প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১১

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১১
মারশিয়া জাহান মেঘ

“একজন সিনিয়র, ফেমাস ডক্টর হয়ে আপনি কিভাবে একটা মেয়ের সম্মান নিয়ে খে’লা করতে পারলেন ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী? ডক্টররা নাকি নতুন জীবন দান করে, আপনি সেই জায়গায় জীবন নিয়ে কিভাবে খে’লা করতে পারলেন? আপনার বিবেক বাঁধা দেয়নি?”
সবগুলো কথা তাশরীফের মাথার উপর দিয়ে গেল। তখনি আভা তাশরীফের সামনে গেল। সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলল,

“আজ আমি আপনাদের এমন কিছু দেখাব, যা দেখার পর আপনাদের কিছু মেয়ের প্রতি যে সূক্ষ্ম বিশ্বাস, তা নিমিষেই ভেঙ্গে যাবে।”
“কি ম্যাম?”
ল্যাপ্টপ ওপেন করে আভা। গতরাতে সে সিসি ক্যামেরা খুঁজতেই সে ওই ক্লাবে গিয়েছিল। স্পষ্ট সেই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, রাহা জো’র করে তাশরীফকে ড্রিংক করিয়ে, ইচ্ছে করে তাশরীফের শার্ট খু’লে নিজেই গিয়ে তাশরীফকে জ’ড়ি’য়ে ধরেছে। এবং, তাশরীফের হাত দুটো নিজের পি’ঠে নিয়েছে। সবাই বেশ বিস্ময়ের সাথে দেখছে ভিডিওটি। তখনি আভা রাহার কানে ফিসফিস করে গিয়ে বলল,
“কোন সময়, কোন মুহুর্তে, হাঁটে হাড়ি ভাঙ্গতে হয়, তা মিসেস তাশরীফ চৌধুরী ভালো করেই জানে মিস রাহা।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাহা গা’লে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফারাবীকে বেঁধে রেখেছে তাশরীফ। তাশরীফ আভাকে বলল,
“আমার মান -সম্মান নিয়ে এত বড় খেলা রাহা খেললো অথচ তুই রাতে আমাকে কিছু জানাসনি? দাঁড় করিয়ে রেখেছিস কেন ওকে? ওকেও বেঁধে ফেলে রাখ এইখানে। বাবা, তুমি পুলিশকে কল দাও।”
রাফসান চৌধুরী ছেলের কথা শুনার সাথে সাথেই কল করল পুলিশকে। মিসেস নীরা চৌধুরী রাহার কাছে যেতে নিলে রাহা বলল,

“আন্টি বিশ্….”
কিছু বলতে পারলো না রাহা। পুনঃরায় মিসেস নীরা চৌধুরী তার গা’লে ক’ষি’য়ে একটা থা’প্প’ড় মা’রলো। নীরা চৌধুরী বললেন,
“তোকে আমি ভাল জানতাম, তুই এত বা’জে মেয়ে তা আমি কল্পনাও করিনি। আমার বাড়ি থেকে আমার ছেলের সর্ব’না’শ করতে এসেছিলি? কালনা’গি’নী। তোর জন্য আভাকে আমি এত দূরে রেখেছি এতদিন।”
কথাগুলো বলেই আভার দিকে তাকালেন নীরা বেগম। আভার কাছে গিয়ে বললেন,”আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে মা, ক্ষমা করে দে আমাকে। আমি পায়ের জুতার জন্য, কপালের টিপকে মূল্য দিইনি।”

“মামী, কি বলছেন এইসব? আপনি আমার মায়ের মতন।”
“আমি বুঝি তোর মা নয়? মামী কাকে ডাকছিস?”
আভা জড়িয়ে ধরে নীরা চৌধুরীকে। রাফসান চৌধুরী হাসতে হাসতে বললেন,
“দেখলেতো নীরা? আমার ভাগ্নীই সেরা।”
ওদের কথার মাঝেই, ফারাবী বলে উঠল,
“আমি তোমাকে ছাড়ব না আভা। তোমার জীবন আমি ন’র’ক বানিয়ে ফেলব, যেমন করে তুমি ফারহাদের জীবন শেষ করে ফেলেছ।”
আভা অবাক স্বরে বলল,
“ফারহাদ!”

তাশরীফ আজ আর হসপিটালে গেলো না। ফারাবী আর রাহাকে পুলিশ সকালেই ধ’রে নিয়ে গেছে। তাশরীফ মাত্রই বাইরে থেকে এসেছে। খুব ইমার্জেন্সি কাজে তাকে ঘন্টা খানেকের জন্য বাইরে যেতে হয়েছিল। এসেই দেখে আভা বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে। সে ধীর পায়ে আভার কাছে গিয়ে বলল,
“কি ভাবছিস?”
আভা বলল,
“কিছু নাতো।”
“ফারহাদ কে?”
আভা তাকালো তাশরীফের দিকে। তারপর কি যেনো হলো তার, জ’ড়ি’য়ে ধরে তাশরীফকে। কান্না করতে করতে বলল,

