আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৪
জান্নাত সুলতানা
প্রিয়তা ড্যাব ড্যাব করে সাদনানের দিকে তাকিয়ে আছে।সাদনান ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছে। রোজকার শুভ্র পাঞ্জাবি ছেড়ে আজ কালো একটা পাঞ্জাবি পড়েছে।হাতে দামী একটা ঘড়ি চিকচিক করছে। চাপদাড়ি ভর্তি গাল টানটান ভ্রু জোড়া ছোট ছোট চোখ সরু নাক।অল্প সিগারেটে পোড়া অধর।মাথায় ঘনকালো চুল।উফ।এতো কেনো কিউট মানুষ টা?প্রিয়তার বুকের ভেতর জ্বালা ধরে।
মনে মনে হিংসে হয়।এখন এই সুদর্শন পুরুষ বিয়ের অনুষ্ঠানে গেলেই তো সব মেয়ে হা করে তাকিয়ে থাকবে।প্রিয়তা কি করে সহ্য করবে সেসব?মনঃক্ষুণ্ন হয়।বুক ভারী হয়ে আসে।কষ্ট লাগে।চোখ চিকচিক করে। অধর কাপে।তবে নিজে কে সামলে নেয়।মন খারাপ করে তাকিয়ে থাকে নিজের ব্যক্তিগত পুরুষের সুন্দর অবয়বের দিকে।লম্বাটে বলিষ্ঠ সুপুরুষ টা নিজে কে সম্পূর্ণ পরিপাটি করে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
কিন্তু পাঞ্জাবির বোতাম খোলা।যার ফলস্বরূপ বুকের ঘনকালো কিছু লোম উঁকিঝুঁকি মারছে। প্রিয়তার কয়েক সেকেন্ড এর জন্য শ্বাস-প্রশ্বাস অস্বাভাবিক হয়।ফের নিজে কে সামলে নেয়।সাদনান চুল নিজের হাতের সাহায্যে ঠিক করে এগিয়ে আসে।বউয়ের ঠিক বরাবর দাঁড়িয়ে বউয়ের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করে। সফলও হয়।বউ তারই দিকে তাকিয়ে। মেয়েটার হুঁশ কি আছে?
সাদনান বউ কে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মনে মনে হাসলো।তবে মুখ গম্ভীর আর থমথমে কণ্ঠে বলে উঠলো,
-“আমাকে দেখা শেষ?”
প্রিয়তা নড়েচড়ে বসলো।অসভ্য লোক।এভাবে কেউ জিগ্যেস করে?
সবাই কে নিজের মতো নির্লজ্জ ভাবে?
-“আমি মোটেও আপনাকে দেখছিলাম না।”
প্রিয়তা আমতা আমতা করে জানায়।সাদনান ভ্রু কুঁচকায়।চোখ বন্ধ করে শ্বাস টানে।দুই হাত এগিয়ে প্রিয়তার বাহু খাবলে ধরে। প্রিয়তা চমকায়।দুই হাতে সাদনানের বুকে ঠেকিয়ে নিজে কে সামলে নেয়।ধীরগতিতে নিজের হাত এগিয়ে আস্তে ধীরে সাদনানের পাঞ্জাবির বোতাম লাগিয়ে দেয়।প্রিয়তা নিজেও রেডি হয়ে গিয়েছে অনেক আগে। তাই অনুমতি চেয়ে জিগ্যেস করলো,
-“এবার যাই?”
সাদনান ছেড়ে দেয় বউ কে।ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা বেলি ফুলের মালা টা হাতে তুলে নেয়।বউয়ের পেছনে দাঁড়িয়ে সেটা চুলে খোঁপায় পড়িয়ে শাড়ির আঁচল তুলে ঘোমটা টেনে দিয়ে দুই হাতে গালে রাখে।প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে রাখে।সাদনান বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিয়ে মোলায়েম কণ্ঠে বলল,
-“জান বাহিরের দিকে একদম যাবা না।ভাবির সাথে সাথে থাকবে।কিছু প্রয়োজন হলে মা, ছোট মা কে জানাবে।শরীর খারাপ লাগলে রুমে চলে আসবা।”
সাদনানের কথায় প্রিয়তা চোখ ছোট্ট ছোট্ট করে বলে উঠলো,
-“আগে যাই!
তাছাড়া আমি বাচ্চা না।আমার ভীষণ ক্ষুধা পাচ্ছে।
যাই?”
