আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৮
জান্নাত সুলতানা
-“আমি আমার বোন কে নিয়ে কোনো রকম ব্যবসা আমি করতে দেবো না।”
সাদনানের ধীরে আর গম্ভীর কণ্ঠে বলা কথা টায় আজ্জম মির্জা রেগে গেলেন।কিছু টা তেতে উঠে মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলো,
-“সাদনান!
মুখ সামলে কথা বলো।আমার মেয়ে কে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বলবে না।মেয়ে আমার।আর বিয়ের জন্য যোগ্য পাত্র পেয়েছি আমি।”
-“আমার মুখ নয়।আপনার চিন্তা ধারা পরিবর্তন করুন। তাহলে হয়তো এই ব্যবসার কথা টা আপনার কাছে ঠিক জঘন্য মনে হবে।কিন্তু জঘন্য হলেও আপনি এমনটাই করতে যাচ্ছেন।”
সাদনান আর দাঁড়াল না সেখানে। আজ্জম মির্জার রুম হতে বেরিয়ে এলো।সাদনান যখন রেগে থাকে তক্ষুনি আজ্জম মির্জা কে তুমি নয় আপনি সম্মোধন করে। আর এই মূহুর্তে সে আজ্জম মির্জার উপর শুধু রেগে নয়। ভয়ংকর রেগে আছে।মানুষ টা হয়তো সাময়িক লাভের জন্য কি সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা টের পাচ্ছে না। কিন্তু যখন বুঝতে পারবে সাদনান নিশ্চিত তখন আবার মিনমিন করে সাদনানের কাছে এসে বলবে,আসলে হয়েছে কি আমি বিষয় টা অতো গভীর করে ভেবে দেখি নি।”
কারণ প্রতিবারই তিনি কোনো না কোনো ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সেটা সাদনান ধরিয়ে দিলে এমনটাই হয়েছে।কিন্তু এখন ব্যাপার টা ভিন্ন। বোনের জীবনের প্রশ্ন।সেখানে সে কি করে বাবা-র এমন অবুঝ একটা আবদার মেনে নিবে!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মাইশার প্রেগন্যান্সির নয় মাসের বেশি সময় চলে।ফুলা ভারী পেট।গোলগাল মুখ। ঢিলাঢালা জামা।দারুণ মায়াবী দেখতে লাগে।আয়ানের বউ কে দেখলে আদর করতে ইচ্ছে করে তেমন পরক্ষণেই মনে ভয় এসে হানা দেয়।কি হবে ভবিষ্যতে? তার অনাগত সন্তান আর প্রেয়সীর কিছু হবে না তো?
-“কি ভাবছেন এতো?
কখন থেকে ডেকে যাচ্ছি।”
মাইশার ডাকে আয়না ভাবনার ছেদ ঘটে।কিছু টা হকচকিয়ে জবাব দেয়,
-“হ্যাঁ বলো!”
-“আপনি হোটেল কেনো জান নি?একবার গিয়ে সুপারভাইজিং করে আসতেন অন্তত।”
-“বাবা আছে।
আমাকে যেতে হবে না।”
মাইশা ভ্রু কুঁচকায়।ইদানীং মানুষ টা বড্ড অন্যমনস্ক থাকছে। সাথে কিছু নিয়ে প্রায় কিছু বিড়বিড় করে বলছে আবার চিন্তায় কপালে ঘাম জমে।
মাইশা এবার আয়ানের দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।আয়ান সেটা দেখে বউ কে খুব সাবধানে নিজে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিলো।মাইশা আয়ানের পেটে মুখ গুঁজে জিগ্যেস করলো,
-“আপনি কি কিছু নিয়ে টেনশন করছেন?”
আয়ান মাইশার চুল হাত বুলিয়ে দিতে দিতে জবাব দিলো,
-“কি নিয়ে টেনশন করবো!
আচ্ছা তুমি একটু বসো আমি দুধ টা নিয়ে আসি।”
-“বাদাম বা খেজুর কোনো টা দিবেন না।
চকলেট দিয়েন,প্লিজ।”
আয়ান মাইশা কে বসতে সাহায্য করলো।মাইশার করুণ কণ্ঠে বলা কথায় বউয়ের মুখের দিকে তাকালো আয়ান।দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে।এটা আজ নতুন নয়।দুধ খেতে এলেই তার সব সময় এমন আবদার। কিন্তু এতে যে কোনো পুষ্টি নেই সেটা কি এই মেয়ে বুঝে?সব সময় সুস্বাদু খাবার পুষ্টিকর হয় না।কিছু খাবার খেতে স্বাদ না হলেই সেটায় পুষ্টি থাকে।আয়ান কিছু না বলে রুম হতে বেরিয়ে গেলো।মাইশা বসে রইলো।সকাল থেকে শরীর টা ভালো যাচ্ছে না। কেমন অস্থির অস্থির করছে। সাথে পেটেও চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে। আয়ান কে বললে টেনশন করবে ডক্টর এর কাছে যাওয়ার জন্য জোর করবে সেই জন্য কিছু বলে নি।কিন্তু রাত বাড়ার সাথে সাথে চিনচিন ব্যাথা টা যেনো বাড়ছে বৈ কমছে না।
এখন তো দাঁতে দাঁত চেপেও ব্যাথা সহ্য করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু হঠাৎ এমন কেনো হচ্ছে? ডক্টর এর দেওয়া ডেট অনুযায়ী তো এখনো আরো পনেরো দিন এর মতো সময় রয়েছে।তাহলে?
