আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে বোনাস পর্ব
লেখনীতে সালমা চৌধুরী
তানভির নিজের রুমে পড়তেছে, যদিও পড়াশোনার প্রতি তার প্রবল বিতৃষ্ণা কিন্তু কিছু করার নেই। আবিরের সাপোর্ট, মেঘের জেদ, বন্যাকে নিজের করে পাওয়ার ইচ্ছে, আর এই সবকিছু পূরণ করতে পড়াশোনার কোনো বিকল্প নেই। আগামী সপ্তাহে কোচিং এ ভর্তি হবে তাই আগে থেকেই বই গুলো একটু দেখে নিচ্ছে। হঠাৎ আবির দরজায় দাঁড়িয়ে মৃদুস্বরে বলল,
“আসবো?”
“আসো। তোমার আবার অনুমতি নিতে হয় নাকি!”
আবির দরজা চাপিয়ে বিছানায় বসে গম্ভীর কন্ঠে প্রশ্ন করল,
” এই পড়াশোনা কতদিন চলবে? ”
তানভির চোখ নামিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
” আমি সরকারি চাকরি করতে চাই।”
“চাকরি করতে তোকে বারণ করছি না। কিন্তু চাকরি পেতে গেলে যতটা শ্রম আর চেষ্টা করতে হবে, ততটা পরিশ্রম করার ধৈর্য কি তোর আছে?”
“আমি চেষ্টা করব।”
আবির চাপা স্বরে বলতে শুরু করল,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“দেখ তানভির, আমি আজ পর্যন্ত তোকে কোনোকিছুতে বারণ করি নি। তুই যখন যা চেয়েছিস নিজের সামর্থ্য না থাকলেও কোনো না কোনোভাবে ম্যানেজ করে দিয়েছি। রাজনীতি করতে চেয়েছিস আমার অনিচ্ছা সত্ত্বেও তোর খুশির জন্য রাজি হয়েছিলাম। ইদানীং তুই সিদ্ধান্ত নিয়েছিস রাজনীতি করবি না, আমি তাতেও সম্মতি দিয়েছি। এখন তুই পড়াশোনা করতে চাচ্ছিস, আমার এতেও কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু কথা হলো তোর নিজের উপর কনফিডেন্স আনতে হবে। যতবার ভেঙে পরবি ততবার নিজেকে নিজের সাহস দিতে হবে। পারি না, মনে থাকে না, পারবো না এগুলো কমন কথা কিন্তু এগুলোর সাথে আরেকটা কথা আছে,’ আমাকে পারতেই হবে’ যদি এই কথাটা মাথায় রাখিস তবেই তুই সফল হতে পারবি। ধৈর্য আর পরিশ্রম একদিন সফলতা এনে দিবেই। ”
তানভির গুরুভার কন্ঠে বলল,
” আমার সিদ্ধান্ত আর নড়চড় হবে না। আল্লাহ সহায় থাকলে আমি সরকারি চাকরি নিয়েই ছাড়বো, ইনশাআল্লাহ। ”
“ইনশাআল্লাহ। আরেকটা কথা বলব?”
“বলো।”
“বন্যার প্রতি তোর ইমোশন কি সত্যি নাকি এতেও দুটানা আছে? এখনও সময় আছে তুই ভেবে দেখতে পারিস। পড়াশোনা, রাজনীতি, ক্যারিয়ার, জব এগুলো তোর মন পছন্দে পরিবর্তন করতে পারলেও ভালোবাসা, ইমোশন কখনো পরিবর্তন করা যায় না। বন্যার প্রতি প্রেমানুভূতি যদি না থাকে তাহলে আগেই দূরে সরে যা। নষ্ট করলে নিজের জীবনটায় নষ্ট করিস, আরেকটা নিষ্পাপ জীবনকে জরিয়ে তাকে কষ্ট দিস না। ”
তানভির চিবুক নামিয়ে তপ্ত স্বরে বলল,
“আমি সত্যি সত্যি বন্যাকে ভালোবাসি৷ তুমি বিশ্বাস করো। হয়তো তোমার মতো এত ভালোবাসতে পারি না কিন্তু আমার জায়গা থেকে আমি ওকে সবটুকু দিয়ে ভালোবাসতে চাই।”
আবির কন্ঠ দ্বিগুণ ভারি করে বলল,
” অতীত এসে মানসিকভাবে বিরক্ত করবে না তো?”
