বিয়ে থা পর্ব ৪০
তাহিনা নিভৃত প্রাণ
ধ্রুব ছুটিতে আছে৷ সেজন্য ভেবেছে এই ছুটিতে নিনীকাকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাবে। যেই ভাবা সে-ই কাজ। তাকে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে ঘুমানো নিনীকাকে ডাকতে লাগলো।
‘ মিসেস? ও…মিসেস। ‘
নিনীকা গভীর ঘুমে। ধ্রুবর ডাক তার কানে গেলো না। ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হাসলো। নিনীকার শরীর থেকে কাঁথা সরিয়ে দিলো। উন্মুক্ত শরীরে নিজের হাতের বিচরণ করাতে লাগলো। নিনীকা শিরশির অনুভব করে ফট করে তাকিয়েছে। ধ্রুব তখন আবারও ডাকলো,
‘ ও মিসেস…’
নিনীকা হাত বাড়িয়ে ধ্রুবর গালে রাখলো। এ কয়দিনে চাপদাড়ি হয়ে গেছে। চাপদাড়িতে তার হাসবেন্ড কে অন্যরকম সুন্দর লাগে দেখতে। মুখের সাথে মুখ লাগিয়ে রাখলো। দাঁড়ির খুঁচা তে গালে ব্যথা পেলেও সরে গেলো না। ধ্রুব এক হাত গালে ছোয়ালো।
‘ আমার বউ কি শুনবে না? ‘
নিনীকার কন্ঠো শোনা গেলো।
‘ শুনছি, বলো তো! ‘
‘ চলো হানিমুনে যাই? ‘
‘ আচ্ছা..’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
ধ্রুব গালে ঠোঁট চেপে ধরলো।
‘ কোন কান্ট্রিতে যেতে চাও? ‘
‘ যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যাবো। ‘
‘ পছন্দ তো জানাও, সেখানেই যাবো না-হয়। প্রথম বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে এতোটুকু তো তোমাকে দিতেই পারি মাই ওয়াইফ। ‘
‘ আমাদের তিন মাসের সংসারের জিনিসপত্র গুলো কি করেছো? ‘
ধ্রুব গালে নাক ঘষলো।
‘ বাড়িতে এসে পড়বে কয়েকদিনের ভেতরে। ‘
নিনীকা পিঠ আঁকড়ে ধরলো শক্ত করে। ধ্রুব ঠোঁটে ঠোঁট লাগিয়ে বলল,
‘ আগে বলো কোন কান্ট্রিতে হানিমুনে যেতে চাও, তারপর আদর পাবে। ‘
নিনীকা ঠোঁট ফুলালো,
‘ বলবো না যাও। ‘
‘ বলো না প্লিজ। ‘
‘ বলবো না, বলবো না, বলবো না। তোমার আদরও লাগবে না। ‘
ধ্রুবর চোখ কপালে,
‘ আদর লাগবে না কেন? এইতো কয়েক সেকেন্ড আগেও জাপ্টে ধরেছিলে! ‘
নিনীকার কন্ঠে অভিমান,
‘ তুমি আদর দিলে দাও না দিলে নাই। আমি ফারিনের ঘরে ঘুমাবো আগামীকাল থেকে। ও অনেকবার বলেছে ওর ঘরে থাকতে। ‘
ধ্রুবর চোখ বড়বড় হয়ে গেলো। জাপ্টে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো।
‘ খবরদার মিসেস, তোমার ওই শয়তান ননদীনির কথা ভুলেও শুনতে যেও না। ও সবমসময়ই আমাকে জ্বালাতে চেষ্টা করে। ‘
‘ শুনবোই। ‘
‘ মে*রে ফেলবো না তোমায়? শুধু ঘর থেকে এক পা বের করে দেখিও। ‘
