আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২২
জান্নাত সুলতানা
সকাল থেকে সাদনান প্রিয়তার দেখা পায় নি।রাগে ভেতর ভেতর ফুঁসছে। একবার নিচে তো একবার উপরে নিজের রুমে আসে।প্রিয়তা রান্না ঘর থেকে সবটাই অবলোকন করে।মানুষ টা বাড়িতে খুব বেশি একটা থাকে না।সকালে বাড়ি থেকে বেড় হলে রাত এগারো টার আগে বাড়ি ফিরে না। কখনো তো আবার রাত একটা দেড় টাও বাজে।একটু সময় তো মানুষ টা কে দেওয়া উচিৎ। কিন্তু আজ সেটা সম্ভব হচ্ছে না। বাড়ি ভর্তি মেহমান গিজগিজ করছে। আর এতো কাজের ভীড়ে রুমে গিয়ে বসে থাকা টাও শোভনীয় দেখায় না।
-“আমার একটা কফি!”
সাদনান লিভিং রুম থেকে হাঁক ছেড়ে কফি চায়।রাহানের মা শাড়ীর আঁচলে হাত মুছতে মুছতে রান্না ঘর ছেড়ে বেরিয়ে এলো।আসার আগে অবশ্যই একজন কাজের লোক কে কফি বানাতে বলে এসছে।
-“তুই রুমে যা।
আমি কাউ কে দিয়ে পাঠাচ্ছি।”
রাহানের মা জানালো।
সাদনান ঘাড় দুলিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আবার কিছু মনে পরে বলে উঠলো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“ওহ্ হ্যাঁ।
একটু পর কিছু লোক আসবে।নিচের ঘরে নাস্তা দেওয়ার ব্যবস্থা করো মনি।”
রাহানের মা বলল,
-“সে কি কথা আজকের দিনেও তুই কাজ ক,,,
-“আমার দায়িত্ব অনেক বেশি মনি।
আমি হাত পা গুটিয়ে কি করে বসে থাকি!তাছাড়া বাড়িতে তো আছি।ঘন্টাখানেক সময় শুধু ওনাদের দেব। বিকেলে না অনুষ্ঠান শুরু হবে।”
রাহানের মা আর কিছু বলে না এব্যাপারে। তাগাদা দিয়ে রান্না ঘরে ছুটলো।
সাদনান গটগট পায়ে স্থান ত্যাগ করে।
সাদনানের মা রান্না ঘরে ছিল না।তিনি রান্না ঘরে আসা মাত্র কাজের লোক কে কফি হাতে দেখে সেকেন্ড এর মতো সময় লাগলো কফি যে নিজের ছেলের জন্য যাচ্ছে। তিনি চট করে কিছু ভাবলো।প্রিয়তা কে ডেকে বলল,
-“কফি টা তুই দিয়ে আয়।
আর তুমি আমার সাথে এসো।”
প্রিয়তার হাতে কফির ছোট ট্রে টা দিয়ে সালেহা বেগম কাজের লোকে নিয়ে আম্বিয়া মির্জার রুমের দিকে চলে গেলো। প্রিয়তা মুখ গম্ভীর করে রাখলেও ভেতরে ভেতরে ভীষণ খুশি হলো।একটু সুযোগ পাওয়া গেলো তবে।প্রিয়তা দাঁড়িয়ে আছে দেখে আয়না ভ্রু কুঁচকে নিলো।
এগিয়ে এসে বলে উঠলো,
-“যাচ্ছিস না কেনো?কফি ঠান্ডা হয়ে যাবে।জলদি যা।”
প্রিয়তা বোনের কথায় সম্মতি দিয়ে উপরে রুমের উদ্দেশ্য হাঁটা ধরে।
সাদনান সোফায় বসে আছে। মুখ সব সময়ের মতো গম্ভীর। প্রিয়তার শ্বাস যেনো বেরিয়ে আসার জোগাড়। মানুষ টা এমন কেনো?
সব সময় কেনো এমন ভাবে থাকতে হবে?এই লোক টা কি বোঝে না ছোট্ট প্রিয়তা এই মন্ত্রী সাদনান শাহরিয়ার এমন রূপ গম্ভীর মুখ দেখলে ভেতরে ভেতরে ভয় পায়।
-“আপনার কফি।”
সাদনান বউয়ের দিকে এক পলক তাকিয়ে কফি টা হাতে নিলো।পায়ের উপর থেকে পা সরিয়ে সোজা হয়ে বসে কফি টা সেন্টার টেবিলের উপর রাখে।প্রিয়তা তখনো চুপ করে দাঁড়িয়ে।
সাদনান বউয়ের দিকে না তাকিয়ে হাত টেনে নিজের কোলে বসাল।
প্রিয়তা কেঁপে উঠল। তবে ভ্রু কুঁচকে সাদনানের গলা জড়িয়ে ধরে এক হাতে সাদনানের কাঁধ থেকে গেঞ্জি সড়িয়ে নিলো।
কাঙ্খিত জিনিসের দেখে না পেয়ে প্রশ্ন করলো,
-“দাগ টা নেই কেনো?”
