পূর্ণতা পর্ব ২৪
নন্দিনী নীলা
পূর্ণতা কৃতজ্ঞতার চক্ষে তাকিয়ে আছে স্মরণের দিকে। দুজনে এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে আছে কমলাপুর স্টেশনে। মায়া দের অনেক কষ্টে মানিয়ে পূর্ণতা কে নিয়ে স্মরণ ব্যাক করেছে। পূর্ণতার মুখের দিকে তাকিয়ে স্মরণ বলল,“ হ্যাপি?”
পূর্ণতা বলল,“ ধন্যবাদ আপনাকে।”
রাজশাহী গিয়ে সবার প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়নি। এখন তারা ওর কেউ না কিন্তু ও আশালতা কে মায়ের স্থান দিয়েছি তাকে ও কষ্ট দিতে চায় না।
যেখানে তার হাত ধরে যাইনি সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। পূর্ণতা আর কোথাও যেতে চায় না এখন সোজা বাসায় ফিরতে চায়।
স্মরণ পূর্ণতাকে বলল,“ আমিও হ্যাপি তোমার উপকারে আসতে পেরে।”
পূর্ণতা এক চিলতে হাসি বিনিময় করল।
“ এভাবে হাঁসি দিও না একেবারে বুকে গিয়ে লাগে। ব্যথা করে তো।”
পূর্ণতা নিজের হাসিমাখা মুখটা গম্ভীর করে ফেলল। স্মরণ বলল,“ আমার শর্তের কথা মনে আছে তো?”
পূর্ণতা ভুলে গিয়েছিল এই ভয়ংকর লোকটা আবার শর্ত রেখেছে। পূর্ণতা শঙ্কিত মুখে তাকাল স্মরণের দিকে। স্মরণ ভ্রু নাচিয়ে চেয়ে আছে ওর দিকে।
পূর্ণতা ভয়ে ভীত হয়ে উঠল ভেতরে ভেতরে। লোকটা কি শর্ত রাখে আল্লাহ মালুম! অসহায় মুখে তাকিয়ে আছে পূর্ণতা স্মরণ এর দিকে।
আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন
স্মরণ পূর্ণতাকে বলল,“ কি হলো ভুলে গেছো নাকি?”
পূর্ণতা দৃষ্টি সরিয়ে বলল,“ বলুন কি শর্ত?”
“ তোমার ভয় করছে না?”
“ ভয় করবে কেন?” যথেষ্ট স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করে বলল পূর্ণতা। মনে মনে ঠিকি ভয়ে ভীত হচ্ছে। লোকটা যে পরিমাণ শয়তান কি শর্ত এসে দাঁড় করাবে কে জানে।
“ পূর্ণতা তুমি আসলেই অনেক সাহসী। আমার মতো একজন প্রেমিক পুরুষ কে তুমি ভয় পাচ্ছ না? আমার শর্ত যদি হয় এখন কাজী অফিসে গিয়ে তোমার আমার নামে কবুল বলতে হবে। তখন কি করবে তুমি?”
পূর্ণতা কটমট দৃষ্টিতে তাকাল স্মরণের দিকে তারপর বলল,“ আপনি এমনটা করবেন না।”
“ বাহ দারুন তো তুমি ও আমাকে জানো নাকি? আমি তো জানতাম তুমি আমাকে সহ্য করতে পারে না।”
“ গায়ে পরা লোকদের আমি পছন্দ করিনা।”
“ কিন্তু আমি তো প্রেমে পড়ার মতো পুরুষ। তুমি ভালো করে খেয়াল করছ না কেন বলোতো? রাজি হয়ে যাও না কতকাল আর এই নিরিহ মানুষটাকে একা রাখবে? বউ ছাড়া আর কতকাল থাকব বলো তো? জীবন যৌবন সব তো সিঙ্গেল পার করলাম শেষ কয়েকটা বছর ও কি বউয়ের সঙ্গ ছাড়াই থাকব? প্রেমের বয়সে তো আড়ালে ছিলে বিয়ে বয়সে সামনে এসেছ এবার অন্তত না ঘুরিয়ে রাজি হয়ে যাও। নাতি নাতনির মুখ না দেখেই না হলে পরপারে চলে যেতে হবে।”
পূর্ণতা স্মরণের কথা শুনে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল বাচ্চাদের মতো।
স্মরণ পূর্ণতাকে খিলখিলিয়ে হাসতে দেখে মুগ্ধ হয়ে ওর হাসির দিকে তাকিয়ে রইল।
“ ভালোই মেয়ে পটানোর কৌশল জানেন। বাট ভুল জায়গায় চেষ্টা করছেন তাই শূন্য হাতেই ফিরতে হবে।”
“ ভালো আর জানলাম কোথায় তোমাকে তো পটাতে পারছি না।”
“ এবার বলুন তো শর্ত টা কি আমার বাসায় ফিরতে হবে।”
“ চলো কাজী অফিসে যাই।”
পূর্ণতা গালে হাত দিয়ে বলল,“ তারপর ?”