নিনীকা ধ্রুবর থেকে নিজেকে ছাড়াতে চেষ্টা করলো। বলিষ্ঠ শরীরের মানুষ টা তাকে যেভাবে জাপ্টে ধরেছে বের হওয়া অসম্ভব। ধ্রুব গলায় মুখ গুঁজে দিয়েছে।
‘ দু’হাতে শক্ত করে ধরো মিসেস। ‘
নিনীকা মুখ ঘুরিয়ে নিলো। ধ্রুব নিজের কাজ করতে লাগলো। এক সময় নিনীকা ঠিকই জড়িয়ে ধরলো। ধ্রুব ঠোঁটে দাঁত বসিয়ে দিলো।
‘ ধরলে যে? ‘
‘ উফ..অসভ্য লোক একটা। ‘
ধ্রুব উপর থেকে নেমে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। নিনীকা চোখের পলকে হাত পা উপরে তুলে গলা জড়িয়ে ধরলো।
‘ এই এই বাজে লোক, তুমি এতো অভিমান করো কেন? ও আল্লাহ মেজর মানুষ এতো অভিমান কিভাবে করতে পারে! ‘
ধ্রুব নড়লো না। নিনীকা টেনে সোজা করলো। বুকের উপর উঠে বসলো। হাত দিয়ে বন্ধ চোখজোড়া খুলতে চেষ্টা করলো। দু’হাতে গাল টেনে দিতে লাগলো। ঠোঁট এদিক সেদিক করতে লাগলো। ধ্রুব তবুও চোখ মেললো না। নিনীকা ঝুঁকে মাথায় চুমু খেলো৷
‘ আমার হ্যান্ডসাম বর। আমার লক্ষী বর। আমার সুন্দর জামাই৷ আমার প্রিয় বর, আমার মেজর। আমার ধ্রুব, আমার ভবিষ্যত বাচ্চার বাবা। আর অভিমান করে থেকো না। উম্মাহ। ‘
ধ্রুব শব্দ করে হেসে ফেললো। কাঁথা টেনে উপরে দিয়ে জাপ্টে ধরলো নিনীকাকে।
‘ আমার লক্ষীটি, আমার পুতুল, আমার আদুরে মিসেস। তোমার কপালে লক্ষ কোটি উম্মাহ। ‘
নিনীকা আগের থেকে অনেক গুলোমোলো হয়েছে। সবই ধ্রুবর যত্ন আর ভালোবাসার জন্যে। ধ্রুবর ঠোঁটকাটা মুখ দিয়ে বের হয়ে এলো,
‘ গুলোমোলো মিসেসকে আদর করতে এতো ভালো লাগে কেন? ‘
‘ সে আপনার বউ তাই। ‘
‘ আমি কখনো মা বোন ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সাথে মিশতাম না মিসেস। আমার কোনো মেয়ে বন্ধু ও ছিল না। সমবয়সী ক্লাসমেইট রা বলতো আমি আন-রোমান্টিক। আমার বউ বিয়ের দুদিন পর আমাকে ছেড়ে পালিয়ে যাবে। ‘
‘ জানি মেজর। ফারিন তোমার সম্পর্কে বলেছে। বাবা সেজন্যই তোমাকে জোর করে রাজি করিয়ে আমার সাথে বিয়ে দেন, নাহলে নাকি তুমি কখনো বিয়েই করতে না। ‘
‘ আমাকে তোমার আন-রোমান্টিক মনে হয় আমার পুতুল? ‘
‘ আমার মনে হয় দুনিয়ার সব চাইতে রোমান্টিক মানুষটি আমার বর মেজর ধ্রুব মাহবুব। ‘
ধ্রুব বুকে নাক ঘষলো,
‘ আর তুমি আমার আবেদনময়ী মিসেস। আমার রোমান্টিক বউ। আমার মোমের পুতুল নিনীকা। ‘
রমজান শেখ দাওয়াত দিয়ে গেছিলেন। মেয়ে যেনো তার শ্বশুর বাড়ির সবাইকে নিয়ে বেড়াতে যায়। আজ সেই দাওয়াত রক্ষা করতেই সবাই শেখ বাড়িতে যাচ্ছে। কালো গাড়িতে সবাই উঠে বসেছে। ধ্রুব ড্রাইভ করবে, তার পাশে ফাহিম মাহবুব বসেছেন। পেছনে বসেছে নিনীকা, ধারা ও ফারিন।