-“আছে তো।নিচে।”
-“ব্যথা করে?”
সাদনান গম্ভীর হয়ে গেলো।প্রিয়তা হঠাৎ মনে হলো কি ধরণের প্রশ্ন করলো এটা!এই লোকের আবার ব্যথা?সেটা তো গুলি লাগার পরেও মনে হয় পায় নি।যা শক্ত মানুষ।
-“রুমে কেনো আসো নি?”
-“কত কাজ।
বিয়ে বাড়ি।”
-“কাজ করার জন্য কাজের লোক রয়েছে।”
সাদনানের জবাবে প্রিয়তা চুপ করে গেলো।আগে থেকে বাড়িতে তিনজন কাজের লোক ছিলো।সাদনান এখনো আরও দুজন বাড়িয়েছে।কিন্তু তাও আম্বিয়া মির্জা কাজের লোকের কাজ পছন্দ করে না।তাই তো রান্না আর কোনো অনুষ্ঠানের কাজ বেশিরভাগই বাড়ির মেয়ে বউদের করতে হয়।প্রিয়তা আগেও যখন এ বাড়িতে আসতো তখন বোন কে একটু অবসর পেতো না।এই জন্যেই প্রিয়তা বিশেষ করে এই পরিবারের মানুষ গুলো কে বেশি ভালো লাগত না।কিন্তু ভাগ্য? প্রিয়তার ভাবনার মাঝেই সাদনান কফি মগ হাতে আগে বউয়ের দিকে এগিয়ে দিলো।প্রিয়তা একবার চুমুক দিয়ে সেটা ফের সাদনানের হাতে দিয়ে ওঠে যাওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সাদনান প্রিয়তা কে টেনে ধরে। কফি রেখে শক্ত হাতে বউ কে নিজের সাথে চেপে ধরে বলল,
-“ছাড়তে ইচ্ছে করে না।”
-“নিচে যেতে হবে।
আপনার না আবার কি কাজ আছে।”
প্রিয়তার কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রুমের বাহির থেকে একজন কাজের লোক জানালো নিচে সাদনানের সাথে দেখা করতে লোকজন চলে এসছে।
সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে জানালো,
-“আপনি যান।আসছি আমি।”
তবে বউ কে ছাড়ে না।
-“কাবাডে একটা ব্যাগ রাখা আছে।
সন্ধ্যায় ওগুলো পড়ে নিবে।”
বলতে বলতে নিজের অধর বউয়ের অধর আলতো ছুঁয়ে দিয়ে ছেড়ে দিলো।প্রিয়তা মাথা নেড়ে বলল,
-“আচ্ছা।”
সাদনান আর কিছু বলে না।কফি হাতে রুম হতে বেরিয়ে
যায়।পেছনে পেছনে প্রিয়তাও আসে।
-“এই এই তুই এদিকে কোথায় যাচ্ছিস!ঠ্যাং ভেঙে দেব আর এক পা ওদিকে বাড়ালে।”
রাহান হঠাৎ কোথা থেকে এসে কথা গুলো বলে উঠলো। সারা আকস্মিক এভাবে রাহান কে সামনে দেখে একটু ভয় পেলো।দু কদম পিছিয়ে গেলো।ভ্রু কুঁচকে নিয়ে জানাল,
-“তিন্নি আপু আছে ওখানে।”
-“তিন্নি চলে এসছে।
দেখিস না ওখানে কত ছেলে!”
রাহান ফুঁসে ওঠে বলল।সারা ফ্যালফ্যাল করে রাহানের দিকে তাকিয়ে আবার বাড়ির ভেতর চলে এলো।অদ্ভুত মানুষ।এভাবে বলার কি আছে? একটু সুন্দর করে বলল কি এমন হতো?
