মায়াবতী পর্ব ১৩
ইসরাত জাহান ইকরা
রাতে রান্নাঘরের সকল কাজ শেষ করে মেঘা বালিশের নীচ থেকে মোবাইল নিয়ে বেলকনিতে চলে গেল।
মাটি পড়ার টেবিলে বসে আড়চোখে মেঘার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো _ তোর কাজ এতো তাড়াতাড়ি শেষ? চাচী কিছু বললো না?
মেঘা রাগী দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো _ এতোক্ষণ না পড়ে আমার মোবাইল নিয়ে গেমস খেলেছিস তাই না?
মাটি থতমত খেয়ে আমতা আমতা করে বলতে লাগলো _ তুই কি ভাবে বুঝলি।
মেঘা _ যেই পরিমান মোবাইল গরম হয়ে আছে,ফ্রিজে রাখলে ও তা গরম হয়ে যাবে। এবার থেকে ফোনে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখবো দাঁড়া।
মাটি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো, আমি যেই ইন্টেলিজেন্ট দেখিস পাসওয়ার্ড জানতে আমার এক মিনিট ও লাগবে না।
মেঘা বলে উঠলো _ হইছে, পড়ায় মনযোগ দে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এই বলে মেঘা মোবাইল নিয়ে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। প্রথমে প্লে স্টোরে গিয়ে ফেসবুক নামিয়ে একটা একাউন্ট খুললো, তারপর মেহমিদ এর নাম নাম চার্জ দিতেই, মেহমিদ হোসেন মেঘ নামে একটা আইডি ভেসে উঠলো, যেখানে প্রোফাইলে মেহমিদের কালো সানগ্লাস পড়া একটি ছবি দেখতে পেলো, সাথে সাথে মেঘার হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। মেঘা কৌতুহল দমিয়ে না রাখতে পেরে,মেহমিদের আইডি তে ঢুকে মেহমিদের বিভিন্ন পোস্ট ,ছবি দেখতে লাগলো। মেঘা হাত কাঁপতে কাঁপতে মেহমিদ কে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালো।
তখনি পেছন থেকে মাটি উঁকি দিয়ে দেখলো মেঘা মেহমিদের আইডি তে ঢুকে তার ছবির দিকে তাকিয়ে আছে।
মাটি মুখ ভেংচি কেটে বলে উঠলো _ এতো ঢং করিস কেন, এতো মন পুড়লে নক দিতেই পারিস।
মাটির কথায় মেঘা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো _ মন পুড়লে মানে, থাপ্পর খাবি মাটি।।
মাটি ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে উঠলো _ দ্বারা তোকে কেস খাওয়াচ্ছি। এই বলে মাটি ফট করে মেঘার থেকে ফোনটা কেড়ে নিল। আর বলতে লাগলো মেহমিদ ভাইকে এক্ষুনি নক দিচ্ছি।
সাথে সাথে মেঘার মাথায় বজ্রপাত পড়ল। মেঘা মাটির পিছন পিছন দৌড়াতে লাগলো আর বলতে লাগলো,কিহ, মাটি ভুলে ও না। প্লীজ বোন নক দিস না। এই বলে পেছন থেকে মাটি কে ফট করে জরিয়ে ধরে ফোন নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে লাগলো দুই বোন।
মাটি এর মাঝেই I love you লিখে পাঠিয়ে দিল।
মেঘা জোরপূর্বক ফোনটা নিয়ে দেখলো মাটি যা কান্ড ঘটিয়ে ফেলার তা ঘটিয়ে ফেলেছে।
