একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ২
Mousumi Akter

“স্যার ওর সর্দি লেগেছে।”
মৃন্ময় এর এমন কথা শুনে রোশান সিদ্দিকী অদ্ভুত চোখে তাকাল সারাহ-এর দিকে।মুখের অবয়ব একদম থমথমে। থমথমে মুখে ভ্রু কুঁচকালো।কুঁচকে আসা ভ্রু নিয়ে রোশান সিদ্দিকী গম্ভীর কন্ঠে উচ্চারণ করল,
” হোয়াট?”

মৃন্ময় ফ্রেন্ড সার্কাল এর মাঝে সব চেয়ে দুষ্টু আর চঞ্চল হওয়ার জন্য যেকোনো পরিস্থিতিতে যেকোনো কথা খুব ইজি ভাবে বলে দিতে পারে।মৃন্ময় মুখের ভঙ্গি স্বাভাবিক রেখেই বলল,
” মানে স্যার ওর সর্দি লেগেছে। বাইরে যাবে একটু সর্দি ফেলতে। তাই বার বার আমাকে বলছে আমি যেন আপনার থেকে অনুমতি চেয়ে দিই।ও আসলে একটু ভয় পাচ্ছে অনুমতি চাইতে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

সারাহ রাগে ফোঁস ফোঁস করতে করতে মৃন্ময়-এর দিকে তাকাল।চোখের অবস্থা এমন যেন এখনি মৃন্ময়-কে গিলে খে’ য়ে ফেলবে।সারাহ এমনি আছে মহাবিপদে।এই লোকটার সামনাসামনি সে কোনোভাবেই পড়তে চায়নি।শুধুমাত্র এই মৃন্ময় এর চক্করে পড়ে আজ ছেড়ে দে মা কেদে বাঁচি অবস্থা। জীবনে এমন বাজে পরিস্থিতিতে পড়েনি সারাহ।কেন যেন সব সময় অদ্ভুত সব ঘটনাগুলো তার সাথেই ঘটে। এমনিই নিজের প্রেমিককে রেখে অন্য পুরুষের সাথে বিয়ে হওয়াতে হৃদয় পুড়ছে।

তার উপর গতরাতে যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে যে তারই কলেজের শিক্ষক হবে এটা ছিল জীবনের দ্বিতীয় অন্যতম ধাক্কা।আগে যদি জানত যার সাথে বিয়ে হচ্ছে সে তার শিক্ষক বাবার পা জড়িয়ে ধরে বলত, ‘বাবা আমেনার মা মারা গিয়েছে।আমাকে আমেনার বাবার সাথে বিয়ে দিয়ে দাও আমার কোনো আপত্তি নেই।তবুও এই স্যারের সাথে বিয়ে দিও না।’ আগে জানলে সবার সাথে যু’ দ্ধ করে হলেও এই বিয়ে নাখোশ করে দিত।পর পর কয়েকটা ঘটনায় সারাহ’র নাক কা’ টা যাচ্ছে লজ্জায়। ছিঃ কি লজ্জা যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে কীনা তার শিক্ষক।বিয়ে হয়েছে সেটা ভাল কথা, তাও যদি আগে জানত যে যার সাথে বিয়ে হয়েছে সে তারই কলেকের শিক্ষক গত রাতে অন্তত ওই বাজে ব্যবহার টা করত না।একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে মনে মনে বলল,

‘ এই জন্য পথে ঘাটে ফকির দেখলে ৫-১০ টাকা দিতে হয়।ওদের দোয়া কাজে লাগে।ফকির দেখলে কখনো ফেরত দিইনা বলে অন্তত একটা বিষয়ে বেঁচে গিয়েছি।উফফ বাবা আমি যে বাচাল ভাজ্ঞিস মুখ ফসকে বলে দিইনি যে আমার বয়ফ্রেন্ড আছে।তাহলে ইজ্জত যেটুকু আছে সেটুকু ও যেত।রাতের অন্ধকারে তো বুঝতে পারিনি এই ব্যাটা এত মুডি আর এত গম্ভীর।আমি একটা মন খোলা মেয়ে, সদ্য খেয়েছি স্যাঁকা, তাতে বিয়ে হয়েছে দাম্ভিক এক পুরুষের সাথে।মানুষ যা অপছন্দ করে তাই -ই কপালে জোটে।হিন্দি সিরিয়ালের মত রোমান্টিক হিরো পছন্দ ছিলো আমার।আর কপালে কীনা জুটল একটা ডিপজল।’ সারাহ মনে মনে দিন দুনিয়ার চিন্তা -ভাবনা করেই যাচ্ছে।
রোশান সিদ্দিকী জীবনে অনেক ধরনের সুপারিশ শুনেছে।কিন্তু কারো সর্দি ফেলার জন্য অন্য কারো সুপারিশ জীবনে প্রথম বার শুনল।নিজের কাছে খুব অবাক লাগল।সে অবাক আর বিরক্তমাখা চেহারায় চাপা কন্ঠে উচ্চারণ করল,

