প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৬
মারশিয়া জাহান মেঘ
নাস্তা রেখে আভা চলে যাবে এমন সময় তার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় তাশরীফ। ভেজা শ’রী’র থেকে পড়ছে ফোঁটা ফোঁটা পা’নি। আভা বলল,
“মুছে নিন, ঠান্ডা লেগে যাবে।”
“হাতে কাঁচি নিয়ে এসেছিলি কেন?”
তাশরীফ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্নটা করতেই থতমত খেয়ে যায় আভা। আমতা আমতা করে বলল,
“না মানে ইয়ে।”
“আমার ঠোঁ/ট কা’ট’তে এসেছিলি বুঝি?”
আভা আরেক দফা অবাক হলো। আসলেইতো সেইটা ওনি জানলো কেমন করে?!
তাশরীফ চট করে আভার হাত থেকে কাঁচিটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। আভার চুলের দিকে কাঁচি নিতে নিতে বলল,
“তোর চুলগুলো বেবিদের মত কে’টে বেবি করে দিই তোকে?”
আভা আমতা আমতা করে বলল,
“ক্ কি্ কি বলছেন এই এইসব তাশরীফ ভাই? পথ ছাড়ুন ডাকছে আমায়।”
“পথ ছাড়ার জন্য পথ ধরেছি?”
“ইশ, তাশরীফ ভাই কি শুরু করেছেন এইসব? কি চান আপনি? কি চাননন? জীবনটা শেষ করে এখনো শখ মি’টে’নি। আপনাকে বিয়ে করাটা ভীষণ অন্যায় করে ফেলেছি?”
হুট করে আভা এইভাবে রেগে যাওয়াই তাশরীফ কিছুটা অবাক হলো। কি থেকে কি হয়ে গেল!
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“আভ….”
তাশরীফ কিছু বলতে না বলতেই আভা চলে গেল রুম থেকে। তাশরীফ মিনমিন স্বরে বলল,
“ভালোই ভালোই রাত্রির বিয়েটা হয়ে যাক, তারপর তোকে আমি দেখে নিচ্ছি।”
আজ রাত্রির বিয়ে। বর এসেছে। সাদিত দেখতে বেশ সুন্দর। জামাই হিসেবে তাকে রাত্রির পাশে মন্দ লাগবে না। জামাইতো লাখে এক। গেইটে দাঁড়িয়ে আছে আভা। টাকা নিয়ে তর্ক বিতর্ক চলছে। বর পক্ষের একজন ইয়াং ছেলে আভাকে রসিক স্বরে বলল,
“বেয়াইন সাহেবা, এই গেইটের দাম ১ লাখ টাকা কিভাবে দাবী করেন? তারপর আবার যেই শরবত নিয়ে এসেছেন, আমারতো মনে হচ্ছে চিনি দেনইনি।”
আভা টি’ট’কা’রি মে’রে বলল,
“না খেয়েই বলে ফেললেন বেয়াই? বাহ্ আপনিতো দেখছি বুড়োদের মত বেশ অভিজ্ঞতা আছে।”
“বেয়াইন সাহেবা কিন্তু বেশভাবে কথা বলতে জানেন।”
“মুখ আছে তো কথা বলব না?”
দূর থেকে তাশরীফ সব দেখছিল। হাতের মুঠো আবদ্ধ করল সে। রুঢ় হয়ে সে গেল গেইটের সামনে। আভার হাত ধরে বলল,
“আমি যে তোকে খুঁজছি তোর সে খেয়াল আছে? ভুলে গেছিস? তুই একটা ম্যারিড মেয়ে। এত রং ঢং কেন করছিস এইখানে?”
আভা চারদিকে তাকিয়ে বলল,
“সবাই দেখছে তাশরীফ ভাই। হাতটা ছাড়ুন৷ আমার লাগছে।”
“মানুষ দেখছে তাতে আমার কি? আমার ওয়াইফ তুই। গট ইট?”
রাত্রির বিয়ে হয়ে গেছে। একটু আগেই সবাই তাকে বিদায় দিয়েছে। মা-বাবা কাঁদছে আনমনে। মেয়েরা জন্ম হওয়ার পরেই এই নিয়ম নিয়ে আসে যে তাকে অবশ্যই বাপের বাড়ি ছাড়তে হবে। আভা ভাবছে একটু পরে সে সবাইকে সবটা জানাবে। পরিবেশ ঠান্ডা হওয়ার অপেক্ষায় সে।
রাতে সবাই স্বাভাবিক হওয়ার পর একসাথে খেতে বসেছে। আভা তখন হুট করেই বলে ফেলল,
“আমি আর এই বিয়ের সম্পর্কে থাকতে চাই না বাবা। এইবার এই সম্পর্কটার শেষ হওয়া প্রয়োজন। এতে আমি আর তাশরীফ ভাই দুজনেই ভালো থাকব। আমরা দুজন কেউই আপাততঃ ভালো নেই।”
সবাই খাওয়া থামিয়ে হতবাক হয়ে রইল। আভার বাবা বলল,
“এইসব কি বলছিস আভা?!”