-“যাও।
আর হ্যাঁ, আমি ডাকার সাথে সাথে আমার সামনে দেখতে চাই।”
কথা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়তা মাথা নেড়ে সায় জানিয়ে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।সাদনান তপ্ত শ্বাস ছাড়ে।
অতঃপর পেছন পেছন নিজেও বেরিয়ে আসে।
বিয়ে বাড়ি চারদিকে মানুষ গিজগিজ করছে। বর উপস্থিত হয়েছে এসে আধঘন্টা হবে। আগে বিয়ে পড়ানো হবে তারপর খাওয়াদাওয়া। সাদনান যেখানে বসে আছে সেখানে কিছু সাংবাদিক রয়েছে।মন্ত্রীর ফুপাতো বোনের বিয়ে কেনো তার বাড়ি থেকে হচ্ছে এমন অহরহ প্রশ্ন আর কৌতূহল মানুষজনের মুখে মুখে।তবে এতে কারোর কোনো প্রতিক্রিয়া নেই।সাদনান আয়েশি ভঙ্গিতে বসে আছে সাথে রয়েছে আরো কিছু সুনামধন্য ব্যক্তি।
অদূরে দাঁড়িয়ে আছে কিছু মেয়ে। তাদের মধ্যে কিছু মেয়ে সব মধ্যবয়সী লোকের মধ্যে সুদর্শন পুরুষ কে চোখ সাহায্যে আহার করছে। প্রিয়তা দোতলায় দাঁড়িয়ে সেদিকে তাকিয়ে থাকে।সাদনান অবশ্য একবার উপরে দিকে তাকিয়ে শান্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। এতে প্রিয়তা বরাবর কেঁপে উঠলেও এবার কোনো প্রতিক্রিয়া তার মাঝে দেখা যায় নি।
বিয়ে পড়ানো শেষ খাবার খাওয়ার পর কনে বিদায়ের পালা এলো।বিদায় মানে বিষাদ।রিধির বিদায় হতে হতে সন্ধ্যা গড়িয়ে যায়।আস্তে আস্তে কোলাহল পূর্ণ থেকে একদম পানির ন্যায় শান্ত হয়ে পরে পুরো মির্জা বাড়ি।শুধু সিকিউরিটি আর কাজের লোক বাদে আর কোনো বাড়ির সদস্য কে নজরে আসে না।
আম্বিয়া মির্জা বেশ অনেক টাই কেঁদেছেন।যার ফলস্বরূপ ওনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। সবাই হয়তো ওনার কাছে বসে।
মির্জা বাড়ি যতটা কোলাহলপূর্ণ ছিল তার ঠিক বিপরীতে দেওয়ান ভিলা। কোনো মানুষ নেই।শুধু কাজের লোক আর সিকিউরিটি ছাড়া।রিধি কে একজন কাজের লোক ওয়াজিদ এর রুমে দিয়ে গেলো।ওয়াজিদ রুমে বসে ছিল।কয়েকজন প্রতিবেশী নিচে এতোক্ষণ রিধি কে দেখতে এসছিল।নয়তো ওয়াজিদ সাথে করে বউ কে নিয়ে আসত।মা নেই বোন নেই কোনো নিকটবর্তী আত্মীয় নেই।তাই কোনো ফর্মালিটি করার প্রয়োজন পড়ে না।ওয়াজিদ সোফায় বসে ছিল।রিধি কে রুমে প্রবেশ করতে দেখে পাশে থাকা একটা শপিং ব্যাগ হাতে এগিয়ে এলো।সেটা রিধির হাতে দিয়ে বলে উঠলো,
-“যাও।
ফ্রেশ হয়ে এসো।অনেক টা দখল গিয়েছে এই দু’দিনে।”
রিধির চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলে মুখে রয়েছে মুষ্টি একটা হাসি।প্রাপ্তি। পূর্ণতার।ভালোবাসার মানুষ টাকে সারাজীবন এর জন্য নিজের হালাল ভাবে পাওয়ার।ওয়াজিদ মুগ্ধ। বরাবরই সেই রিধি কে দেখে মুগ্ধ হয়।তবে তৃষ্ণা মেটে না।ক্লান্তির সমাপ্তি ঘটলেও বুকের ভেতর মরুভূমির ন্যায় খা খা করতে থাকে বুকের তৃষ্ণা এই রমণী কে মরার আগপর্যন্ত হয়তো দেখার তৃষ্ণা মিটবে না।
-“যাও দ্রুত।
অপেক্ষা করছি।”
ওয়াজিদ মৃদু কণ্ঠে জানালো। রিধি মাথা নেড়ে ওয়াশ রুমে চলে গেলো।বিছানা রংবেরঙের ফুল দিয়ে সাজিয়েছে ওয়াজিদ এর কিছু বন্ধ।এরজন্য অবশ্য হারামি বন্ধুমহল মোটা অংকের একটা টাকার অংশ নিয়েছে।
ওয়াজিদ তাকিয়ে রইলো। রিধির ফুলে এলার্জি রয়েছে। যদিও রিধি ফুল অনেক পছন্দ করে। কিন্তু ওয়াজিদ চাইছে না আজ এমন একটা দিনে রিধির কোনো রকম সমস্যার মধ্যে পরে।ঝটপট ফুলের সাথে বিছানার চাদর সহ তুলে বিনে রেখে দিলো।অতঃপর ছাঁদের সাথে বিছানায় লম্বা লম্বা করে টানানো ফুল গুলো খুলে সব বিনে রাখে।রিধি ওয়াশ রুম হতে ফ্রেশ হয়ে এসে ওয়াজিদ কে এসব করতে দেখে বিস্ময় নিয়ে জিগ্যেস করলো,
-“আপনি সব ফুল কেনো তুলে নিয়েছেন?
