত হলো তবুও কিছু বললো..সারা অসস্ত্বি হচ্ছে শুভ্রর খোচা খোচা দাড়ি আর ঘন ঘন গরম নিশ্বাস তার বুকে আচড়ে পড়ছে।।

গতকাল রাতের কথা চিন্তা করতেই সারা শুকনো ঢোক গিললো.. এখন যতটা শান্ত. মায়াবী শুভ্র কে দেখছে কাল রাতে ঠিক তার দ্বিগুন বেপরোয়া.. নেশালো শুভ্র কে দেখেছিলো সে…বস্ত্রহীন শুভ্র কে কল্পনা করতে বুক ক্রপে উঠে সারার..কাল রাতের শুভ্রর কিছু আকুলতার সেই কন্ঠস্বর ও ঘন নিশ্বাস এর শব্দ এখোনো কানে বাজছে..সারা কাল এক পাগল শুভ্রকে আবিষ্কার করেছেভ্যার ভিতর মায়া দরদ ছিলো না..!
শুকনো ঢোক গিলে ঘাড় ঘুরিয়ে অরুর দিকে তাকায় সারা..তারা তিনজন এক কম্বলের নিচে..সারার গায়ে শুভ্রর সেই ইয়াশ কালারের শার্ট.. উপরের বোতাম গুলা সব খুলা তার মাঝেই বাপ মেয়ের রাজত্ব..সারা কস্টের মাঝেও একটু হাসে..!
সারা ছোট হাত জোড়া চলে যায় শুভ্রর চুলের ভাজে.. শুভ্র দুহাত দিয়ে আকড়ে ঘুমিয়ে আছে সারার বুকে..সারা ফিসফিস করে বলে…

-খুব খারাপ মানুষ আপনি.. আমারে অনেক কস্ট দিছেন..!
সারার কথা শুভ্রর কানে যায় না কারন শুভ্র গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন..!
সারা উঠতে গেলেও উঠতে পারে না..বিড়বিড় করে বলে বাড়িতে কি বালিস নেই আমার বুকের উপর ঘুমাইছে কি লোক রে বাবা.. তারপর সারার আবার মনে হয় অরুর মায়ের কথা..আচ্ছা শুভ্র কি তার সাথেও এমন করতো এভাবে ঘুমাতো..ঘুম থেকে উঠলেই শুভ্র কে জিজ্ঞাসা করভে অরুর মায়ের কথা..সে কই..কেনো নেই এখানে…?

সকাল সাতটা শুভ্র উঠে গোসল করে সারাকেও গোসল করিয়েছে…সারা গোসল করতে গিয়ে পড়ে আর এক বিপদ এ পানি পড়ার সাথে গা জলে উঠে সারার..পুরোনো ক্ষত নতুন করে উঠছে..শুভ্র সারাকে কোনোমতে গোসল করে এনে বেড এ সুইয়ে দিয়েছে.. তারপর ব্যাথার ওষুধ ও পিল খাইয়ে দিলো সারাকে..সারা কোনো কথা না বলে খেয়ে নিলো…!

শুভ্রর খুব খারাপ লাগছে সারার জন্য তার জন্যই এসব হলো..নিজেকেই নিজে মনে মনে গালি দিলো কয়েকটা তারপর অরুর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন..শুভ্র মুচকি হাসি দিলো ভোর রাতে যখন অরু কাদছিলো তখন শুভ্র উঠে অরু কে ফিডার খাওয়াই আর সারার পাশে সারার হাতের উপর সুইয়ে দেই… মাথা শুভ্রর এটা করার কারন যাতে অরু কখোনো সারাকে নকল মা না ভাবে.. অরু যখন রেসপন্স করছিলো তখন অরুকে সারার বুক ঘেষে শুয়ায় দিয়ে সেও সারার বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়…!
সারা এমন একটা মেয়ে যে গভীর কস্ট পেলেও হাসি মুখে মেনে নিতে পারে..কারন সেই ছোট থেকে মামা বাড়ি না থাকলেই মামি হুট মারতো মাঝে কেটে রক্ত বের হয়ে যেতো তো কখোনো রক্ত জমে কালো হয়ে যেতো।।সেজন্য সারা শুভ্রর দেওয়া কস্টে মুখ বুজে নিজের গভীরে লুকিয়ে নিলো হাসি এনে নিলো মুখে..!
সারার একটা কথা হাসি হলো সব কিছুর সমাধান কাওকে কখোনো নিজের কস্ট টা দেখাতে নেই..মানুষ উফাস করবে..!

শুভ্র সারাকে সকালের নাস্তা করাতে নিচে নিয়ে গেলো যদিও সারা খুড়িয়ে হাটছে.. শুভ্রর চোখ ফাকি দিতে চাইলো তবুও পারলো না..সারা ধীরে ধিরে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো তার পর সোফায় বসতে যেতেই অরু কেদে উঠলো শুভ্রর কোলে শুভ্র তখন খাওয়া বাদ দিয়ে অরুর ফিডার হাতে নিতেই সারা বলে উঠে..
আপনি খেয়ে নিন ওকে আমার কাছে দিন আমি খাইয়ে দিবো..!
শুভ্র কিছু না বলে অরুকে সারার কোলে দিয়ে গেলো হাতে অরুর ফিডার টা দিতেই শুভ্রর চোখ গেলো সারার ঘাড়ে..কাল শিটে পড়ে গেছে কতটা নির্মম হয়েছিলো সে কালরাতে..!
শুভ্র নিজেই মনে মনে অনুশোচনা করতে থাকে..আর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেই আর ভুল ক্রমেও সারাকে স্পর্শ করবে না..কারন সারা খুব বাচ্চা একটা মেয়ে..তাকে কি ভাবছে সে জানেনা…!

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৫+৬

অরুর কান্নায় বাস্তবে ফিরে সারা সামনে বসে অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে শুভ্র..অরু হকচকিয়ে গেকো কিছুটা..শুভ্র তুড়ি বাজিয়ে সারাকে বললো কি ভাবছিলা.. সারা কোনো জবাব দিতে পারে না..সে কি করে বলবে সে কাল রাতের ভাবনায় বিভর ছিলো…শুভ্র অরুর মুখে ফিডার দিয়ে সারাকে বলে…..

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৯+১০

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here