আলোর ভীড়ে পর্ব ৪

আলোর ভীড়ে পর্ব ৪
ইশরাত জাহান অধরা

রাত ৮টা,
প্রিয়তা অফিস থেকে বেরিয়েছে।বাস স্ট্যান্ডে বাসের জন্য বসে আছে সে। কিছক্ষন পরপর মশা কামড়াচ্ছে তাকে।শেষে বিরক্ত হয়ে বেঞ্চ থেকে উঠে বসলো।কিছুক্ষন দাঁড়াতেই হঠাত একটা কিছু শব্দ শুনতে পেলো।ভ্রু কুঁচকে এলো তার।প্রিয়তা ভালো করে খেয়াল করতেই বুঝল শব্দটা সামনে থেকে আসছে।এক পা এক পা করে এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে।কাধে থাকা ব্যাগটাকে চেপে ধরে।কিছুদুর এগুতেই দেখল কয়েকটা ছেলে একটা মেয়েকে আটকে রেখেছে।ডিস্টার্ব করছে।মেয়েটাকে যেতেই দিচ্ছে না।প্রিয়তা হাসলো।কয়েক পা এগিয়ে মেয়েটার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো।ছেলেগুলো এভাবে হুট করে প্রিয়তাকে এগিয়ে আসতে দেখে কিছুটা ভড়কে গেলো।প্রিয়তা পাত্তা না দিয়ে মেয়েটার কাধ ধরে বলল,

“কিরে?তুই এখানে? আমি তো খুঁজতে শেষ।তাড়াতাড়ি বাসায় যা।আম্মু তোর জন্য চিন্তা করছে।”
প্রিয়তার কথা শুনে মেয়েটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো।ও তো প্রিয়তাকে চিনে না তাহলে এসব কি বলছে?প্রিয়তা বুঝল মেয়েটার অবস্তা।চোখের ইশারায় বলল চলে যেতে।মেয়েটা সুযোগ পেয়ে কিছুদুর দৌড়ে পিছনে ফিরলো।যে ওকে সাহায্য করেছে তাকে এভাবে বিপদে ফেলে যাওয়াটা তো অন্যায়!মেয়েটাকে থামতে দেখে প্রিয়তা বিরক্ত হলো।মেয়েটা আবার থামলো কেন?এখন যদি ছেলেগুলা ওকে আটকে ফেলে!
“কি হলো?দাঁড়িয়ে পরলি কেন?তাঁড়াতাঁড়ি যাহ!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কিছুটা চিৎকার করেই বলল কথাটা। মেয়েটা চলে যেতেই প্রিয়তা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল।চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই ছেলেগুলার মধ্যে একজন বলল,
“কোথায় যাচ্ছো মামনি?অই মেয়েকে তো তাড়িয়ে দিলে।এখন তুমি নিজেও চলে যাচ্ছো?”
এতক্ষন প্রিয়তা সাহস দেখালেও এখন মনে হচ্ছে বড্ড বড় ভুল করে ফেলেছে সে।আশেপাশে তাকালো।দেখল অন্ধকার একটা গলির মধ্যে আছে সে।এই গলিতে কোন মানুষের আসা যাওয়ার অস্তিত্ব নেই।ভয়ে গলা শুকিয়ে আসছে প্রিয়তার।শুকনো ঠোটকে জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে বলল,
“গলির সামনের দিকে পুলিশের গাড়ি দেখেছি আমি।”
“তো?”

“তো?তো আমি যদি চিৎকার করি তাহলে ওরা এখানে এসে পরবে!”
“করো চিৎকার!মানা করেছে কে?”
প্রিয়তা বুঝলো ওদেরকে যা কিছু বলুক না কেন ওরা বিশ্বাস করবে না।ছেলেগুলা হেসে ওর দিকে এগিয়ে আসছে।প্রিয়তার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।ছেলেগুলা ওর কাছে আসতেই প্রিয়তা চিৎকার দিয়ে সামনে আংগুল দেখিয়ে বলল,
“পুলিশ!”

