আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ২৮
নূরজাহান আক্তার আলো
-‘ভাবি? রুমে যাবে না? চল তোমাকে ভাইয়ার রুমে রেখে আসি।’
অন্যমনস্ত হয়ে বসে থাকা কুহু ভাবি ডাকটা শুনেই ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল।
ফাঁকা রুমে কানের কাছে আচমকা কথা বলায় চমকে উঠেছে সে। রিমি মিটিমিটি হাসছে৷ তার পায়ের ব্যথা খানিকটা কমেছে তবে পুরোটা নয়। তাই সে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে। আর কুহুকে জ্বালাতে দেওয়াল ধরে ধরে এই রুমেও চলে এসেছে। চঞ্চল হলে যা হয়!কুহুকে বিষ্ময় নিয়ে তাকাতে দেখে রিমি হাসল। তারপর কুহুর আদুরে দুই গাল টেনে দিয়ে বলল, ‘কি, বসে বসে বরের কথা ভাবা হচ্ছে?’
একথা শুনে কুহুর ফোলা ফোলা আদুরে দুটো গালে লাল আভা সুস্পষ্ট
হলো। চোখে ফুটল লাজুকতা। কুহু ‘ধ্যাত’ বলে অন্য দিকে তাকাল। তার বয়ে গেছে বরকে নিয়ে ভাবতে। কাঠখোট্টা বর! তাকে নিয়ে সে ভাববে!
হুহ!’
তাকে মিটিমিটি হাসতে দেখে রিমি এবার কুহুর গা ঘেঁষে বসল। এরপর সে কুহুর কানে কানে জানাল, তাদের বাসর ঘর সাজানোর জন্য লোক আনা হয়েছে৷ লোক দু’টি নাকি রিদওয়ানের কথামতোই রুম সাজাচ্ছে।
ভাবা যায়? কত রোমান্টিক বর পেয়েছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
একথা শুনে কুহু চোখ বড় বড় করে তাকাল। রিদওয়ান একাজ করছে? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য? কবুল বলার পরে যেখানে একবার কথা বলারও প্রয়োজন মনে করে নি, সেখানে সে বাসরঘর সাজিয়ে বসে আছে, ভাবা যায়! কিছু কিছু পুরুষের মতো সেও আগে চাহিদার কথায় গুরুত্ব দিচ্ছে নাকি কে জানে! হঠাৎ কথার মাঝে কুহুকে এভাবে অন্যমনস্ক হতে দেখে রিমি গোপনে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। তবে সে অনুতপ্ত। কুহুর মাথায় ব্যান্ডেজ দেখে তার ভীষণ খারাপ লাগছে। আসলে সেও সেদিন খেয়াল করেনি কুহু কখন উঠে চলে গেছে। আড্ডা দিতে এতটাই মগ্ন হয়ে গিয়েছিল যে মুহূর্তের মধ্যে ভুলেই গিয়েছিল যে একটা অসুস্থ মেয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
যাই হোক, খারাপ মুহূর্তটা কেটে গেছে। বিপদও পাশ কাটিয়ে বিদায় নিয়েছে। এখন খুব ভালো মুহূর্ত। ভালো সময়। এই সময়টাকেই উপভোগ করা উচিত। যা হয়েছে মেনে নেওয়া উচিত। তবুও মনের মধ্যে কিছু প্রশ্ন আলপিনের মতো খুঁচিয়েই যাচ্ছে। শান্তি দিচ্ছে না তাকে এবং তার পরিবারকে। এই যেমন, হঠাৎ তার ভাই কেন এই সিদ্ধান্তটা নিলো? কেন অসুস্থ একটা মেয়েকে জীবনসঙ্গী বানাল? তার ভাই তো কোনদিক থেকে কম না, তাহলে সে কেন এই সিদ্ধান্ত নিলো?
