প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৫১

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৫১
তানিশা সুলতানা

“হাত ছাড়ুন”
স্পষ্ট এবং ঝাঁঝালো কন্ঠস্বর ইফতিয়ারের। সামনে দাঁড়ানো মেয়েটি ভ্রু কুচকে ফেলে। ছেড়ে দেয় ইফতিয়ারের হাত। যখন ঝড়ের গতিতে ট্রেন ছুঁটে আসছিলো ইফতিয়ারের দিকে। তখনই মেয়েটি টেনে সরিয়ে নিয়েছে তাকে। বাঁচিয়ে দিয়েছে নিশ্চিত মৃত্যুর কবল থেকে। তবুও এতটুকু কৃতজ্ঞতা ফুটে ওঠে নি ইফতিয়ারের চোখে মুখে। বরং বেজায় বিরক্ত সে। যেনো মেয়েটি বিশাল বড় কোনো ভুল করে ফেলে।
“ভাড়ি অকৃতজ্ঞ মানুষ তো আপনি। বাঁচিয়ে দিলাম অথচ ধমকাচ্ছেন? শুনুন সাহেব এই মিষ্টি যদি এখানে না থাকতো তাহলে এতোক্ষণে আপনি আসমানে চলে যেতেন।

থমকায় ইফতিয়ার। মাথা তুলে তাকায় মেয়েটির পানে। একদমই মিষ্টির মতো দেখতে নয়। তবুও বুক কাঁপছে। ইতোমধ্যেই হাত পায়ে কাঁপন ধরেছে। মিষ্টি ছিলো মায়াবতী। চোখেমুখে ছিলো অসম্ভব মায়া। বড়বড় আঁখিপল্লব মেলে যখন চাইতো তখন কলিজা জুড়িয়ে যেতো। কথা বলার ধরনও ছিলো অন্য রকম।
মিষ্টি কখনোই ইফতিয়ারের সাথে উচ্চস্বরে কথা বলতো না। বরং বরাবরই মাথা নুয়িয়ে ধীর গতিতে কথা বলতো। এই মেয়ের স্বভাব, কথা বলার ধরন কিংবা চেহারা কিছুই তো মিষ্টির মতো নয়। তবুও এর নাম মিষ্টি কেনো হলো?
আরেক দরফা বিরক্ত হয় ইফতিয়ার।
তবুও ঠোঁটের কোণে একটু হাসি ফোঁটানোর চেষ্টা করে বলে

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

” ধন্যবাদ
পরপরই উল্টো পথে হাঁটতে শুরু করে। মেয়েটি বেশ অবাক হয়। শুধু ধন্যবাদ বলেই চলে যেতে হবে? সেও পেছন পেছন হাঁটতে শুরু করে
“এই যে শুনুন
ধন্যবাদ দিয়ে আমি কি করবো? বাঁচিয়েছি আপনাকে। এবার তো একটু পরিচয়বার্তা জিজ্ঞেস করতে পারেন আমার। তা না হনহনিয়ে চলে যাচ্ছেন? এটা কেমন কথা
পা জোড়া থেমে যায় ইফতিয়ারের। ২৭ বছর জীবনে বহুবার বহু নারীর হতে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে৷ নারীদের কথা বলার ধরন চিনে ইফতিয়ার।

মিষ্টি নামক নারীর পানে তাকিয়ে স্পষ্ট স্বরে বলে
” ইতোমধ্যেই দুই নারীতে আসক্ত হয়েছি আমি। একজন হৃদয় জুড়ে থাকে আরেকজন মস্তিষ্ক। একজনকে নিজে হাতে অন্য কারো কাছে তুলে দিয়েছি আরেকজনকে কবরে শুয়িয়ে রেখে এসেছি।
তৃতীয় কোনো নারীর পরিচয়বার্তা শুনতে ইচ্ছুক নই আমি।
বাঁচিয়েছেন তার জন্য কৃতজ্ঞ। ভালো থাকবেন।
মিষ্টি নামক মেয়েটি আর কোনো কথা বলে না এবং ইফতিয়ারের পিছুও নেয় না। শুধু তাকিয়ে থাকে।
হাঁটতে হাঁটতে ইফতিয়ার মনে মনে বলে

“আমি সত্যিই ভীষণ স্বার্থপর মিষ্টি। তুমি জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে আমার কাছে চেয়েছিলে যেনো আমি “সময় পেলে তোমার কবরের পাশে এক দন্ড বসে মাথার পাশটায় হাত বুলিয়ে দেই।”
আমি তোমার ইচ্ছের মূল্য দিলাম না। এতোদিনেও এক মুহুর্ত সময় হলো না তোমার পাশে বসার। কি নিষ্ঠুর স্বার্থপর আমি৷ নিজের জন্য বড্ড করুনা হয় আমার।
এমন স্বার্থপর নাহলে বোধহয় জীবনটা সুন্দর হতো।
মিষ্টি বোধহয় খিলখিলিয়ে হেসে জবাব দিলো
“সেই জন্যই তো বাঁচিয়ে দিলাম। আপনাকে বাঁচতে হবে চৌধুরী সাহেব। আমার কবরের যত্ন নেওয়ার জন্য হলেও বাঁচতে হবে। আত্নহত্যা যে মহাপাপ। আপনাকে পাপের সাগরে ডুবতে দিতে পারি না আমি। আপনার কষ্ট যে সহ্য হয় না আমার।

ইশান এবং ইমন দৌড়াচ্ছে। ওদের পেছনে দৌড়াচ্ছে সেলিনা বেগম। প্রাণপণে ছুটে চলেছে ওরা। যদিও পেছনে কেউ তাড়া করছে না তবুও থামছে না।
তখন সেলিনা বেগমের কক্ষে প্রবেশ করেছিলো ইমন এবং ইশান। পেছনের জানালা ভেঙে পালিয়েছে তিনজনই। ইমন ইশান পণ করেছে ম রে গেলেও আর জমিদার বাড়ির ত্রিসীমানায় পা রাখবে না। যেখানে মায়ের বয়সী নারীদের সম্মান করা হয় না সেখানে কখনো মানুষ থাকতে পারে?

