আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৯
জান্নাত সুলতানা
-“একদম না তিন্নি।
বাহিরে অনেক গার্ডস্ রয়েছে। ছাঁদে এই অবস্থা কিছুতেই না।”
বৃষ্টি নেমেছে পর থেকে তিন্নি ছাঁদে ভিজতে যাওয়ার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। থ্রি-পিস চেঞ্জ করে শাড়ী পড়েছে। কবির তখন ব্যালকনিতে ছিল।রুমে এসে তিন্নির অবস্থা থেকে এক সেকেন্ড সময় লাগে না ব্যাপার টা বুঝতে।
এদিকে তিন্নি কবির কে দেখে হাসি হাসি মুখে কিছু বলতে যাবে তার আগেই কবির বারণ কে করে সতর্ক সংকেত দিয়ে দিলো।তিন্নির হাসি হাসি মুখ টা ফাটা বেলুনের ন্যায় চুপসে গেলো। তবে দমে গেলো না তিন্নি। এগিয়ে গিয়ে আহ্লাদী স্বরে বলল,
-“আপনি আসুন না প্লিজ।
তাছাড়া বৃষ্টির সময় সবাই গেইট এর নিরাপদ স্থানে চলে গিয়েছে।”
কবির কোনোরূপ জবাব দিলো না। ফোন বিছানায় রেখে তিন্নি কে টেনে নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।
ঝর্ণা ছেড়ে তিন্নি কে নিয়ে সেটার নিচে দাঁড়িয়ে পড়ল।কিছু সময় ব্যবধানে উপর থেকে পানি পড়ে দু’জন কে ভিজিয়ে জুবুথুবু করে দিলো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কবির তিন্নি কে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। তিন্নি কাঁপছে ভয়ে না-কি লজ্জায় বুঝতে পারে না।কবির তিন্নির মুখের উপর পড়ে থাকা এলোমেলো চুল গুলো এক হাতে ঠিক করে দিলো।দুই হাত তিন্নির কোমড়ে রেখে কিছু টা নিজের উপর তুলে নিলো।তিন্নি দুই হাতে কবিরের গলা জড়িয়ে ধরলো।
কবির তিন্নির গলায় মুখ গুঁজে দিয়ে বলে উঠলো,
-“আমার সম্পত্তি তুমি। তোমার উপর সম্পূর্ণ অধিকার শুধু আমার।অন্য কেউ চুল পরিমাণও যদি তোমাকে দেখে আমার একদম সহ্য হবে না।”
রিধি সেদিন রাতের পর থেকে চিন্তায় ঘুম উড়ে গিয়েছে চোখের।মনে হয় এই বুঝি কিছু হয়ে গেলো।নানা জান এসে ঠাশ করে একটা চড় রিধির গালে বসিয়ে দিয়ে বাজখাঁই গলায় বলবে, এইজন্য স্বাধীনতা দিয়েছে?আমাদের আগে কেনো বলো নি এসব? তখন রিধি কি জবাব দিবে?আর সত্যি বললে কি বিশ্বাস করবে সবাই?
-“নানু ভাই?
আসব?”
রিধি তড়িৎ গতিতে দরজার দিকে তাকিয়ে জাফর মির্জা কে দরজায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হলো।বিছানা ছেড়ে ওঠে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
-“তুমি কেনো কষ্ট করতে গেলে নানা ভাই?
আমাকে ডাকলে হতো।”
জাফর মির্জা চেয়ারে বসলো।
রিধি দাঁড়িয়ে রইলো।তবে ভেতরে ভেতরে ভয় পাচ্ছে। চিন্তিত হলো।হঠাৎ নানা ভাই আসার কারণ কি?
রিধি কে চিন্তিত দেখে জাফর মির্জা কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে গম্ভীর কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“তুমি কি কিছু নিয়ে দুশ্চিন্তা করছো?”
-“হ্? না, না কি নিয়ে দুশ্চিন্তা করব!”