মেঘা মেসেজ টা তাড়াহুড়োই ডিলিট করতে গিয়ে ডিলিট ফর মি করে ফেলেছে, সাথে সাথে বড় সর একটা ধাক্কা খেল মেঘা। দাঁতে কিড়মির করে মাটির দিকে তাকাতেই, তখনি আয়েশা তাদের রুমে প্রবেশ করলো। আয়েশা রুমে ঢুকেই বলতে লাগলো _ মাটি তোকে যে খাতাটা মাহিদ ভাই দিয়েছে,সেটা আমাকে দে তো , আমি এগুলো লিখে তোকে আবার ফেরত দিয়ে দিব। তখনি আয়েশা মেঘার হাত মোবাইল দেখে বড় বড় চোখ বানিয়ে ফেলবো, আয়েশা বলতে লাগলো _ ওমা মেঘা আপু তুমি কবে থেকে ফোন চালাও,আর কোথেকে আনলে এতো দামি ফোন।
মেঘা বালিশের নিচে ফোনটা রেখে বলে উঠলো _ মেহমিদ ভাই আমাকে এটা কিনে দিয়েছে। আমি ওনাকে বলেছি আমার একটা ফোন লাগবে তাই কিনে দিয়েছে।
তখনি মাটি বলে উঠলো, আচ্ছা খাতা নিতে এসেছিস তো তাই নিয়ে যা। এই বলে খাতা দিয়ে আয়েশা কে বিদায় করবে ভেবে, মাটি খাতা টা হাতে নিয়ে পৃষ্ঠা উল্টাতেই দেখতে পেলো,মাহিদের কিছু লেখা। যেখানে গনিতের ছিটেফোঁটা ও কিছু নেই। সাথে সাথে খাতাটা অফ করে আয়েশার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলতে লাগলো _ আয়েশা তোকে কালকে দিই খাতাটা, আমি এখন ম্যাথ করবো, তাই।
আয়েশা তো মেঘার দামি ফোনটার দিকেই নজর ছিল। আনমনে আচ্ছা বলে আয়েশা সেখান থেকে চলে গেল।
আয়েশা চলে যেতেই,মেঘা ফোনটা বালিশের নীচ থেকে মোবাইল নিয়ে দেখতে পেলো মেহমিদ এর টেক্সট। সাথে সাথে মেঘার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেল।
মেঘা মেসেজ টা ওপেন করে দেখতে পেলো _ মেহমিদ লিখেছে, এই মেয়ে চিনো তুমি আমাকে?
সাথে সাথে মেঘা ভয়ে ফেসবুক আনইস্টল করে ফেললো। মাটি মেঘার দিকে নজর না দিয়ে টেবিলে বসে, খাতাটা মেলে দেখলো, সেখানে লেখা ছিলো _ কেউ যদি আমায় খুব বেশি মিস করে তবে জেনো হুমায়ূন আহমেদের অপেক্ষা লেখা বইটা পড়ে।
এর পরের পাতা উল্টাতেই দেখতে পেলো _ খুব শিগগিরই দেখা হবে, হয় বাস্তবে, নয় কল্পনায় যদিও বা তা হয় কোন উড়ো চিঠির মাধ্যমে।
হঠাৎ করেই মাটির এতো খুশি লাগছে যা বলার বাহিরে।
তখনি ঠাস করে ঘরের দরজা খুলে ঘরে প্রবেশ করলো অনু।
রেগে বড় বড় পা ফেলে মেঘার হাত থেকে খপ করে ফোনটা নিয়ে নিলো অনু। আচমকা এমন হোওয়াতে মেঘা কিছুই বুঝতে পারলো না।
অনু রেগে বলে উঠলো _ সবার আড়ালে লুকিয়ে ফোন চালাচ্ছিস এতো সাহস কোথায় পেলি তুই। দুইদিন কিছু বলতে না বলতেই এতো পাখনা গজে গিয়েছে তোর।
মেঘা বিছানা থেকে নেমে শান্ত গলায় বলে উঠলো _ আগে আমার ফোন দাও, কারো পার্সোনাল জিনিস ধরতে নেই এটুকু কমনসেন্স থাকা উচিত।
পাশ থেকে আয়েশা বলে উঠলো _ আমাদের খেয়ে পড়ে কমনসেন্স শিখাতে এসো না। এবার মাটি টেবিল থেকে উঠে বলে উঠলো _ তোমরা এমন কেন বলতো, গায়ে পড়া, প্রতিদিন গায়ে পড়ে ঝগড়া করতে এসো। এসব হচ্ছে ছ্যাঁচড়ামি বুঝছো।