ফাহিম মাহবুব পাঞ্জাবি পড়েছেন। ধ্রুব ও বাবার সাথে মিলিয়ে পাঞ্জাবি পড়েছে। ফারিন ভাবী ও মায়ের দেখাদেখি নিজেও শাড়ি পড়েছে। প্রথমবার শাড়ি পড়ে তার আনন্দ আকাশ ছোঁয়ার মতো।
বাজারের কাছে গাড়ি থামানো হলো। ফাহিম মাহবুব ছেলেকে নিয়ে নেমে গেলেন। হাত ভরতি মিষ্টান্ন নিয়ে ফিরলেন। ধ্রুব সেগুলো গাড়ির পেছনে রেখে এলো। আবারও গাড়ি স্টার্ট দিতে দিতে লোকিং গ্লাসে দেখে নিলো নিজের বউকে।
শেখ বাড়ির গেইট দিয়ে ঢুকলো গাড়িটি। রমজান শেখ ও মিথিলা বাহিরেই দাড়িয়ে ছিলেন হয়তো। সাথে কতোজন সার্ভেন্ট। প্রায় এক বছর পর নিনীকা শেখ বাড়িতে এসেছে। গাড়ি থেকে নামতেই মিথিলা মেয়েকে আগলে নিলেন। নিনীকা চোখ ঘুরিয়ে চারিদিক দেখতে লাগলো। সব সার্ভেন্ট রা আপা মনি বলে মুখে ফ্যানা তুলছে। সবাই নিনীকাকে অনেক স্নেহ করতো।
মাকে ছেড়ে নিনীকা বাবার সামনে গিয়ে দাড়িয়েছে। রমজান শেখকে এখনো যথেষ্ট ইয়াং লাগে। নিনীকা বাবার পাশে গিয়ে বাহু জড়িয়ে ধরে দাঁড়ালো। মিথিলা মোবাইলে সেটা বন্দি করলেন।
রমজান শেখ দুচোখ ভরে মেয়েকে দেখলেন।
‘ শাড়ি পড়তে শিখে গেছো দেখি। ‘
‘ আমি এখন আগের থেকে আরও ভালো রান্না করতে পারি, তোমাকে রেধে খাওয়াবো। ‘
‘ ঠিক আছে আমার মা। ভেতরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আগে। ‘
ধারা ও ফাহিম মাহবুবের সাথে কথাবার্তা বললেন তিনি। ধ্রুব হাত ভাজ করে দাড়িয়ে ছিল। রমজান শেখ মেয়ে জামাইকে জড়িয়ে ধরলেন।
‘ আসতে কোনো অসুবিধা হয়নি তো ধ্রুব? ‘
‘ না আব্বু। ‘
রমজান শেখের কলিজা জুড়িয়ে গেলো।
‘ সবাইকে নিয়ে ভেতরে চলো। ‘
বিশাল ডোয়িং রুমটা সাজানো পরিপাটি করা। চারিদিকে আভিজাত্যের চাপ। সবাই ফ্রেশ হয়ে সোফায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে। মিথিলা সার্ভেন্টদের হাত থেকে শরবতের গ্লাস ও নাস্তা কাঁচের টেবিলে রাখলেন। বসে পড়লেন রমজান শেখের আরেক পাশে।
রমজান শেখের এক পাশে নিনীকা বসেছে। রমজান শেখ মেয়েকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছেন। নিজ হাতে নাস্তা খাইয়ে দিচ্ছেন। মিথিলার চোখে অশ্রু জমলো। বহু কষ্টে সেটা আড়াল করলেন। এরকমই তো চেয়েছিলেন তিনি। পেছনে তাকালে এদের বাবা মেয়ের সুখকর কোনো স্মৃতি নেই। এবার একটু একটু করে স্মৃতি তৈরি হবে। তার মেয়ে এবার সব মেয়েদের মতো বাবাকে নিয়ে গর্ব করবে। এইতো, আর কি চাই?