অভির হাত ধরে ঢাকা হতে কক্সবাজারে পা রেখেছে পূর্ণতা। দীর্ঘক্ষণ গাড়িতে ছিলো বলে মাথা ব্যাথা করছে। পূর্ণতার বাহু জড়িয়ে অভি তাকে নিয়ে যাচ্ছে নিজ গন্তব্যে। এখনই ” অভি পূর্ণের শান্তির নিবাসে পা রাখতে চাচ্ছে না৷ তাই যেখানে এতদিন অভি ছিলো সেখানেই নিয়ে যাচ্ছে।
সিঁড়ি বেয়ে তিন তালায় উঠে পড়ে। পূর্ণতার অসুবিধার কথা চিন্তা করে চট করে কোলে তুলে নেয়। চমকায় পূর্ণতা। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে অভির গলা। চিন্তুিত স্বরে প্রশ্ন করে
“আমায় নিয়ে সিঁড়ি পেরুতে কষ্ট হবে আপনার।

অকপটে কয়েকটা চুমু খায় পূর্ণতার কপালে৷ কপালে কপাল ঠেকিয়ে জোর শ্বাস টেনে বলে
” ম রে গেলেও তোমায় ছাড়বো না পূর্ণ৷ তুমি শুধু আমার। আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
অভিরাজের প্রসস্থ বুকে মাথা ঠেকায় পূর্ণতা। আহহহা কতোদিন পরে। এতো সুখের মুহুর্তও বুঝি পূর্ণতার কপালে লিখা ছিলো?

দশ তালায় উঠে পূর্ণতাকে কোল থেকে নামায় অভি। পকেট হাতরে বের করে চাবি৷ সেই চাবি দ্বারা দরজা খুলে পূর্ণতার হাত ধরে প্রবেশ করে। মুহুর্তেই চমকায় পূর্ণতা। দুই হাতে চোখ ঢেকে চিৎকার করে ওঠে।
অভি অবাক হয় না। বরং শান্ত নয়নে তাকায় সামনের ফ্লোরে পড়ে থাকা মনার লাশের পানে। এই তো গতকালই নিজ হাতে খু ন করেছে মনাকে। তারাহুরোয় ঢাকা চলে যাওয়াতে লাশ গুম করতে ভুলে গিয়েছিলো।
অভি পূর্ণতার কাঁধে হাত রাখে। সাবলীল ভাষায় বলে

“পূর্ণ
তোমার স্বামী নিজ হাতে বহু নারীকে খু ন করেছে।
বুকে হাত দিয়ে জোরে জোরে শ্বাস টানতে থাকে পূর্ণতা। অভি দরজা আটকে দেয়। দু পা এগিয়ে সোফায় বসে পড়ে। গা এলিয়ে দেয় কুশন বুকে চেপে। চোখ বন্ধ করে বলে
” প্রথম খু ন করেছিলাম আট বছর বয়সে। কাকে জানো? জমিদারের প্রথম স্ত্রীকে। যে আমাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসতো।
এখন আমার বয়স বত্রিশ। শত শত মানুষকে নিজ হাতে দুনিয়া থেকে মুক্তি দিয়েছি।
খানিকটা স্বাভাবিক হয় পূর্ণতা। ধরে আসা স্বরে প্রশ্ন করে
“তাদের অপরাধ?

“আমার উদ্দেশ্যে বাঁধা দেওয়া।
যেই জেনেছে অভিরাজকে তাকেই সরিয়েছি।
” আমিও তো জেনে গেলাম। এবার আমাকেও মে রে ফেলুন৷
অভিরাজের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বলে পূর্ণতা। অভি মৃদু হাসে। পূর্ণতার হাত টেনে তাকে বসিয়ে নেয় নিজের পাশে।
“তোমাকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম। ভেবেছিলাম কোনো এক দেশে চড়া দামে বিক্রি করে দিবো। দ্বিতীয় বার যখন দেখলাম তখন কানাডার এক লোকের সাথে ডিলও করে ফেললাম৷

কিন্তু তৃতীয় বার দেখলাম কবুল বলার পরমুহূর্তে। কি এক অদ্ভুত মায়ায় জড়িয়ে গেলাম পূর্ণতা। শত কোটি টাকার ডিল ক্যান্সেল করে তোমায় আগলে রাখলাম বুক পিঞ্জিরায়। বুঝতে পারছো কতোটা ভালোবাসি তোমায়?
পূর্ণতা তাচ্ছিল্য হাসে। চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন করে
“জমিদারদের পাপের রাজ্যের মূল পাপী আপনি?

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৫০

“হ্যাঁ
জমিদাররা তাদের সকল উদ্দেশ্য আমাকে দিয়ে হাসিল করিয়ে নিয়েছে।
কথা বলে না পূর্ণতা। মাথা নিচু করে কিছুএকটা ভাবতে থাকে।

প্রিয় পূর্ণতা পর্ব ৫২