প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৫

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৫
মারশিয়া জাহান মেঘ

মধ্য রাতে ঘুম ভেঙ্গে যায় তাশরীফের। সে জেগে বের হয়ে আসে উঠোনে। উঠানে দাঁড়িয়ে উপরতলায় তাকালো সে। কি হলো যেন, সে রাত্রিকে কল দিল।
রাত্রি আর আভা কথা বলছিল, হুট করেই তাশরীফের কল দেখে ভূত দেখার মত চমকে উঠল। রাত্রি আভাকে বলল,
“তাশরীফ ভাই কল দিয়েছে, এত রাতে? নে কল ধর।”
“আমি পারব না আপু, তুমিই ধরো।”
“ইশ আভা ধর না, হয়তো কোনো কিছু লাগবে।”
আভা কল ধরতেই ওপাশ থেকে তাশরীফ বলল,
“জলদি একটু বারান্দায় আয়তো আভা।”
আভাকে কোনো কিছু বলার সুযোগ দিলো না সে। সাথে সাথেই কল কে’টে দিল।

“কিরে কি বলল?”
“বারান্দায় যেতে।”
রাত্রি ঢং করে হেসে বলল,
“যা যা, তোকে ডাকছে। তোকে ছাড়া বোধ হয় ঘুম আসছে না তার দু চোখে।”
তাশরীফ দাঁড়িয়ে আছে উঠোনে। পরিবেশ বেশ গা ছমছম’ময়। ঠান্ডা, শীতল পরিবেশ। চারিদিকে ঝিঁঝিঁ পোকার শব্দ। আভাকে বারান্দায় আসতে দেখতেই, তাশরীফ এক ধ্যানে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। সে আবারও কল দিল। রাত্রির ফোন আভার হাতে থাকায় সে কল ধরে তাকিয়ে তাকিয়ে বলল,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ডাকলেন কেন?”
“তোকে দেখতে।”
আভা থমকে গেল কিছুক্ষণের জন্য। তারপর ডিভোর্সের কথাটা ভেবে বলল,
“এত রাতে এইসব কি ধরনের পাগলামি তাশরীফ ভাই। শুধু শুধু ঘুমটা নষ্ট করার কোনো মানেই হয় না।”
তাশরীফ আচমকা আভার মুখে রাগী কন্ঠে কথাগুলো শুনে অবাক হলো। বলল,
“তোর জন্য এই পাগলামি আমার সারাজীবন থেকে যাক আভা।”
“আমার ঘুম পাচ্ছে, আপনিও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।”
“ভয় করছে একা ঘুমাতে। তুই চলে আয় না।”

“ডক্টর তাশরীফ চৌধুরী ভয় পাচ্ছে! আর এইটা আমাকে বিলিভ করতে হবে?”
আহত দৃষ্টি রাখল তাশরীফ আভার দিকে। আভা কল কে’টে রুমে চলে গেল। বিরক্ত লাগছে তার কাছে সবকিছু। আভা রুমে যেতেই রাত্রি দুষ্টু হাসি মুখে রেখে বলল,
“ডাকছে বুঝি? চলে যা। তোকে ছাড়া ঘুমাতে পারবে না আজ।”
“কি যে বলো না আপু…. ঘুমাওতো। সকালে আবার অনেক কাজ আছে। ঘুমিয়ে পড়ো।”
“হ্যাঁ, আয় শুয়ে পড়।”

ভোর সকালে ঘুম থেকে সবাই উঠে পড়ে বাড়ির। চারিদিক এখনো ফরসা হয়নি পুরোপুরি। দরজার কড়া নাড়তেই আভার ঘুম ভেঙ্গে গেল। রাত্রির ফোনটা হাতে নিয়ে দেখল মাত্র ৫:৩৮ বাজে। হাত হাই ফাইভ করতে করতে বলল,
“কে?”
“মা বলছি, রাত্রিকে ডেকে নিচে আয়।”
আভা দরজা খু’ল’ল৷ চোখ ঢ’লতে ঢ’ল’তে বলল,