অনু রেগে তেড়ে গিয়ে মাটি কে যেই চড় মারার উদ্দেশ্য হাত তুলতে যাবে পাশ থেকে মেঘা ফট করে অনুর হাত ধরে ফেলে। সাথে সাথে অনু অবাক হয়ে মেঘার দিকে তাকায়, মেঘা বড় বড় চোখ করে অনুর দিকে তাকিয়ে আছে।
অনু অবাক হয়ে বললো _বাহ বাহ, এটা কে, আমাকে চোখ রাঙাচ্ছে, আগে তো ভয়ে চুপসে থাকতি, এখন বিড়াল হয়ে বাঘের রুপ ধরতে চাস।
এই বলে অনু নিজের হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে,অনুর চুলের মুঠি ধরে বলে উঠলো _ আজ না থাকবে তোর চোখ, আর না থাকবে তোর দেমাগ এই বলে অনু মেঘার গলা চেপে ধরলো। মেঘা এক হাত দিয়ে নিজের চুল ছাড়িয়ে,পা দিয়ে অনুর পায়ে আঘাত করতেই অনু পা ধরে ফ্লোরে বসে যায়। সেই সুযোগে মেঘা অনু কে ফ্লোড় তুলে চুলের মুঠি ধরে তুলে,হাত মুচড়ে ধরে। তাতে অনু ব্যাথায় কুকিয়ে উঠে।
মেঘা রেগে বলে উঠলো _ জিগ্যেস করলে না, যেই আমি ভয়ে চুপসে থাকতাম সেই আমি এমন হলাম কীভাবে, ঠিক এইভাবে, আমাকে দিনের পর দিন এইভাবে অত্যাচার করতে করতে এমন তোমায় বানিয়েছো, মেহমিদ ভাই শিখিয়ে দিয়ে গেছে, যাওয়ার আগে বার বার করে বলে গেছে, মেঘা বাঁচতে হলে লড়তে হবে। মেহমিদ ভাই আমাকে কীভাবে ফাইটিং করে নিজের প্রটেক্ট করতে হয় তা শিখিয়ে দিয়ে গেছে। আমি চাইলে তোমাকে এখন রাম ধুলাই দিতে পারতাম, এটা জাস্ট সিম্পল। ঠিক এমনি,হ্যা ঠিক এমনি আমার লাগতো।
এখন নিজের খুব কষ্ট হচ্ছে না, আমাদের ও কষ্ট হয় আমরা ও মানুষ। এই বলে মেঘা ধাক্কা দিয়ে ফ্লোড়ে পড়ে গেল । এদিকে আয়েশা চেঁচামেচি শুরু করে দিয়েছে, মা গো আপুরে মাইরা ফেললো গো। তাড়াতাড়ি আসো নয়তো মরেই যাবে। রাহিমা বেগম হাত মুছতে মুছতে আসতে আসতে বলতে লাগলো _ মারুক, অনেক বার বেড়েছিল এতো দিন, অনু আবার একেবারে মেরে ফেলিস না জেনো। মশা মেরে হাত নষ্ট করতে যাবে কে?
এই বলে রুমে ডুকে অনু কে ফ্লোড়ে পড়ে গড়াগড়ি খেতে দেখে রাহিমা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। দৌড়ে গিয়ে অনু কে ফ্লোড় থেকে তুলে বলতে লাগলো _ এই তোকে এভাবে মেরেছে কে?
পাশ থেকে মাটি বলে উঠলো _ আপা তুই মশা মেরে হাত নষ্ট করলি কেন, যা গিয়ে ধুয়ে আয়।
রাহিমা বেগম রেগে দাত কিরমির করে বলে উঠলো _ মেঘা তুই করেছিস এমন তাই না, সাহস তো তোর কম। এখুনি বাসা থেকে বের হয়ে যা।
মেঘা বলে উঠলো _ আমি থানায় যাচ্ছি,আইনের লোক যদি বলে এখান থেকে চলে যেতে তো চলে যাবে,আর যদি ওরা আমাদের অংশ পান তাহলে না হয় তা ভাগ করে দিবে। এই বলে বিছানা থেকে মোবাইল তুলে মেঘা মাটির উদ্দেশ্য বলে উঠলো _ বইয়ের পিছনে যে নারী ও শিশু নির্যাতনের একটা হেল্প কেয়ার নাম্বার আছে না ওটা দে তো।
রাহিমা বেগম মেঘার কথায় বোকা বনে চলে গেল। অনু ব্যাথা ভরা গলা নিয়ে বলে উঠলো _ মা দেখলে?