“ তারপর আর কি বিয়ে করে ফেলব।”
পূর্ণতা স্টেশনে দাঁড়িয়ে দূরে থাকা কয়েকটা মেয়েকে দেখিয়ে বলল,” প্রেমের ডায়লগ ওই যে সুন্দরী মেয়ে দেখতে পারছেন। তাদের গিয়ে বলেন এক চান্সে রাজি হয়ে যাবে দেখবেন।”
“ আমিও তো এক সুন্দরী মেয়েকে বলছি সে কেন রাজি হচ্ছে না?”
পূর্ণতা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,“ যার হৃদয়ে অন্য কারো বসবাস সে কীভাবে আপনার মিষ্টি কথায় ভুলবে?”
স্মরণ পূর্ণতার কথায় কপাল কুঁচকে বলল,“ হোয়াট?”
“ নাথিং.”
“ মায়া ভাবির থেকে জেনেছি তোমার জীবনে কেউ নেই তুমি সিঙ্গেল। ট্রেনের কথায় মনে হয়েছে তোমার হৃদয় ভাঙার কাহিনী আছে। কিন্তু তুমি তো সিঙ্গেল এটাই সত্যি।”
“ ইউ আর রং মিস্টার। আমার শয়নে স্বপ্নে একজন আছে। যাকে আমি প্রচন্ড ভালোবাসি।”
স্মরণ বিস্মিত হয়ে বলল,“ ভালোবাসি বললে তার মানে এখনো ভালোবাসো? তোমাদের ব্রেকাপ হয়নি?”
পূর্ণতা আনমনেই বলতে লাগল,“ নাহ,জানেন,একসময় আপনার মতো তার পিছুপিছু আমি ঘুরতাম তাকে বিয়ে করার জন্য নানান কারণ দাঁড় করিয়ে দিতাম। কতশত কান্ড করেছি জানেন।”
“কোথায় সে? এতো ভালোবাসো এখনো তাহলে তাকে বিয়ে করোনি কেন?”
