আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ৩৮
নূরজাহান আক্তার আলো
অনেকদিন পরে চোখের সামনে আপন মানুষগুলোর মুখ দেখে কুহুর হাত থেমে গেছে। সে বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে সামনে দাঁড়ানো মানুষ গুলোর দিকে৷মুখভর্তি খাবার। চিবাচ্ছেও না। শুধু একরাশ বিষ্য়ম নিয়ে তাকিয়ে আছে। অতঃপর তড়িৎ গতিতে উঠে দাঁড়াল সে। দ্রুত পায়ে ছুট লাগাল মমতাময়ী কাছে। একপ্রকার হামলে পড়ল মায়ের বুকে। মা! মা! ঘ্রাণ টেনে নিলো প্রাণ ভরে। এঁটো হাতেই শক্ত করে জড়িয়ে ধরল মাকে। ইসমত আরা বেগম’ও মেয়েকে বুকে পেয়ে নিজেকে সামলাতে পারলেন না। কেঁদে ফেললেন শব্দ করে। আদরে আদরে ভরিয়ে তুললেন মেয়ের মুখ। দুই হাতের আজলা ভরা মেয়ের মুখখানা দেখে আবারও বুকে টেনে নিলেন। মুখ অস্পষ্টভাবে উচ্চারণ করলেন, ‘মা! ওহ মা। আমার সোনা পাখিটা!’
প্রায় তিনটেমাস পর মেয়েকে কাছে পেলেন তিনি। যেখানে একটাদিন’ও মেয়েকে ছাড়া থাকতেন না। সেখানে তিনমাস! এই তিনটে মাস কিভাবে পার করেছেন উনিই জানেন। বুকটা পুরো শূন্য হয়ে গিয়েছিল। বাসাটাও নিষ্প্রাণ! ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সবাই তখন মা ও মেয়ের মিলন দৃশ্যটি মন ভরে দেখছে। কি সুন্দর দৃশ্য!
এরপর কুহু মায়ের বুক থেকে মাথা সরিয়ে বাবার কাছে গেল। বাবাকে জাপটে ধরলে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে রইল। কাঁদতে কাঁদতে হেসেও ফেলল সে। কুহুর বাবা মেয়ের মাথাতে স্নেহের হাত বুলিয়ে দিলেন। ছলছল নেত্র মেলে মুখভর্তি হাসলেন। ততক্ষণে রিদওয়ানের খাওয়াও শেষ। সে হাত ধুয়ে উঠে এসে উনাদের সালাম দিলো। কুশল বিনিময় করল। উনাদের বসতে বলে কুহুকে বলল বাবা মাকে সঙ্গে নিয়ে’ই খাওয়ার পর্ব সম্পূর্ণ করতে। কিন্তু ইসমত আরা জানালেন উনারা নাস্তা করেই বেরিয়েছেন।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আপাতত কিচ্ছু খাবেন না। কুহু যেন খেয়ে নেয়। অগত্যা কুহুকেই একা খেতে বসতে হলো। তবে সে টেবিল ছেড়ে প্লেট হাতে নিয়ে মায়ের কাছে এসে বসল। একদম গা ঘেঁষে! রিদওয়ান মেডিসিন হাতে দাঁড়িয়ে আছে
দেখে দ্রুত খাওয়া শেষ করল। রান্নাঘরে গিয়ে হাতটা ধুয়ে প্লেট রাখতেই সেখানে রিদওয়ান পানির গ্লাস নিয়ে হাজির হলো। তার হাতে মেডিসিন ধরিয়ে দিলো। কুহুও বিনাবাক্য খেয়ে নিলো। একটা বাক্য বিনিময় করল না। ইসমত আরা সেখানে বসেই দুভ চোখ ভরে রিদওয়ান আর কুহুকেই দেখছে। নিজেও অবাক হলেন বিনাবাক্য কুহুকে মেডিসিন খেতে দেখে।
অথচ কয়েক মাস আগে এই মেডিসিন খাওয়া নিয়ে মেয়েকে মেরেছেন।
গালমন্দ করেছেন। সেই সঙ্গে খেয়াল করলেন মেয়ের অনেক পরিবর্তন।