আচ্ছা নিলো নাকি নিতে বাধ্য হলো? কেউ কি বাধ্য করল? আবার তার ভাই যে কুহুর প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে এমনটাও কিন্তু নয়। তাহলে কেন? এই কেন এর উত্তর সে খুঁজে পাবে বলে মনে হয় না। কারণ সে তার ভাইকে চেনে। যত না কিছু হোক সে তার কাজের কৌফিয়ত কখনো কাউকে দেয় না। তবে তার খুব হাসি পাচ্ছে আবার ভালো লাগছে এখন থেকে এই ছোট্ট পুঁচকে মেয়েটা তার ভাবি। বয়সে ছোটো। কিন্তু সম্পর্কের দিক থেকে বড়। আর সে সেই সম্পর্ককে সন্মান দিয়ে কুহুকে ভাবিই ডাকবে। কিন্তু তাকে ভাবি ডাকতে দেখে কুহু হতবাক। সে এবার মিনমিন করে বলল,
-‘আপু, এটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না।’
-‘কোনটা?’
-‘এই যে ভাবি ভাবি করছো এটা।’
-‘ওমা, ভাবিকে ভাবি ডাকব না?’
-‘আমি তোমার ছোটো। নাম ধরে ডাকো।’
-‘কিন্তু ভাইয়া তো আমার বড়। আর বড় ভাইয়ার বউকে কেউ নাম ধরে ডাকে?’
-‘তবুও। প্লিজ।’
-‘জি না। তা হচ্ছে না। এবার উঠুন ভাইয়ার রুমে যান। ভাইয়া মনে হয় গান গাইতে শুরু করেছে।’
-‘গান? উনি গান গাইবে? গাইতে পারে? কিন্তু গান গাইবে কেন?’
-‘বিয়ের করার পর সব ছেলেরাই মনে মনে গান গায়।’
-‘কি আশ্চর্য! গান কেন গায়, এটা তো বলবে নাকি?’
-‘এত বছরের সিঙ্গেল লাইফ ঘুচাচ্ছে গান গাইবে না? গান না গাইলে মান থাকবে?’
-‘তোমার ভাই সিঙ্গেল ছিল? এটা মানতে হবে?’
-‘হ্যাঁ অবশ্যই মানতে হবে! আমার ভাই বিশ্ব রেকর্ড করা সিঙ্গেল ছিল।’
-‘থাক ভাইয়ের সুনাম করতে হবে না। সব বুঝি। তা তোমার কাঠখোট্টা ভাই কি গান গাইতে পারে?’
-‘তুমি রুমে যাচ্ছে না দেখে ভাইয়া হয়তো মনে মনে ওই গানটা গাইতে শুরু করেছে।’
-‘কোন গানটা?’
-‘ওই যে ওইটা!’
-‘কোনটা?’
-‘আরে ওইটা।’
-‘আপু!’
-‘বলছি, বলছি, ‘আর কত রাত একা থাকব’…. এই গানটা।’
রিমির কথা শুনে কুহু কিছুক্ষণ তার মুখের দিকে তাকিয়ে খিলখিল করে হাসতে শুরু করল। এই গান! রিদওয়ান এই গানটা গাইছে কল্পনা করেই তার হাসির মাত্রা বেড়ে গেল। তাকে এভাবে হাসতে দেখে হাসল রিমিও।
এভাবে দু’জন গুজরগুজর করে আরো কিসব বলাবলি করল। তা শুনে কুহু হাসতে হাসতে শুয়ে পড়েছে। এদিকে তাদের রুমের দরজায় নীরবে দাঁড়ানো রিদওয়ান ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে আছে।এভাবে হাসার কি হয়েছে?দুই পাঁজি কি গুজুরগুজুর করছে? আর রিমিটা এত পাজি হলো কবে?
এই গানের কথা জানল কোথায় থেকে? ছিঃ,ছিঃ,ছিঃ! সে নাকি বউয়ের জন্য এই গান গাইবে। বোন হয়ে একথা বলতে পারল? না, দিনদিন এই মেয়ে লাগামছাড়া হয়ে যাচ্ছে। এরও একটা ব্যবস্থা করতে হবে। তখন আচমকা কেউ পেছন থেকে তাকে ঠেলা দিতেই সে রুমে প্রবেশ করল।
বিরক্ত হয়ে তাকাল পেছনে দাঁড়ানো রুপকের দিকে। রুপক হাসছে। তা দেখে রিদওয়ান ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল রিমি আর কুহুর দিকে। তারপর আচমকা ধমক দিয়ে বলল,
-‘এই যে রাত হয় নি? খেতে হবে না আপনাদের?’