-“তোমাকে এমন দেখাচ্ছে কেনো?
শরীর খারাপ লাগছে? পেটে ব্যাথা হচ্ছে?”
আয়ান দুধের গ্লাস পাশের টেবিলে রেখে দ্রুতে পায়ে এগিয়ে এসে মাইশা কে আগলে নিয়ে অস্থির কণ্ঠে জিগ্যেস করলো। মাইশা এক হাতে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে কিছু টা মূর্ছা যাওয়া কণ্ঠে জানালো,
-“পেটানো সামান্য পেইন হচ্ছে।”
আয়ান আর কিছু শুনলো না। মা কে জোরে জোরে ডাকতে লাগলো।মিতা সওদাগর সহ একজন কাজের লোক ছুটে এলো।মিতা সওদাগর মাইশার কাছে এসে বসলো।মুখের বর্ণ পালটে গিয়েছে মেয়ে টার।মিতা সওদাগর কিছু আন্দাজ করে আয়ান কে বলল,
-“তোর বাবা কে গাড়ি নিয়ে আসতে বল।
ওকে হসপিটাল নিতে হবে।”
-“বহুত তো রংঢং করলা স্বামী লইয়া। পড়ালেখার নাম কইরা বাড়ি থাইক্কা বাইরে যাও।নিজের মন মর্জি মতো চলো।বলি কি বিয়ের বয়স তো আর কম হইলো না দেখতে দেখতে বছর হয়ে এলো।তা এইবার কি বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখবো?”
হঠাৎই আম্বিয়া মির্জার এরূপ কথায় প্রিয়তা কিছু টা হকচকালো।আস্তে করে মাথা ঘুরিয়ে চোখ বুলিয়ে আশেপাশে দেখে নিলো।না তেমন কেউ নেই।হাতের চামটা টা নুডলস এর বাটিতে রেখে দিলো নিঃশব্দে।
এখন বিকেল এখানে আপাতত কেউ নেই। আম্বিয়া মির্জা তখন সেখানে এলো।প্রিয়তা কে একা পেয়ে কথা গুলো বলে দিলো। প্রিয়তা নড়েচড়ে বসলো। মিনমিন করে জানালো,
-“পরীক্ষা গতকাল শেষ হয়েছে দাদি।”
-“হ তা জানি।
পরীক্ষার লাইগা তো এতোদিন বাচ্চা লইছো না।এখন নিয়েও।”
কিছু টা বিদ্রূপ করে কথা গুলো বলল আম্বিয়া মির্জা। প্রিয়তার আঁখি পল্লব ছলছল করে।তার কি দোষ। সাদনান নিজেই তো এতো দ্রুত বাচ্চা নিতে রাজি নয়।সে তো অনেকবার বলেছিল।কিন্তু সাদনান নিজেই প্রতিবার সেটা এড়িয়ে যায়।আম্বিয়া মির্জা চলে গেলে প্রিয়তা পানি খেয়ে রুমে চলে আসার জন্য চেয়ার ছেড়ে ওঠে দাঁড়াতে সালেহা বেগম কোথা থেকে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।
ভ্রু কুঁচকে জিগ্যেস করলো,
-“খাবার ফেলে কোথায় যাচ্ছিস?”
-“পেট ভরে গেছে।
সারা ডাকছে।যাই!”