“আমার জীবনে অতীত বলতে কিছু নেই। আমি বর্তমান নিয়ে ভালো আছি আর আমি বর্তমান নিয়েই ভালো থাকতে চাই। ”
“গুড। শুনলাম সেদিন তোর এক্সকে থা*প্পড় মে*রেছিস। তারপর কি দেখা হয়েছিল?”
তানভির আঁতকে উঠে বলল,
“তুমি কিভাবে জানো? আমি তো বনুকে জানাতে বারণ করেছিলাম। বলে দিয়েছে তোমায়?”
“ওহ আচ্ছা। তাহলে তোর বোনও জানে? এখন থেকেই আমার কাছে কথা লুকানো শেখাচ্ছিস?”
“তুমি ভুল বুঝো না প্লিজ। ঐ মেয়ের কথা শুনলে তুমি রাগ করতা তাই বলি নি। আর আমি নিজেও এই বিষয়টাকে পাত্তা দিতে চায় নি। কিন্তু সেদিন হাসপাতালে বন্যার সামনে জান ডাকছিল, তাই রাগে থা*প্পড় মেরেছিলাম।”
আবির ভ্রু কুঁচকে সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠল,
“জান..! সম্পর্ক এতদূর চলে গেছিলো?”
“ছিঃ নাহ। এই মেয়ে জীবনেও জান ডাকে নি আমায়। তুই তোকারি করেই সময় কাটতো না আবার জান৷। বন্যাকে দু’দিন আমার সাথে দেখেছে হয়তো সন্দেহ করছে তাই এমনভাবে কথা বলছিল। ”
আবির শান্ত স্বরে বলল,
“তুই কি জানিস বন্যাকে রাস্তায় ডেকে ঐ মেয়ে একদিন তোর সম্পর্কে কথা বলেছে?”
“কি? কবে? আমি কিছু শুনি নি তো। বন্যাও কিছু বলে নি। তুমি কিভাবে জানো?”
“বন্যা কেনো তোকে বলবে? বন্যা কি তোর গার্লফ্রেন্ড? প্রপোজ করেছিস ওকে?”
“সাহস ই পায় না। যদি রিজেক্ট করে দেয়। কিন্তু তোমাকে ঐ কথা কে বলছে?”
“সানি বলছে। সানির বাসার কাছেই বন্যা টিউশন পড়াতে যায়। বন্যার সাথে ঐ মেয়ে কথা বলার সময় সানি পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো তখন তোর কথা শুনে দাঁড়িয়েছে আর যতটা শুনেছে সবটায় আমায় বলেছে। ”
“এটা তুমি আমায় আগে বললা না কেনো? ঐ মাইরারে এখন মাটিতে কু*পতে ইচ্ছে করছে। একেই বন্যাকে মানাতে পারছি না তারউপর আরেক যন্ত্রণা হাজির। আমি এখন কি বলবো?”
“তোর এক্সের কথা জানে সে?”