রাহান প্রেয়সীর এভাবে নিঃশব্দে স্থান ত্যাগ করায় বুঝতে অসুবিধা হয় না প্রেয়সী অভিমান করেছে।কিন্তু অভিমান করলেও কিছু করার নেই।
এতো এতো মানুষ জন কার নজর আবার পরে বসে।পরে দেখা যাবে তার প্রেয়সী কে নিয়ে আবার টানাটানি শুরু হয়ে গেলো
ওয়াসিফ দেওয়ান বেশ আয়োজন করে পুত্র বধূর জন্য হলুদের জিনিস সব পাঠিয়েছে। যদিও জাফর মির্জা নাতনির হলুদ বিয়ের অনুষ্ঠান কোনোটাই কমতি রাখছে না।কিন্তু এসব কোনো ব্যাপার না। এই সব কিছু স্বাভাবিক হলেও অস্বাভাবিক হচ্ছে হলুদের দিন জামাই নিজেও বউ কে হলুদ দিতে এসছে।কিছু মানুষ আঁড়চোখে তাকাচ্ছে। তো কেউ আবার ফিসফিস করছে।কিন্তু মির্জা বাড়ির কারোর এসবে মাথা ব্যথা নেই।যুগ পাল্টেছে। এটা তেমন কোনো আহামরি কোনো ব্যাপার না।ওয়াজিদ আসাতে আরো খুশি হলো সবাই। রিধির মা বাবা ভীষণ খুশি। মেয়ে জামাই যে মেয়ে কে প্রচুর ভালোবাসে এটা নিঃসন্দেহে মানতে হবে।ওয়াজিব এর জন্য রিধির পাশে বসার জায়গায় করা হয়েছে।ওয়াজিদ বসে আছে। রিধি কে সবাই হলুদ দিচ্ছে।
-“আপনি বুদ্ধি কি সব লজ্জার সাথে সাথে গিলে পানি দিয়ে খেয়ে ফেলেছেন?”
রিধির ফিসফিসি কণ্ঠে এরূপ প্রশ্নে ওয়াজিদ থমথমে কণ্ঠে জবাব দিলো,
-“একদম না।”
-“আপনি কেনো আসতে গেলেন?”
রিধি ফের জিগ্যেস করে।ওয়াজিদ আগের ন্যায় থমথমে কণ্ঠে বলল,
-“আমার মনে হচ্ছে না কোনো ভুল করেছি।
কোথাও লেখা আছে হলুদ নিয়ে জামাই আসতে পারবে না।”
-“না সেটা নেই।
কিন্তু মানুষ জন,,,
রিধির সম্পূর্ণ কথা না শুনেই ওয়াজিদ বলল,
-“তুমি ভালো করে জানো রিধু।আমি কে কি বললো এসব ভাবি না।জীবন আমার তো মর্জিও আমার।”
লাল পাড়ের হলুদ শাড়ী।ছোট ছোট এক জোড়া স্বর্নের দুল। গলায় একটা লকেট।ঠোঁটে গোলাপি রঙের লিপস্টিক। লম্বা চুলের মোটা বিনুনি কাঁধের একপাশে রেখে সেটায় একটা বেলি ফুলের মালা পড়িয়ে দিলো সাদনান।
বউয়ের প্রতিবিম্বর ড্রেসিং টেবিলের আয়নার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে।প্রিয়তার সাথে একবার চোখাচোখি হয়েছে।
প্রিয়তা লজ্জায় মাথা নুইয়ে রাখলো।
-“এতো লজ্জা পেতে নেই জান।
তবে যে এখুনি একটা অঘটন ঘটিয়ে ফেলব।”
সাদনানের কথায় প্রিয়তার লজ্জা দিগুণ হলো।লোক টা ইদানীং একটু বেশি বেহায়া কথাবার্তা বলে।শুনলে কান গরম হয়ে আসে।যেমন টা এখন হচ্ছে।
প্রিয়তা সাদনান কে ঠেলে সরাবার চেষ্টা করে বলল,
-“ছাড়ুন।
অনুষ্ঠান কখন শুরু হয়েছে।”
সাদনান প্রিয়তার কথা শুনলো।কিন্তু চুল পরিমাণও হাতের বাঁধন ঢিলে করে না।বরং আগের তুলনায় শক্ত করে চেপে ধরে নিজের সাথে।ঘাড়ে নাক ঘষে অধর স্পর্শ করে কাঁধে। প্রিয়তা কেঁপে ওঠে শক্ত করে নিজের শাড়ী খামচে ধরতেই সাদনান বউ কে নিজের দিকে ফিরিয়ে নিজের অধরে বউয়ের অধর চেপে ধরে। সময় গড়ায়।
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২১
কিন্তু সাদনান বউ কে ছাড়ার নাম নেই।প্রিয়তা প্রথমে রেসপন্স করলে মিনিট পেরোলেই শ্বাস আঁটকে আসে।ছুটোছুটি করে।সাদনান বউয়ের অবস্থা বেগিত বুঝতে পেরে ছেড়ে দিয়ে বউ কে নিজের বুকে আগলে নিয়ে জানাল,
-“এখন এটুকুই থাক, বাকি টা রাতে হচ্ছে।”