চেহারাতেও লাবণ্য উপচে পড়ছে। স্বাস্থ্য ভারী হওয়াতে বেশ লাগছে। মা হয়ে উনি বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকতেও পারলেন না। মায়ের নজর নাকি ডান পিটে। নজর লেগে যায়। মনে মনে একথা স্মরণ করে দৃষ্টি সরিয়ে নিলেন। তবে একটা কথা না বললেই নয় দুজনকে বেশ মানিয়েছে। এই নিয়ে স্বামীর সঙ্গেও উনার চোখাচোখি হলো। উনারা দু’জন তাদের জন্য দোয়া করলেন। রুপক ফোনে প্রায়ই বলতো রিদওয়ান নিজে হাতে নাকি কুহুকে মেডিসিন খাওয়াই। এতে কুহু টু শব্দ করে না। ভদ্র মেয়ের মতো খেয়ে নেয়। আজকে নিজের চোখেই সেটা দেখলেন। রুপকের থেকে না শুনলে আজকে এই দৃশ্য দেখে মনে হতো উনাদেরকে দেখেই রিদওয়ান কুহুর যত্ন নিচ্ছে। কিন্তু না, রিদওয়ান শুরু থেকে এই দায়িত্ব পালন করে আসছে। এই দায়িত্বে এখন অবধি হেলা করে নি। অবজ্ঞা করে নি। বরং সে নিজের জায়গায় থেকে পরিপূর্ণভাবে সমস্ত দায়িত্ব পালন করেছে।
আর এজন্যই বুঝি কুহুর এত পরিবর্তন।
তখন নিলুফা ইয়াসমিন এসে পাশের সোফায় বসলেন। দুই পরিবারের হালহকিকত গল্পে গল্পে আদান প্রদান হচ্ছে। রিদওয়ান’ও দাঁড়িয়ে কথা বলছে। সে একটু বাইরে যাবে তাই রেডি হতে উপরে চলে গেল। যাওয়ার আগে কুহুকে রুমে যাওয়ার ইঙ্গিত দিতে ভুলল না। তবে চঞ্চল কুহু বাবা মাকে পেয়ে গল্পে গল্পে ভুলেই গেছে সেকথা। সে বাবা মায়ের থেকে চেনা পরিচিত সবার খোঁজ নিচ্ছে। হাসছে। বলা যায়, গল্পে’ই ডুবে আছে সে।
তখন নিলুফা ইয়াসমিন হাতের লিস্ট কুহুকে ধরিয়ে দিয়ে রুমে পাঠাল। এখনই রুমে গিয়ে রিদওয়ানকে দিতে বলল। কুহু শাশুড়িরআদেশ পেয়ে রুমে গিয়ে দেখে রিদওয়ান রেডি হয়ে বসে আছে। রুমে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ তুলে তাকিয়েছে। কুহু একগাল হেসে এগিয়ে গেল। বসে থাকা রিদওয়ানের গলা জড়িয়ে ধরে বলল,
-‘কোথায় যাচ্ছেন?’
-‘সেকেন্ড বিয়ে কমপ্লিট করতে।’
-‘ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি ফিরবেন। আসার সময় ফুচকা নিয়ে আসবেন।’
-‘ওসব হবে না।’
-‘অনেকদিন খাই নি তো।’
-‘আর খেতেও হবে না। এতদিন খান নি এখন খেলে পেটে শুট করবে না।
সাবধানে থাকবেন। খরগোশের মতো লাফালাফি কম করবেন।’
-‘কাজ সেরে ফিরতে কতক্ষণ লাগবে আপনার?’
-‘ঘন্টা চারেক!’
-‘চার ঘন্টা! এতক্ষণ! কি কাজে যাচ্ছেন?’
-‘অফিসের কাজে।’
-‘তাহলে বাবা মায়ের সঙ্গে আমি ওই বাসাতে যাই? কতদিন যায় নি। মন পুড়ছে খুব।’
-‘আগামীকাল সকালে নাহয় আমিই নিয়ে যাব, বিকালে নিয়ে আসব।’
-‘না। আমি থাকব।’
-‘কোনো থাকাথাকি হবে না। ‘
-‘কেন হবে না? আমার বাসায় আমি দু’দিন থাকব না?’