রাতে খাবার পর কাউকে যেতে দিলেন না রমজান শেখ। সবার থাকার ব্যবস্থা তিনি আগেই করতে বলেছেন। ফাহিম মাহবুব না করতে পারলেন না। রমজান শেখ মেয়েকে নিজের ঘরে নিয়ে এলেন। নিজের বুকে শুইয়ে মাথায় হাত ভুলিয়ে দিয়ে গল্প বলতে লাগলেন। নিনীকা দু’হাতে শক্ত করে তার বাবাকে ধরে রেখেছে৷ আরেক পাশ থেকে মিথিলা স্বামী কে ধরে ঘুমাচ্ছেন। রমজান শেখ বললেন,
‘ তোমার মাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি নিনী, তবুও কোনো অভিযোগ করছে না। ওর কি এতো ভালো হওয়া উচিত ছিল বলো তো? ‘
‘ মা তোমাকে অনেক ভালোবাসে বাবা। তার কাছে সবকিছুর উর্ধ্বে নিজের ভালোবাসা। তার দিক থেকে সবকিছুই ঠিক আছে৷ ‘
‘ তুমি তোমার মায়ের জায়গায় থাকলে কি করতে মা? তুমি কি পারতে শত অত্যাচার সহ্য করেও কারো সংসার করতে? ‘
‘ না বাবা, আমি মায়ের মতো হতে পারবো না কখনো। আজকালকার জেনারেশনে সবার আত্নসম্মান বেশি। আমিও বাদ নই৷ মায়ের মতো হতে গেলে আমাকে তোমাদের জেনারেশনে জন্ম গ্রহণ করতে হবে। তারপর একটু একটু করে মায়ের মতো তৈরি হতে হবে। তোমাদের জেনারেশন ভালোবাসাকে সবার উর্ধ্বে রাখলেও আমাদের এই জেনারেশন সবার উপরে আত্নসম্মানকে রেখেছে। ‘
‘ বাবার উপর এখনো রেগে আছো তুমি? ‘
‘ না বাবা, তবে তোমার কাছে আমার একটা অনুরোধ থাকবে। ‘
‘ কি অনুরোধ নিনী? ‘
‘ তুমি আমার মাকে আগে যা করেছো তা চলে গেছে। তবে এবার থেকে তার যেনো একটুও অসম্মান না হয়। ভালোবাসার সাথে সাথে তাকে সম্মান টাও দিও। ‘
‘ আমি তাকে যথেষ্ট সম্মান করি নিনী, মাঝ দিয়ে কতোগুলো বছর নষ্ট হয়ে গেলো। হয়তো এতো বছরের অবহেলা অযত্ন আমি মুছে ফেলতে পারবো না। কিন্তু আমি নতুন করে তাকে আবারও সম্মান করতে শিখেছি৷ সেই পুরনো আমি হতে চেষ্টা করছি। তাকে আজকাল অনেক খুশি হতে দেখা যায়। ‘
‘ আমার মায়ের তুমি ছাড়া কেউ নেই বাবা। আমি তার চোখে তোমাকে হারানোর ভয় দেখি। ‘
‘ আমি জানি আমার মা। অনেক রাত হয়ে গেছে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো। ‘
নিনীকা বিছানা থেকে নেমে ধীর পায়ে হেঁটে বের হয়ে গেলো। রমজান শেখ দরজা বন্ধ করে মিথিলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলেন। বুকে জড়িয়ে কপালে দীর্ঘক্ষণ ঠোঁট চেপে ধরে রাখলেন। নিনীকা স্পষ্ট করে না বললেও অস্পষ্ট করে মিথিলাকে আত্নসম্মানহীন বলেছে। তাতে রাগ করেন নি তিনি। এটা সত্যি। মিথিলা আত্নসম্মান নিয়ে কখনো ভাবে নি। তার পৃথিবীতে হয়তো আত্নসম্মান শব্দটিই নেই। শুধু স্বামী ও সন্তান ছাড়া। রমজান শেখ মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন জীবনে আর যতোদিন বেঁচে থাকবেন এই কোমল মনের মানুষটিকে তিনি যথার্থ সম্মান ও ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখবেন।