-“বেশ।
দেখো নানু ভাই আমরা সবাই তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি। তোমার সব কিছুতেই আমরা সব সময় সায় দিয়েছি।তোমার মতামত কে বরাবরই আমরা প্রাধান্য দিয়েছি।আমার মনে হচ্ছে জীবনের সবচেয়ে বড় ডিসিশন টাও তুমি নিবে।তোমার মতামত কে আমরা বেশি গুরুত্ব দেবো।”
-“হঠাৎ এসব কেনো বলছো?
হ্যাঁ তোমরা আমার মতামত আমার ইচ্ছে কে গুরুত্ব দাও তার মানে এই নয় যে আমি ভুল কিছু আবদার করলে তোমরা বিরুদ্ধতা করবে না।”
-“তাহলে আমরা কি তোমার বিয়েসাদীর ব্যাপারে আগাতে পারি?আর তোমার কোনো পছন্দ থাকলে বলতে পারো।”
কক্ষে প্রবেশ করতে করতে কথা গুলো বলল আম্বিয়া মির্জা।রিধি চুপ করে গেলো।কি বলবে ভেবে পেলো না।
তবে মন চাইল একবার বলতে মনের মধ্যে থাকা প্রিয় পুরুষের কথা। কিন্তু এটার তো কোনো শুরু নেই।সে করে নি শুরু তাহলে এসব বলার কোনো ভিত্তি নেই।না কোনো যুক্তিতে আসে।দু’জোড়া চোখের প্রশ্নবোধক চাহনিতে তাকিয়ে রিধির দিকে। রিধি কোনো ভণিতা ছাড়াই স্পষ্ট জবাব দিলো,
-“না নানিজান।
তোমাদের যা ভালো মনে হয় তাই করো।”
মাইশা একটা আচার হাতে নিয়ে বসে আছে। তিন মাসে চলে সবে মাত্র।এক্ষুনি মেয়েটার অবস্থা নাজেহাল। খাবার একদমই মুখে নিতে পারে না।
শরীর শুঁকিয়ে গিয়েছে চোখের নিচে কালশিটে দাগ বসেছে।
এসব দেখলে আয়ানের মায়া হয়।বুক চিরে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে।রাতের খাবার টাও খেতে পারে নি।খাবার এক লোকমা মুখে নেওয়া মাত্র দৌড়ে বেসিনে গিয়ে ঘরঘর শব্দ করে পেটের ভেতর যা ছিল সব উগড়ে দিয়েছে। আয়ান খাবার ফেলে নিজেও পেছনে পেছনে ছুটে রান্না ঘরে। পানি দিয়ে ফ্রেশ করে নিজে ধরে রুমে নিয়ে এসছে।মাইশা অবশ্য অনেক জোর করেছে খাবার টা খেয়ে আসার জন্য। কিন্তু আয়ান যায় নি।বউ খেতে পারে না। ঘুমুতে পারে না আর সে একবেলা না খেয়ে থাকতে পারবে না কেনো?
আয়ানের ভাবনার মাঝেই মাইশা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো,
-“এতো দূরে কেনো বসে আছেন?
কাছে আসুন।”
আয়না নড়েচড়ে বসলো। সামন্য এগিয়ে গিয়ে মাইশার গা ঘেঁষে বসে বলল,
-“কাছেই তো বসে আছি।
তোমার দূরে কেনো মনে হচ্ছে!”