“বনু বলেছে কি না জানিনা কিন্তু আমি এখনও কিছু বলি নি।”
“তোর উচিত বন্যাকে সবকিছু জানানো। তারপর তোর প্রতি তার কি অনুভূতি প্রকাশ পায় সেটায় দেখার বিষয়। ”
“আচ্ছা, ঠিক আছে।”
আবির উঠে যেতে যেতে আবারও বলল,
“লাস্ট বার বলছি, ডিসিশন নেয়ার আগে আবারও ভাব। একটা মেয়ের জীবন সম্পূর্ণ তোর হাতে। তুই ভালো হলে মেয়েটা সুখী হবে আর তুই খারাপ মেয়ে দুঃখী। ভাব ভাব সারারাত ভাব, প্রয়োজনে দুরাত না ঘুমিয়ে তারপর ভাব।”
আজ শনিবার, মোজাম্মেল খান বাসায় ফিরেছেন। চাচ্চুর সাথে দেখা করতে আবির আজ একটু তাড়াতাড়িই বাসায় ফিরেছে। মূলত চাচ্চুর মনের অবস্থা বুঝতেই আগেভাগে এসেছে আবির। কিন্তু মোজাম্মেল খান তেমন কোনো বিষয়ে আলোচনায় করেন নি। ওনার আলোচনার টপিক প্রজেক্ট, লাভ-লস আর সিফাত। চাচ্চুর সাথে কথা শেষ করে আবির নিজের রুমে চলে গেছে। এই সময়ে অফিসে গেলেও তেমন কোনো কাজে আসবে না তাই আর বের হয় নি। নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছিলো।
কিছুক্ষণ কাজ করার পর বেশ ক্লান্ত লাগছে। তাই কফি করতে নিচে যাচ্ছিলো। মেঘের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় মেঘের ফোনের রিংটোনের শব্দ শুনতে পায়। বিশেষ মনোযোগ না দিয়ে আবির নিচে চলে গেছে। কফি করে নিয়ে আসার সময় আবারও শুনতে পেল, মেঘের ফোনে কল বেজেই যাচ্ছে। আবির মেঘের রুম পেরিয়ে গেছে কিন্তু অনবরত ফোনের শব্দে আবির অবচেতন মনে ঘুরে আসলো। মেঘ রুমে আছে কি না দেখার জন্য উঁকি দিল৷ রুম সম্পূর্ণ ফাঁকা, টেবিলের উপর ফোনটা আপন গতিতে বেজেই চলেছে। আবির রুমে ঢুকে ফোনের দিকে তাকাতেই স্ক্রিনে বন্যার ছবি আর Baby লিখে সেইভ করা নাম্বারটা ভাসলো। আবির ভাবলো রিসিভ করে বলবে যে, মেঘ রুমে নেই। আবির স্বাভাবিক ভাবে কল রিসিভ করে বলতে নিলো তার আগেই বন্যা উত্তেজিত কন্ঠে বলতে শুরু করল,
“হাই ননদীনি, কি করতেছো তুমি? কতগুলো কল দিচ্ছি রিসিভ করছিলা না কেনো? আমার ছোট ননদ আর দেবর কি করছে?”
আবির উষ্ণ স্বরে বলল,
“তোমার ননদীনি সম্ভবত ছাদে, আমি তোমার ভাসুর বলছি।”
বন্যা থতমত খেয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল,
“আ.. আবির ভাইয়া”
“জ্বি।”
বন্যা নিজের কপাল চাপড়াচ্ছে। মুখের উপর কল কাটতে পারছে না আবার কিছু বলতেও পারছে না। বন্যা উদাসীন কন্ঠে বলল,
“আসসালামু আলাইকুম, ভাইয়া।”
“ওয়ালাইকুম আসসালাম।”
“ভালো আছেন ভাইয়া?”
“আমি ভালো আছি তবে অন্য কারোর টা জানি না। ননদীনির খোঁজ খবর নেও ভালো কথা। কিন্তু মাঝে মাঝে নিজের বেপরোয়া জামাইয়ের খোঁজ খবরও একটু নিও।”
বন্যা মনে মনে নিজেকে ইচ্ছেমতো বকছে। প্রকাশ্যে অত্যন্ত নমনীয় কন্ঠে বলল,
” ভাইয়া আসলে ঐরকম কিছু না।”
আবির শ্বাস ছেড়ে শান্ত কন্ঠে বলল,
” ভালোবাসলে নিজের মানুষের যত্ন নিতে শিখতে হয়। আর হ্যাঁ তোমাদের ননদ-ভাবির সম্পর্কের মাঝে ঢুকে পড়ার জন্য সরি। আল্লাহ হাফেজ। ”
“আল্লাহ হাফেজ। ”
আবির কল কেটে সরাসরি ছাদে গেল। মেঘ গান গাইতে গাইতে গাছের ঘাস পরিষ্কার করছে। আবির কিছুটা পেছনে দাঁড়িয়ে আস্তে করে গলা খাঁকারি দিয়ে বলল,
” কেউ একজন বলেছিল আমি ফিরলে আমাকে সারপ্রাইজ দিবে। কিন্তু আজও দিল না! সে কি ভুলে গেছে?”