তাকে দেখমাত্রই কুহু ধড়ফড়িয়ে উঠে বসল।ভদ্র মেয়ের মতো চুপ করে বসে রইল। কোনো জবাব দিলো না। তখন পেছন পেছন ঢুকল রুপকও।
তাদের দেখে রিমি আর কুহুর হাসি থেমে গেছে। কি আলোচনা করছিল এরা শুনলে নিশ্চয়ই কান ধরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখবে। এরচেয়ে চুপ করে থাকায় উত্তম। কিন্তু রিমির এখন চুপ থাকতে ইচ্ছে করছে না। সে তার ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হেসে বলল,
-‘তুমিই চলে এলে? আমি তো ভাবিকে তোমার রুমেই নিয়ে যাচ্ছিলাম।’
-‘ নিয়ে যেতে হবে? তোমার ভাবির পা নেই? সে হেঁটে যেতে পারে না?’
-‘পারে। তবুও তার নাকি শখ বরের কোলে চড়ে বাসরঘরে ঢুকবে।’
একথা শুনে রিদওয়ান এক ভ্রুঁ উঁচু করে কুহুর দিকে তাকাল। এইদিকে ভাইয়ের সামনে একথা শুনে কুহুর মুখ লজ্জায় লালবর্ণ ধারণ করেছে।
কান দিয়ে যেন ধোঁয়া বের হচ্ছে। রিমির দুষ্টমি এত ছিঃ, মার্কা। ছিঃ! সে
লজ্জায় মুখটা যতটুকু সম্ভব গলার সঙ্গে মিশিয়ে নিলো। তা দেখে রিমি মুখ টিঁপে হাসতে লাগল। তখন রিদওয়ান আড়চোখে একবার কুহুকে দেখে বলল,
-‘ ছোটো খাটো হাতিকে কোলে তোলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’
এই একটা কথা শুনে কুহু মুখ তুলে তাকাল। এভাবে অপমান? এভাবে! সে হাতি? একথা বলতে পারল? রিদওয়ানের কথা শুনে কুহুর লজ্জায় রাঙা মুখে অভিমান এসে ভর করল। সে অভিমান নিয়ে তাকিয়ে রইল বেডশীটের দিকে। সাদা বেডশীটের উপর ছোট্ট ছোট্ট হলুদ ফুল আঁকা।
তার অপছন্দের রং হলুদ। অথচ রিদওয়ানের কথা শুনে তার এই হলুদ ফুলটাকেই ভালো লাগছে। তাকিয়ে থাকতে মন চাচ্ছে। রুমে উপস্থিত তিন মূর্তিই মিটিমিটি হাসছে। তখন রিমি রিদওয়ানকে জোর করে কুহুর পাশে বসাল। তারপর রিদওয়ানের হাতে থাকা ফোনটা ছোঁ মেরে নিয়ে বলল,
-‘আর একটু কাছাকাছি বসো তোমরা। তোমাদের একটা ছবি তুলি।’
-‘না, এভাবেই তোলো।’
-‘এভাবে হচ্ছে না তো। এত গ্যাপ রেখে কাপল পিক কে তুলে ভাই?’
-‘সময় ভালো যাচ্ছে না। দুরত্ব বসায় রেখে চলতে হবে।’
-‘কিসের ভালো সময়?’
-‘চারদিকে রোগ বালাইয়ের শেষ আছে?’
-‘তাই বলে নিজের বউয়ের থেকেও…! ‘
-‘হুম। সেটা তো আরো আগে করা উচিত। আর রোগ বালাই কি বউ টউ বুঝবে নাকি?’