রাহিমা বেগম গম্ভীর হয়ে বললেন, ঘরে চল কথা আছে।
এই বলে তারা ঘর থেকে চলে গেল। মেঘা আর মাটি হাফ ছেড়ে বিছানায় বসে পড়লো। মেঘার এখনো গা কাঁপছে, এমনটা সে করতে পারবে ইহকালে ও বুঝতে পারেনি।
অনু বিছানায় বসে মচকে যাওয়ার হাতে মলম লাগাচ্ছে। রাহিমা বেগম পাশ থেকে বললেন, ওই দুটো বজ্জাত মেয়ে যত বড় হচ্ছে তত বুঝতে শুরু করে। আম যদি হাতের মুঠোর তুলনায় বড় হয়ে যায়, তাহলে সেই আম মুঠোয় আনা খুব কঠিন। আর তুই, তোকে না বলেছি কিছুদিন এদের কে সহ্য কর, আগে বড়টাকে বিদায় করবো, তারপর ছোটটা কে বিদায় করতে হিমসিম খেতে হবে না।
অনু ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো _ কিভাবে তাড়াবে, এর মাথায় তো সম্পত্তির ভুত চেপেছে।
রাহিমা বেগম _ সকাল হলেই দেখতে পাবি।
সকালে
উঠান ঝাঁট দিয়ে, হাড়ি পাতিল মেজে, রান্নাঘরে গিয়ে সকল কাজ গুছিয়ে, উঠানে আসতেই একটা লোক কে দেখে থমকে গেল মেঘা। মেঘা অফুষ্ট সুরে বলে উঠলো _ মামা।
হাতে মিষ্টির হাড়ি নিয়ে বুড়ো লোকটি মেঘা কে দেখে বলে উঠলো _ কেমন আছিস ভাগনি।
মেঘা সালাম দিয়ে বলে উঠলো _ এতো দিন পর কীভাবে আমাদের কথা মনে পড়লো মামা।
তখনি রান্নাঘর থেকে রাহিমা বেগম দৌড়ে এসে বলতে লাগলেন, কেমন আছেন । এতো দেরি করে এলেন যে।
মেঘা চেয়ার এনে দিল। মেঘার মামা বলে উঠলেন ভালো, তারপর কিছু একটা বলতেই যাবে তখনি মেঘা বলে উঠলো _ আমার কথার উত্তর পাইনি মামা, আপনি এতো দিন পর কেন আসলেন। আগে কতোবার আপনাকে বলেছি এখান থেকে নিয়ে যেতে তখন আসেননি কেন।
মেঘার মামা রাহিমা বেগমের দিকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে _ জিগ্গেস কর তোর চাচী কে, সে কেন এতো দিন তোদের আমার সাথে দেখা করতে দেয় নি। প্রতিবার এসেছি তোদের নিয়ে যেতে। কিন্তু তোর চাচী গেট বন্ধ করে রাখতো,বলতো আমাদের বংশের মেয়েদের আমরা কোথাও যেতে দিব না। সেটা না হয় ভাল কথা, কিন্তু ফোন করে তোদের খোজ খবর নিতে চাইলে অপমান করে কল কেটে দিত। আজ হঠাৎ কি হলো কে জানে,কাল হঠাৎ ফোন দিয়ে বললো আপনার ভাগনির সাথে এখন যোগাযোগ করতে পারেন আর কেউ বাধা দিবে না। তাই ছোট্টে এলাম।
মেঘা সন্দেহের দৃষ্টিতে রাহিমা বেগমের দিকে তাকালো। মেঘার স্পট মনে আছে,মেঘার মামা এলে তাদের দরজা বন্ধ করে তালা দিয়ে রাখতো। তবে আজ হঠাৎ কি হলো।
রাহিমা বেগম থতমত খেয়ে বলতে লাগলো _ সে বড় অন্যায় করেছি। আজ নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি, মেয়ে দুটো কে কতোই না কতকিছু করে বঞ্চিত করেছি, আমাকে ক্ষমা করে দিস মা।
রাহিমা বেগমের কথায় মেঘা ইমোশনাল হয়ে পড়লো, আনসার রহমানের সাথে চেয়ার টেনে বসে, মামাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে লাগলো ,আর বলতে লাগলো মামী কেমন আছেন?