তাশরীফ প্লেটে হাত রেখে এক ধ্যানে শুধু তাকিয়ে আছে আভার দিকে। তার দৃষ্টি স্থির। রাফসান চৌধুরী আর নীরা চৌধুরী একে অপরের চোখাচোখি চেয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল,
“এইটাতো হওয়ারই ছিল। নীরা, আমাদের প্ল্যানও এই সম্পর্কটা টেকাতে পারলো না। ভেবেছিলাম আভা অন্য ছেলের সাথে মিশলে তাশরীফের জেলাস ফিল হবে। কিন্তু ঘুরে ফিরে সম্পর্ক আগের জায়গায়ই।”
নীরা চৌধুরী মিনমিনিয়ে বলল,
“চুপ থাকো এখন, দেখ কি হয়।”
তাশরীফ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। সে আভার দিকে তাকিয়েই থাকল। আভার দিকে তাকিয়ে হাতে পানি দিতে দিতে রাফসান চৌধুরীকে বলল,
“বাবা, আমি আগামীকাল সকালে ঢাকায় ফিরব। হসপিটালে আগামীকাল থাকতে হবে।”
“আভা তুমি সব ভেবেই সিদ্ধান্ত নিয়েছ?”
রাফসান চৌধুরীর দিকে না তাকিয়েই ছোট্ট করে উত্তর দিলো,
“হুম।”
সেও না খেয়ে চলে গেল। এই দহন তার আর স’হ্য হচ্ছে না। বু’ক ফা’টে তবুও মুখ ফা’টে’না মেয়েটার।
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই আভা নিচতলায় গেল। তাশরীফ হয়তো চলে গেছে। এইটা ভাবতেই ক’ষ্ট হচ্ছে মেয়েটার। সে নিচতলায় গিয়েই অবাক হলো। বিলাশ আয়োজন। হতবাক চোখে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
“আজ কি কোনো কিছু আছে নাকি বাড়িতে? গতকালইতো আপুর বিয়ে হলো।”
“মা, মামা-মামী কোথায়?”
“ঢাকায়।”
“ওরাও চলে গেছে ছেলের সাথে!”
“হ্যাঁ, সর দেখি, অনেক কাজ পড়ে আছে।”
“কিসের কাজ!”
“ওমা, তোর বিয়ের।”
“আমার বিয়ের!”
বিস্ময় নিয়ে বলল আভা। সে নাক ফুলিয়ে বলল,
“একটা সম্পর্ক শেষ করতে বলতে না বলতেই অন্য জায়গায় বিয়ে দিয়ে দেওয়ার জন্য পাগল হয়ে গেছ তোমরা মা?”
আভার মা হাসলেন। মেয়ের হাতে একটা কাগজ ধরিয়ে চলে গেলেন তিনি।
“এই সম্পর্কটা আর চাই না বলতেই ধরে নিলে আমি ডিভোর্স দিব তাই না? আমি আসলে বলতে চেয়েছিলাম যে আমাদের বিয়েটা বিয়ে বিয়ে লাগেনি। এখন অনুষ্ঠান করে ধূমধাম করে আবার বিয়ে করব আমরা রাত্রির বিয়ের পর। কিন্তু তুই বুঝলি উল্টোটা। ভীষণ রাগ নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। একদম যোগাযোগ করার চেষ্টা করবি না। সবাইকে বলে এসেছি অনুষ্ঠান শুরু করতে। নিয়ে যাব তোকে বউ রুপে। বিচ্ছেদের শখ জেগেছিল না তোর? সেই শখ আমি একদম মাটিতে মিশিয়ে দিব বিয়ের রাতে। তুইতো ভালো করে চিনিসই না এই তাশরীফ চৌধুরীকে। শুধু অপেক্ষা কর ওই দিনের।
ইতি,
তোর ডাক্তার সাহেব।”
চিঠিটা পড়ে চমকে উঠে আভা। এইটা কি ছিল! তার মানে! ইশশ কি ভুলটাই না করলাম।
আভা অনু সূচনায় কাতরে উঠছে। তড়িঘড়ি করে সে রুমে গিয়ে ফোন হাতে নেয়। তাশরীফের নাম্বারে কল দিতেই ফোন অফ পাচ্ছে সে। খুব বড় একটা ভুল বুঝাবুঝি হয়ে গেল।
আভা রাফসান চৌধুরীকে কল দিল।
ওপাশ থেকে কল ধরতেই বলল,
“বাবা, তাশরীফ ভাই কোথায়?”
“হসপিটালে।”
“ফোন অফ কেন?”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব পর্ব ১৫
“তোর সাথে রাগ করেই বোধহয় করেছে। আজ হসপিটাল থেকে ফিরে ৪ দিন আর যাবে না। কারণ বিয়েতো তোদের। বুঝলি মা? আমরা না বুঝেই ছেলেটাকে কষ্ট দিলাম।”
এপাশ থেকে আভার শব্দহীন কান্না অনুভব করলেন রাফসান চৌধুরী। শান্ত স্বরে বললেন,
“সব ঠিক হয়ে যাবে মা, কাঁদিস না। তাশরীফের জে’দ বেশি। একসময় রাগ দমিয়ে তোকে ঠিকিই কল দিবে।”