প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৪

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৪
মারশিয়া জাহান মেঘ

আভার চোখে ঘুম আসছেনা। দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো সে। রাত ১২ টা বাজতে চলল, এখনো তাশরীফ রুমে আসার নাম নেই। আভা চোখ বন্ধ করল মনে মনে বলল,
“কেন আমার সাথে তুমি এমন করলে ফারাবী? ভালোবেসেছিলামতো তোমায়, কিভাবে পারলে আমার সাথে এমন করতে? তোমাকে এর জবাব দিতে হবে ফারাবী… দিতেই হবে। আই ওয়ান্ট আনসার মিস্টার ফারাবী রাজ। বিয়ের আসরে এত বড় অ’প’বা’দ দিলে যে আমি বোবা হয়ে গেলাম।”

এইসব ভাবতে ভাবতে কখন যে চোখের কোণে পানি এসে ভীড় বেঁধেছে তা টেরও পায়নি আভা। ঠিক তখনি তাশরীফ রুমে আসে। আভা তড়িঘড়ি করে ঘুমের ভান ধরে। তাশরীফ রুমে এসে ল্যাপ্টপটা সোফায় রেখে আভার দিকে তাকায়। আ’স্তে করে বলল,
“এত জলদি ঘুমিয়ে পড়ল?”
আভা ওপাশে মুখ করেই বলল,
“কেন, তাতে কি সুবিধে বেড়ে গেল? রাহা আপুর সাথে কি আরও আড্ডা দিতে যাবেন? তাশরীফ ভাই?”
মিনমিনিয়ে হাসল তাশরীফ। যদিও সেই হাসির কারণ সে নিজেও জানেনা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“আমিতো জানতামই তুই ঘুমাসনি।”
আভা ভ্রু কুঁচকে বলল,
“আমি ঘুমিয়েছি, নাকি ঘুমাইনি তা কে দেখতে বলেছে আপনাকে?”
“এত কথা না বলে, ঘুমা। অতিরিক্ত রাত জাগলে সকালে মাথা পেইন করবে।”
“নিজে ডাক্তার হয়ে, নিজেই রুলস ব্রেক কিভাবে করেন তাশরীফ ভাই?”
তাশরীফ হাতের ঘড়ি খু’ল’তে খু’লতে বলল,

“আমি ভীষণ ক্লান্ত, ঘুমানো উচিৎ। এখন শুয়ে পড়ব। তুই চুপচাপ শুয়ে পড়।”
আভার ভাবতেই অবাক লাগে, সে আর তাশরীফ এক বিছানায় ঘুমায়! পরক্ষণেই আভার মন খারাপ হয়ে যায়, এত কাছে থেকেও সে স্বামীর আ’দ’র পায়না। আভা হুট করেই আনমনে বলে উঠল,
“কেউ আমাকে আ’দ’র করেনা।”
তাশরীফের পাতল কর্ণে কথাটা পৌঁছাতেই সে বিস্ময় নিয়ে বলল,
“কি বললি!”
আভা আমতা আমতা করে ভাবল, আজব এত আ’স্তে কথা বলেছে সে তাও কিভাবে কথাটি শুনতে পেল? আভা তুতলিয়ে বলল,

“ন্ না ম্ ম্ মানে…”
তাশরীফ দাম্ভিক মুখশ্রী নিয়ে বলল,
“লাইট অফ করে দে। গুড নাইট।”
আভা যেনো হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। নিজের মাথায় নিজেই টো’কা দিয়ে বলল,
“আভা, এখনিতো য’মে’র বাড়ি যাচ্ছিলি।”

ঘুম থেকে উঠেছে মাত্র আভা। তার ভীষণ বিরক্ত লাগছে এখন। সকাল সকাল, এই রাহা এসে দরজায় এমন কড়া নাড়ছিল যে দরজা না খু’লে সে থাকতেই পারছিলোনা। রাহা আভার দিকে তাকিয়ে মুখ বাঁকা করে তাশরীফকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য তাশরীফকে ডাকছে,
“এই তাশরীফ, তাশরীফ….উঠো।”
আড়মোড়া ভেঙ্গে জেগে উঠে তাশরীফ। সকাল সকাল রাহা’কে দেখে বলল,
“তুমি কখন ঘুম থেকে উঠেছ রাহা?”
“সে অনেক সকালে উঠেছি। সকাল সকাল উঠা স্বাস্থ্যের জন্য ভাল। জানোতো?”
তাশরীফ হেসে বলল,

“একচুয়ালি আমি রাত ১১ টায় শুয়ে পড়ি অলওয়েজ। গত রাতে ঘুমাতে একটু লেইট হলোনা? তাই আর্লি উঠতে পারিনি।”
“হসপিটালে যাবেনা? ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নাও।”
আভার গা জ্ব’লে যাচ্ছে। সে যে এই রুমে আছে, তা যেনো তারা দুজন দেখছেইনা। বউ থাকতে, বান্ধবী কেন এমনভাবে কথা বলবে? এমনভাব করছে, যেনো তিনি বউ, আমি ভানের জলে ভেসে আসা পদ্মপাতা।
রাহা চলে যেতেই আভা নাক বেংচি কে’টে ওয়াশরুমে যায় ফ্রেশ হতে। তাশরীফ বুঝতেই পারলোনা আভা কেন এমন করছে। আভা ফ্রেশ হয়ে আসার পর, তাশরীফ ওয়াশরুমে যায়। ভুলে সে, টিশার্ট নিয়ে যায়নি। ভে’ত’র থেকে আভাকে বলল,