“আহা মা, আপুকে এখন ডেকে কি করবে? আপু ঘুমাক না একটু। আজ সারাদিনইতো দখল যাবে আপুর উপর।”
“গোসল করতে হবে না? দু’ধ মাখা মুড়ি খেতে হবে না?”
“সে না হয় ৯ টায় খাইয়ে দিও।”
“আচ্ছা সে না হয় ঠিক আছে। তুই আয় নিচে।”
“আসছি, তুমি যাও।”

আভা চুল খোঁপা করে বেরিয়ে এলো রুম থেকে। নিচতলার উঠোনে যেতে তাশরীফ যেই রুমে শুয়ে আছে সেই রুম টপকে যেতে হয়। আভা উঁকি দিলো একটু রুমটায়। দেখল তাশরীফ ঘুমিয়ে আছে। হাতের ঘড়িটাও খুলেনি। ব্য’থা পাবে না? এইটা ভাবতেই আভা রুমে যায়। গিয়ে জানালা একটু খু’লে দেয়। রোদ উঠলে চোখে পড়বে ভেবে পুরোপুরি খু’লেনি জানালা। বাতাস আসলেই হলো। আভা ধীর পায়ে তাশরীফের কাছে গেল। হাতটা কোমলভাবে ধ’রে ঘড়ি খু’ল’ল। সে যেই ফিরে আসতে যাবে, এমন সময় পেছন থেকে তাশরীফ হাত ধ’রে ফেলে। আভা চমকে উঠে। শুকনো একটা ঢো’ক গি’লল।

“তুই এইখানে কি করছিস? রাতেতো পাত্তাও দিলি না। ভোর হতে না হতেই আমার রুমে এসে যেই দেখলি একটা হ্যান্ডসাম ছেলে শুয়ে আছে তখন আর সামলাতে পারলি না নিজেকে তাই না? ই’জ্জ’ত ফালুদা করতে এসে পড়েছিস আমার?”
আভা পেছনে তাকালো। নাক বেংচি কে’টে বলল,
“ওরে আমার রূপসীরে, সুন্দরী রমণী শুয়ে আছে, তাকে রে’প করার জন্য আভা রুমে এসেছে তাই না? হাত ছাড়ুন।”
কথাটা বলেই আভা চলে যাচ্ছিলো রুম থেকে। তাশরীফ সাথে সাথে উঠে কো’ম’ড় ঝা’প’টে ধ’রে আভার। সে এক হাত দিয়ে দরজা লাগিয়ে আভাকে মুখোমুখি আনল। বলল,

“কি বললি তুই?”
“আমি না, আপনিই বলেছেন। ছাড়ুন যেতে দিন আমায়। কেউ দেখে ফেলবে।”
“আমি কি পর নারীকে ঘরে রেখে দরজা আটকেছি?”
আভা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই তাশরীফ আরও শক্ত করে কো’ম’ড়ে জড়িয়ে ধরে আভাকে। এক হাত দিয়ে আভার চুল ধরে, অন্য হাত দিয়ে কো’ম’ড় চে’পে ধরল সে। আভাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো নিমিষেই। কয়েক মিনিট পর আভাকে ছেড়ে দিতেই আভা ঘন নি’শ্বা’স নিতে নিতে বলল,

“এইটা কি হলো সকাল সকাল?”
“আমার জন্য এখন গিয়ে এক কাপ চা নিয়ে আয় যা। ওহ হ্যাঁ, চিনি ছাড়া চা নিয়ে আসিস। কারণ, আমার মুখে এখনো মিষ্টির স্বাদ লে’গে আছে। হুয়াই ইউ আর স্ট্যান্ডিং? হাররি আপ গো…মিস সুইট টি।”
“সুইট টি।”
আভা অদ্ভুতভাবে তাকিয়ে কথাটি বলল তাশরীফকে। তাশরীফ ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল,
” মিষ্টি চা।এইবার থেকে চিনি ছাড়া চা দিলেও চলবে। যদি রোজ তোর এই ন্যাচারাল মিষ্টি আমাকে খাওয়াস।”
আভা চোখ বড় বড় করে বলল,