মাইশা কোনো প্রতিত্তোর করে না। আচার পাশে রেখে আয়ানের গালে হাত রাখে।আয়ান চট করে সরে বসে।বউয়ের চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছে সে।যেটা এই মূহুর্তে করা একদম ঠিক নয়।
আঙ্গুল উঁচিয়ে বলল,
-“মাইশা একদম না।
তুমি সহ্য করতে পারবে না। ডক্টর কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চার মাস পর্যন্ত এ,,,
মাইশা শুনে না।
আয়ানের ঠোঁটে নিজের তর্জনী আঙ্গুল রেখে চুপ করিয়ে দিলো আয়ান কে।
আয়ান ঘামছে।প্রেয়সীর এই আহ্বান তাকে ভেতর থেকে উত্তেজিত করে দিলো।অনেক দিন প্রেয়সী কে ভালোবাসে না।লোভ হলো।হেঁচকা টানে বউ কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে নিজের শরীর বিছানায় রেখে মাইশার গলায় মুখ গুঁজে দিলো।
মাইশা শক্ত করে আয়ান কে জড়িয়ে ধরলো।
প্রিয়তা ইনিয়া কে নিয়ে বসে আছে।
আয়নার শরীরে জ্বর এসছে।রাহাত বাড়ি নেই।ডক্টর চেক-আপ করে ঔষধ দিয়ে গিয়েছে।এখন ঘুমিয়ে আছে আয়না।রাতের খাবার সুফিয়া বেগম খাইয়ে দিয়েছে। ওষুধ দেওয়া হয়েছে। জ্বর এখন বেশি নেই।ইনিয়া ঘুমে ঢুলঢুল করছে।প্রিয়তা বিছানা ছেড়ে ইনিয়া কে নিয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।
কাজের লোক কে ডেকে ইনিয়ার খাবার চাইলো।খাবার এলে ইনিয়া কে খাইয়ে দিলো।ইনিয়া খাবার খেয়ে প্রিয়তার কোলে ঘুমিয়ে গেলো।প্রিয়তা আয়নার পাশে মেয়ে কে শুইয়ে দিয়ে রুমে এলো। রাত সাড়ে নয় টা বাজতে চলে।সাদনান কোন রাত বাড়ি আসে ঠিক নেই। প্রিয়তা কাবাড থেকে সাদনানের ড্রেস নামিয়ে রাখে।
ঠিক তক্ষুনি বিছানায় থাকা ফোন টা সশব্দে বেজে উঠল।
প্রিয়তা এগিয়ে গিয়ে ফোন হাতে নিলো।সাদনান কল করেছে।
প্রিয়তা একটু না অনেকটাই অবাক হলো। বিস্ময় কাটিয়ে ফোন রিসিভ করতেই সাদনানের গুরুগম্ভীর কণ্ঠ স্বর ভেসে এলো,
-“নিচে এসো।
আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি।”
-“এতো রাতে?
কোথায় যাব?”
-“আগে এসো।
আর হ্যাঁ যেভাবে আছো সেভাবেই।”
সাদনান কথা শেষ করে কল কেটে দিলো। প্রিয়তা আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না।
ফোন হাতে বেরিয়ে পড়ে।
সাদনান গাড়িতে বসে ছিল।
প্রিয়তা যাওয়া মাত্র হাত বাড়িয়ে দরজা খুলে দিয়ে প্রিয়তা কে ওঠে আসার জন্য ইশারা করে।প্রিয়তা চুপচাপ ওঠে বসে।সাদনান গাড়ি স্টার্ট করল।
-“কোথায় যাব আমরা?”
প্রিয়তা কৌতূহল নিয়ে জানতে চাইলো। কিন্তু সাদনান উত্তর করলো না।শুধু বলল,
-“আগে যাই।”
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৮
আধঘন্টা পর সাদনান আর প্রিয়তা উপজেলায় এসে পৌঁছাল।
সাদনান নিজে একটা কালো মাস্ক পড়ে প্রিয়তা কেও একটা পড়িয়ে দিলো।
একটা রেস্টুরেন্টে গেলো দু’জন।সাদনান বউয়ের হাত ধরে একদম কর্নারে একটা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো।
সেখানে একজন সুদর্শন যুবক বসে আছে। সেও মাস্ক পড়ে আছে। কিন্তু তাও ব্যক্তি টাকে চিনতে প্রিয়তার অসুবিধা হয় না। অবাক আর বিস্ময় ভ্রু জোড়া টানটান করে বলে উঠলো,
-“ওয়াজিদ ভাই!”