আলোর ভীড়ে পর্ব ৬

আলোর ভীড়ে পর্ব ৬
ইশরাত জাহান অধরা

প্রিয়তা হাতে থাকা কাগজ টেবিলের উপর রেখে এশার দিকে ফিরে বলল,
“আমার জানামতে আপনিও আমার মতোই এই অফিসের স্টাফ।তাহলে একজন স্টাফ হয়ে বসের নাম ধরে কি করে ডাকছেন জানতে পারি?”

প্রিয়তার কথা শুনে এশা হেসে প্রিয়তার সামনে এসে বলল,
“আমি আর ইনাম ছোটবেলার ফ্রেন্ড। বলতে পারো ক্লাস ওয়ান থেকে আমাদের পরিচয়।ওকে আমি ইনাম বলে ডাকতেই পারি।সবচেয়ে বড় কথা ও নিজেই আমাকে পারমিশন দিয়েছে।আশা করি তোমার মনে থাকা কনফিউশন ক্লিয়ার করতে পেরেছি আমি!”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

কথাটা শুনে প্রিয়তার মুখ কালো হয়ে গেলো।কই উনি তো বলেননি যে উনার মেয়ে বন্ধু ছিলো।এই মেয়েটার জন্যই বুঝি তাকে ইগনোর করছে ইনাম?এছাড়া আর কি কারন হবে?প্রিয়তার মুখে আধার নামতে এসে এশা হেসে বলল,
“আমার মনে হয় আসলেই ইনাম তোমাকে দয়া করে আমার রান্না করা খাবার দিয়েছে।ও আবার আমার হাতের রান্না অনেক পছন্দ করে। কয়েক মিনিটেই দুই দিন প্লেট খেয়ে ফেলে।আমি ওকে শুধুই সন্দেহ করছিলাম।বাই দা ওয়ে টিফিন বক্সটা ফেরত দিও।”

“দেখুন আমি আপনার দেওয়া খাবার তো আর ফেরত দিতে পারব না।কারন এটা আমি খেয়ে ফেলেছি।এতক্ষনে আমার পেটে হজমও হয়ে গেছে।তাই আমি খাবারের বিল পরিশোধ করতে চাইছি।
এশা অবাক হয়ে বলল,
“মানে?”
“মানে আমি যেহেতু আপনার খাবার খেয়েছি সেটার বিল পরিশোধ করতে চাইছি।কত টাকা দিলে বিল পরিশোধ হবে?
এশা রেগে বলল,

” তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো!আমার টাকার এত প্রয়োজন পরেনি যে তোমার কাছ থেকে টাকা নিতে হবে।”
প্রিয়তা হেসে বলল,
“অহ তাই নাকি?আপনি যেভাবে বারবার আমার কাছে এসে খাবারের কথা বলছেন মনে হলো আপনার খাবার আমি খাই নি। কোন গুরত্বপূর্ণ সম্পদ খেয়ে ফেলেছি।সেই খাবার ছাড়া আপনি অচল!অই খাবারটাই মনে হয় আপনার বাঁচার শেষ সম্পদ ছিলো”

“তুমি কিন্তু বেশি বাড় বেড়ে যাচ্ছো!”
প্রিয়তা না বুঝার ভান করে বলল,
“আমি যা সত্য তাই বলেছি। এখানে বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক কি?
এশা রেগে প্রিয়তার গালে থাপ্পড় দিতে গেলে প্রিয়তা এশার জাত ধরে ফেলল,
” আমি আপনার কোন চাকর না যে আপনি আমার গায়ে হাত তুলবেন।কিংবা ম্যাডাম ও নন।মনে রাখবেন আপনি আমার মতোই এই অফিসের জাস্ট একজন স্টাফ।তাই আমাকে নিজের পিএর মতো ট্রিট করবেন না।আমি আপনার আন্ডারে কাজ করছি না।সুতরাং নিজেকে কনট্রোল করুন!”