” স্ট্রেঞ্জ! ভেরি স্ট্রেঞ্জ! ”
রোশান সিদ্দিকী’র কথার টোন কেউ না বুঝলেও সারাহ বুঝতে পারল।সে গতকাল রাতেই বুঝতে পেরেছে।তন্ময় একবার রোশান সিদ্দিকীর দিকে দৃষ্টিপাত করে মন দিয়ে লিখে যাচ্ছে।ছোঁয়া লিখছে আর রোশান সিদ্দিকী’র কথা শুনছে।দ্বীপ লেখা বাদ দিয়ে হা করে রোশান সিদ্দিকী’র দিকে তাকিয়ে আছে।ওরা সকলেই রোশান সিদ্দিকীর স্ট্রং কথা-বার্তায় কিছুটা হলেও কম্পিত হল।খুব কম বয়সী লেকচারার এই প্রথম তারা দেখল।তাছাড়া এই লেকচারার অনেক গম্ভীর আর চেহারা দেখে মনে হয় অধিক রাগি।

তাছাড়াও এই লেকচারার অধিকমাত্রায় নিয়ম নীতি ও মেনে চলে। নিয়মের বাইরে গিয়ে কিচ্ছু করে না।কলেজের সিনিয়র স্যার রা সবাইকে বলেই দিয়েছে নতুন যে স্যার এসেছেন সে অনেক ট্যালেন্ট একজন স্যার, বেয়াদবি করলে ক্ষমা করবে না,অনেক স্ট্রং পার্সোনালিটির মানুষ।
মৃন্ময় আর কোনো কথা বলল না।রোশান সিদ্দিকী থমথমে মুডে মৃন্ময় কে বলল, “আপনি বসুন।”
মৃন্ময় বসে লিখতে শুরু করল।সে কি লিখবে কিছুই তো পারেনা।এতক্ষণ তো গ্রুপ ধরে তন্ময় কে কপি করে লিখছিলো।রোশান সিদ্দিকী সারাহ’র দিকে এইবার তাকাল।অভিজ্ঞ নয়নে সারাহ’র দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে নিয়ে গম্ভীর কন্ঠেই বলল,

“যান বাইরে যান কুইক।নিজের প্রয়োজনে অন্যকে ডিস্টার্ব করলে খাতা নিয়ে বের করে দিবো।আপনাদের কয়েকজনের জন্য ক্লাসের সকল ছাত্র-ছাত্রীর সমস্যা হল।”
সারাহ বোকার মত রোশান সিদ্দিকী’র দিকে তাকাল।এই মুহুর্তে তার অবস্থা পৃথিবীর সব চেয়ে করুণ অবস্থা।কেউ তো আর টের ও পাচ্ছেনা গতরাতে তাদের দু’জনের বিয়ে হয়েছে।সারাহ মিন মিন কন্ঠে বলল,
“না স্যার আমি বাইরে যাবো না।”
রোশান সিদ্দিকী এইবার গোল গোল চোখে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ল,
“আপনি বাইরে যাবেন না? তাহলে তাকে ডিস্টার্ব করছেন কেন?” মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলল।
“আসলে বাইরে গেলে আমার সময় নষ্ট হবে।লিখে আগাতে পারব না।যদি বাইরে যাওয়ার জন্য অতিরিক্ত সময় দিন তাহলে যাবো।”

আশে -পাশের বেঞ্চের কয়েকজন সারাহ’র এমন সাহসী প্রশ্ন শুনে ভীষণ অবাক হল।রোশান সিদ্দিকী’র যে মুড।তাতে সাধারণ কথা বলা -ই মুশকিল।রোশান সিদ্দিকী ভ্রু কুঁচকালো।সারাহ সহ তার চারজন বন্ধুর দিকে তাকাল।বেশ কৌতুহলী হয়ে প্রশ্ন করল,
“ইনকোর্স পরীক্ষা তাতেও অতিরিক্ত সময় লাগবে।বাইরে যেতে আসতে ৫ মিনিট সময় লাগবে।এই ৫ মিনিটে কি লিখবেন আপনি?দেখি খাতা কি কি লিখেছেন।”
বাকিদের দিকে তাকিয়ে বলল, ” এ কি আপনারা লিখছেন না কেন? ক্লাসে অন্যদের থেকে আপনাদের পাঁচজনের ভাব-ভঙ্গী আলাদা।”