মেঘ গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
“সে ভুলে যায় নি কিন্তু… ”
“কিন্তু কি?”
“আপনি যদি কিছু মনে করেন”
“আমি কিছু মনে করব না। বলুন…”
মেঘ চিন্তিত কন্ঠে শুধালো,
“আগে এটা বলুন, ভাইয়া যে বন্যাকে পছন্দ করে এটা কি আপনি জানেন?”
আবিরের চিরচেনা কন্ঠস্বরের জবাব,
“জানি।”
মেঘ আঁতকে উঠে প্রশ্ন করল,
“কবে থেকে জানেন?”
“প্রায় আড়াই বছর হতে চললো।”
মেঘ হতবার হয়ে তাকিয়ে থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
“ভাইয়া এতবছর যাবৎ বন্যাকে পছন্দ করে?”
“হ্যাঁ। এখন বল কি করেছিস?”
“আমি তেমন কিছু করি নি। ভাইয়া বন্যাকে পছন্দ করে এটা কয়েকমাস হলো আমি জানতে পেরেছি। তাই বোন হিসেবে আমি আমার দায়িত্ব পালন করেছি।”
আবির রাশভারি কন্ঠে শুধালো,
“কি দায়িত্ব? ”
মেঘ আস্তে করে বলল,
“আমি আর মীম বন্যাকে ভাবি হওয়ার জন্য প্রপোজ করেছি আর ভাগ্যক্রমে বন্যাও রাজি হয়ে গেছে। আপনাকে ভিডিও দেখাবো নে।”
আবির নিরেট কন্ঠে বলল,
“এজন্যই ফোনে এত যত্নের সহিত ননদীনি বলে ডাকছিল। ”
মেঘ ভারী কন্ঠে বলল,
“আপনি কিভাবে জানেন?”
আবির স্ব শব্দে হেসে বলল,
“তোকে কল দিয়েছিল। আমি কল রিসিভ করে শুধু বলতে চেয়েছিলাম, তুই ছাদে। কিন্তু তার আগেই সে সব বলে ফেলছে। ”
“তারপর? ”
“তারপর আর কি, সে যেহেতু ননদ-দেবরের খোঁজ নিচ্ছে তাই ভাসুর হিসেবে আমারও তো পরিচয় টা দিতে হয়। তাই দিয়ে আসছি পরিচয়। ”
“এটা কি করলেন আপনি?”
আবির ঠাট্টার স্বরে বলল,
“আমি তো কিছু করলাম ই না।”
মেঘ কপাল গুটিয়ে সূক্ষ্ম নেত্রে তাকাতেই আবির মুচকি হেসে নিচে চলে গেছে।
দু’দিন কেটে গেছে। আবির বন্যার ব্যাপারে তানভিরকে কিছুই জানায় নি কারণ তানভিরকে ভাবার জন্য দুদিন সময় দিয়েছিল। তানভির দুদিন পর সুন্দর ভাবে তার মতামত জানিয়েছে, সে বন্যাকে ছাড়া সে আর কাউকে পছন্দ কিংবা ভালোবাসতে পারবে না। বন্যার জন্য সে সবকিছু করতে পারে আরও অনেক কিছু বলেছে। আবির সব শুনে শান্ত কন্ঠে বলল,
” তুই চাইলে বন্যাকে তোর মনের কথা বলতে পারিস।”
তানভিরকে বিস্তারিত কিছু না বললেও কিছু কথাতে টুকটাক বুঝিয়েছে।
আজ সকাল থেকে খান বাড়ির পরিবেশ অন্যরকম। মোজাম্মেল খানের শরীর খারাপ তাই অফিসে যাবেন না। তানভির একটা কাজে বেড়িয়েছে। আবিরের আব্বুর অফিসে ছোটখাটো একটা মিটিং আছে তাই আবিরও দ্রুত রেডি হয়ে বেড়িয়ে গেছে। মেঘ খেতে গিয়ে দেখে টেবিল সম্পূর্ণ ফাঁকা তাই না খেয়ে আবিরকে দেখতে গেল। আবির রুমে নেই দেখে মেঘের মন কিছুটা খারাপ হয়ে গেছে। আজ সকালে কল পর্যন্ত দেয় নি আবির। আবিরের খোঁজ নিতে মেঘ বেলকনিতে দাঁড়িয়েই আবিরের নাম্বারে কল দিল। আচমকা রুমের ভেতর থেকে রিংটোন বাজছে।
