৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৯+১০

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৯+১০
সারা চৌধুরী

নিস্তব্ধ পরিবেশ.. শীত আসবে আসবে ভাব কিছুদিনের মধ্যেই শীত পড়ে যাবে এখনই রাতে ঠান্ডা লাগে খোলা জানালা দিয়ে ফিরফির করে হাওয়া ঢুকছে চাদের উজ্জ্বল আলো এসে পড়ে সারার মুখের উপর.. সারা চোখ মেলে তাকাই..অরুকে ঘুম পড়াচ্ছিলো সে তার পাশেই বালিসে আধশোয়া হয়ে মোবাইল দেখছে শুভ্র..!
সারা একটু নড়ে উঠতেই শুভ্র উঠে বসলো..সারা চোখ ছোট ছোট করে তাকাতেই শুভ্র বলে উঠলো..
-এখন একটু দোলনায় শুয়াই দাও নইতো তোমার হাত ব্যাথা করবে সেই সন্ধ্যা থেকে কোলে করে রেখেছো..!
সারা শুভ্রর দিকে তাকায়ি একটা নিশ্বাস ছাড়লো তার ভয় সংযত কন্ঠে বলে উঠলো আপনি অরুর আম্মুর ব্যাপারে বলবেন বলছিলেন এখোনো বলেন নাই..!

শুভ্র কিঞ্চিত হাসলো সারার কথা শুনে তারপর অরুর মুকে টুপ করে চুমু খেলো..অরু ঘুমের মাঝে নড়ে উঠলো যার মানে সে বিরক্ত হয়েছে.. সারা শুভ্রর এমন কাজ দেখে বললো এই কি করছেন মেয়েটা আমার মাত্র ঘুমিয়েছে আর আপনি ওরে তুলবেন..!
শুভ্র ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো..মেয়েটা কার..!
সারা এবার বিড়ম্বনায় পড়ে গেলো কি উত্তর দেবে সে..তার তো বাচ্চা অনেক পছন্দের সেই ছোট থেকে পাশের বাড়ির মারিয়া কে সময় পেলেই কোলে নিয়ে ঘুরতো আর অরু তো একেবারে তার কোনো কাজ নেই অরু ছাড়া.. তাইতো অরুকে নিজের মেয়ে মনে করেছে..!
সারার কথা বলতে না দেখে শুভ্র হাসলো.. শুভ্র হাসলে গালে টোল পড়ে গোলাপি ঠোঁট জোড়া নিচের ঠোঁটের কোনায় কালো কুচকুচে একটা তিল।। যেকোনো মেয়ে এক দেখায় শুভ্রর প্রেমে পড়তে বাধ্য…শুভ্র বুজে গেলো সারা এমন প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত না তাই আস্তে করে সারার ঘাড়ে হাত রাখে.. সারা তাকায় শুভ্রর দিকে..শুভ্র সারার থুত্নি তে হাত রেখে বলে..

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

-আমি এটাই শুনতে চেয়েছিলাম অরু তোমার মেয়ে.. আর আমি ওর বাবা..!এতে কোনো সংকোচ রাখবা না..!
শুভ্রর কথায় সারা কিছুটা সস্তি পেলো সেতো ভয় পেয়ে গেছিলো শুভ্র আবার এই নিয়ে তাকে বকে টকে কিনা..কিন্তু তাকে ভুল প্রমান করে দিয়ে তার ভুল ধারনা ভেঙে দিলো..!
শুভ্র সারার দিকে এক পলক তাকিয়ে অরুর মুখের দিকে তাকালো তারপর বলা শুরু করলো……..
আমি যখন ভার্সিটিতে লাস্ট সেমিস্টার এ পড়ি তখন আমার পরিচয় হয় অহনার সাথে… হুট করে ফ্রেন্ড শিপ তারপর প্রেম.. এই যে এই বাড়িটা দেখছো দীর্ঘ তিন বছর আগে আমার সপরিবার সিলেট এ শিফ্ট হয়..আমার অরিজিনাল জন্ম স্থান সিলেট এ…আচ্ছা বাদ দেও ওগুলা পরে বলবো আসল কথায় আসি..শুভ্রর কথা ঘুরানো দেখে সারার ভ্রু কুচকে গেলো তাও মন দিয়ে শুনতে থাকলো শুভ্রর বলা কথা গুলো..শুভ্র আবার বলতে শুরু করলো…….
আমার আর অহনার বেপারে সবাই জানতো..আমাদের বিয়ে পারিবারিক ভাবে না হলেও সবার মত ছিলো দুই বছর আগে আমি আমার ব্যাবসা নিজের হাতে নিয়ে ঢাকার যে শাখা আছে ওটা সামলাতে শুরু করি..আমার আর অহনার সংসার খুব ভালোই যাচ্ছিলো তার ভিতরে অরু আসে গর্ভে.. কিন্তু কি জানো অরু বেপারে আমার আম্মু আব্বু ছাড়া আমার পরিবারে কেও জানেনা..সারা হটাৎ জিজ্ঞাসা করে উঠলো তারপর কি হলো অহনা আপুর..শুভ্র আবার বলা শুরু করলো…..