“শ’র’ম -লজ্জা কিছুই নেই তাই না?”
তাশরীফ টিশার্ট খু’ল’তে খু’ল’তে বলল,
“যাবি? নাকি এখন গভীর মিষ্টি পান করব?”
আভা তাশরীফের টিশার্ট খু’ল’তে থাকা দেখে বুঝে গেল কথাটার পূর্ণ মানে। তাকে আর পায় কে? জলদি ত্যাগ করে এই রুম।
আভা রুম থেকে যেতেই তাশরীফ ফিক করে হেসে ফেলল। হাসতে হাসতে তার প্রাণ যায় যায় অবস্থা। আভার মুখটা দেখার মত ছিল।

“আভা, তাশরীফ উঠেছে?”
রাফসান চৌধুরী হেসে কথাটি বললেন। আভা বলল,
“বাবা আপনি এত সকাল সকাল উঠেছেন!”
“উঠব না? ভাগ্নীর বিয়ে বলে কথা। আমি মামা হয় না? আমার কি কাজের অভাব আছে?”
আভা হাসল কেবল। বলল, “নাস্তা করেছেন?”
“করেছি। তাশরীফ এখনো উঠেনি? বিয়ে বাড়িতে আবার কিসের এত ঘুম?”
“উঠেছেতো।”

“নাস্তা দিয়ে আয় তাহলে।”
মামার কথা ফেলতে পারেনি আভা। মামাকে বাবা ডাকতে প্রথমে যে ল’জ্জা পেতো সে। ধীরে ধীরে তা কে’টে গেছে। সে বলল,
“নাস্তা নিচে এসেইতো করবে মনে হয়।”
“তাশরীফ এত ঝামেলার মাঝে খেতে পারে না। তুই বরং দিয়েই আয়।”
আভা মনে মনে বলল,

“এইবার গিয়ে খাবারটা দিয়ে সোজা চলে আসব। হাত ধরলে না’কে ঘু’ষি মা’র’ব। কি’স করতে আসলে ঠোঁ/ট কে’টে ফেলব কাঁচি দিয়ে। কাঁচিটা কোথায়” .. কথাটি ভাবতেই চারদিকে কাঁচি খুঁজে আভা। অবশেষে পেয়ে মনে মনে পৈশাচিক হাসল সে। নাস্তার প্লেট নিয়ে রুমে গেল। তাশরীফকে দেখে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নিল আভা। মাত্রই ওয়াশরুম থেকে গোসল সেরে বেরিয়েছে তাশরীফ। খা’লি গায়ে সে। চুল তোয়ালে দিয়ে মুছতে মুছতে আভাকে দেখল সে। তাশরীফ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলল,
“আজব! আমাকে দেখে চোখ সরিয়ে নেওয়ার কি আছে? এমন এক ভাব জীবনে মনে হয় আমাকে এমন অবস্থায় দেখিসনি।”
আভা বলল,

“আপনার আসলেই মু’খে কিছু বাঁধে না তাই না তাশরীফ ভাই? নাস্তা রেখে যাচ্ছি খেয়ে বেরিয়ে আসুন।”
নাস্তা রেখে আভা চলে যাবে এমন সময় তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তাশরীফ। ভেজা শ’রী’র থেকে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা পা’নি। আভা বলল,
“মুছে নিন, ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“হাতে কাঁচি নিয়ে এসেছিলি কেন?”
তাশরীফ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নটা করতেই থতমত খেয়ে যায় আভা। আমতা আমতা করে বলল,
“না মানে ইয়ে।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৪

“আমার ঠোঁ/ট কা’ট’তে এসেছিলি বুঝি?”
আভা আরেক দফা অবাক হলো। আসলেইতো সেইটা ওনি জানলো কেমন করে?!
তাশরীফ চট করে আভার হাত থেকে কাঁচিটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। আভার চুলের দিকে কাঁচি নিতে নিতে বলল,
“তোর চুলগুলো বেবিদের মত কে’টে বেবি করে দিই তোকে?”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৬