মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ৩
নুজাইফা নূন
-” যাকে আপনারা কাজের মেয়ে বলে অপমান করছেন সে এই বাড়ির কাজের মেয়ে না। সিজদা আমার একমাত্র বোন রিমার মেয়ে।রিমা কথাটা শুনে চমকে উঠেন ফারুক মির্জা।তিনি ভাবতেও পারেন নি এতো গুলো বছর পরে আবার রিমা নামটা উঠে আসবে।মূলত রিমার জন্যেই তাদের বন্ধুত্বে ফাটল ধরে।
রিমা কে বড্ড ভালোবাতেন ফারুক মির্জা।তাকে একটা নজর দেখার জন্য প্রতিদিন বন্ধুর বাড়ি ছুটে যেতেন।এক পর্যায়ে রাশেদ ব্যাপার টা নোটিশ করলে ফারুক মির্জা রিমা কে ভালোবাসার কথা বলে দেয়।যেটা রাশেদ মেনে নিতে পারেন না। তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। বহু বছর পর অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে আবার তাদের দেখা হয়। পুরোনো শত্রুতা ভুলে তাদের সম্পর্ক আস্তে আস্তে স্বাভাবিক হয়ে উঠে।তবে রিমার প্রসঙ্গ নিয়ে দুজনের মধ্যে কখনোই কথা হয় নি। ফারুক মির্জা প্রায় ভুলেই গিয়েছিলো রিমার কথা।সিজদা রিমার মেয়ে শুনেই বুকটা ধক করে উঠে তার।তিনি তড়িৎ গতিতে পেছনে ফিরে দেখেন তার বন্ধু রাশেদ চৌধুরী দরজায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ফারুক মির্জা তৎক্ষণাৎ এগিয়ে এসে রাশেদ চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” আরে বন্ধু তোর না আরো দুই দিন পরে দেশে ফেরার কথা ছিলো?”
-” হ্যাঁ। কিন্তু তিন দিন আগে আমার কাজ শেষ হয়ে গিয়েছিলো। তাই ভাবলাম মেয়েটাকে দেখতে আসবে। বিথী একা একা সবটা সামলাতে পারবে কিনা? সর্বোপরি সবাইকে সারপ্রাইজ দিবো বলে হুট করে চলে এলাম। বাড়িতে ফিরেই এতো ভালো একটা খুশির খবর পাবো এটা আমি ভাবতেও পারিনি। কাকিমা সিজদা কে সারজিসের বউ করে নিতে চাইছে এটা তো পরম সৌভাগ্য আমার। আমার এই বিয়েতে কোনো আপত্তি নেই। আমি হলফ করে বলতে পারি আমার সিজদা যে বাড়ির বউ হয়ে যাবে।সেই বাড়ি সুখ শান্তি তে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে উঠবে।”
-” সিজদা রিমার মেয়ে এটা অন্তত আমাকে বলা উচিত ছিলো রাশেদ।কেমন মামা তুই নিজের বোনের মেয়েকে বাড়ির কাজের মেয়ের পরিচয়ে রেখেছিস। ছিঃ রাশেদ ছিঃ।আমি তোর থেকে এটা আশা করি নি বন্ধু।রিমা টাও সারাজীবন স্বার্থপরই থেকে গেলো। নিশ্চয় নিজের স্বার্থের জন্য ফুলের মতো পবিত্র মেয়েটাকে এই বাড়িতে কাজের মেয়ের পরিচয়ে ফেলে রেখেছে?”
-” সিজদার আসল পরিচয় কেউই জানে না।আমি কাউকে জানতে দেই নি।তাই বলে আমি সিজদা কে কখনোই কাজের মেয়ের পরিচয় দেই না।
সিজদার বাবা রুপক হালদার গোয়েন্দা বিভাগে চাকরি করতো।রুপক একজন সৎ , সাহসী, দাপটে অফিসার ছিলেন। অসংখ্য কেস একা হাতে হ্যান্ডেল করেছে। অনেক বড় বড় মাস্তান,কিলার , বড় বড় নেতাদের কুকর্ম ফাঁস করে তাদেরকে জেলে দিয়েছে । এমনকি ফাঁ’সি ও হয়েছে কয়েক জনের।সিজদার যখন ছয় মাস বয়স তখন হুট করে রুপক নিখোঁজ হয়ে যায়।প্রেস , মিডিয়া, সংবাদপত্র, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তোলপাড় হয়ে যায়। তবু ও রুপকের খোঁজ মেলে না।রুপক নিখোঁজ হয়ে যাওয়ায় রিমা অনেক ভেঙ্গে পড়ে।দিন দিন অসুস্থতা বাড়তে থাকে।কয়েক বছর পর শোনা যায় যে জঙ্গলে মাটি খুঁড়ে একটা লা’শ পাওয়া গিয়েছে।সেখানে রুপকের ব্যাচ ,
ঘড়ি ,বন্দুক , আইডি কার্ড পাওয়া গেছে।এটা শোনার পর থেকে রিমার মানসিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়।রিমার শ্বশুর শ্বাশুড়ি বাধ্য হয়ে রিমাকে মানসিক হসপিটালে এডমিট করে। সেখানে ও রিমার উপর হামলা হয়।সিজদার ও লাইফ রিস্ক ছিলো।সিজদার জীবনের ঝুঁকি দেখে আমি সিজদা কে আমার কাছে নিয়ে আসি। কিন্তু কাউকে সিজদার আসল পরিচয় জানতে দেই নি। কিন্তু আমার স্ত্রী সিজদার আসল পরিচয় কিভাবে জানি যেনে যায়।বিথী আমাকে এটা বলে যে সে সিজদা কে যেভাবে রাখতে চায়, আমি যদি সেভাবে রাখতে না দেই। তাহলে বিথী সবার সামনে সিজদার আসল পরিচয় তুলে ধরবে। আমার বাধ্য হয়ে সবটা মেনে নিতে হয়।আমার খুব ইচ্ছা ছিলো সিজদা কে পড়ালেখা শিখিয়ে অনেক বড় করবো। কিন্তু আমি পারি নি।আমি একজন ব্যর্থ মামা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন রাশেদ চৌধুরী।”
-” ড্রয়িং রুমের এক কোণে দাঁড়িয়ে সবটা শুনছিলো সিজদা ।তার যেন নিজের কান কে বিশ্বাস ই হচ্ছে না।সে এতো দিন জেনে এসেছে সে এতিম। এতিমখানা থেকে তাকে এই বাড়িতে নিয়ে এসেছে।সে এতিম না।তার ও বাবা মা আছে ভাবতেই সিজদার সুখ সুখ অনুভব হয়। কিন্তু পরক্ষণেই মনটা খারাপ হয়ে যায় এটা ভেবে যে তার বাবা আর এই পৃথিবীতে নেই।।সে তাকে বাবা বলে ডাকতে পারবে না।সিজদা চোখের পানি মুছে গুটি গুটি পায়ে রাশেদ চৌধুরীর কাছে এগিয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-” তুমি আমার মামু?”