-‘বললাম তো না।’
-‘কেন না?’
-‘কারণ আছে তাই।’
-‘শুনি কি কারণ?’
-‘আমার মন পুড়বে তাই!’
-‘তো আপনিও সঙ্গে চলুন।’
-‘না।’
-‘কেন?’
-‘শশুর বাড়িতে মনভরে প্রেম করা যায় না। ভদ্র সেজে থাকতে হয়। যা খুবই অস্বস্তি দায়ক।’
একথা শুনে কুহু হেসে ফেলল। তার চোখজোড়াতে খুশির ঝলক দেখা দিলো। সে জানে, রিদওয়ানও আজকাল তাকে ছাড়া থাকতে রাজি না।
তবে একথা জীবনেও মুখ ফুটে উচ্চারণ করবে না। চালক পুরুষ কি না!
তারপর রিদওয়ান ওয়ালেট পকেটে ঢুকিয়ে কুহুর কপালে আদর এঁকে উঠে দাঁড়াল। পুনরায় সাবধানে থাকতে বলল। কুহু সম্মতি সূচক মাথা নাড়িয়ে মায়ের দেওয়া লিস্ট তাকে দিলো। রিদওয়ান লিস্ট চেক করে হেসে ফেলল। কারণ সেখানে লিস্টের ‘ল’ ও নেই। একদম সাদা কাগজ।
তবে সে ঠিকই বুঝে নিলো তার বুদ্ধিমতী মা কেন এই কাজটা করেছে।
রিদওয়ান একথা আর কথা কুহুকে জানাল না। কারণ এর আগেও তার মা সেইম কাজ করে কুহুকে রুমে পাঠিয়েছে। এরপর দু’জনেই একসাথে বের হতেই রিমির সঙ্গে দেখা হলো। টুকটাক কথা হলো তাদের। দু’জনের কেউ তাকে উয়িশ করল না দেখে রিমি মুখ ভার করে রুমে ঢুকে দরজা আঁটকে দিলো। তাকে এভাবে যেতে দেখে কুহু, রিদওয়ান, নিজেরা মুখ চাওয়া চাওয়ি করে হেসে ফেলল। অতঃপর রিদওয়ান বিদায় নিয়ে চলে গেল। কুহুর বাবা অফিসে চলে গেলেন জানালেন অফিস শেষ করে চলে আসবেন। এখন বাসায় শুধু নিলুফা ইয়াসমিন, ইসমত আরা বেগম, কুহু আর রিমি রয়েছে। আছে বেশ কয়েকজন কাজের লোকও। তারা নিজ নিজ কর্মে ব্যস্ত। রিমি তার রুমে। নিলুফা ইয়াসমিন কুহুকে বললেন তার মাকে নিয়ে পুরো বাসা ঘুরে দেখাতে এবং দেখতে। একা একা বসে না দেখে বাসা ঘুরে দেখলে ভালো লাগবে। একথা শুরু কুহু তাই করল। সে মায়ের হাত ধরে বাসার আনাচে-কানাচে দেখতে লাগল। ড্রয়িংরুমে বসে চেনাপরিচিত মানুষদের দাওয়াত দিতে বসলেন নিলুফা ইয়াসমিন।
লিস্ট অনুযায়ী একে একে ফোন করছেন তাদের। এতদিন পর তাকে দাওয়াত দিতে দেখে প্রশ্নের মুখোমুখিও হচ্ছেন। তবে সেসব প্রশ্নগুলো সুন্দরভাবে এড়িয়ে যাচ্ছেন। যেগুলোর জবাব দেওয়া দরকার দিচ্ছেন। কুহু সবঘুরে দেখে মাকে বেডরুমে রুমে এসেছে। সে মায়ের কোলে মাথা রেখে হঠাৎ জানতে চাইল, আম্মু, তুমি জানলে কীভাবে আমি দেশে ফিরেছি?’
