গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব ৪৩
Raiha Zubair Ripti
ভরা সন্ধ্যায় প্লাবনের সাথে নীতি এসেছে শপিংমলে হাতের মাপ দিয়ে আংটি কিনতে। নীতিদের ঠিক পেছনের দোকানটায় আছে রোহান। হোয়াইট কালারের শার্ট চোখে সানগ্লাস। একদম বখাটে বখাটে হাবভাব। নীতি এখনও খেয়াল করেনি রোহান কে। দোকান থেকে আংটি টা কিনে প্লাবন কে নিয়ে পেছন ফিরলেই চোখ যায় রোহানের দিকে। নীতি রোহান কে উপেক্ষা করে চলে যেতে নিলে রোহান বলে উঠে –
-“ কিরে চলে যাচ্ছিস কেনো? আমাকে দেখিস নি নাকি এখনও?
নীতি দাঁড়িয়ে গেলো। প্লাবন বলল-
-“ রোহান এসেছে দেখছি।
নীতি পেছন ফিরলো। বলল-
-“ আপনি কোনো বিলগেটস বা আম্বানি পরিবারের সদস্য নন যে আপনাকে দেখতে হবে আমার।
-“ আজকাল ভালোই চাপা নাড়তে শিখেছিস। নাইস চোপা! বিয়েটা কি আদৌও হবে তোর? আমি ভীষণ আশংকায় আছি তোর বিয়ে নিয়ে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-“ আপনার মাথা না ঘামালেও চলবে আমার বিয়ে নিয়ে। আপনি আপনাকে নিয়ে ভাবুন।
-“ ইয়েস আমি নিজেকে নিয়েই ভাবছি এখন। বিকজ কথায় আছে নিজে বাঁচলে বাপের নাম। আর প্লাবন শুনুন।
প্লাবন ভ্রু কুঁচকালো। বলল-
-“ জ্বি বলুন।
-“ বিয়ের দিন হিন্দুদের মতো আপনি লগ্নভ্রষ্ট হলে কিন্তু তার দায়ভার আমি নিব না।
-“ লগ্নভ্রষ্টা কেনো হবো আমি?
-“ কারন আপনি যাকে বিয়ে করছেন তাকে আমি বিয়ে করে ফেলবো সেজন্য।
-“ কিন্তু নীতি তো আমাকে বিয়ে করবে।
-“ স্বাধীন দেশে বাকস্বাধীনতা থাকলেও নীতির নেই। নীতি বাকস্বাধীনতা অন্যরা নিয়ন্ত্রণ করে। শপিং শেষ তো? এখন বাসায় যান। নীতি কে আমি নিয়ে যাচ্ছি।
নীতি দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
-“ আমি আপনার সাথে যাব না। আমি প্লাবনের সাথে যাব।
রোহান কথাটা শুনে ধমকে বলল-
-“ চ’ড়িয়ে দাঁত ফে’লে দিব বে’য়াদব মেয়ে। প্লাবন তোর ছোট না বড়? নাম ধরে ডাকছিস কেনো? ভাইয়া ডাক। আর প্লাবন আপনি দাঁড়িয়ে কেনো এখনও? যেতে বলছি না? আর তুই আয় আমার সাথে।
রোহান নীতির হাত টেনে চলে আসলো। গাড়ির সামনে আসতেই নীতি ঝাড়া দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল-
-“ এভাবে টেনে নিয়ে আসার মানে কি?
রোহান নীতির গাল চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে রেগে বলল-
-“ মানে কি তুই বুঝিস না? প্রথমে ভালোবাসি ভালোবাসি বলে পেছন পেছন ঘুরলি। আমাকে তোর প্রতি দূর্বল করে এখন আরেক পুরুষের কাছে যাচ্ছিস? আমি মোটেও তা হতে দিব না। ভালো মানুষি দেখিয়েছি এখন খারাপ কত প্রকার ও কি কি তা দেখাবো। চুপচাপ গাড়িতে উঠে বস।
নীতি ভয়ে উঠে পড়লো গাড়িতে। রোহানের রাগ সম্পর্কে নীতি অবগত। এখন কথা না শুনলে রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে চ’ড় বসিয়ে দিতেও দু বার ভাববে না।
রোহান নিজেও গাড়িতে উঠে বসলো। জোরে শ্বাস নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। সোজা নীতি দের বাসার সামনে গাড়ি থামিয়ে বলল-
-“ যা বাসায় যা।
নীতি গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাড়ির ভেতর হাঁটা ধরলো। রোহান পেছন থেকে বলে উঠল-
-“ ঐ নীতি।
নীতি পেছন ফিরলো। রোহান বলল-
-“ আমাকে ভালোবাসিস বল একবার।
নীতি মুখ বাঁকিয়ে হাঁটা ধরলো।
বেলকনি থেকে নেহাল সবটা দেখলে। নীতি ভেতরে আসতেই নেহাল বলে উঠল-
-“ তুই না প্লাবনের সাথে গিয়েছিলি? রোহানের সাথে আসলি কি ভাবে?
-“ পেছন পেছন গিয়েছিল নজরদারি করতে।
-“ শুধু শুধু কষ্ট দিচ্ছিস রোহান কে।
নীতি ভ্রু কুঁচকালো। বলল-
-“ মায়ের চেয়ে মাসির দরদ বেশি হচ্ছে বুঝি? কই আমার কষ্ট তোমার চোখে পড়েনি তখন? যখন তোমার বন্ধু আমাকে কথায় কথায় হার্ট করতো? এখন আমি রিভেঞ্জ নিচ্ছি বলে কষ্ট হচ্ছে?.