পূর্ণতার চোখ টলমল করে উঠল। চোখ ভর্তি অশ্রু নিয়ে তাকাল স্মরণের দিকে। স্মরণ একদৃষ্টিতে পূর্ণতা দিকে তাকিয়ে আছে। স্মরণের বুকের ভেতরটা জ্বলছে। ভালোবাসার মানুষের মুখে আরেকজনকে ভালোবাসি বলার মতো বাজে মুহূর্ত আর দুটো হয়না। পূর্ণতা কে রাজশাহী দেখার পর থেকে একটা রাত ঠিকমতো ঘুমাতে পারেনি। পূর্ণতাকে স্মরণ প্রচুর ভালোবেসে ফেলেছে।
ও ঠিক করে নিয়েছে পূর্ণতা কে না পেলে এই জীবনে আর বিয়ে করবে না। ওর নিজের একবার ভাবেনি পূর্ণতার জীবনে কেউ থাকতে পারে।
কেউ এক মুহুর্তে কারো হৃদয়ে এভাবে আড়াআড়ি ভাবে বসে যেতে পারে। নিজেকে দিয়েই প্রমাণ পেয়েছে স্মরণ। আগে কোন ফ্রেন্ড যখন এমন ভালোবাসার গল্প শুনাত এসব পাগলামি উপাধিতে ভূষিত করত স্মরণ। আজ সেই স্মরণ ও কোন মেয়েকে একবার দেখেই ভালোবেসে ফেলেছে। তাকে পাওয়ার জন্য, নিজ শহর, জব, পরিবার, পরিজন সবাইকে ফেলে দূরে পরে আছে।
আর আজ তার মুখে আরেকজনকে ভালোবাসি শুনতে হচ্ছে। স্মরণের সমস্ত দুষ্টুমি কোথায় যেন হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। ও অনুভূতি শূন্য চোখে তাকিয়ে আছে পূর্ণতার দিকে।
পূর্ণতা হঠাৎ করেই কেমন জানি করতে লাগল। নিঃশ্বাস আটকে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। ঠুকরে কাঁদছে চোখ দিয়ে জলের ধারা নামছে এদিক নিঃশ্বাস আটকে কেমন জানি করছে। স্মরণ চট করেই এমন পরিস্থিতিতে দেখে থমকে যায়। কি করবে দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। পূর্ণতা কেমন জানি করছে। স্মরণ পূর্ণতাকে স্পর্শ করতেও ভয় পাচ্ছে এদিকে পূর্ণতা দাঁড়িয়ে থাকতেও পারছে না। উপায় না পেয়ে একহাতে পূর্ণতার হাত ধরে বলল,“ হঠাৎ কি হলো তোমার?”
পূর্ণতা অস্পষ্ট সুরে পানি চাইল।
স্মরণ ওকে ধরে একটা দোকানের সামনে এনে দাড় করিয়ে পানির বোতল কিনে ওর হাতে দিল। পূর্ণতা পানি খেয়ে ঠুকরে কাঁদতে লাগল। স্মরণ পূর্ণতাকে বেসামাল হতে কাঁদতে দেখে স্তম্ভিত হয়ে গেল। হঠাৎ কি হলো পূর্ণতার এমন উন্মাদের মতো কাঁদছে কেন? এতো কিসের কষ্ট তার? স্মরণ কিছুই বুঝতে পারছে না কিন্তু পূর্ণতা প্রত্যেকটা চোখের পানি ওর বুকে গিয়ে বিঁধছে সহ্য করতে পারছে না। কার জন্য এই চোখের জল ফেলছে পূর্ণতা কে সেই সৌভাগ্যবান যাকে মনে করে পূর্ণতা এতো উন্মোক্ত হয়ে উঠল। কাউকে কেউ এতো ভালোবাসতে পারে বুঝি? খুব হিংসা হলো স্মরণের এই কান্না এই ভালোবাসা যদি ওর জন্য থাকত ও নিজেকে ভাগ্যবান মনে করত। কিন্তু আফসোস সেটা হবে না।
আশালতা বেগম দরজা খুলতেই নিজের ছেলের শুকনো মুখটা ভেসে উঠল। দিদান মুখ নিচু করে দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল। দরজা খুলতেই কোনদিকে দৃষ্টিপাত না করে সোজা মায়ের পায়ের কাছে বসে পড়ল। দুই হাতে মায়ের পা জড়িয়ে করে কাঁদতে লাগল।
আর বলতে লাগল,“ আমাকে ক্ষমা করে দাও মা। আর আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে রেখো না।”
আশালতা বেগম স্তম্ভিত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
পূর্ণতা পর্ব ২৩
“ অনেক ভুল করেছি তোমার কথার অবাধ্য হয়ে
আজ আমি তার মাসুল গুনছি প্রতি মুহূর্তে। আর সহ্য করতে পারছি না মা। তোমার ছায়া তলে আমার আশ্রয় দাও। আর কখনো তোমার অবাধ্য হবো না আমাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিও না মা। আমার যাবার মতো কোন জায়গা নেই।”