আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৭

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৭
জান্নাত সুলতানা

সাদনান বসে আছে বউয়ের পাশে একটা টুলে।অনেক্ক্ষণ হয় প্রিয়তা কে কেবিনে দেওয়া হয়েছে। জ্ঞান ফিরতে একটু সময় লাগবে জানিয়েছেন ডক্টর তবে সন্ধ্যার আগেই ফিরতে পারে এরকম টাও আশ্বাস দিয়েছে।শরীর বেশ দুর্বল।রক্ত দিতে হয়েছে দুই বেগ।রক্ত লাগবে সেটা ডক্টর আগে থেকেই জানিয়ে রেখেছিল। সেইজন্য কোনো ঝামেলা হয় নি।এক ব্যাগ আয়ান দিয়েছে আয়না নিজেও দিতে চেয়েছিল কিন্তু আয়নার শরীর এর কন্ডিশন ভালো নয়।

কয়েকমাস আগেই একটা বাচ্চা নষ্ট হয়ে গিয়েছে যার জন্য আয়নার অবস্থা তখন খারাপ ছিল।তিন ব্যাগ রক্ত লেগেছিল। এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয় নি তাই রক্ত দিতে চাইলে কেউ রাজি হয় নি।কবির এর থেকে নিয়েছে আরো এক ব্যাগ।যদিও কবির কে কেউ বলি নি। কবির নিজ ইচ্ছে দিয়েছে।যতোই হোন প্রথম অনুভূতি। কোনো দিন কোনো মেয়ের আশেপাশে ঘেঁষে নি।মা ছিল না বিধায় বাবা কে বেশ মানতো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বাবার কষ্ট হবে এমন কিছু কবির কখনো করতে চায় নি।যখন প্রিয়তার সাথে বিয়ের কথা হলো তাই কবির কোনোরূপ ভাবনা চিন্তা করলো না।বাবার উপর বরাবরই বিশ্বাস সাথে সম্মান করতো বাবার সব ডিসিশন কে।তাই বিয়ের কথাবার্তা চলাকালীন সময় কবিরের প্রিয়তার প্রতি একটা অনুভূতি ছিল।যদিও কবির প্রিয়তা কে দেখে নি।তবে সব জল্পনা কল্পনা প্রিয়তা কে ঘিরেই শুরু হয়েছিল। কিন্তু এখন সেসব কিছুই নেই।এখন সব বউয়ের আর নিজের একমাত্র ছেলে তুরাগ এর জন্য।
সন্ধ্যায় প্রায় হয়ে এসছে।

হসপিটালে সাদনান ছাড়াও প্রিয়তার মা সাদনানের মা আর আয়ান রয়েছে। আর বাকিরা সবাই বেবি দেখে চলে গিয়েছে। বাড়িতে এতো বড়ো একটা অনুষ্ঠান তাই ওখানে থাকাটাও জরুরি। কিন্তু সবাই রাতে আসবে জানিয়েছে। কিন্তু সাদনান বারণ করছে। বউ সে সকালেই বাড়ি নিয়ে যাবে।কিন্তু ডক্টর তাসলিমা বুঝিয়ে-সুঝিয়ে তিন দিন থেকে যাওয়ার কথা বলেছে। নয়তো সমস্যা হতে পারে।

তাছাড়া মেয়ে বাবু টা ভূপৃষ্ঠ হওয়ার পর কান্না করে নি।অবস্থা খারাপ দেখে মেয়ে বাবু টা কে চব্বিশ ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখতে হবে। সাদনান সেই থেকে রেগে আছে। কিন্তু সব দিক ভেবে তিন দিন থেকে যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছে। তারজন্য আলাদা কেবিন বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু সে ওই কেবিনের আশেপাশে যায় নি। বউ কে কেবিনে দেওয়ার পর সেই যে এখানে এসে বসে এখনো এখানেই বসে আছে।
সালেহা বেগম আর মিতা সওদাগর ওই কেবিনে রয়েছে বর্তমানে।আর ছেলে বাবুটা ওনাদের সাথে রয়েছে।মেয়ে বাবুটা কে কাল সকালে মায়ের সাথে দেওয়া হবে।
সাদনান এসবই ভাবছিল।কিন্তু হঠাৎ শুনতে পেলো কেবিনে কেউ নক করছে।
সাদনান গম্ভীর কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,