অরু যখন চার মাস গর্ভে অহনার তখন আমরা সিলেট চলে যায়..আমাদের ছোট্ট সংসার এ কোনো কিছুর অভাব ছিলো না জানো সারা আমাদের সংসারে ভালোবাসা ছিলো.. সময় নদীর স্রোতের মতো বহমান খুব তাড়াতাড়ি বয়ে যায়..তার মাঝে অরু দুনিয়াতে এলো..সেদিন আমাদের খুশু কে দেখে..অরু তার দাদা দাদি কে এখোনো দেখে নাই..সারা উৎসাহ নিয়ে জিজ্ঞাসা করলো তাহলে অহনা আপু কোথায়..শুভ্র মুচকি হেসে উঠে দাড়ালো তার পর সারার দিকে তাকিয়ে বললো ও নেই.. ওর এক্সিডেন্ট হয়েছিলো..!আর কিছু বলতে চাই না বাদ দেও বলেই শুভ্র বারান্দায় চলে যায়৷ এদিকে সারার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে..সারা খুব কোমল হৃদয় এর মেয়ে.. তার খুব কস্ট হচ্ছে অরুর জন্য.. এই বাচ্চা মেয়েটা জানে না তার মা আর নেই..সারা চোখের পানি হাতের তালু দিয়ে মুছে বললো না আমি আছি তো অরুর মা আমি.. আমার মেয়ে ও..দূর থেকে শুভ্র সারার কথা শুনে শব্দহীন তৃপ্তির হাসি হাসলো..!

শুভ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বল্লো.. আমাকে মাফ করে দিও সারা..আমি চেয়েছিলাম অরুকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসো তাই এই কথা গুলো বলছি..আমি চাইনা অরুর আসল সত্যি তুমি জেনে ওকে মায়ের স্নেহ থেকে অবহেলা করো.. হয়তো করবে ভালোবাসবে..জানিনা কি হবে..!
প্রায় ঘন্টা খানেক পর শুভ্র ঘরে আসলো এসে লাইট নিভিয়ে খাটের দিকে তাকালো..অরুকে বুকের মাঝে নিয়ে সারা গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে শুভ্র বেশ কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো সারার মুখের দিকে.. নিতান্তি বাচ্চা মেয়েটা..যদিও ম্যাচিউরিটি আছে..সব কিছু বুজে সব সামলিয়ে নিতে জানে..তবুও বয়সের ফাড়াক তো অনেক..শুভ্র একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেললো তারপর সোফাই গিয়ে সুয়ে পড়লো…কারন সে জানে জানে সারার পাশে গেলে সে নিজের মধ্যে থাকেনা নেশাক্ত হয়ে যায় সারার নেশায়…!

ফজরের আজান হচ্ছে চারিদিকে..চারিদিকে কালো অন্ধকার কমে আসছে..সুর্য মামা হয়তো উদয় হবে একটু পরেই..অরুর কান্নায় ঘুম ভেঙে যায় শুভ্রর..চোখ ডলতে ডলতে সোফা থেকে উঠে আসে খাটের কাছে..তারপর অরুকে কোলে নিয়ে পাইচারি শুরু করে।।শুভ্র সারার দিকে তাকিয়ে দেখে সে এখোনো গভীর ঘুমেবালিশে মাথা রেখে গুটিশুটি মেরে সুয়ে আছে পা গুটিয়ে বিড়ালছানার মতো।।শুভ্র একটু চোখ ছোট করতেই দেখতে পেলো।। ঠোঁট উলটে বাচ্চাদের মতো ঘুমাচ্ছে..শুভ্র হেসে ফেললো সারা কিউট মায়াবী মুখের দিকে তাকিয়ে..শুভ্র অরুকে কোলের মধ্যে ভালোভাবে নিয়ে সারার পাশে বসে টুপ করে সারার ঠোঁটে একটা চুমু খেলো..সারা কিছু বুঝলো না.. শুভ্র এবার অরুকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো…!

শুভ্র নিচে এসে কিচেনে চলে গেলো তারপর অরুর জন্য দুধ গরম করলো সেটা ফিডার এ ভরে অরুকে খাওয়াতে থাকলো..শুভ্রর এখন আর আগের মতো ঘুম হয় না.. সব সময় মনে হয় এই বুজি তার মেয়ে কান্না করলো খিদের জন্য.. সারাকে নিয়ে এসেছে অরুর জন্য যদিও সে জানে অরু সারার কাছে খুব নিরাপদ তবুও শুভ্র মনে মনে সিদ্ধান্ত নেই হোক না চার বছরের মা চার বছরের বউ আমি ওকে আমার বাড়ি নিয়ে যাবো ও একটা পরিবার পাবে আর আমার মেয়েটাও নিজের পরিবার পাবে.. শুভ্র সিদ্ধান্ত নেই আজ কেই সে তার পরিবার এর সাথে কথা বলবে হয় তারা একানে আসবে নয়তো সারা আর অরু কে নিয়ে তারা সিলেট যাবে..অরু শুভ্রর কোলে খেতে খেতেই ঘুমিয়ে পড়ে..অরুর ঘুম খুব গভীর. শুভ্র জানে এখন তার মেয়ে ঘুমালে দশটার আগে উঠবে না তাই নিশ্চিন্তায় রুমে এসে অরু কে দোলনায় শুইয়ে দিলো..!