ইসমত আরা আদরের সমেত মেয়ের চুলে বিলি কেটে দিচ্ছেন। মেয়ে যে উনাকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়ে নিজেই সারপ্রাইজ পেয়ে অবাক হয়েছে তাও বুঝলেন। মেয়ের প্রশ্নে জবাব দিতে তিনি জানালেন, সকালে রুপক স্বশরীর উপস্থিত হয়ে উনাদেরকে চমকে দিয়েছে। সঙ্গে এটাও বলেছে,
রিদওয়ান, কুহু দেশে ফিরেছে। তারা বিকেলে কিংবা আগামীকাল দেখা করতে আসবে। একথা শোনামাত্র ইসমত আরা পানি ছাড়া মাছের মতো ছটফট করছিলেন। সময় যাচ্ছিল না উনার। মন চাচ্ছিল মেয়েটাকে দূর থেকে দেখে আসতে। রুপক নাস্তা সেরে রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। তবে ঘুমানোর আগে বলে দিয়েছে কেউ যেন না ডাকে। সারাদিন ঘুমাবে। এই কথাশুনে ইসমত আরা আর ডাকেন নি। লং জার্ণি করেছে লেকজেটের ব্যাপার আছে। তবে আটটার দিকে নিলুফা ইয়াসমিন উনাকে কল করে দাওয়াত দিলেন। জানালেন আজ রিমির জন্মদিন। উনারা যেন সকালে চলে আসে। আগেই দাওয়াত করতেন কিন্তু উনারাই এসেছেন গতকাল মাঝ রাতে। এজন্য দাওয়াতেও এত লেট হয়েছে। উনারা যেন কিছু মনে না করে। আর এই বাসায় আসার কথা নিলুফা ইয়াসমিন নিজেই কুহুকে জানাতে নিষেধ করেছিলেন। বলেছিলেন, উনারা এসে যেন চমকে দেয়। নিলুফা ইয়াসমিনের কথা শুনে ইমসত আরা হাসছিলেন। এরপর আরো টুকটাক কথা বলে জানালেন উনারা একটুপরেই রওনা দিবেন। এইকথা শুনে নিলুফা ইয়াসমিন হাসিমুখে কথা শেষ করে কল কাটলেন।
এদিকে রুপক ঘুমাচ্ছে দেখে বাইরে থেকে দরজাটা লক করে উনারা বেরিয়েও পড়েছেন।এবং যথাসময়ে পৌঁছে মেয়েকে চমকে দিয়েছেন। পুরো ঘটনা শুনে শাশুড়ির প্রতি আরেক দফা সন্মান বেড়ে গেল কুহুর। সে মুখভর্তি হেসে মায়ের হাতের উল্টো পিঠে চুমু দিয়ে বলল,
-‘জানো আম্মু, আমার শাশুড়ি ঠিক নারিকেলের মতো। উপর উপর যত নিজেকে শক্ত আবরণে ঢেকে রাখুক না কেন ভেতরে ভেতরে খুব নরম।
শাষণ করে। আবার ভালোওবাসে। ঠিক তোমার মতো। প্রথম প্রথম খুব কাঁদতাম সুইজারল্যান্ড গিয়ে। মনে হতো উনি আমাকে পছন্দ করে না।
আমার বোধহয় সংসার করা হবে না। আমি কোনোদিনও শাশুড়ির মন জয় করতে পারব না। ভেতর ভেতর খুব অসহায় বোধ করতাম। কষ্টও হতো। পরে রিদওয়ান চেনালো উনার আসল রুপ। আর আমিও উনার পেছনে লেগে থাকলাম। তোমাকে যেমন জ্বালাতাম, উনাকেও জ্বালাতে শুরু করলাম। জ্বালানো কারণে খুব বকা খেতাম। কাঁদতাম। একটুপরে, আমি গিয়ে মা বলে ডাকতাম। উনি শুরুতে জবাব দিতেন না পরে ডেকে একসঙ্গে বসে খাবার খেতেন, ঘুরতে নিয়ে যেতেন, শপিং করে দিতেন, যেটা উনি খান না, পছন্দ করেন না, আমার কারণে আমাকে সঙ্গে নিয়ে সেটাও খেতেন। কোন কাজ কিভাবে করতে হয় শিখিয়ে দিতেন। এভাবে ধীরে ধীরে আমাদের সম্পর্কটাও আগের তুলনায অনেকটাই সহজ হয়ে গেল। আলহামদুলিল্লাহ! আমি খুব ভালো আছি আম্মু। আমাদের জন্য দোয়া করিও। আমি যেন দুই পরিবারের সবাইকে নিয়ে ভালো থাকতে পারি।’