রিদওয়ান মুখে বলল ঠিকই তবে একটু সরে বসল। এভাবে বসায় শরীর স্পর্শ লাগল কুহুর। তাতেই কুহু নিজেকে গুঁটিয়ে নিলো। সে মনে মনে রিমিকে বকতে লাগল। এসবের মানে হয়? অতঃপর রিদওয়ানের ফোন নিয়ে তাদের ছবি তুলে সেটাই রিদওয়ানের ফোনে ওয়ালপেপার রাখল।
ওদের পাশাপাশি দেখে রুপক অশ্রুসিদ্ধ চোখে তাকিয়ে হাসল। কি যে সুন্দর মানিয়েছে দু’জনকে। তখন রিমি কিছু একটা বলাতে কুহু হাসছে। আর রিদওয়ান কুহুর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, এই মুহূর্তটাকে রুপক
নিজেই ক্যাপচার করল।এ দু’জন তার কলিজায় জায়গা দেওয়া মানুষ।
বলা বাহুল্য, ভীষণ কাছের। ভীষণ যত্নের। আর বেঁচে থাকাকালীন সে বন্ধুর ঋণ শোধ করতে পারবে না। করার ক্ষমতাও তার নেই। সে বন্ধুর থেকে চোখ সরিয়ে বোনের দিকে তাকাল। সে জানে না বোনটার জীবন কেমন কাটবে। কেমন থাকবে সে! তবে রিদওয়ানের উপর তার বিশ্বাস আছে।আর যাই হোক কুহুকে কষ্ট পেতে দেবে না সে। বোন এখনো লাল শাড়ি পরে আছে। মাথায় ব্যান্ডেজ। মুখে প্রসাধনী ছোঁয়া নেই।তবুও মিষ্টি লাগছে। কোনো কারণে বোধহয় হাসছিল হাসির রেশ লেগে আছে তার ঠোঁটের কোণে। বোনকে হাসতে দেখে তার নিজেরও ভালোই লাগছিল। সুখ সুখ লাগছিল। এতদিন পরেত বুকের ভার অদ্ভুতভাবে কমে এসেছে।
তারপরেও মনের কোণে জমা থাকা চিন্তার রেশ বার বার খোঁচা দিচ্ছে।
অস্বস্ত্বি লাগছে। আর তার চিন্তা একটাই কারণ রিদওয়ানের মা। বিয়ের হওয়ার কয়েক মিনিট আগে তিনি রুম থেকে বের হয়েছিলেন। তারপর
বিয়ে পড়ানো সম্পূর্ণ হতেই আবার রুমে চলে গেছে। যতক্ষণ ছিলেন মুখ ভার হয়ে ছিল। দেখেই মনে হচ্ছিল খুব কেঁদেছেন। সে তো আর বোকা নয়, বুঝে অনেক কিছুই। উনার ব্যবহার দেখে বুঝেছে, নিলুফা ইয়াসমিন এই বিয়েতে রাজি ছিলেন না। হতে পারে রিদওয়ান জোর করেই বিয়েটা করেছে। মা হিসেবে নিলুফা ইয়াসমিনের দোষ কিভাবে দিবে? প্রতিটা মা চায় তার মতমতো পুত্রবধূ পেতে। মোদ্দাকথা, কুহু অসুস্থ একথাও সবাই জানে। আর অসুস্থ মেয়েকে কে বা চায় ঘরের বউ করতে? নিজের তৈরি সংসার একটা মানুষের মেয়ের হাতে তুলে দিতে? এখানে তার মা হলেও এই কাজটাই করত। এই নিয়ে রিদওয়ানের সঙ্গে কিছুক্ষণ আগেও কথা হয়েছে। কিন্তু রিদওয়ানের একটাই কথা, ‘টেনশন করিস না সব সামলে নেবো।’
রাত তখন সাড়ে বারোটা। কুহু রিদওয়ানের রুমে বসে আছে। ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে পুরো রুম। কিছুক্ষণ আগেই খাবার টেবিলে আতিকুল রহমান বলেছে দেশে গিয়েই ধুমধাম করে তাদের বিয়ে অনুষ্ঠান করবে।
সবাইকে জানাবে তাদের বিয়ের কথা। সেই সঙ্গে এটাও বলেছেন উনি নাকি আগামি সপ্তাহে দেশে ফিরে যাবেন। এবং আশা করছেন স্ত্রী সন্তান সঙ্গে যাবে। উনি প্রিয় দেশ ছেড়ে এখানে থাকবে না। তাছাড়া কলেজের ছুটি ফুরিয়ে এসেছে। উনার কথা শুনে নিলুফা ইয়াসমিনও জানিয়েছেন