শুভ্র তারপর ফ্রেশ হয়ে এসে সারাকে ঘুম থেকে জাগালো নামাজের জন্য।। সারা উঠতে না চাইলে শুভ্র টেনে বুকের মধ্যে নিয়ে অসংখ্য চুমু দিলো সারা মুখবয়ে..সারা চোখ মুখ কুচকে উঠে মাথায় উড়না দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় ওযু করতে…তারপর দুজন এক সাথে নামাজ পড়ে নেই..কিন্তু দুজনের মোনাজাতে মনের চাওয়া ছিলো আলাদা..!

আজ সারার অনেক আনন্দ লাগছে সকাল সকাল..হয়তো সে এতো খুশি কখোনো হয়নি..তার মামা এসেছে.. হাতে দুটো ব্যাগ..সারা ভেবেছিলো.যদিও আপন না তাও মায়া করে হয়তো তাদের নিতে এসেছে..!
সারা অনেক খুশি খুশি শুভ্রকে রুমে এসে বললো.. তালুকদার সাহেব জানেন আজ মামা এসেছে নিচে বসে আছে আমি দরজা খুলতেই দেখি মামা দাঁড়িয়ে আছে..দেখেন আমাদের নিতে এসেছে..বিয়ের পর তো মেয়েদের আবার বাপের বাড়ি যেতে হয় তাই নিতে এসেছে।।শুভ্র অফিসের ফাইল চেক করছিলো খাটের উপর বসে বয়াএ তখন সারার বলা কথা শুনে সারার সাথে নিচে আসে…!

সারা আসতে চাইনি সে বলছে আরে আমি অরুর জামা কাপড় গুলো ব্যাগ এ ভরে নেই..আমরা যাবো তো তাহলে বেশি সময় লাগবে না গুছাতে আপনি জান আমি আসছি..শুভ্র কিছু না বলে মুচকি হেসে বললো পাগলি..সারা কিছুটা লজ্জা পেয়ে উড়নার কোন দিয়ে মুখ ডেকে রুমে চলে গেলো এদিকে শুভ্র নিচে নেমে এসে সোফায় বসলো..তারপর নাজমুল হুদার সাথে কথা বলা শুরু করলো।

এদিকে রুমে সারা বেছে কয়েকটা অরুর জামা.. ছোট কম্বল..অরুর যাবতীয় জিনিস সব একটা লাগেচ এ ভরে নিলো..আর তার তো মাত্র কয়েকটা জামা এখানে..সেগুলা কি করবে মামা বাড়ি আছে ওগুলাই পরবে ভেবে আর নিলো না..দোলনায় ঘুমন্ত অরুর মুখে একটা চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে শিড়ির পাশে আসতেই তার পা জোড়া থমকে গেলো..তার মামা চলে যাচ্ছে তাদের না নিয়ে..!সারা দৌড়ে গেলো গিয়ে মামাকে জড়িয়ে ধরলো পিছন থেকে শুভ্র চমকালো সোফা থেকে উঠে দাড়ালো সাথে সাথে মুখ দেখে বোজা যাচ্ছে খুব রেগে আছে..!
সারা নাজমুল হুদাকে বললো একি মামা চলে যাচ্ছো আমাদের নিয়ে যাবে না আমি তো গুছিয়ে নিয়েছি..এই ব্যাগ নিয়ে আসলেই হবে..সাথে সাথে নাজমুল হুদা সারাকে ছাড়িয়ে বললেন..

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ৭+৮

আমি তোকে নিতে আসিনি তুই আমার ঘাড়ে বোজা ছিলি..সেটা শুভ্র নিয়েছে এখন..আর তোর জিনিসপত্র গুলাও যেনো বোঝা তাই দিতে আসলাম..আর আমি তোর কোনো মামা টামা না..তোকে পেয়েছিলাম মেলায়..আগুন লেগেছিলো..পরিবার তো খেয়েছিলি তার পর আমাদের ও খাচ্ছিলি..!বলেই সারাকে ধাক্কা দিয়ে গট গট করে বেরিয়ে গেলো নাজমুল হুদা..সারা এক দৃষ্টে তাকিয়ে রইলো নাজমুল হুদার দিকে।।
সারা স্তম্ভ হয়ে গেছে..শুভ্র সারার পাশে এসে দাড়াই সারার ঘাড়ে হাত দেই.. সারা নিশ্চুপ..চোখ দিয়ে পানি পড়ছে অনবরত..পাথর হয়ে গেছে সে..শুভ্র বুজলো আঘাত টা বেশি হয়ে গেছে..যা সহ্য করতে পারে নাই সারা তাই এমন ইমোশন লেস হয়ে গেছে..শুভ্র ডেকে উঠলো………

৪ বছরের চুক্তির মা পর্ব ১১+১২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here