ধ্রুব বিছানায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে আছে। চোখ জোড়া দরজার দিকে নিবদ্ধ। নিনীকা দ্রুত গতিতে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলো। ধ্রুবর মুখে হাসি ফুটেছে। উঠে দাঁড়িয়ে টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো।
‘ নিনীকা, মাই লাভলী মিসেস। ‘
‘ ঘুমাও-নি কেন? ‘
ধ্রুব ঠোঁটে ডুবে গেলো। উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না।
পরদিন দুপুরে সবাই শেখ বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। রমজান শেখের বুকটা খা খা করতে লাগলো। মিথিলাকে জড়িয়ে ধরে বললেন,
‘ বুঝলে মিথি, মেয়ের বাবা হওয়াটা অনেক কষ্টের। ‘
মিথিলা গালে হাত রাখলেন।
‘ মেয়ের জন্য মন পুড়ছে বুঝি শেখ বাবুর? ‘
‘ অনেক! মেয়ে টা কেন যে বড় হলো। ছোট্ট নিনীকা হয়ে থাকলেই ভালো হতো। মা*রলে বকলে-ও বাবাকে ছাড়া সে কিছুই বুঝতো না। ‘
‘ মন খারাপ করো না গো। এটাই যে প্রকৃতির নিয়ম। ছেলে বড় হলে বিয়ে করিয়ে বউ আনতে হয়। আর মেয়ে বড় হলে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়িতে পাঠাতে হয়। এই যে দেখো আমিও একদিন এসেছিলাম। ‘
‘ ধ্রুব ছেলেটা অনেক ভালো মিথি, আমার মেয়েকে সুখী রাখবে অনেক। ‘
‘ সে আর বলতে? ওদের পরিবারের সবাই ভালো। নিজের মেয়েকে তুমি যোগ্য একজনের কাছেই বিয়ে দিয়েছো। যে তোমার মেয়েকে আগলে রাখবে। ‘
ধ্রুব ও নিনীকা সুইজারল্যান্ডে হানিমুনে যাবে। ফারিন নিজের কি কি লাগবে লিস্ট করেছে। তারপর ধরিয়ে দিয়েছে ধ্রুবর হাতে। টিকিট ফাহিম মাহবুব নিজেই গিফট করেছেন। শত বলেও নিনীকার পছন্দের বাহিরের কোনো কান্ট্রি আছে কি না জানা যায়নি। তার এক কথা তার কাছে তার নিজের কান্ট্রিই প্রিয়।
বিয়ের এক বছর পর হানিমুনে যাবে তারা। নিনীকার মাথায় কখনো এই শব্দ টা আসেনি। ধ্রুব সাথে আছে মানেই প্রতিদিন তার হানিমুন। সুতরাং বাহিরের দেশে এতো টাকা খরচ করে গিয়ে এক সপ্তাহ রাত কাটিয়ে একটু ঘুরেফিরে সেটাকে হানিমুন বলতে ইচ্ছুক নয় সে।
ধ্রুব বউয়ের যুক্তি মেনে নিয়েছে। বলেছে,
‘ তাহলে ধরে নাও এটা আমাদের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে দুজনের একটা ট্রিপ। ‘
গাড়িতে ব্যাগপত্র রাখলো ধ্রুব। পড়োনে লাল শার্ট। কোমড়ে হাত রেখে নিনীকার জন্য অপেক্ষা করছে। তার মিসেস দু’ঘন্টা আগে রেডি হতে বসেছিলো। এখনো শেষ হয়েছে কি না কে জানে।
আরও কিছু সময় দাড়ানোর পর নিনীকাকে বের হতে দেখা গেলো। পার্পল রঙের গাউন পড়েছে। এই গরমে দু ঘন্টা লাগিয়ে সেজেছে। হাই হিলের শব্দ তুলে হেঁটে আসলো ধ্রুবর দিকে।