-“কে?”
সালেহা বেগম দরজা ঠেলে ভেতরে প্রবেশ করলো। সাদনান মা কে দেখে চিন্তিত কণ্ঠে জিগ্যেস করলো,
-“বাবু কোথায়?
ঠিক আছে ও?”
-“হ্যাঁ ঠিক আছে।
মনে হয় পেটের ক্ষুধায় কান্না করছে কিন্তু ওর তো এখন জ্ঞান ফিরে নি।”

সাদনান প্রিয়তার দিকে তাকালো। সালেহা বেগম ক্লান্তিতে নুইয়ে থাকা ছেলের দিকে তাকিয়ে মলিন হয় মুখ।সফেদা রঙের পাঞ্জাবি টা কুঁচকে আছে। সব সময় ফিটফাট পরিপাটি হয়ে থাকা ছেলে তার আজ কত এলোমেলো। ছেলে-মেয়েদের চিন্তা বউয়ের চিন্তায় অস্থির। এখনো যেনো তা ঠিক হয় নি।অবশ্য বউয়ের জ্ঞান ফিরলে ছেলে ওনার একদম ফিট হয়ে যাবে তা তিনি নিশ্চিত।তিনি কিছু টা এগিয়ে এসে বলল,
-“আব্বা তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাবু’র কাছে বসো।আমি এখানে আছি।”

সাদনান মায়ের দিকে একবার তাকালো।টানা সতেরো ঘন্টা শরীরে একটা পোষাক জড়ানো। নাওয়াখাওয়া পর্যন্ত কিছুই সে করে নি।শরীর কেমন মেজমেজ করছে। তাই ইচ্ছে না থাকা শর্তেও বাধ্য হয়ে সালেহা বেগম এর জোড়াজুড়িতে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।সাদনানের এসিস্ট্যান্ট আগে থেকে সব ব্যবস্থা করে রেখে ছিল সাদনান কোনো রকম ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে ছেলের কাছে এলো।বাবু টা তখন ঠোঁট উলটে একটু পরপরই পেটের ক্ষুধায় কান্না করছে। মিতা সওদাগর কোলে নিয়ে রেখেছ।সাদনান বেরিয়ে এসে ছেলে কে দেখলো।কিছু সময় নীরব থেকে মিতা সওদাগর কে উদ্দেশ্য করে বলল,

-“মা আপনি কিছু খেয়ে রেস্ট করুন।
আমি ওকে ওর মায়ের কাছে নিয়ে যাচ্ছি।”
মিতা সওদাগর কিছু বলতে গিয়েও বলে না।
সেই বেলা বারোটা বাজে এসছে। মাঝে শুধু পানি খেয়েছে।সুযোগ যে ছিল না খাওয়ার জন্য তেমন নয়।আসলে খাবার খাওয়ার মতো মনের অবস্থা ছিল না।যদিও এখনো নেই মেয়ে টার এখনো জ্ঞান ফিরে নি।তবে ভাবলেন ফ্রেশ হয়ে মেয়ের কাছে যাবে। সাদনান ছেলে কে নিজের কোলে নিলো।মিতা সওদাগর অবশ্য বারণ করলো কিন্তু সাদনান পারবে বলে আশ্বাস দিয়ে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে এলো।আয়ান তখন কেবিনে ঢুকতেই যাচ্ছিল।কিন্তু সাদনান কে বেরিয়ে আসতে দেখে এগিয়ে এসে বলল,

-“তুই কিছু খেয়ে নিলে ভালো হতো না!”
-“এখন না।”
ছেলের গায়ে বেবিটাওয়াল টা ভালো করে জড়িয়ে নিতে নিতে কথা টা বলেই সাদনান পাশের কেবিনে ঢুকে গেলো।
আয়ান তাকিয়ে রইলো সেদিকে।বোন কে সে ভীষণ ভালোবাসে।সব সময় চাইতো বোনের জীবনে এমন কেউ আসুক যাতে করে তাদের থেকেও বেশি ভালোবাসে তার বোন কে।সত্যি এসছে।