“আভা… আমাকে একটা টিশার্ট দেতো।”
আভা উচ্চ স্বরে বলল,
“রাহা আপুকে বলেন…”
তাশরীফ হতবাক হয় আভার উত্তর শুনে। এ কেমন উত্তর? তাশরীফ বলল,
“রাহা আমার বউ, নাকি তুই আমার বউ? আজব কথাবার্তা বলিস কেন?”
আভা নাক মুখ কালো করে, তাশরীফকে যেউ ওয়াশরুমে টিশার্ট দিতে যাবে এমন সময়, পাউডারের পানিতে পা পি’চ’লে গিয়ে ওয়াশরুমের ভে’ত’রে তাশরীফের বু’কে গিয়ে হুমড়ি খে’য়ে পড়ে।

ল’জ্জা’য় আভা তাকাতেই পারছেনা তাশরীফের দিকে। তাশরীফেরও সংকোচ ফিল হচ্ছে একটু আগের বিষয়টির জন্য। ভাগ্যিস সে শুধু, টিশার্ট ছাড়া ছিল… নয়তো… এইসব ভাবতেই আঁতকে উঠে সে। সে আভার ল’জ্জা আর তার সংকোচ ভাঙ্গার জন্য আভাকে বলল,
“রেডি হ, হসপিটালে যাওয়ার সময় তোকে ভার্সিটিতে নামিয়ে যাব।”
“ভার্সিটি!”
“হ্যাঁ, ভার্সিটি। রেডি হয়ে নে।”
আভা মিনমিন করে বলল,
“আজব, বিয়ে করেছি, সংসার সামলাবো, জামাই সামলাবো। তা না করে… পড়াশোনা কেন সামলাতে হবে?”

“তা, রাহা তুমি কখন লন্ডন ব্যাক করছ?”
খাবারের টেবিলে খেতে বসেছে সবাই। এমন সময় রাফসান চৌধুরী রাহা’কে উপরোক্ত কথাটি বললেন। রাহা’কে তিনি আভা আর তাশরীফের মধ্যে আসাটা ঠিক পছন্দ করছেন না। সবে মাত্র বিয়েটা হলো, এখন ওদের উচিৎ দুজন আলাদা সময় কা’টা’নো, এর মধ্যে এই মেয়েটা আসার কিইবা দরকার ছিল? নীরা চৌধুরী বেশ ভালোই বুঝতে পেরেছেন স্বামী যে খুঁ’চি’য়ে কথাটা বলেছেন। তখনি তিনি সুযোগ পেলেন। রাহাকে বললেন,
“রাহা, তুমি কিন্তু এইখানে বেশ কয়েকদিন থেকে যাবে। নিজের বাড়ির মত থাকবে, খাবে। জানো? আমি চেয়েছিলাম আমার তাশরীফকে তোমার মত একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিতে। কিন্তু কি থেকে যে কি ভুল হয়ে গেল।”
আভা কোনো জবাব দিলোনা। সে চুপচাপ খাচ্ছে। তাশরীফ খেতে খেতে মাকে বলল,
“মা, রাহা’কে খেতে দাওতো এখন। আমার সাথে ওহ হসপিটালে যাবে।”
তখনি রাফসান চৌধুরী বললেন,
“রাহা যাবে কেন?”
রাহা বলল,
“আসলে আংকেল, আমি তাশরীফের হসপিটালটা দেখতে যাব। দেখতে হবেনা তাশরীফ কেমন হসপিটালের ডক্টর। কি বলেন, মিস্টার তাশরীফ চৌধুরী?”
তাশরীফ বিনিময়ে হাসল কেবল।

রাহা সামনের সিটে বসতে যাবে তখনি আভা জলদি করে দিয়ে তাশরীফের পাশে গিয়ে বসে পড়ল। তাশরীফ ভ্রু কুঁচকে বুঝতে চেষ্টা করল, ব্যাপারটা কি হয়েছে। রাহা বাধ্য হয়েই পেছনের সিটে বসল। তাশরীফ ড্রাইভ করতে করতে রাহাকে বলল,
“তা রাহা, বিয়ের কি প্ল্যান ট্যান করেছ নাকি?”
“আপাতত ইচ্ছে নেই, যাকে চেয়েছিলাম তাকে পাইনি। আক্ষেপটা শেষ হোক।”
তাশরীফ বুঝেও না বুঝার ভঙ্গিমাতে নিরব রইল। আভা চোখ ছোট ছোট করে তাকালো তাশরীফের দিকে। তাশরীফ আঁড়চোখে তাকালো আভার দিকে। আভার চাহনি দেখে বলল,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৩

“চোখের সমস্যা হয়েছে? ট্রিটমেন্ট করব?”
থতমত খেয়ে যায় আভা। রাহা ফিক করে হেসে ফেলে তাশরীফের কথায়। আভার রাগ আর দেখে কে? মনে মনে সে ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়। কি দরকার ছিল মেয়েটার সামনে এইসব বলার? আভা কথা এড়াতে বলল,
“আপনি কি চোখের ডাক্তার?”
“না, হতে সমস্যা কোথায়?”
“তাহলেতো, মনের ডাক্তার হতেও সমস্যা নেই, তাইনা?”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ৫