ছেলেগুলা চমকে পিছনে তাকাতেই প্রিয়তা দৌড় দিলো।প্রিয়তাকে দৌড়াতে দেখে ছেলেগুলার মধ্যে একজন বলল,
“আরে বল*দ মেয়েটা পালিয়ে যাচ্ছে।ধর ওকে!”
প্রিয়তা দৌড়াতে দৌড়াতে পিছনে তাকিয়ে দেখলো ছেলেগুলাও ওর পিছু পিছু দৌড়াচ্ছে।দৌড়ানোর গতি বাড়িয়ে দিলো প্রিয়তা।মনে মনে কসম কাটলো আর জীবনেও এই ঝামেলাতে জড়াবে না।পরক্ষনেই নিজেকে নিজে বকলো।ওর কারনেই তো একটা মেয়ে বেঁচে গেলো।আর ও কিনা এসব ভাবছে?সুযোগ বুঝে একটা গলিতে লুকিয়ে পরলো প্রিয়তা।গলির সামনে এসে ছেলেগুলা প্রিয়তাকে না পেয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলো।
“কোথায় গেল মেয়েটা?”
“সামনেই মনে হয়।চল। ”

ছেলেগুলা সামনে যেতেই প্রিয়তা একটা স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলল। একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছে সে।দৌড়ানোর কারনে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।গলি থেকে একটু বের হয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কাওকে দেখলো।হাঁটার জন্য রওনা দিতেই কেও একজন কাধে হাত রাখতেই প্রিয়তা ভয়ে কেঁপে উঠলো।কলিজার সব পানি শুকিয়ে গেছে।আর বুঝি রেহাই হলো না!সেইই ধরা পরে গেলো।কি লাভ হলো এত দৌড়িয়ে।চোখ মুখ খিচে একটা শ্বাস ফেলে পিছনে তাকাতেই ইনামকে দেখে রাস্তায় বসে পরল।প্রিয়তাকে এই অবস্তায় দেখে ইনামের ভ্রু কুঁচকে এলো।মেয়েটার এই অবস্তা কেন?হাঁটু মুড়ে সামনে বসে বলল,

“কি হয়েছে?”
প্রিয়তা বলার চেষ্টা করছে। কিন্তু ভয়ে আর দৌড়ানোর জন্য কোন শব্দই মুখ থেকে বের হচ্ছে না।
“কথা বলছোনা কেন?কি হয়েছে বলবে তো!এমন করছো কেন?শরীর খারাপ লাগছে?”
প্রিয়তা দুইদিকে মাথা নাড়িয়ে না বুঝালো।ইনাম প্রিয়তার হাত ধরে টেনে উঠালো।প্রিয়তা নিজেকে সামলে বলল,
“ঠিক আছি আমি।”
“সামনেই গাড়ি পার্ক করা আছে।চলো।”
“লাগবে না।আমি নিজে যেতে পারবো।”
“কিসে করে যাবে?”
“বাসে করে।”
ইনাম রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“আমার গাড়িতে যেতে সমস্যা কোথায়?”

“একজন স্টাফ হয়ে বসের গাড়িতে উঠবো?অফিসের কেও দেখে ফেললে খারাপ মনে করবে।”
“তুমি আমার স্টাফ হওয়ার আগে আমার বউ হয়েছো!কে কি মনে করলো তাতে আমার কিছু আসে যায় না!”
ইনামের কথা শুনে প্রিয়তা হাসলো।প্রিয়তার হাসি দেখে ইনাম বলল,
“হাসার কি হলো?হাসছো কেন?”
প্রিয়তা হাসি থামিয়ে বলল,
“আপনি আমাকে নিজের ওয়াইফ মনে করেন কথাটা শুনে হাসি পেলো।”
প্রিয়তার কথাতা শুনে ইনামের মুখ চুপসে গেলো।কথা বলতে বলতে হঠাত ছেলেগুলার কথা বলার আওয়াজ শুমতে পেয়ে প্রিয়তা ইনামের হাত টেনে গলির ভেতর ঢুকে পরল।হঠাত এমন ঘটনায় ইনাম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।

