বিয়ে থা সিজন ২ পর্ব ২

বিয়ে থা সিজন ২ পর্ব ২
তাহিনা নিভৃত প্রাণ

বাড়ির নাম বউ কথা কও। বিশাল আভিজাত্যপূর্ণ ডোয়িং রুমে আত্নীয় স্বজনদের ভীড়। ফাহিম মাহবুব ও তার স্ত্রী ধারা আহমেদের বিবাহ বার্ষিকী আজ। নিজের বয়সী কিশোরীদের সাথে গানের তালে নাচছে একটি মেয়ে। পড়োনে বারবি ফ্রক। মেয়েটির নাম ফারিন মাহবুব৷ এ বাড়ির একমাত্র রাজকন্যা। সবার মুখে হাসি থাকলেও ধারার মুখে হাসি নেই। আর মাত্র কিছু সময়, তারপরই তিনি কেক কা*টবেন। তার একমাত্র ছেলে বাড়িতে নেই। বলেছিল আসতে চেষ্টা করবে। ধারা ছেলের আসার অপেক্ষায় আছেন এখনো।
সময় গড়ালো। সবাই কেক কা*টার জন্য অপেক্ষা করছে। ফাহিম মাহবুব স্ত্রীর গোমড়া মুখ দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। ছেলেটা আসছে কি না আদোও কে জানে। হয়তো আসবেই না। ধারার হাত টেনে নাইফ ধরিয়ে দিলেন। ধারা ছলছল চোখে তাকিয়ে না করলেন।

‘ ও আসবে দেখো। আরেকটু! ‘
ফাহিম মাহবুব অসহায় চোখে আশেপাশে তাকালেন। আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে তার পুরনো কর্নেল বন্ধু ও তার স্ত্রী রয়েছেন। রাত বেড়ে যাচ্ছে, সবাই অনুষ্ঠান শেষ করে বাড়িতে ফিরে যাবে। আর কতক্ষণ এভাবে অপেক্ষা করাবেন!
আরও পাঁচ মিনিট সময় দেখে ধারার হাত টেনে নাইফ ধরলেন। কেক-এ নাইফ লাগাতেই সদর দরজা দিয়ে ঢুকলো আর্মি ইউনিফর্ম পরিহিত বলিষ্ঠ শরীরের একজন পুরুষ। ধারা তৎক্ষনাৎ হাত ছাড়িয়ে নিলেন। দৌড়ে গেলেন সেদিকে। আছড়ে পড়লেন ছেলের বুকে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘ ধ্রুব..’
ধ্রুব দু’হাতে জড়িয়ে ধরলো,
‘ মা..আমি এসেছি৷ ‘
ধারার কন্ঠে অভিমান ঝরে পড়লো।
‘ এতো দেরি করলে কেন! আরেকটুর জন্য কেক কে*টে ফেলতে হতো। ‘
‘ কেক কে*টে ফেললে কিছু হতো না মা৷ এরকম কতো কেক তুমি নিজে তৈরি করে খাইয়েছো। চাইলেই বানিয়ে আমার সামনে কা*টতে পারবে যখন তখন। ‘

‘ আজ তোমার বাবার ও আমার বিবাহবার্ষিকী ব্যাটা, তোমরা দু ভাই বোন যদি পাশে না থাকো তো কেমন করে হবে? আমাদের জীবনে তোমরা দুজনই তো আছো শুধু। ‘
‘ আ’ম স্যরি মাই মাদার। চলুন কেক কা*টবেন। ‘।
ধ্রুব মাকে নিয়ে কেকের সামনে দাঁড়ালো। ফাহিম মাহবুব ফারিনকে নিজের সামনে দাড় করালেন। মা বাবার বিবাহবার্ষিকীর কেক হলেও ছেলেমেয়েসহ কা*টা হলো। এবং এমনটাই চাইছিলেন ধারা। এবার তাকে সবচেয়ে বেশি খুশি দেখাচ্ছে।

অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর সবাই চলে গেলেন। বাড়িতে শুধু তারা চারজন ও একজন সার্ভেন্ট। ধ্রুবর পড়োনে এখনো ইউনিফর্ম। ধারা ছেলেকে তাড়া দিলেন।
‘ ফ্রেশ হয়ে এসে টেবিলে বসো ধ্রুব। তোমার পছন্দের সবকিছু রান্না করেছি। ‘
ধ্রুব হাত-মুখ ধুয়ে টেবিলে বসলো। ফারিন বাবার হাতে খাচ্ছে। খাওয়ার ফাঁকে ভাইকে দেখে নিলো। বলল,
‘ ইউনিফর্ম ছাড়োনি কেন? ‘
ধ্রুব আড়চোখে নিজের মাকে দেখে নিলো। যিনি প্লেটে সবরকমের খাবার তুলে দিতে ব্যস্ত৷ ধারা ছেলের সামনে চেয়ার টেনে বসলেন। খাইয়ে দিতে লাগলেন। ধ্রুবর ইচ্ছে হলো না কিছু বলে মাকে এখন কষ্ট দিতে।

‘ কেমন হয়েছে ধ্রুব? ‘
‘ সবসময়ের মতোই সুস্বাদু৷ বিশেষ করে মিট। ‘
‘ সকালে কলিজা ভুনা করে দিবো, তোমার ফেভারিট পরোটা দিয়ে খাবে। ‘
ধ্রুব চুপচাপ খেয়ে নিলো। খাওয়া শেষে যখন সবাই সোফায় বসলো তখনই সে বলল,
‘ আমার আসলে ছুটি নেই মা। আর্জেন্ট বলে এসেছি। এখনই ফিরে যাওয়ার জন্য রওনা হতে হবে। তবে কথা দিচ্ছি কয়েকমাস পর ছুটি পেলে পুরোটা সময় বাড়িতে থাকবো। তোমার হাতের সুস্বাদু খাবার খাবো। ফ্যামিলি ট্যুরে ও যাবো। ‘

ধারা ইতিমধ্যে কেঁদে ফেলেছেন। ধ্রুব হাঁটু গেঁড়ে বসলো। দুহাতে মুখ তুলে ধরলো।
‘ প্লিজ মা। তুমি যদি না বুঝো কে বুঝবে বলো তো? আমি যদি না যাই তবে কথা রাখা হবে না। তুমি তো সেরকম শিক্ষা আমাকে দাওনি বলো। ‘
ধারা নাক টেনে বললেন,
‘ সাবধানে যেও। তাড়াতাড়ি ফিরবে কিন্তু। ‘
ধ্রুব জড়িয়ে ধরলো,
‘ কয়েকমাস পরই ফিরবো, এবং তাড়াতাড়ি ফিরবো কথা দিচ্ছি। ‘
ফারিন পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,
‘ মিস ইউ ভাইয়া। ‘

ফারিনের গালে টান পড়লো।
‘ মিস ইউ টু মাই লিটল সিস্টার্স। বনুর জন্য কি আনবো? ‘
‘ কিছু লাগবে না, তুমি তাড়াতাড়ি এসো। আমরা সবাই তোমাকে অনেক মিস করি। ‘
ফাহিম মাহবুব ছেলের কাঁধে চাপড় দিলেন। তিনি একটু আগেই জেনেছেন ধ্রুব গুরুত্বপূর্ণ মিশনে দেশের বাহিরে যাবে। বললেন,
‘ সফল ও সুস্থ হয়ে ফিরে এসো বাবা।

ধ্রুব পরিবার থেকে বিদায় নিয়ে গটগট পায়ে সদর দরজা পেরোলো। উঠে বসলো জিপগাড়িতে। পেছনে একবারও না তাকিয়ে দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করে যেতে লাগলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আগে তাকে টিমের কাছে পৌঁছাতে হবে। তারপর সবাইকে নিয়ে সকালে এয়ারপোর্টে!
ধারা গোমড়ামুখে ফাহিম মাহবুবকে বললেন,
‘ তোমার বন্ধুকে না করে দাও, বলো কয়েকমাস পর সব হবে ধ্রুব ফিরলেই! ‘
ফাহিম মাহবুব চিন্তিত হলেন,

‘ সে নাহয় বলবো, ধ্রুব রাজি হবে তো? ‘
‘ সেটা কিভাবে বলবো, ছেলেটার সাথে তো ঠিক করে দুটো কথা ও বলতে পারলাম না। ভাবলাম সকালে ধীরেসুস্থে সব বলবো। সব হলো তোমার দোষ। নিজের মতো আমার ছেলেকেও বানিয়েছো। ‘
ফাহিম মাহবুব কোনো কথা বললেন না। চুপ করে শুনতে লাগলেন।