-” হ্যাঁ মা।আমি তোর মামু ।এক হতভাগা মামু।”
-” আমার মা কি এহনো বাইচা আছে মামু ? আমারে আমার মায়ের কাছে লইয়া যাও না মামু।”
-” তোর মায়ের অবস্থা বেশি ভালো নারে মা। অপরিচিত কাউকে দেখলে অনেক উত্তেজিত হয়ে পড়ে।যার কারণে পূর্বের থেকে আরো বেশি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে।”
-” আমার মা কি আর ভালা হইবো না মামু?আমি কি আমার মারে মা কয়ে ডাক দিতে পারবো না?মা কি একটা বারের লাইগা আমারে নিজের বুকে টাইনা লইবো না মামু ?”
-” পারবি মা পারবি।বাইরের দেশ থেকে অনেক বড় ডক্টর এসে তোর মায়ের চিকিৎসা করছে।একটু সুস্থ্য হলে তোকে তোর মায়ের কাছে নিয়ে যাবো।এখন আর কান্না করিস না মা।চোখের পানি মুছে নে।সবাই দেখছে তো।”
-” সিজদা রাশেদ চৌধুরীর বুক থেকে সরে এসে চোখের পানি মুছে নেয়। কিছু সময় কান্না করার জন্য চোখ ,মুখ ,নাক লাল হয়ে গেছে।হালিমা বেগম সিজদার হাত ধরে সোফায় বসিয়ে দিয়ে গয়নার বাক্স বের করে সিজদার গলায় মোটা স্বর্ণের হার , কানে দুল, হাতে বালা পরিয়ে সিজদার কপালে চুমু দিয়ে বললো,
-” জীবনে অনেক সুখি হও।স্বামী সোহাগী হও।স্বামী , সন্তান ,সংসার নিয়ে সারাজীবন সুখে শান্তিতে থাকো এই কামনা করি।”
-” দূর থেকে এসব দৃশ্য দেখে রাগে ফুঁসছে ঐশ্বর্য।সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে নিজের রুমে এসে জিনিসপত্র ভাংচুর করে বললো,
-”এতো বড় বড় দামি দামি গহনা। উঃ আমি আর সহ্য করতে পারছি না।যেখানে আমার থাকার কথা ছিলো সেখানে আমার বাড়ির কাজের মেয়ে এতো বড় বাড়ির বউ হয়ে যাবে?না না! এটা আমি মেনে নিতে পারছি না।সারজিস আমার। শুধুই আমার।আমি এই বিয়েটা হতে দিবো না। কিছুতেই না।।”
-” সারজিস সবে মাত্র হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়ির কাছে এসেছে এমন সময় তার ফোন বেজে উঠে।ফোনের স্ক্রিনে বিউটিফুল লেডি নাম টা জ্বলজ্বল করতে দেখে মুখে হাসি ফুটে উঠে তার।সারজিস তৎক্ষণাৎ কল রিসিভ করে সালাম দিয়ে বললো,
-” হ্যালো মাই বিউটিফুল লেডি।”
-” তুমি কোথায় আছো দাদু ভাই?”
-” সবে মাত্র হসপিটাল থেকে বের হয়েছি।কেন কিছু হয়েছে কি ?”
-” হয়েছে তো অনেক কিছুই। তুমি আমাকে ভালোবাসো তো? তোমার যে খারাপ চাই না এটা বিশ্বাস করো তো?”
-” কেনো তুমি জানো না?”
-” জানি তো। তবু ও জিজ্ঞেস করলাম।”
-” সোর্স লাগবে তোমার?”
-” সোর্স এর প্রয়োজন নেই।”
-” ওকে ফাইন।বাট কি হয়েছে সেটা তো বলো?”
মন দিয়েছি তোমাকে পর্ব ২
-” তুমি বাসায় আসো।তারপর ঠান্ডা মাথায় সবটা বুঝিয়ে বলছি।”
-” জো হুকুম মাই বিউটিফুল লেডি বলে সারজিস ফোন পকেটে রাখতেই কোথা থেকে মর্ডান ড্রেস পরা একটা মেয়ে দৌড়ে এসে সারজিস কে জড়িয়ে ধরলো।।