“কি হয়েছে? এভাবে টেনে….”
কথা শেষ করার আগেই প্রিয়তা হাত দিয়ে ইনামের মুখ চেপে ধরলো।ফিসফিসিয়ে বলল,
“প্লিজ এখন কোন শব্দ করবেন না।নইলে ধরা পরে যাবো!”
ইনামের মাথায় আসলো না কিসের ধরা পরে যাওয়ার ভয় করছে প্রিয়তা?চোখে মুখে প্রিয়তার গরম নিঃশ্বাস পরতেই ইনামের মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিলো।চোখ পরল ভয় পাওয়া প্রিয়তার দিকে।চোখ মুখ খিচে কি যেন বিড়বিড় করছে।ব্যাস এই অবস্তায় প্রিয়তাকে দেখে ইনামের হার্ট বিট করা থেমে গিয়েছে।সে এক দৃষ্টিতে প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে আছে।পরক্ষনেই বিষয়টা মাথায় আসতেই ইনাম মুখ ঘুরিয়ে ফেলল অন্যদিকে।এ সে কি করছে?প্রিয়তার প্রেমে পরে যাচ্ছে!এটা মোটেও উচিত না।ওর কোন অধিকার নেই প্রিয়তার প্রেমে পরার।ওকে ভালোবাসার।ছেলেগুলা যেতেই প্রিয়তা ইনামের থেকে সরে আসলো।গলি থেকে বের হয়ে সামনে হাঁটতে হাঁটতে বলল,
” আজকে সবার সামনে আপনি খাবার দিয়েছেন বলে সবাই অলরেডি কৌতুহল হয়ে আছে।ওদের কৌতুহল আর বাড়বেন না।”
ইনাম কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারল না।প্রিয়তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।

প্রিয়তা বাস স্ট্যান্ডে আসতে আসতে ভাগ্যবশত একটা বাস পেয়ে গেলো।বাসে উঠে মাঝের একটা সিটে বসলো।কিছুক্ষন বসে থেকে ব্যাগ থেকে একটা ইয়ারফোন বের করে কানে গুজে সিটে হেলান দিয়ে মাথা এলিয়ে দিলো।ইনাম গাড়ি চালাচ্ছে আর বাসে থাকা প্রিয়তার দিকে তাকাচ্ছে।প্রিয়তা জানালার বাইরে তাকালে হয়তবা গাড়িতে করে ফলো করা ইনামকে দেখতে পেতো।ইনামের মাথায় এটাই আসছে না মেয়েটা তখন অইখানে কি করছিলো?আর অইভাবে ভয়ই বা পেয়েছিল কেন?আরেকটু হলে বোধহয় হার্ট অ্যাটাকই করে ফেলতো!ভেবেই আবার বাসে থাকা প্রিয়তার দিকে তাকালো।প্রিয়তা চোখ বন্ধ করে গান শুনতে ব্যস্ত।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল ইনাম।কে বলবে এই মেয়ে একটু আগে ভয় পেয়েছিলো?

প্রিয়তা বাসার আসার একটু পরেই ইনাম বাসায় আসলো।ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানির বোতল বের করে গ্লাসে ঢেলে গ্লাসের পানি খেয়ে নিলো।প্রিয়তার দিকে তাকিয়ে ও খাবে কিনা?প্রিয়তা এগিয়ে এসে নিজেই গ্লাসে পানি নিয়ে খেয়ে খালি গ্লাসটা টেবিলের উপর রেখে ইনামের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমাকে আপনার ঠিক কি কারনে পছন্দ না সেটা কি বলবেন?আসলে বাসায় ফিরার সময় সারাটা রাস্তায় এই চিন্তাটা মাথায় ঘুরঘুর করেছে।ইভেন অফিসেও।”

ইনাম চুপ করে রইলো।এর উত্তর ওর কাছে নেই।থাকলেই না দিবে!ইনামকে চুপ করে থাকতে দেখে প্রিয়তা চোখ ছোটছোট করে বলল,
“আচ্ছা আপনি কি মেয়ে পছন্দ করেন না?ছেলে পছন্দ করেন?”
কিছু একটা ভেবেই মুখে হাত দিয়ে বলল,
“আপনি গে?অইযে এলজিবিটি! এই গ্রুপের সদস্য আপনি?”

আলোর ভীড়ে পর্ব ৩

ইনাম অবাক হয়ে গেল প্রিয়তার কথা শুনে।
“কিসব বলছো তুমি?মাথা ঠিক আছে তোমার?”
“আপনি গেও না আবার অন্য কোন মেয়েকে পছন্দও করেন না তাহলে আমাকে না পছন্দ করার কারন কি?”

আলোর ভীড়ে পর্ব ৫