আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২০
জান্নাত সুলতানা
তিন্নি আর কবির কে আজ যেতে দেয় নি। কবির ভার্সিটি থেকে যাওয়ার সময় তিন্নি কে নিয়ে যাওয়ার জন্য এলে কবির কেও আর যেতে দেয় নি সবাই।সবার এতো বার করে বলায় কবির আর বেশি জোর করে নি।থেকে গেলো।রাতে খাবার খেলো এক সাথে সবাই। সাদনান আর প্রিয়তা বাদে।
তিন্নি কাল রাতের পর থেকে লজ্জায় কবিরের দিকে ভালো করে তাকাচ্ছে না।কি কান্ড টাই না কাল করলো।তিন্নির তো সেই ঘটনা এখনো চোখের সামনে ভাসছে। আর হঠাৎ হঠাৎ সব মনে পড়লে কেঁপে কেঁপে উঠছে।
বিছানায় পা গুটিয়ে বসে তিন্নি। কবির ওয়াশ রুম থেকে ফ্রেশ হয়ে এসে তিন্নি কে এভাবে বসে থাকতে দেখে ভ্রু কুঁচকালো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
টাওয়াল নিয়ে সোফায় রেখে এগিয়ে এলো বউয়ের কাছে।
বসলো।তিন্নি কবিরের অস্তিত্ব টের পেয়ে নড়েচড়ে বসলো। কবির এক হাতে তিন্নি কে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে জিগ্যেস করলো,
-“ঘুমলে না যে?”
-“দেখেছেন আকাশে কত তাঁরা?”
-“হ্যাঁ।”
-“চাঁদ নেই।
অন্ধকার। চলুন না ব্যালকনিতে যাই।”
-“তোমার এখানে এসে কেনো সব বায়না শুরু হলো তিন্নি?
আমাদের বাড়িতে গিয়ে আমরা রাতের আকাশ দেখব।”
তিন্নি আর কিছু বলল না।
পেট টা আজানা কোনো কারণে ব্যথা করছে।তিন্নি কে চুপচাপ দেখে কবির চিন্তিত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“কি হয়েছে?
শরীর খারাপ লাগছে?”
-“না।
এমনি।অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ুন।”
-“হ্যাঁ হ্যাঁ অবশ্যই।”
কবির তিন্নির গলায় মুখ গুঁজে বলল।
তিন্নি শিউরে ওঠে।
খামচে ধরে কবিরের হাত।
কবির তিন্নির চুল সরিয়ে গলায় ঘাড়ে আস্তে আস্তে অধর স্পর্শ দিয়ে মাতাল করতে থাকে বউ কে।
তিন্নি হাত ছেড়ে আচমকাই কবির কে জড়িয়ে ধরে।
কবির মুচকি হেঁসে বউ কে বিছানায় শুইয়ে দিলো।
বাড়িতে হুলুস্থুল আয়োজন চলছে। সেই সকাল থেকে।সবার মুখে খুশিখুশি ভাব।
শুধু রিধি চিন্তিত। কি হচ্ছে কিছু বুঝতে পারছে না।
বারকয়েক সারা কে জিগ্যেস করেছে।কিন্তু সারা টাও আজ এমন ভাব করছে মনে হচ্ছে কিচ্ছু জানে না।কিন্তু রিধি জানে এই বাঁদর মেয়ে সব জানে।নিশ্চয়ই কারোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে সেইজন্য কিছু বলছে না।বারো টা বাজতে না বাজতে সবাই রিধির গোসল করা নিয়ে উঠেপড়ে লাগলো।রিধি যেনো অবাকের অষ্টম পর্যায়ে। কি সব হচ্ছে কিচ্ছু মাথায় ঢুলক না।সবাই কোনো রিধির গোসল নিয়ে পড়লো রিধির বোধগম্য হচ্ছে না।
গোসল শেষ বেরিয়ে আসার পরপরই রিধির মা খাবার হাতে এলো।
মেয়ে কে খাইয়ে দিয়ে শাড়ী পড়িয়ে দিলো।
রিধি কিছু আন্দাজ করতে পারে।
শাড়ী কুঁচি ঠিক করতে ব্যস্ত মায়ের মুখপানে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠ জিগ্যেস করলো,
-“আমাকে কেনো কেউ কিছু বললে না মা?”
-“তোর নানু তো কাল বললই সব!”
-“তুমি কি করে জানলে?
নানিজান কি বলেছে?”