সাদনান ছেলে কে নিয়ে বসে আছে। সালেহা বেগম একটু আগে পাশের কেবিনে গিয়েছে।প্রিয়তার জ্ঞান ফিরেছে।মিনিট পাঁচ এক হবে। ডক্টর চেক-আপ করে বলেছে গরম খাবার খাইয়ে তারপর বেবি কে ফিডিং করাতে।মিতা সওদাগর মেয়ে কে ফ্রেশ করিয়ে খাবার খাইয়ে বেশ কিছুক্ষণ পর চলে গেলো।
সাদনান পুরো টা সময় ছেলে কে কোলে নিয়ে হাঁটা হাঁটি করলো কিছুক্ষণ সময় আবার দূরে সোফায় বসে গম্ভীর হয়ে বসে রইলো।কিন্তু শাশুড়ী যাওয়ার সাথে সাথে বউয়ের পাশে এসে ছেলে কে শুইয়ে দিয়ে নিজে আগে বউয়ের কপালে ভালোবাসার পরশ দিলো।
প্রিয়তা চোখ বন্ধ করতেই বা চোখ দিয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো।ফুঁপিয়ে বলে উঠলো,

-“আমার মেয়ে!”
সাদনানের বুকের ভেতর ধক ধক করতে লাগলো। মেয়ের জন্য সে নিজেও পাগল প্রায়। কত শখ ছিল মেয়ে আসার পরপরই সে আগে মেয়ে কে কোলে নিবে।আদর করবে। নিজের দুই টা অস্তিত্ব দুই টা প্রাণ একসাথে ছুঁয়ে দেখবে।কিন্তু ভাগ্য সহায় হলো না। কিন্তু নিজের ভেতর চলতে থাকা তীব্র যন্ত্রণা চেপে রেখে বউয়ের কপালে ফের ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দিয়ে আলগোছে জড়িয়ে ধরে নিলো।মাথায় পরপরই কয়েকবার অধর স্পর্শ করে মোলায়েম কণ্ঠে জানালো,

-“আছে জান।
সকালে আমরা ওকে আমাদের কাছে নিয়ে আসবো।”
-“কেনো এমন হলো!
ওর কষ্ট হচ্ছে।”
সাদনান প্রিয়তা কে ছেড়ে দিয়ে ছেলে কে কোলে তুলে নিয়ে বলল,
-“কখন থেকে কান্না করছে।”
প্রিয়তা বসে থেকে ছেলে কে কোলে নিতে চাইলো।কিন্তু সাদনান দিলো না। নিজের হাতের ভাঁজে রেখে এগিয়ে দিয়ে বলল,

-“তুমি মাথায় ধরো শুধু।
কোলে নিলে ব্যাথা পাবে।”
প্রিয়তা লজ্জা পাচ্ছে। চোখ ঘুরালো এলোমেলো। মিনমিন করে বলল,
-“মাকে ডেকে দিন না।”
-“কেনো?”
সোজাসাপটা প্রশ্নে প্রিয়তা অপ্রস্তুত হলো। সাদনান বুঝতে পারলো বউ তার লজ্জা পাচ্ছে।তাই মুখ গম্ভীর ভাব রেখেই ফের শুধালো,

-“মা হয়তো রেস্ট করছে।
তুমি একা পারবে না।
আমি সাহায্য করছি।”
সত্যি প্রিয়তা একা পারবে না।তাই বাধ্য হয়ে সাদনানের হাতে রেখেই বাবু কে ফিডিং করালো।চোখ বন্ধ করেই বাবু টা কিছু সময় ব্যবধানে ঘুমিয়ে গেলো।

সাদনান ছেলে কে পাশের দোলনায় শুইয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে এসে বউয়ের পাশে শুয়ে পড়লো।এক হাত আলগোছে বউ কে জড়িয়ে রাখে তবে বউয়ের যেন অসুবিধা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখলো।
বেড টা যথেষ্ট বড়ো। কিন্তু প্রিয়তা নড়াচড়া করে সরতে পারছে না। সাদনান জড়িয়ে রেখেছে বিধায়।
সাদনান চোখ বন্ধ করেই বউয়ের নড়াচড়া টের পেয়ে চোখ বন্ধরত অবস্থায় বলে উঠলো,

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৬

-“উম,জান নড়ে না।ভীষণ ক্লান্ত আমি।
একটু ঘুমোতে দাও।অনেক দিন হয় শান্তিতে একটু ঘুমোতে পারি না।”

আমার তুমি সিজন ২ পর্ব ৩৮