আল্লাহ!”
-“তোমার এলার্জি আছে।”
ওয়াজিদ এর শান্ত কণ্ঠ। রিধি শাড়ী আর দোপাট্টা হাতে নিয়ে এগিয়ে এলো।বিছানায় ফেলে মুখে হাত দিয়ে আগের ন্যায় কণ্ঠে বলল,
-“আপনি এলার্জির জন্য,,
-“ফুল ছাড়া বাসর হয় না?
না-কি ভালোবাসা কমতি হয়!”
ওয়াজিদের থমথমে কণ্ঠ শোনে রিধি নিজেও থমথমে খেলো।কিছু বলার জন্য মুখ খুলবে তার আগেই ওয়াজিদ বলল,
-“এসো খাবার খেয়ে নেবে।
ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।”
ওয়াজিদ গিয়ে সোফায় বসে পড়ে। রিধির খাবার এর দিকে তাকিয়ে পরিবারের কথা মনে পড়ে গেলো।বিশেষ করে নিজের ভাইয়ের কথা।মন খারাপ হয়।তবে পেটে ক্ষুধা থাকায় কিছু বলে না।সেই দুপুরে বড় মামি কয়েক লোকমা খাবার খাইয়ে দিয়ে ছিল।তখন রিধি খেতে পারেনি। তাই আর কথা না বাড়িয়ে ওয়াজিদ এর পাশে বসে। ওয়াজিদ খাবার মেখে রিধি কে খাইয়ে দেয়।সাথে নিজেও খেয়ে নেয়।খাওয়া শেষ ঠিক তক্ষুনি ওয়াজিদ এর ফোন বেজে ওঠে। রাহান কল করেছে। ওয়াজিদ ভালোমন্দ জিগ্যেস করে রিধির কাছে দিয়ে দেয়।
রিধি অনেক সময় নিয়ে সবার সাথে কথা বলে ব্যালকনি হতে রুমে এলো।ওয়াজিদ তখন ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে।
রিধি এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। ওয়াজিদ মৃদু হেঁসে জিজ্ঞেস করলো,
-“কথা শেষ?”
রিধি ঘাড় নাড়ে। ওয়াজিদ আবার বলল,
-“লাইট অফ করে শুয়ে পড়ো।
সারা দিন অনেক দখল গিয়েছে।”
-“ঘুমিয়ে পড়ব?”
রিধি সাথে সাথে বলে উঠলো। ওয়াজিদ ভ্রু কুঁচকে তাকায়।রিধি থমথমে খায়।কথার ভাঁজে বেফাঁস কথা মুখ ফসকে চলে এসছে।বুঝতে পেরে মনে মনে জিহ্বা কাটে।তবে মুখে জোর করে হাসি টেনে আমতা আমতা করে বলল,
-“না মানে সারা দিন অনেক দখল গিয়েছে। যাই ঘুমিয়ে পড়ি।”
-“বাট আফসোস সোনা।
সেটা এখন হচ্ছে না।”
ওয়াজিদ ল্যাপটপ পাশের টেবিলের উপর রেখে রিধি কে টেনে দুই হাত রিধির কোমড় পেঁচিয়ে বলে উঠে।রিধি চমকায়।বিস্ফারিত নয়নে তাকায় ওয়াজিদ এর মুখের দিকে।এক অদ্ভুত নেশা চোখে লেগে আছে। রিধি সঙ্গে সঙ্গে চোখ নামিয়ে নেয়।ওয়াজিদ বা হাতে বেডের সাইডে থাকা সুইচ টিপে লাইট অফ করে রিধির গলায় মুখ গুঁজে দিলো। রিধি কেঁপে উঠল। শক্ত করে ওয়াজিদ এর চুল খামচে ধরতেই ওয়াজিদ নেশাতুর কণ্ঠে বলে উঠলো,
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৩
-“এতো ফাস্ট।
ধীরে জান, আমি ফাস্ট হলে তুমি আমাকে সামলাতে পারবে তো!”