মেয়ের কথাগুলো ইসমত আরা মন দিয়ে শুনলেন। অবাকও হলেন। কুহু এত সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে শিখেছে! উনি আল্লাহর কাছে লক্ষ কোটি শুকরিয়া আদায় করলেন। তারপর বললেন,
-‘ বাঙালি এমন অনেক শাশুড়ী’ই আছে যারা ছেলে ও ছেলের বউদের কাছাকাছি থাকাটা সহ্য করতে পারে না। তাদের দুষ্টুমি, খুনশুটি, মানতে পারে না। ছেলের বউকে তারা অঘোষিত ভাবে শত্রু ভাবে। কিন্তু তোমার শাশুড়ি আম্মু এমন ধরনের নয়। বরং উনি নিজে চান তুমি রিদওয়ানের কাছাকাছি থাকো। তোমাদের সম্পর্কও যেন সহজ থাকে। তাই তোমারও দায়িত্ব উনাদেরকে ভালো রাখা। আর আমি এসেই বুঝেছি তুমি অনেক ভালো আছো। সুখে আছে। সবসময় এমনই থাকো সেই দোয়া করি মা।’
কুহু এবার বিষ্ময় নিয়ে তাকিয়ে রইল মায়ের দিকে। মা এইকথা জানল কিভাবে? সে তো কখনো বলে নি। মেয়েকে এভাবে তাকাতে দেখে উনি আবারও বললেন,
-‘আমিও মেয়ে ছিলাম। এরপর বউ হয়েছি। তারপর মা। আর কিছুদিন পর শাশুড়ী হবো। দাদি/নানী হবো। তুমি যেই অবস্থানে আছো আমি এই সব দিন পার করে এসেছি। ঠেকেছি। হেরেছি। এরপর শিখেছি। বর্তমানে
আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি ভারি হয়েছে। এখন মানুষ চিনতে পারি। দৃষ্টি, ও কথার মারপ্যাঁচ দেখে যে কারোর মন মানসিকতা আঁচ করতে পারি।
তবে আরেকটি কথা না বললেই নয়, তুমি ভাগ্য করেই এমন আরেকটি পরিবার পেয়েছো। তাদেরকে কখনো কষ্ট দিও না। মনে রাখবে তোমার পরিবার তোমার কাছে জান্নাত। পরিবারের এক একটা সদস্য জান্নাতের ফুল। তুমি সাধ্য মতো, তাদের যত্ন নিবে, ভালোবাসবে, আগলে রাখবে।
দেখবে তারাও তোমাকে ভালোবাসবে।’
-‘হুম।’
-‘আর হ্যাঁ, রিদওয়ানের কথার অবাধ্য হবে না। কোনো পরিস্থিতিতেই না, মনে থাকবে?’
-‘হুম। আম্মু তোমাকে একটি কথা বলার আছে। আশা করি তুমি বুঝবে।’
-‘কি কথা, বলো শুনি।’
এরপর কুহু তার মাকে জরুরি কিছু কথা জানাল। সেসব শুনে ইসমত আরা বেগমের ভ্রুঁজোড়া কুঁচকে গেল। এমন কিছু শুনবেন উনি আশাও করে নি।
আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ৩৭
চার ঘন্টার বাইরে থাকার কথা বলে গেলেও রিদওয়ান ঘন্টা দুয়েক পরে বাসায় ফিরে এসেছে। আর এসে রিমির ঘুরে ঢুকেছে। দুই ভাই-বোনের কীসব কথা হচ্ছে কে জানে। দরজা বন্ধ থাকায় শোনাও যাচ্ছে না। তবে কুহু দরজার কাছ থেকে বেশ ক’বার ঘুরে এসেছে। দরজায় কান পেতে
কিছু শোনার চেষ্টাও করেছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এইদিকে কুহুর কথা শেষ হওয়া মাত্রই ইসমত আরা হনহন করে বেরিয়ে গেছে। কুহু মাকেও আর আঁটকায় নি।