-“আব,আমি ছিলাম সবাই ছিল। তুই দেখিস নি।”
রিধি কথা বাড়ায় না।লিভিং রুমে শোরগোল শুনে রিধির মা হন্তদন্ত পায়ে ছুটে গেলো।তবে যাওয়ার আগে রিধি কে কড়া নির্দেশ দিয়েছে রুম থেকে এক পা না নড়তে।
-“জ্বি মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে।”
পরিচিত কণ্ঠ তড়িৎ একবার ঘাড় তুলে সামনে তাকাল রিধি।অনাকাঙ্খিত মানুষ কে নিজের সামনে উপস্থিতি দেখে একটু না বেশ অনেক টাই অবাক বিস্ময় নিয়ে মাথা ফের নিচু করতেই কানে এলো নানা জাফর মির্জা বলছে,
-“তবে কি বলেন!
ছেলেমেয়ে কথা বলে নিক?”
-“একদম কোনো ভুল নেই।”
ওয়াসিফ দেওয়ান সায় দিয়ে বলল।
সারা কে ডেকে ওয়াজিদ আর রিধি কে ছাঁদে নিয়ে যাওয়ার জন্য বলে জাফর মির্জা।
সারা আগে আগে ওয়াজিদ কে নিয়ে উপর সিঁড়ির দিকে এগিয়ে গেলো।রাহান এসে বোন কে জড়িয়ে ধরে এগিয়ে যেতে যেতে বলল,
-“তোমার কি খারাপ লাগছে?”
রিধি ভাইয়ের পিঞ্চ মেরে কথায় চোখ কটমট করে তাকাল রাহানের দিকে। রিধি ভালো করেই বুঝতে পারছে। রাহান যে রিধির হঠাৎ করে এমন ঘটনার সম্মুখীন হওয়া নিয়ে এই প্রশ্ন টা জিগ্যেস করছে।
-“ইসটুপিড।
কোথায় যাচ্ছিস তুই?এখানে দাঁড়া।”
সারা সত্যি দাঁড়িয়ে গেলো।রাহান এগিয়ে গিয়ে সারা কে টেনে ধরে বোন কে ছাঁদের দরজার দিকে ঠেলে দিলো।
রিধি হুমড়ি খেয়ে গিয়ে শাড়ী পা বেঁধে পড়তে পড়তে নিজে কে সামলে সোজা হওয়ায়র আগেই শক্ত এক জোড়া হাত রিধির কোমড় টেনে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
রিধি আকস্মিক ঘটনায় ভড়কাল।শরীরে কোনো পুরুষালী ছোঁয়া অনুভব করতেই ছিটকে দূরে সরে যেতে চাইল।কিন্তু এটা সম্ভব হলো না।ওয়াজিদ ঠোঁটের কোণায় অদ্ভুত হাসি ঝুলিয়ে বলল,
-“শুধু শুধু নিজের এনার্জি অপচয় করছো।
কোনো লাভ হবে না।”
রিধি ওয়াজিদ এর কথায় ড্যাবড্যাব করে চোখ তুলে কালো শার্ট গায়ে শার্ট এর উপর কালো স্যুট খুঁচা খুঁচা চাপদাড়ির ভর্তি মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো।
-“এই চোখের নিচে কালশিটে দাগ কি আমাকে ছেড়ে আসার বিরহে, নির্ঘুম রাত কি সেটার সাক্ষী!”
হঠাৎ ওয়াজিদ এর এরূপ বক্তব্যে রিধি ভড়কাল।হকচকিয়ে গেলো।
চোখ বড়ো বড়ো হয়ে গেলো।কি বলে এই পুরুষ? হার্ট সার্জনের সাথে সাথে মনোবিজ্ঞানী হয়ে গেলো না-কি?
নয়তো তাকে ছেড়ে আসার অনলে পুড়ছি সে তা কি করে জানল এই পুরুষ?
-“মাই কুইন।
এতো কিসের ভাবা ভাবি?ইউ নো না আমি সব জানি। ইভেন তোমার মাথায় মনে এখন কি ঘুরছে সেটাও জানি।”
রিধির ভাবনার মাঝেই ওয়াজিদ নিজের তর্জনী আঙ্গুল দিয়ে রিধির এলোমেলো চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিতে দিতে বলে।
রিধির সত্যি সত্যি এবার বিস্ময় খেলো।
নিজে কে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে করতে বলল,
-“ছাড়ুন।”
ওয়াজিদ হালকা করে রিধি কে নিজের সাথে চেপে ধরে হঠাৎ।রিধি কেঁপে কেঁপে উঠল।
ওয়াজিদ পরপরই ছেড়ে দিলো।নিজের গায়ের উপর কালো ব্লেজার ঠিক করে নিয়ে রিধির দিকে পিঠ করে ঘুরে দাঁড়ায় চুল হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে বলল,
-“বি রেডি।
খুব শীগ্রই তোমার মনের ঘরে আমার রাজত্ব চলবে।”
কথা শেষ চোখ টিপে ছাঁদ হতে নেমে গেলো ওয়াজিদ। রিধি ড্যাবড্যাব করে ওয়াজিদ এর যাওয়ার পথে তাকিয়ে থাকে।রাজত্ব চলবে কি?অলরেডি চলছে।সেটা কি বোঝে না এই পুরুষ?