বলেই হাত ছেড়ে দিয়ে চেয়ারে বসে পরল।কম্পিউটারে টাইপ করতে করতে বলল,
“আপনার কথা বলা শেষ হলে যেতে পারেন।আমার কাজ আছে।”
এশা আশেপাশে তাকাতেই দেখল অফিসের সবাই ওর দিকে তাকিয়ে আছে।কিছু বলতে যেয়েও বলতে পারল না।রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলল,

“তোমাকে আমি পরে দেখে নিব!তোমার মতো বেয়াদপ,অসভ্য মানুষ কি করে অফিসে কাজ করে সেটা আমি দেখে ছাড়ব।”
এশার কথা শুনে প্রিয়তা হাসলো।হেসে বলল,
“বেয়াদপ,অসভ্যতার তো এখনো কিছুই দেখেননি!একবার দেখানো শুরু করলে শুধু দেখতেই থাকবেন।থামার আর নাম গন্ধ থাকবে না!”

প্রিয়তা কাজ করতে করতে খেয়াল করলো ওর অনেক ঠান্ডা লাগছে।হঠাত ঠান্ডা লাগার কারন খুঁজে পেলো না।জ্বর উঠবে নাকি?গায়ের ওড়নাটা ভালো করে সারা গায়ে পেচিয়ে নিলো।তবুও ঠান্ডা কমছে না।ভাবলো এসির পাওয়ার কমাবে।পরমুহূর্তেই নিজের সিদ্ধান্ত বদলালো।ওর ঠান্ডা লাগছে বলে এসি কমালে তো অনেকের অসুবিধা হবে।তাই দাঁতে দাঁত চেপে কাঁপতে কাঁপতে কাজ করতে লাগলো।

ইনাম ফাইল দেখতে দেখতে হঠাত নজর গেলো সামনে থাকা কাঁচের দিকে।ওর একদম সোজা বরাবর প্রিয়তার সিট।যার ফলে কাঁচের দিকে তাকালেই প্রিয়তাকে স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়।ইনাম তাকাতেই দেখল প্রিয়তা কাঁপতে কাঁপতে গায়ে ওড়না পেচাচ্ছে।শীত লাগছে নাকি ওর?আজব এই গরমে কার শীত লাগে?তাও এই ভরা দুপুর বেলা?ইনাম বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।ভাবল কাওকে বলবে এসি কমাতে।পরক্ষনেই ভাবল না থাক পরে আবার কি না কি মনে করে।যেহেতু প্রিয়তা নিজে চাইছে ওর সম্পর্কটাকে গোপন রাখতে সেখানে ও কি করে মানুষকে বলে বেরাবে?তাই কেবিন থেকে বের হয়ে কিছুদুর হেঁটে এসির রিমোট নিয়ে পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে দ্রুত পায়ে চলে আসতে নিলেই একজন স্টাফ বলল,

“স্যার আপনি?”
ইনাম থতমত খেয়ে নিজেকে সামলিয়ে বলল,
“দেখছিলাম কেও কাজে ফাকি দিচ্ছে নাকি!যান গিয়ে কাজ করুন।”
বলেই নিজের কেবিনে দ্রুত পায়ে হেঁটে এলো।যাক বাবা প্রিয়তা ওকে দেখেনি।দেখলে বুঝে ফেলতো!
হঠাত ঠান্ডা কমতেই প্রিয়তা অবাক হয়ে গেলো।ওর কি ঠান্ডা কমে গেলো?নাকি এসির পাওয়ার কমে গেলো?যেটাই হোক মনে মনে খুশি হলো।এতক্ষনে ঠান্ডায় পুরো জমে যাচ্ছিলো।আরেকটু থাকলে নির্ঘাত বরফ হয়ে যেতো!খুশি মনে নিজের কাজে মন দিলো।

রাতে,
প্রিয়তা অফিস শেষ করে রাস্তায় দাঁড়ালো।রাস্তা পার হবে সে।হঠাত পাশে এসে কেও দাঁড়িয়েছে টের পেতেই পাশ ফিরে তাকাতেই ইনামকে নজরে এলো।ইনামকে দেখা মাত্রই সকালে এশার বলা কথাগুলা মনে পরে গেলো।মুখ ফিরিয়ে নিলো ইনামের থেকে।গাড়ি একটু কমতেই প্রিয়তা রাস্তা পার হওয়া শুরু করলো।রাস্তা পার হয়ে অপর পারে যেতেই পিছনে ফিরে তাকাতেই দেখল ইনাম রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে।মাথায় হাত চেপে চোখ মুখ খিচে।ভ্রু কুচকে এলো প্রিয়তার।লোকটার আবার কি হলো?একটু আগেই তো ভালো ছিলো।ভাবনার মাঝখানেই দেখলো একটা ট্রাক সজোড়ে ইনামের দিকে এগিয়ে আসছে।কাধে থাকা ব্যাগটা পরে গেলো রাস্তায়।দৌড়াতে দৌড়াতে চিল্লিয়ে বলল,