-“ আহ্ ব্যপার টা সেরকম না৷ তোকে তো একটা কথা বলিই নি।
-“ কি?
-“ রোহান আমাদের ভার্সিটির একটা মেয়েকে ভালোবাসতো৷ আমাদের স্যারের ওয়াইফ সে।
নীতি বাঁকা চোখে তাকালো।
-“ তারপর?
-“ তারপর আর কি রুয়াত কে জানানোর আগেই রুয়াতের বিয়ে হয়ে গেলো স্যারের সাথে। বেচারা রোহান বেশ ভেঙে পড়েছিল সেসময়।
-“ মেয়েটার নাম রুয়াত?
-“ হু৷ তবে চিন্তা করিস না। রুয়াত পছন্দ করতো না রোহান কে। আর রোহান রুয়াত কে ভীষণ রেসপেক্ট করে। প্রথম ভালোবাসা বুঝিসই তো।
-“ আচ্ছা আসছি। ভীষণ টায়ার্ড ফিল হচ্ছে।
নীতি রুমে এসে কাধ থেকে ব্যাগ টা বিছানায় রেখে বসে পড়ে। তারপর কিছু একটা নিয়ে ভাবনায় মশগুল হয়।
শাফায়াত রুয়াত হসপিটালে গিয়েছিল চেকআপ করতে সেদিন। ডক্টর জানায় রুয়াত প্রেগন্যান্ট। শাফায়াত রুয়াত কে একটা কাজ ও করতে দেয় না। বাসায় একটা কাজের লোক রাখার চিন্তা ভাবনা করছে। ক’দিন পর সাদমান রজনী ও চলে যাবে। শাফায়াত রান্না ঘরে চা বানাচ্ছে। রুয়াতের নাকি ভীষণ চা খেতে ইচ্ছে করছে। শাফায়াত রুয়াতের জন্য চা আর নিজের জন্য কফি বানিয়ে রুমে আসলো। রুয়াত বেলকনিতে বসে ছিল। শাফায়াত রুয়াতের পাশে বসে চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিলো। রুয়াত চায়ের কাপ টা নিয়ে তাতে চুমুক বসিয়ে বলল-
-“ চা টা বেশ ভালোই বানান।
শাফায়াত কফির মগে চুমুক দিয়ে বলল-
-“ হ্যাঁ তোমার জন্য।
-“ আপুরা যাবে কবে?
-“ এই তো দু তিনদিনের মধ্যে।
-“ ওহ্।
কফি চা খাওয়ার শেষে শাফায়াত রুয়াত কে নিয়ে রুমে চলে আসলো। রাত হয়েছে ঘুমাতে হবে।
সারা রাত নীতি নির্ঘুমে কাটালো। অনেক কিছু ভাবলো। ভোর হতেই প্লাবন কে ফোন করলো। প্লাবন ফোন রিসিভ করলে নীতি বলে উঠল-
-“ বিয়ে নিয়ে আমাদের আর এগোনো উচিত না ভাইয়া। এখনই থেমে যাওয়া উচিৎ। আপনি জানেন আমি রোহান ভাই কে ভালোবাসি। তাকে গিল্টি ফিল আর তাকে আমার ভালোবাসা বুঝাতেই এটা করা। আই থিংক এখন থেমে যাওয়া উচিৎ।
প্লাবন ওপাশ থেকে বলল-
-“ ভেবে বলছো তো? তাকে বিয়ে করলে সারাজীবন কষ্ট পেতে হবে। কারন রোহান ছন্নছাড়া।
-“ আমি সব মানিয়ে নিব। আমি শুধু চাই সে আমাকে ভালোবাসুক। আমার জন্য ডেস্পারেট হোক।
-“ আচ্ছা। শুভ কামনা রইলো।
-“ ধন্যবাদ।
নীতি ফোন টা কেটে বেলকনিতে আসলো। আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আমি জানি, আমাকে সারাজীবন কাদতে হবে। কারণ আমি আপনাকে চেয়েছি। তবে আপনার সাথে কথা হোক বা না হোক, মনে রাখবেন আপনি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলেন, আছেন এবং থাকবেন।
হঠাৎ মুঠো ফোন টা বেজে উঠতেই নীতি ফোনের দিকে তাকায়। রোহান ফোন করেছে। নীতি রিসিভ করলো ফোন টা। রোহান বলে উঠলো-
-“ কি করছিস?
নীতি শান্ত কন্ঠেই বলল-
-“ বসে আছি।
-“ আমার মামু কে আজ তোদের বাসায় পাঠাবো।
নীতি ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কেনো?
-“ বিয়ে নিয়ে কথা বলতে।
-“ কার?
-“ তোর আর আমার।
-“ আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব ৪২
-“ তাতে আমার কি? আমার ও বিয়ে ঠিক করতে হবে। আমারও বিয়ে করতে হবে। বউ ছাড়া আর কতকাল একা একটা বিছানায় ছটফট করবো? বয়স তো হয়েছে বউকে ছটফট করানোর। সেই বয়সে আমি নিজে একাই করছি ছটফট। দ্যিস ইজ নট ফেয়ার।
-“ লাগাম টানুন কথায়।
-“ আমার কথায় লাগাম আবার ছিলো কোন কালে শুনি? সুন্দর করে শাড়ি পড়ে পরিপাটি হয়ে থাকিস। একেবারে কাজি ডেকে বিয়ে পরিয়েও আনতে পারি। আমাকে দিয়ে ভরসা নেই। রাখছি এখন শোনা। দেখা হচ্ছে।