“পাগল তোর জন্যে রে পাগল এ মন, পাগল
মুখে বলি, দূরে যা মন বলে, থেকে যা
দূরে গেলে মন বোঝে তুই কত আপন।”
কল বাজতে বাজতে কেটে গেছে। আবির রিসিভ করে নি। মেঘ দ্বিতীয়বার আবিরের নাম্বারে কল দিল। পূর্বের ন্যায় রুম থেকে একই গান বাজতেছে। মেঘ কপালে ভাঁজ ফেলে আনমনে রুমে দিকে এগিয়ে গেল। বিছানার উপর আবিরের ফোনটা পড়ে আছে। সেই ফোনেই এই গান বাজতেছে। মেঘ এগিয়ে গিয়ে ফোনের স্ক্রিনে তাকাতেই রীতিমতো আশ্চর্য বনে গেল। মেঘ আর আবির একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভিজছে এমন একটা ছবি ভাসছে সাথে 🖤Soulmate🖤 নামে সেইভ করা নাম্বার। মেঘ আশ্চর্যান্বিত হয়ে তাকিয়ে আছে। মস্তিষ্কের নিউরন গুলো ছুটছে দ্বিকবিদিক।
বুকের বা পাশটা অদ্ভুত অনুভূতিতে মেতেছে। অনেকদিন আগে আবিরের ফোনে নিজের নাম দেখার ইচ্ছে হয়েছিল মেঘের তবে সেটা কেবলমাত্র ইচ্ছেই ছিল৷ এখন তার এক বিন্দুও মনে ছিল না। গত পরশুদিন রাতেও মেঘ বন্যাকে কল দিয়ে মন খারাপ করে বলছিলো, আবির ভাই দেশে ফিরেছে তবুও তাকে ভালোবাসার কথা বলছে না, প্রপোজ পর্যন্ত করছে না। বন্যা অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে ঘুমাতে বলেছে। আজ সেই আবির ভাইয়ের ফোনে নিজের নাম, ছবি আর গানের রিংটোন শুনে মেঘ নিজের চোখ আর কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না।আনন্দে মেঘের দুচোখ টলমল করছে, ভেতরটা আনন্দে ভরে গেছে। প্রকাশ করার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। আচমকা আবিরের বাইকের শব্দ শুনে ফোন ফেলে মেঘ দ্রুত নিজের রুমে গেছে। আবির নিজের রুম থেকে ফোন নিয়ে মেঘের রুমের সামনে এসে থমকালো। দরজা থেকে উদ্বিগ্ন কন্ঠে শুধালো,
“কল দিয়েছিলি কেনো?”
মেঘের দুচোখ ভেজা, চিকচিক করছে পানি। মেঘ আবিরের দিকে না তাকিয়েই কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,
” খেয়েছেন কি না জিজ্ঞেস করতে কল দিয়েছিলাম।”
“সত্যি? নাকি অন্য কিছু বলতে কল দিয়েছিলি?”
মেঘ স্বাভাবিক কন্ঠে বলল,
” এমনিতেই কল দিয়েছিলাম। অন্য কোনো কারণ নেই।”
আবির মেঘের দিকে ভালোভাবে তাকালো। মাথায় ওড়না দিয়ে মুখ ঢেকে বসে আছে। আবির মৃদু হেসে বলল,
“হঠাৎ লাজুকলতা সাজার কারণ কি?”