“আমি যদি জানতাম, ফারাবী নিজের বন্ধুর প্রতি’শো’ধ নিতে আমাকে রেখে বিয়ের আসর ছেড়ে চলে গিয়েছে, তাহলে এই গল্পের সমাপ্তি আগেই টেনে যেতো।”
“ফারহাদ ফারাবীর বন্ধু?”
আভা সরে দাঁড়ায় তাশরীফের থেকে। তারপর রুমে গিয়ে বিছানায় বসল। তারপর বলল,
“শুধু বন্ধু বললে হবে, ভাইয়ের থেকে কোনো দিক দিয়ে কম ছিলো না ওরা। ফারহাদ আমাকে অনেক ভালোবাসতো। কিন্তু ছেলেটা কিছুটা ব’খা’টে টাইপের থাকায় আমি কখনোই পছন্দ করতাম না। রাস্তা-ঘাটে আমাকে বিরক্ত করতো। দিন দিন, খুব বাজেভাবে সে আমাকে উত্ত্যক্ত করতে শুরু করলো। একদিন…”

“একদিন কি?”
“একদিন কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখলাম, সে বিল্ডিংয়ের ছাঁদে গিয়ে বলছে, ” আভা আমার সঙ্গে এই মুহুর্তে তুমি কাজী অফিসে না গেলে আমি এইখান থেকে লা’ফ দিব।” এইটা কখনো সম্ভব! একটা ছেলেকে হুট করে বিয়ে করা!। আমি তেমন পাত্তা দিইনি বিষয়টাকে। ভেবেছিলাম ফান করছে। কিন্তু সে সত্যি সত্যিই সেইদিন লা’ফ দিয়েছিল।”
“তারপর?”

আভা এক পলক তাশরীফের দিকে তাকিয়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
“তারপর, হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। খুব বা’জে অবস্থা ছিল বলে, ওকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।”
তাশরীফ আভার দুই গা’লে হাত রাখলো। আভা একটু কেঁ’পে উঠল। তাশরীফ বলল,
“এতে তোর কোনো দো’ষ ছিলো না আভা। ফারাবী ভুল করতে যাচ্ছিলো। এখন ওসব নিয়ে ভাবিস না। এই চ্যাপ্টার এইখানেই বন্ধ করে দে।”

“আভা, আরেকটা মাছ দিই?”
সবাই খেতে বসেছে। নীরা চৌধুরী ঠিক তখনি আভাকে কথাটি বলল। আভা বলল,
” না না, মা। এইটাই খেতে পারছি না।”
রাফসান চৌধুরী বলল,
“খেয়ে নে মা, খেয়ে নে। তোর মামীর মনটা এখন ভাল হয়েছে। আবার কখন কি হয়ে যায় বলাতো যায় না, মানুষের মন বলে কথা।”

“বাবা, আমার মা বলে কথা, মন ভাল সবসময়ই থাকবে। মধ্য দিয়ে মা আমার আর আভার বিয়েটা মেনে নিতে পারেনি বলেই এমন হয়েছে।”
“তা, নীরা, আবার বড় করে, তোমার মন মত করে, বিয়ে করাবে নাকি ছেলেকে?”
নীরা চৌধুরী অভিমানী স্বরে বললেন,
“আমার কথা কি কেউ শুনে?”

“তোমার মনের ইচ্ছে পূরণ করব নীরা। কয়েকদিন পর। আপাতত ব্যগ-ট্যাগ গুছিয়ে নাও। আর তাশরীফ হসপিটাল থেকে ছুটি নিয়ে নে।”
“কেন বাবা?”
“রাত্রির বিয়ে ঠিক হয়েছে।”
“কি!!”
অবাক হয়ে বেশ উচ্চ স্বরেই ‘কি!” শব্দটা উচ্চারণ করলো আভা।
রাফসান চৌধুরী হাসতে হাসতে বললেন,
“হ্যাঁ। সকালেই তোদেরকে জানাতাম, কিন্তু যা গেলো… বলার সুযোগই হয়নি।”

“রাত্রি আপুতো এখন বিয়ে করতে চাইনি মামা।”
“বিয়েতে রাত্রি মত দিয়েছে বলেইতো ঠিক হয়েছে।”
তাশরীফ ল্যাপ্টপে কাজ করছে সোফায় বসে। আভা ফোনে কথা বলছে রাত্রির সাথে। ওপাশ থেকে রাত্রি বলল,
“কখন আসছিস আভা?”
“আগামীকাল আসছি আপু। তা কিভাবে কিভাবে রাজি হলে বলোতো!”
ওপাশ থেকে রাত্রি লাজুক হেসে বলল,
“মনের মানুষ পেয়েছি তাই।”

“তলে তলে এইসব চলছিলো তাহলে?”
“২ দিনের পরিচয়ে বিয়ে বাবু।”
আভা অবাক হয়ে বলল, “মাত্র দুইদিন!”
“তোকে আসলে সব বলব। ঘুমিয়ে পড় জলদি। সকাল সকাল উঠতে হবে।”
আভা কল কে’টে শুয়ে পড়লো বিছানায়। তাশরীফোর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে কিছুক্ষণ দেখলো তাশরীফকে। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লো টের পায়নি সে।

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১০

সকালে ঘুম থেকে উঠে, ভূত দেখার মত চমকে উঠে আভা। চিৎকার করে লাফিয়ে বিছানা থেকে নেমে পড়ে সে। তাশরীফ ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বলল,
“চিৎকার দিচ্ছিস কেন?”
“আপ্ আপনি! এই্ এইখানে কি করছেন? বিছানায়!”
“আমার বিছানায় আমি থাকব নাতো কি তোর আত্মা থাকবে?”
“আরে তাশরীফ ভাই, বুঝতে পারছেন? ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী আমার সাথে একই বিছানায়!”
“আমার বউয়ের সাথে আমি থাকব না? আজব কথাবার্তা বলিস তুই আভা।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১২