চুলের উপর থেকে সানগ্লাস খুলে চোখে পড়ে ধ্রুবর বাহু জড়িয়ে ধরেছে।
‘ কেমন লাগছে আমায়? ‘
ধ্রুব এক হাত দিয়ে সামনে আসা চুল কানে গুঁজে দিলো।
‘ আমার পুতুলকে সবসময়ই সুন্দর লাগে। ‘
নিনীকার ঠোঁট প্রসারিত হলো। লিপস্টিকে আবরিত ঠোঁট চেপে ধরলো ধ্রুবর গালে। পরে নিজেই টিস্যু দিয়ে মুছে দিতে লাগলো গাল। ধ্রুব ঠোঁট কামড়ে হাসছে।
ফাহিম মাহবুব ও ধারা বের হয়ে এলেন। ফারিন মা বাবার পেছন পেছন দৌড়ে এলো। আবারও ধ্রুবকে মনে করিয়ে দিলো,
‘ যা লিখে দিয়েছি তা আনবে কিন্তু! ‘
তাদের থেকে বিদায় নিয়ে দুজন গাড়ির পেছনের সিটে উঠে বসলো। গাড়ি এক সময় বউ কথা কও থেকে বের হয়ে এয়ারপোর্টের দিকে ছুটলো।
এয়ারপোর্টে পৌঁছে নিনীকা লাফাতে লাফাতে ঢুকে পড়লো। পেছনে ধ্রুব দুজনের ট্রলি টেনে নিয়ে আসছে৷ নিনীকা হঠাৎ থেমে গেলো। ধ্রুবর গলা জড়িয়ে ধরে ফটাফট কিছু ছবি তুললো৷ ধ্রুব বেচারা হাসবে নাকি কাঁদবে বুঝতে পারছে না।
‘ মিসেস পড়ে যাবে, আস্তে হাঁটো। ‘
নিনীকা শুনলো না, হাই হিলের শব্দ তুলে হেঁটে যেতে লাগলো। এক সময় পড়ে যেতে নিচ্ছিল কিন্তু ধ্রুব তৎক্ষনাৎ টেনে ধরেছে বলে রক্ষা।
ধ্রুব কপট রাগ দেখালো। ধমকে বলল,
‘ আর একবার লাফাও শুধু কোলে তুলে বাহিরে ছুড়ে ফেলে আসবো। ‘
নিনীকার সেই থেকে মুখ ভার। ধ্রুবর সাথে পাসপোর্ট ব্যাগ সব চেক করিয়ে যখন বিমানে উঠে বসলো তখনই ধ্রুব বউয়ের রাগ ভাঙাতে মরিয়া হলো।
‘ আমি কতক্ষণ আগে রাগ করেছি, তুমি এখন ভাঙাচ্ছো কেন? ‘
‘ আগে রাগ ভাঙালে তুমি আবারও লাফাতে। পা মচকে গেলে হানিমুনে আর যাওয়া লাগতো না। ‘
নিনীকা ফোন বের করে বলল,
‘ এসো বিমানের কাচের সামনে চুমুরত অবস্থায় ছবি তুলবো। ‘
ধ্রুব নিজের হাতে মোবাইল নিয়ে আগলে নিলো। নিনীকা বিমানের কাঁচে হাত ছোঁয়ালো। বাহিরে নীল সাদার আকাশ। ধ্রুব পেছন থেকে আরেকটি হাত নিনীকার কাঁধ পেরিয়ে কাঁচে রাখলো৷ আরেক হাতে মোবাইলের ক্যামেরার পজিশন ঠিকঠাক করে সেট করে নিলো। নিনীকা ঘাড় ঘুরিয়ে ধ্রুবর দিকে তাকালো। ধ্রুব মিলিয়ে দিলো ঠোঁট। মুঠোফোনে বন্দি হয়ে গেলো দৃশ্যটি৷
নিনীকা ছবিটা দেখার জন্য ছাড়া পেতে চটপট করতে লাগলো। ধ্রুব সময় নিয়ে ছাড়লো। নিনীকা ঠোঁট উল্টে ধ্রুবর কাঁধে মাথা দিয়ে আঘাত করলো। ধ্রুব হেসে ফেললো।
‘ এতো তাড়া কিসের? ‘
নিনীকা মুঠোফোনে বন্দি হওয়া ছবিটা মুগ্ধ চোখে দেখছে। ধ্রুব তাকিয়ে আছে তার মিসেসের দিকে।
‘ ছবিটা অনেক সুন্দর হয়েছে তাই না? ‘
নিনীকার কন্ঠে উচ্ছ্বাস ঝরে পড়ছে। ধ্রুব গালে হাত ডুবিয়ে উত্তর দিলো,
‘ সুন্দরী বউয়ের সাথে ছবি তো সুন্দর আসবেই। ‘