“ইনাম সরে যান।আপনার পিছনে গাড়ি।”
ইনাম প্রিয়তার কথায় কোন প্রতিক্রিয়া করলো বলে মনে হলো না।ও ওর মতোই মাথা চেপে দাড়িয়ে আছে।প্রিয়তা দৌড়ে এসে ইনামকে দুই হাতে ধরে সাইডে নিয়ে আসতেই দুইজনেই রাস্তায় পরে গেলো।এতক্ষনে ইনামের হুশ এসেছে।
“পাগল আপনি?রাস্তার মাঝখানে এভাবে দাঁড়ায় কেও?আমি ঠিক সময় না আসলে কি হতো?”
জোরে জোরে কয়েকটা শ্বাস নিয়ে বলল,

“কি হয়েছিলো?অইভাবে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলেন কেন?শরীর খারাপ লাগছিলো?”
“অই মাথাটা ব্যাথা করছিলো।”
“এখনো ব্যথা করছে?”
“নাহ!”
প্রিয়তা বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে ডান হাত বারিয়ে বলল,
“উঠুন!”
ইনাম প্রিয়তার হাত না ধরেই উঠে দাঁড়ালো।প্রিয়তার মুখ কালো হয়ে গেলো।লোকটা ওর হাতও ধরতে চায়না?ওর হাতে কি ময়লা লেগে ছিলো যে ধরলো না।
“বাসে করে কি যেতে পারবেন?নাকি টেক্সিতে করে যাবেন?”
কিছু একটা ভেবে বলল,

“আপনি এই শরীর নিয়ে তো বাসে যেতে পারবেন না। আপনি দাঁড়ান! আমি টেক্সির ব্যবস্তা করছি।”
টেক্সি ডেকে এনে ইনামকে ধরে বসাতে যাওয়ার জন্য হাত বারাতেই ইনাম বাধা দিয়ে বলল,
“আমি পারব!”
বলেই গাড়ির দরজা খুলে সিটে বসলো।প্রিয়তা কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে নিজেও সিটে বসলো।
“আপনার মাথা ব্যাথা কি আজকে বাসে চড়ার কারনে হয়েছে?”
“নাহ।মাঝে মাঝে কাজের চাপে মাথা হয়।এটা তেমন ব্যাপার না।”
“এর আগেও হয়েছে?”
“হুম।”

“তাহলে তো আপনাকে গাড়ি নিয়ে বের হতে দেওয়াটা ঠিক হবে না।যদি ড্রাইভ করার সময় আপনার এভাবে মাথা ব্যথা হয় তাহলে এক্সিডেন্ট করে বসবেন!আপনি ড্রাইভার রাখার ব্যাবস্তা করুন!”
“ভালো ড্রাইভার পাওয়া কি এতোই সহজ?”
“তাও ঠিক। কিন্তু ততদিন আপনাকে একাও ছাড়া যায় না!”
কিছুক্ষন পর কিছু একটা ভেবে বলল,

“আপনি এক কাজ করবেন।যতোদিন ড্রাইভার না পান ততদিন আমার সাথে অফিসে যাবেন।”
“কিন্তু তুমি তো বলেছো অফিসের কেও দেখে ফেললে ঝামেলা হবে!”
“আজকের মতো করেই যাবো।আর যাওয়ার পথে একে অপরের সাথে কোন কথা বলব না তাহলেই তো কেও বুঝবে না।”
প্রিয়তার কথা শুনে ইনাম কিছু না বলে জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো।

আলোর ভীড়ে পর্ব ৫

বাসায় পৌছে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো প্রিয়তা।তোয়াল দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বারান্দায় গিয়ে ভেজা তোয়াল মেলে দিয়ে দিয়ে রুম থেকে বের হতেই ইনাম ডাক দিলো।প্রিয়তা পিছনে ফিরতেই…..

আলোর ভীড়ে পর্ব ৭