“এমনি। আপনি অফিসে যান।”
এদিকে আলী আহমদ খান বার বার কল দিচ্ছেন। ১১ টায় মিটিং টাইম। যত দ্রুত সম্ভব যেতে হবে। আবির মেঘের থেকে বিদায় নিয়ে দ্রুত চলে গেছে। আবির বাসা থেকে বের হতেই মেঘ বন্যার নাম্বারে কল দিলো। প্রথমবার রিসিভ হয় নি, এরপর থেকে নেটওয়ার্ক বিজি, ব্যস্ত বলছে৷ অনেকক্ষণ ট্রাই করার পর একবার কল ঢুকেছে। বন্যা কল রিসিভ করে উত্তেজিত কন্ঠে চেঁচিয়ে উঠল,
“বেবি, তুই জিতে গেছিস।”
এপাশ থেকে মেঘও বলে উঠল,
“বেবি, আমি ওনার ভালোবাসার প্রমাণ পেয়ে গেছি।”
বন্যা আর মেঘ একসঙ্গে চিল্লাচিল্লি শুরু করেছে। মেঘ বলছে সে আগে বলবে ওদিকে বন্যা বলছে বন্যা আগে বলবে। বাধ্য হয়ে মেঘের কথায় আগে শুনতে হলো। মেঘের কথা শেষ হতেই বন্যা বলে উঠল,
“তুই একবার বলছিলি না,হয়তো আবির ভাইয়া বিদেশে যাওয়ার আগে থেকে তোকে ভালোবাসে? এটা মিথ্যা না, একদম সত্যি। আবির ভাইয়া তোকে তখন থেকেই ভালোবাসেন।”
“তোকে কে বলছে?”
“তোর ভাই গতকাল রাতে কল দিয়েছিল। আপু বাসায় নেই তাই এই সুযোগে ওনার সাথে অনেকক্ষণ কথা বলতে পেরেছি। তোকে বিস্তারিত ঘটনা পরে বলল। সবচেয়ে বড় কথা হলো, তোর ভাই সবকিছু জানতো।”
মেঘ শক্ত কন্ঠে বলল,
” আমি এতদিন যে প্রমাণ খোঁজছিলাম আজ সেই সব প্রমাণ পেয়ে গেছি৷”
“এখন কি করবি?”
মেঘ একটু ভেবে শান্ত কন্ঠে বলল,
” এই জীবনে ওনার প্রপোজ আশা করাটা বোকামি ছাড়া কিছুই হবে না। যেহেতু আমি প্রমাণ পেয়ে গেছি তাই আমি আজই ওনাকে প্রপোজ করব।”
“কিভাবে?”
মেঘ মুচকি হেসে বলল,
“তুই একটা হেল্প করতে পারবি?”
“কি হেল্প?”
“আমার জন্য একটা নীল শাড়ি কিনে আনতে পারবি? ”
“তুই ওনাকে প্রপোজ করতে যাবি?”
“হ্যাঁ যাব। আমি এতদিন প্রমাণ খোঁজেছিলাম৷ কিন্তু শক্তপোক্ত কোনো প্রমাণ পায় নি তবে আজ পেয়েছি। তাই আর ছাড়তে পারবো না। ওনি বলেছিলেন, ওনি বাসায় ফিরলে আমি যা চাই তাই হবে। আমি আজ ওনাকে চাইবো। আশা করি ওনি আমাকে ফেরাবেন না। তুই শুধু শাড়িটা কিনে নিয়ে আয়, প্লিজ। ”
“আচ্ছা, ঠিক আছে। আসতেছি।”
“লাভ ইউ বেবি ”
“লাভ ইউ আমায় না বলে আমার ভাসুর কে বলিয়ো।”
আমৃত্যু ভালোবাসি তোকে পর্ব ৬৯
মেঘ লাজুক হেসে বলল,
“উফ! আমার না ভাবতেই লজ্জা লজ্জা লাগছে। ”
বন্যা হেসে বলল,
“তুই রেডি হ, আমি শাড়ি কিনে নিয়ে আসছি।”