দ্বীপ মনে মনে মৃন্ময়কে গালি দিচ্ছে আর বলছে, ” তুই যদি স্যার কে না ডাকতি, স্যার কি ঘাড়ের কাছে এসে দাঁড়াত।বাড়ি থেকে কি কিছু পড়ে এসেছি।স্যার দাঁড়িয়ে থাকলে কি লিখব।”
এইদিকে সারাহ ও আছে খুব বিপদে।সে পরে তন্ময় বা ছোঁয়ার থেকে দেখে লিখবে বলে পুরা খাতা ফাঁকা রেখে রেখে চলে গিয়েছে।এখন রোশান সিদ্দিকী খাতা দেখলে তার তো মান ইজ্জত সব যাবে।তার বাবা বিয়ের সময় বলেছে আমার মেয়ে লেখা -পড়ায় খুব ভাল ছাত্রী।পরীক্ষায় সব সাব্জেক্টে নব্বই এর ঘরে থাকে।কিন্তু সারাহ’র বাবা তো জানেনা ছোট বেলায় তার মেয়ে ভাল ছাত্রী ছিল।ইন্টার অব্ধি।তার পর গোল্লায় গিয়েছে।রোশান সারাহ-র খাতা টেনে নিল।খাতা খুলে অবাক নয়নে খাতার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো।সারাহ লজ্জায় ম’রে যাচ্ছে। রোশান সিদ্দিকী খাতাটা সারাহ-র সামনে রেখে বলল,

” কার টা দেখে লিখবেন বলে সব ফাঁকা রেখে গিয়েছেন?”
সারাহ আবার ও মিন মিন কন্ঠে বলল,
” কারোর টা নয়। নিজেই লিখব।”
” যতটুকু লিখেছেন অতটুকু কি নিজে লিখেছেন?”
” জি স্যার।”
” যাওয়ার সময় লাইব্রেরি থেকে দেখা করে যাবেন।”
রোশান সিদ্দিকী এইবার মৃন্ময়, দ্বীপ আর তন্ময়ের খাতার দিকে তাকিয়ে বলল,
” দেখি আপনাদের তিনজনের খাতা।”
ওরা তিনজন খাতা এগিয়ে দিল।রোশান খাতা মিলিয়ে দেখল হুবহু তন্ময়ের লেখা কপি করে লেখা।ওদের দিকে তাকিয়ে বলল,

” কলমের কালি শেষ না একবারে ফটোকপি করলেই পারতেন।” ওরা কেউ কোনো কথা বলছে না। রোশান এইবার তন্ময়-কে উঠিয়ে একদম সামনে দিয়ে দিল।তন্ময় উঠে যেতেই ওদের কলম থেমে গেল।রোশান এইবার সারাহ’র দিকে তাকিয়ে বলল,
” আপনি বাইরে গেলে যেতে পারেন।”
সারাহ আবার’ ও মিন মিন কন্ঠে বলল, ” না যাব না।”
এটুকু বলতেই প্রবল জোরে পর পর তিনটা হাঁচি হল।সেই হাঁচিতে নাক দিয়ে সর্দি বের হল। রোশান দ্রুত পকেট থেকে টিস্যু বের করে সারার খাতার উপর রেখে জায়গা ত্যাগ করল।সারাহ দ্রুত টিস্যু নিয়ে নাক পরিষ্কার করে জানালা দিয়ে ফেলে দিয়ে মনে মনে বলল,
” এই অঘটন কি এখনি হওয়ার ছিল।”
বারোটা বেজে গেল।ওদের পরীক্ষা শেষ। হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে দ্বীপ, মৃন্ময় আর ছোঁয়ার।ওরা গড়াগড়ি দিচ্ছে একে অপরের পর। ছোঁয়া বলল,

” ভাজ্ঞিস সারাহ অকাজ টা স্যারের গায়ের উপর করেনি। কি হত তাই ভাবছি।”
ওদের হাসি দেখে সারাহ বলল, ” এত হাসাহাসি বাদ দে। তোদের বুদ্ধি নিয়ে আমার জীবনের যা সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে গিয়েছে।”
ছোঁয়া বলল, ” আজ এসে থেকে রাগ দেখাচ্ছিস কি হয়েছে।”
” মাঠে চল বসে বলছি।”
ওরা মাঠের দিকে যাবে যাবে তখন-ই রোশান ওদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো।যাওয়ার সময় সারাহকে উদ্দেশ্য করে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১

“আপনি লাইব্রেরিতে আসুন,আপনার স্পেশাল এক্সাম হবে।”
সারাহ ওর বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে যেন এখনি কেদে দিবে। কীসের আবার স্পেশাল এক্সাম।দ্বীপ বলল,
” স্পেশাল এক্সাম টা কী রে ভাই?”
মৃন্ময় বলল, ” সেটাই তো বুঝছি না।”
ছোঁয়া বলল, ” কলেজের সব মেয়ে উনার কাছে স্পেশাল এক্সাম দিতে প্রস্তুত।সেখানে সারাহ কত লাকি সুযোগ পেয়েছে।”
সারাহ চোখ পাকিয়ে ছোঁয়ার দিকে তাকাল।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৩