সালেহা বেগম তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে পর্যবেক্ষণ করলো প্রিয়তা কে।শাশুড়ী’র দেখা তিনি করিডরে পেয়েছে।খাবার ঘরে যে এসেছিল সেটা তক্ষুনি বুঝতে পেরেছে। আর প্রিয়তা ডাইনিং টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে মনে পড়তে তড়িঘড়ি করে এসেছে। যা ঘটবার সে যে ঘটে গিয়েছে ভালোই ঠাহর করতে পারে সালেহা বেগম। তবে কোনো রূপ প্রশ্ন করলো না প্রিয়তা কে।শুধু প্রিয়তার টলমটল পায়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠার দিকে তাকিয়ে রইলো।
রাতে প্রিয়তা খাবার খেতে গেলো না।সালেহা বেগম বেশি জোর করলো না।ভাবলো ছেলে এলে ছেলে বউ কে খাইয়ে দিতে বলবে।রাত সাড়ে বারো টা নাগাদ সাদনান বাড়ি ফিরলো।
আসার সময় মাইশা কে দেখে এসছে।মাইশার পুত্র সন্তান হয়েছে। সাদনান ভাগ্নে কে একটা স্বর্ণের চেইন দিয়ে কোলে নিয়েছে। বেশ ভলোই লেগেছে। অনুভূতি দারুণ ভালো লেগেছে।কেমন মনের মধ্যে এখন বাবা হওয়ার আলাদা একটা অদ্ভুত ইচ্ছে জেগেছে। অবশ্যই অদ্ভুত নয়।এটাই তো একটা ছেলে বা মেয়ের মনের সবচেয়ে বড়ো স্বপ্ন সেও একদিন বাবা হবে মা হবে। তাদেরও কেউ আদোও আদোও কণ্ঠে ডাকবে, আবব্বা, মা।এই পাওয়া টা হয়তো পৃথিবীর অন্যতম পাওয়া গুলোর মধ্যে একটা পাওয়া।
সাদনান বাড়ি ফিরে লিভিং রুমে মায়ের সাথে আগে সাক্ষাৎ করলো।সালেহা বেগম কে সাদনান ঘুমিয়ে যেতে বললো।সালেহা বেগম কাজের লোক কে সব গুছিয়ে রাখতে বলে রুমে চলে গেলো। সাদনান খাবার হাতে এক্কেবারে রুমে এলো।খাবার সেন্টার টেবিলে রেখে ঘুমন্ত বউয়ের মুখের দিকে কিচ্ছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটা টাওয়াল হাতে ওয়াশ রুমে চলে গেলো। মিনিট পনেরো এর মাথায় বেরিয়ে এলো।বউ তখনো ঘুমিয়ে আছে। সাদনান চুল মুছে একটা গেঞ্জি আর ট্রাউজার পড়ে নিয়ে বউয়ের কাছে এগিয়ে গিয়ে পাশে বসলো। একটু নিচু হয়ে বউয়ের ললাটে ওষ্ঠ ছুঁয়ে দিতেই প্রিয়তা কেঁপে উঠল। সাদনান সরে এসে মৃদু কণ্ঠে ডাকলো,
-“জান উঠো।
খাবার খেতে হবে। চলে এসছি আমি।”
সাদনানের কণ্ঠ শোনে প্রিয়তা অল্পস্বল্প চোখ খুলে তাকালো সাদনানের দিকে।ক্লান্তিকর মুখের দিকে তাকালো।বিকেলে আম্বিয়া মির্জা কথা গুলো বলেছে পর থেকে সেগুলো মাথায় ঘুরছে।তাই সাদনানের ক্লান্তিকর মুখ দেখে আজ খারাপ লাগে না।বরং রাগ হয়।এক ঝটকায় হাত সরিয়ে দিয়ে বলল,
-“আপনি খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
খাব না আমি।”
সাদনান ভ্রু কুঁচকালো। বউয়ের মতিগতি বুঝতে পারে না সে।তবে আসার সময় মায়ের থেকে সব শুনে এসছে।
বউ রেগে আছে।সাদনান অনেক জোরাজুরি করে বউ কে শোয়া থেকে ওঠা বসালো।খাবার এনে কিছু টা জোর করে খাইয়ে দিলো প্রিয়তা কে।প্রিয়তা খাবার খেয়ে আবার শুয়ে পড়লো। সাদনান এঁটো প্লেট রেখে হাত ধুয়ে এসে বউয়ের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। বিছানায় শুয়ে পাশের দেওয়ালে সুইচ টিপে লাইট অফ করে বউ কে এক ঝটকায় নিজের উপরে নিয়ে এলো।প্রিয়তা আকস্মিক ঘটনায় চমকে ওঠে সাদনানের বুকের গেঞ্জি দু-হাতে শক্ত করে চেপে ধরলো। সাদনান ড্রীম লাইটের মৃদু আলোতে বউয়ের এলোমেলো চুল গুলো এক হাতে সরিয়ে দিয়ে বলল,
-“মিশানের জন্য বউ আনার মিশন তবে শুরু করি!”
-“বাবুর নাম রেখে দিয়েছে?”
প্রিয়তা সরে যেতে চাচ্ছিল।কিন্তু সাদনানের কথা সেটা আর করে না। অবাক হয়ে জানতে চাইলো
-“হ্যাঁ মাইশা রেখেছে।”
আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ২৭
প্রিয়তা সাদনানের কথার বিপরীতে হয়তো আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু কিছু বলার আগেই সাদনান বলে উঠলো,
-“আর কোন কথা নয়।
মিশন জলদি শুরু করতে হবে।”