শেখ বাড়ি অন্ধকার। ধীরে ধীরে পা ফেলে ট্রলি হাতে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামলো নিনীকা। সদর দরজার সামনে রুম্পা দাড়িয়ে আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টিতে তাকাচ্ছে। নিনীকা ফিসফিস করে বলল,
‘ রুমে চিরকুট রেখে গেছি, মাকে যেকোনো বাহানায় সেটা দেখিয়ে দিবি। ব্যস। ‘
রুম্পা হ্যাঁ বললো। নিনীকা ট্রলি টেনে নিয়ে বের হয়ে গেলো সদর দরজা দিয়ে৷ গাড়িতে উঠে স্প্রিড তুলে ছুটলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। আগামীকাল ভোরে রওনা হওয়ার কথা থাকলেও সে আজই রওনা হচ্ছে। রুম্পার মাধ্যমে খবর পেয়েছে তার বাবা বন্ধুর ছেলের সাথে একমাত্র মেয়ের কাবিনের বিষয়ে সব ঠিকঠাক করে ফেলেছেন গোপনে। এবং সেটা আগামীকাল হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেজন্য সে সকালে নয় এই মধ্যরাতেই বের হয়েছে। আপাতত একটা হোটেলে থাকবে। সকালে শুটিংয়ের কাজে বিদেশে যাওয়ার উদ্দেশ্যে এয়ারপোর্টে উপস্থিত হবে।

নিনীকা বের হয়ে যেতেই সিঁড়ি দিয়ে নামলেন মিথিলা। রুম্পা চমকে গেলো। মিথিলা হাসলেন।
‘ তোর আপা আর তুই একইরকম ছাগল বুঝলি। নিনীকার সাথে যার কাবিন হওয়ার কথা সে ব্যস্ত সেজন্য কাবিনের ডেট পেছানো হয়েছে৷ ততোদিনে তোর আপা বাড়িতে ফিরে আসবে বিদেশের শুটিং শেষ করে। ‘
রুম্পা মাথা নিচু করে রইলো। মিথিলা রেগে বললেন,
‘ আর কখনো যদি দেখেছি ওর কাছে কিছু বলেছিস তবে তোকে কাজ থেকে বের করে দিতে দু’বার ভাববো না। আর কখনো যেনো হাঁড়ি পাততে না দেখি। বেয়াদব কোথাকার। ‘
মিথিলা গটগট পায়ে উপরে উঠলেন। ফাইলে চোখ রাখা রমজান শেখ বললেন,

‘ তোমার মেয়ে পালিয়েছে? ‘
‘ সে আর বলতে। ‘
‘ এই নিয়ে কতোবার? ‘
মিথিলা একটু ভাবলেন,
‘ গুনে দেখিনি। যতোবারই কিছু করার চেষ্টা করেছি ততোবারই পালিয়েছে। ‘
রমজান শেখ হাসলেন,
‘ পালাতে দাও। ঘরে তো ফিরতেই হবে। ‘

‘ তুমি মেয়েটাকে জোর দিয়ে কিছু বলো না, নাহলে ও কখনো এসব করার সাহস পেতো না শেখ বাবু। ‘
‘ ওহ মিথি, মেয়েকে জোর করতে তো পারবো না। আমরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবো, কিন্তু এখানে তার মতামতের ও বিষয় আছে। তার উপর যদি চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করি তবে সে সুখী হবে না। ‘
‘ এটা কি তোমার মেয়ে বুঝে? ‘

বিয়ে থা সিজন ২ পর্ব ১

‘ না, বুঝলে তো বার-বার পালাতো না। সে ভেবে নিয়েছে আমরা তাকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দিবো। ‘
‘ তারপরও তুমি ওকে কিছু বলো না। ‘
‘ সে বুঝতে পারবে, যখন আমরা তার মতামত চাইবো তখন। আপাতত যা ভাবছে ভাবতে দাও। ‘
‘ হসপিটালে কি বাচ্চা পাল্টিয়ে ছিলে? ‘
রমজান শেখ অদ্ভুত চোখে তাকালেন।
‘ হোয়াট! ‘

বিয়ে থা সিজন ২ পর্ব ৩