রাহান মাত্রই সারা’র হাত টা ধরে ছিল। আর তক্ষুনি সেখানে উপস্থিত হয় ওয়াজিদ।
দু’জনেই চমকে ওঠে। সারা হয়তো ভেবেছিল ওয়াজিদ কিছু জিগ্যেস করবে।হয়তো দু-এক টা ধমকও দিবে।
কিন্তু না সারা কে অবাক করে দিয়ে ওয়াজিদ মুচকি হেঁসে বলল,
-“চালিয়ে যাও।
সম্পর্কে দু’জনের সম্মতি আর ভালোবাসা থাকা টা জরুরি।”
বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়েছে। হাতে মাত্র দু’দিন সময়। গোছগাছ শুরু করে দিয়েছে সবাই। বাড়ি ঘর ঝাড়পোঁছ থেকে শুরু করে শপিং।
আজও বাড়িতে দোকানের লোকজন দিয়ে গহনা থেকে শুরু করে শাড়ী আনিয়েছিলেন আম্বিয়া মির্জা।
সাদনান বাড়িতে নেই।প্রিয়তা কি নিবে বুঝতে পারে না। সবাই মোটামুটি নেওয়া শেষ। প্রিয়তা তখন একটা ছাই রঙের শাড়ী হাতে দাঁড়িয়ে আছে।
আম্বিয়া মির্জা একটা জাম কালার শাড়ী হাতে নিয়ে প্রিয়তা কে কাছে ডাকলো।প্রিয়তা একটু চিন্তিত হলো।হঠাৎ ডাকার কারণ বুঝতে পারে না।চারদিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলো। সবাই প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।আয়না ইশারা করে বোন কে আম্বিয়া মির্জার কাছে যাওয়ার জন্য।
প্রিয়তা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে আম্বিয়া মির্জার সামনে দাঁড়াতেই তিনি নিজের হাতে থাকা শাড়ী টা প্রিয়তার গায়ে মেলে ধরে বলে উঠলো,
-“বেশ মানিয়েছে।
কি বলো বড় বউ!এটা বিয়েতে পড়বে তুমি।”
সালেহা বেগম ক উদ্দেশ্য করে কথা টা বলেই শাড়ী টা প্রিয়তার হাতে দিয়ে কিছু টা হুকুমজারি করলেন যেনো।
প্রিয়তা বিনাবাক্যে মাথা দুলাল।
মানুষ টা ভালো শুধু একটু কড়া আর গম্ভীর।
-“আপনি কেনো এতোগুলা ড্রেস এনেছেন?
দাদিজান আজ নিজে পছন্দ করে আমায় সব দিয়েছে।”
সাদনান রুমে এসে অনেক গুলো শপিং ব্যাগ বিছানায় রাখতেই প্রিয়তা সোফায় থেকে ওঠে এগিয়ে এসে সেগুলোর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে সাদনানের পাঞ্জাবির বোতাম খুলতে খুলতে বেশ উচ্ছ্বসিত হয়ে উপরোক্ত কথা গুলো বলল।
সাদনান অবাক হয়।দাদি এমন করেছে বিশ্বাস করতে একটু সময় লাগে। তবে পরক্ষণেই মাথায় আসে দাদি তার ভীষণ ভালো শুধু আগেকার দিনের মানুষ তাই এখনকার মানুষের কাজকর্ম পছন্দ করে না। খুঁতখুঁতে টাইপের মানুষ। নিয়মকানুন বেশ মেনে চলে।
-“দাদি জান এর দেওয়া গুলো অবশ্যই অনুষ্ঠানে পড়বে।
আর আমার গুলো শুধু আমার সামনে।বেডরুমে।”
থমথমে কণ্ঠে কথা গুলো বলেই সাদনান ওয়াশ রুমে চলে গেলো।এদিকে প্রিয়তা ভাবুক হলো।
সাদনানের কথার আগাগোড়া কিছুই বোধগম্য হয় না।
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ১৯
তটস্থ ভঙ্গিতে এগিয়ে গিয়ে শপিং ব্যাগ হাতরে কাপড় বেড় করতেই চক্ষুচড়ক গাছ।এক ঝটকায় সেটা ছুঁড়ে ফেলে বিছানার একপাশে। পরপর সব গুলো চেক করে। কিন্তু সব গুলো একইরকম দেখে প্রিয়তার কান গরম হয়ে এলো।মুখে লজ্জায় রক্তিম হয়।দুই হাত কচলাতে কচলাতে বিড়বিড় করে বলে উঠে,
-“অসভ্য পুরুষ।
কি অশ্লীল চয়েস!”