তিনিও স্বামীর সঙ্গে চলে যাবেন। রিদওয়ান সব সামলে নেবে। তবে রিমি কিছু বলে নি। বুঝ হওয়ার পর থেকে এখানে থেকে অভ্যস্ত সে। জানে না দেশে গিয়ে কতটুকু মানিয়ে নিতে পারবে। কেমন লাগবে।তবে আতিকুর
রহমান এইটুকু বলেছেন, ‘আজ অথবা কাল আমি আমার পরিবার নিয়ে দেশে থাকতে চাই। দেশে মাটিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই। এখন বাকিটা তোমাদের ইচ্ছে। ‘
উনার কথা শুনে রিদওয়ান রাজি হয়েছে। তবে তিনমাস সময় চেয়েছে। কারণ কুহুর পোপার চিকিৎসা, রিমির স্টাডির ব্যাপার, মায়ের শপ, তার জব, এসব সামলে গুছিয়ে নিয়ে যেতে তিনমাস লাগবে। ছেলেকে সময় দিয়েছেন উনি। এবং ফাইনাল কথা হচ্ছে আতিকুর রহমান আর নিলুফা ইয়াসমিন আগামী সপ্তাহে দেশে চলে যাবেন। রিদওয়ান, রিমি, কুহু আর রুপক যাবে তিনমাস পর।
হঠাৎ দরজা আঁটকানোর শব্দ কুহু চমকে উঠে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। এই মাত্র রিদওয়ান এসেছে। এসে তার দিকে একবার তাকিয়ে সোফায় মাথা এলিয়ে বসল। তারপর ঘাড় কাত করে তার দিকে তাকিয়ে বলল,
-‘ধরো, পনেরো মিনিটের জন্য এই রুমের মালিকানা দেওয়া হলো তোমাকে। তাহলে কি কি নিবো এই রুম থেকে?’
-‘পারফিউম সেট। ড্রায়ার ভর্তি চকলেট। আর ওই সুন্দর শোপিচটা।’
-‘আর? আর কিছু না?
-‘না।’
-‘সত্যি কিছু না?’
-‘না।’
-‘কেন?’
-‘কারণ পনেরো মিনিটের মধ্যে এরচেয়ে বেশি নিয়ে যাওয়া সম্ভব না তাই।’
-‘ শুধুমাত্র পারফিউম, চকলেট, শোপিচ এতেই আপনার চাওয়া শেষ?’
-‘হুম।’
-‘রুমের মালিকটা কি এতটাই তুচ্ছ যে কারো নজরে পড়ছে না?’
-‘রুমের মালিক তুচ্ছ নয় বরং অমূল্য কিছু তাই চাইতে এত ভয়।’
-‘এখনো ভয়? বিয়ের পরেও? আচ্ছা শোনো, তুমি আমাকে বিয়ে করতে চেয়েছো আমি সব ব্যবস্থা করেছি। অলরেডি বিয়েও ডান। এখন আমি যদি কিছু চাই দেবে আমাকে?’
-‘ শুনি।’
-‘ধরে নাও, আমার চাওয়াটুকু তোমার মনমতো হলো না। অথচ আমার ওটাই চাই। তাহলে সেটা কি আমাকে দেবে নাকি মুখ ফিরিয়ে নেবে?’
-‘ বলুন আগে। কি চান?’
-‘ আমি তোমার ট্রিটমেন্ট করাতে চাই। তুমি বাঁধা দিতে পারবে না। তুমি
শুধু রেগুলার মেডিসিন নিবে আর কিচ্ছু করতে হবে না, কিচ্ছু না। আই প্রমিস।’
-‘ঠিক আছে! তার আগে আমার একটা প্রশ্নের জবাব চাই।’
-‘কি?’
আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ২৭
-‘ আমি বলামাত্রই বিয়েতে রাজি হলে কেন? কিসের জন্য রাজি হলেন?’
একথা শুনে রিদওয়ান মৃদু হাসল। সে যেন আগে থেকেই জানত এমন কিছু জিজ্ঞাসা করা হবে। কুহু জবাবের আশায় তাকিয়ে আছে তার মুখ পানে। তারপর কিয়ৎকাল চুপ থেকে রিদওয়ান অকপটে জবাব দিলো,
-‘ধরে নাও, তোমার তৈরি করা ভাবনাটাই সঠিক। ভালোবাসি তোমায়।’