আনসার রহমান_ ভালো আছে, তোর মামী তোকে নিতে যেতে বলেছে, আর তোর মায়ের কবর জিয়ারত করে আসবি,চলে রেডি হো।
মেঘা বলে উঠলো _ কিন্তু মাটি কে ফেলে,।
আনসার রহমান_ এখন তুই চল আমার সাথে হারুন কে ফোন দিয়ে বলে দিব নে, ওকে স্কুল থেকে নিয়ে যেতে।
মেঘা আনসার রহমানের কথায় খুশি হয়ে রেডি হতে চলে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যে জামা কাপড় গুছিয়ে রেডি হয়ে, মামার সাথে চললো মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে।
অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই মামার বাড়ি চলে আসলো মেঘা। সিএনজি থেকে মাথা বের করে দেখতে লাগলো, মামার বাড়ি, আগের থেকে অনেক উন্নতি হয়েছে ,শুনেছি মামার একটি ছেলে আছে বিদেশ থাকে। এসব ভাবনার মাঝেই মামীর ডাকে হুঁশ ফিরলো মেঘার।
মামী _ কেমন আছো আম্মা। আইতে কোন কষ্ট হয় নাই তো।
মেঘা _ ভালো আছি মামী, তোমার শরীর ভালো তো।
মামী _ তুমি আসছো এখন শরীর মন দুটোই ভালো। আসো ঘরে আসো।
এই বলে মেঘা কে ঘরে নিয়ে গেল মামী। বাসায় তেমন কেউ নেই, মামা, মামী আর মামাতো বোন সিমীন। সারাদিন সবার সাথে ভালো সময় কাটলো মেঘার। মামী হরেক রকমের মজাদার রান্না করলো। বিকেল বেলায় মায়ের কবর জিয়ারত করে এলো।
কিন্তু মেঘার মনে খটকা লাগলো তখনি, যখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত হলো, হারুন মাটি কে নিয়ে আসেনি। মেঘা উত্তেজিত হয়ে ব্যাগ গুছাতে শুরু করলো। আনসার রহমান হারুন কে বকছে মাটি কে না নিয়ে আনায়।
হারুন বলেছে,মাটি কে সে ঠিকিই আনতে গেছে স্কুল থেকে অনু তাকে আনতে দেয় নি। হারুন বলেছে মেঘা মামার বাড়িতে আছে, কিন্তু অনু মেঘা বাড়িতে আছে বলে সেখান থেকে মাটি কে নিয়ে যায়। তাই হারুন কে বিশ্বাস করেনি।
মেঘা ব্যাগ গুচাচ্ছে দেখে, আনসার রহমান ঘরে প্রবেশ করে বলতে লাগলো _ তুই কোথাও যাবি না মেঘা। আমি সব জানি, তোকে আর ওই নরকে যেতে দিব না।
মেঘা বলে উঠলো _ ওখানে আমার বোন আছে মামা, আমি ওকে নিয়ে আসবো তুমি শুধু আমায় যেতে দাও।
আনসার রহমান _ না,তুই গেলে ওরা তোকে ও আটক করবে। তাই তোকে যেতে দিব না। আর মাটি কে আনার ব্যাবস্থা করছি।
মেঘা _ দরকার হলে না আসবো, তবু ও আমার বোনের সাথে থাকবো। ওরা যে ভয়ঙ্কর আমার বোনের সাথে কি না কি করে। এই বলে মেঘা জোরাজুরি করতে থাকলে,
আনসার রহমান মেঘা কে ঘরে বন্ধি করে, রাখলো।
মেঘা রেগে বলে উঠলো _ আমাকে শুধু শুধু আটকে রাখলে লাভ কি মামা। এখানে তো আমি সারাজীবন থাকবো না।
আনসার রহমান রেগে বলে উঠলো_ তোকে ওই বাসায় পাঠাবো না আর, আমার কলিজার আদরের নয়নমণি তোরা।
মেঘা _ কীভাবে রাখবে, চাচী যদি পুলিশ নিয়ে আসে তাদের বাড়ির মেয়েকে নিয়ে যেতে তখন কি আর আটকে রাখতে পারবে।
দরজার এপাশ থেকে বলে উঠলো _ তাইতো আমার ছেলে সৌরভের সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিব এই কয়েকদিনের ভিতর,যেনো ওই মহিলা জোর না খাটাতে পারে।
সাথে সাথে মেঘা থমকে গেল। মেঘা উত্তেজিত হয়ে বলে উঠলো _ না না মামা তোমার দুটো পায়ে পড়ি। আমি একজন কে ভালোবাসি।
মায়াবতী পর্ব ১২
আনসার রহমান গম্ভীর হয়ে বললেন _ কাকে?
মেঘা _ আমার চাচাতো ভাই মোশারফ হোসেনের ছেলে মেহমিদ কে।
কিছুক্ষন নিরব থেকে আনসার রহমান বললেন _ তোমার ভালোবাসা মেনে নিতাম যদি সে অন্য কেউ হতো। কিন্তু তুমি কি জানো, তোমার মা বাবার হত্যাকারী তোমার চাচা মোশারফ হোসেন।
সাথে সাথে মেঘা থমকে গেল এক মূহুর্তের জন্য।