নিনীকা সিল বেল্টের উপর দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মুখে মুখ লাগিয়ে রাখলো।
‘ ধ্রুবর বউ এতো আহ্লাদী কেন? ‘
ধ্রুব গালে ঠোঁট চেপে ধরলো।
‘ ধ্রুবর বউ আমার মিসেস যে? সে জন্য। ‘
‘ ধ্রুবকে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করে কেন? ‘
ধ্রুব দুনিয়াদারী উল্টে যাওয়ার মতো রিয়াকশন দিলো।
‘ হায় আল্লাহ, আর ও কতো কি দেখতে হবে। শেষ পর্যন্ত কি না খাবার রেখে মানুষ খেতে চাও! ‘
নিনীকার মুখ দিয়ে বের হয়ে গেলো,
‘ তোমাকে খেতে বাকি রেখেছি নাকি? ‘
নিনীকা মুখ লুকিয়ে ফেললো। ধ্রুব অনেক কষ্টে হাসি নিয়ন্ত্রণ করেছে। নিনীকার ঢেকে রাখা মুখ থেকে হাত সরালো। নিনীকা ঠোঁট উল্টে বলল,
‘ ঠোঁটকাটা লোকের সাথে থাকতে থাকতে আমিও ঠোঁটকাটা হয়ে গেছি। ‘
‘ তাই নাকি? আহারে, আমরা বাংলাদেশে বেক করে সেই ঠোঁটকাটা লোকের নামে মামলা করবো কেমন? কতবড় সাহস আমার বউকে ঠোঁটকাটা বানিয়ে দিয়েছে! ‘
নিনীকা গলায় চিমটি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে বসে রইলো। ফ্লাইটে বসে অর্ধেক সময় ধ্রুবর বউয়ের অভিমান ভাঙাতে ভাঙাতেই কেটে গেলো।
দুজন যখন সাতদিন পর হানিমুন থেকে ফিরলো, তখন চমকে গেলো। বিছানার পাশের টেবিলে অসম্ভব সুন্দর একটি ফ্রেম রাখা।
নিনীকা হাত ভুলিয়ে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকলো। ফারিন দরজার পেছন থেকে বের হয়ে চিৎকার করলো,
‘ সারপ্রাইজ! ‘
‘ তুই এটা রেখেছিস? ‘
‘ অফকোর্স, তোর ওই ক্যাপ্টেন সেন্ড করেছিল বুঝলি। আমি প্লান করে রেখেছিলাম তোদের চমকে দিবো। ‘
ধ্রুব নিনীকার পাশে দাড়িয়ে ফ্রেমে হাত ভুলালো। নিনীকার কানে কানে বলল,
‘ কি হলো ম্যাডাম? ‘
‘ অসম্ভব সুন্দর! থ্যাংক ইউ ননদীনি। এটা আমাদের রুমে এখানেই থাকবে এখন থেকে। ‘
ফারিন মাথা নাড়িয়ে দুজনকে ফ্রেশ হয়ে নিচে আসতে বলে চলে গেলো। ধ্রুব পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
‘ এতো আবেগি হচ্ছো যে? ‘
‘ ধ্রুব ভালো করে দেখো, ছবিটা কতো সুন্দর। এক টুকরো প্রকৃতির মধ্যে সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম পড়া তুমি, সাদা গাউন পড়া আমি’কে নিয়ে ঘুরছো। এই দেখো মাথায় ক্যাপ। ‘
‘ তোমার আমার ছবি ক্যাপ্টেন তুলেছে। ক্যাপ্টেনকে তো দেখতে হচ্ছে। ‘
‘ কি বলো? এতো সুন্দর ছবি তুলার জন্যে তাকে তো তোমার চুমু খাওয়া উচিত। ‘
‘ সে আরও আগে কেন ছবিটা আমাকে দিলো না। এতো সুন্দর ছবি যদি ফারিন ফ্রেম বাঁধিয়ে চমকে না দিতো তো আমরা কখনোই ছবিটা সম্পর্কে জানতে পারতাম না। এটার জন্যে হলেও তাকে আমি ধরবো। ‘
নিনীকা গলা জড়িয়ে ধরলো,
বিয়ে থা পর্ব ৩৯
‘ থাক না, ছেড়ে যাও। ‘
‘ ঠিক আছে ছেড়ে দিলাম। ‘