একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৫
Mousumi Akter
দুই ঠোঁটের মাঝ বরাবর সিগারেট চেপে ধরে দুই হাতে ব্যাগ ভর্তি তাজা গোলাপ আর রজনীগন্ধ্যা নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেছে মৃন্ময়।রাস্তায় আসতে আসতে খেয়াল করেনি সে বাড়ির কাছে পৌছে গিয়েছে।জানলে লাস্ট সিগারেট টা ধরাত না সে।মাত্রই দু’টান দিয়েছে।সিগারেটের যে দাম তাছাড়া মৃন্ময়ের এত পছন্দীয় খাবার সিগারেট ফেলে দিতেও তো খারাপ লাগছে।এদিক-সেদিক উঁকি দিয়ে দেখল তার মা-বাবা কেউ আছে কীনা!
দেখলেই তো বাড়ি থেকে ঝা’ড়ু দিবে।তাছাড়া অতিরিক্ত টাকা দেওয়া ও বন্ধ করে দিবে।মেসে থাকে আরামসে সিগারেট খেতে পারে।কিন্তু বাড়িতে আসলেই ঝামেলা।ছাদ ছাড়া কোনো উপায় নেই।মৃন্ময় বাড়ির পেছনে দাঁড়িয়ে দ্রুত সিগারেট টানছে।সিগারেট টানতে টানতে আচমকা চোখ গেল ছাদের দিকে।মৃন্ময়ের চোখ দুটো আটকে গেল ছাদের কার্ণিশে দাঁড়িয়ে থাকা ফুটফুটে একটি মেয়ের দিকে।চাঁদের আলোয় মেয়েটির মলিন মুখ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।গোলাকার মুখের গড়ন,কোমর পর্যন্ত লম্বা চুল,গায়ের রং পরিষ্কার।মৃন্ময় সিগারেট ঠোঁটে চেপে ধরে এক নজরে তাকিয়ে আছে মেয়েটির দিকে।মেয়েটি কে?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এর আগেতো মৃন্ময় বাড়িতে এমন ফুটফুটে মেয়ে দেখেনি।কোনো ভূ*ত প্রেত নয়তো।তখন-ই মৃন্ময়ের খেয়াল হল বাড়িতে ভাড়াটিয়া এসছে।নিশ্চয়ই ভাড়াটিয়াদের কেউ হবে।মৃন্ময় সিগারেট টা ফেলে ফুলের ব্যাগ হাতে নিয়ে সোজা ছাদে চলে গেল।মৃন্ময় ছাদে পা রাখতেই সর্বপ্রথম নজর দিলো মেয়েটির দিকে।মেয়েটি চুপচাপ মলিন মুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।যেন সৃষ্টিকর্তার কাছে মনের সমস্ত দুঃখ নিংড়ে দিচ্ছে।মেয়েটির মলিন মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে এক রাজ্য দুঃখ কষ্ট বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছে।
মৃন্ময় ভীষণ কৌতুহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছে মেয়েটি।যত দেখছে ততই যেন মায়াবী লাগছে।মুখের অদল মায়ায় ভরা।বয়স ও খুব বেশী একটা হবেনা।চৌদ্দ কি পনেরো হবে।মেয়েটি আর কেউ নয় তরী।মৃন্ময় নিঃশব্দে তাকিয়ে দেখছে তরীকে।এক সেকেন্ডের জন্য ও চোখ এদিক সেদিক করেনি। এমন সময় মৃন্ময়ের ফোন বেজে উঠল।ফোনের শব্দে তরী ফিরে তাকাল।মৃন্ময় দ্রুত প্যান্টের পকেট থেকে বের করে ফোন কেটে দিল।তরী দু’চোখ মেলে তাকাল তার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা লম্বা ফর্সা একজন যুবকের দিকে।যার দুই হাত ভর্তি ফুলের ব্যাগ।ফুলের মিষ্টি সুবাসে মৌ মৌ করছে চারদিক।তরীর চোখ মুখে কিছুটা ভ’য় দেখল মৃন্ময়।তরীর ভ’য় কমাতে মৃন্ময় বলল,
“ভ’য় পাবেন না? আমি খারাপ উদ্দেশ্য এখানে আসিনি।আমি আপনার ক্ষতি করব না।”
তরী এইবার চোখ মুখ স্বাভাবিক করল।সম্পূর্ণ অচেনা একটা ছেলে।আগে পরে কখনো দেখেনি।কিছুটা ঘাবড়ালো তরী।ছাদ থেকে নেমে যাওয়ার চিন্তা করল।
মৃন্ময় ফুলের ব্যাগ ছাদে রেখে বলল,
“আমি মৃন্ময় এ বাড়ির ছেলে।আপনাকে তো চিনলাম না।যদি পরিচয় টা দিতেন।”
তরী মলিন মুখে মিহি কন্ঠে বলল,
“আমি তরী, আপনাদের বাড়ির নতুন ভাড়াটিয়া।”
“যিনি বাসা ভাড়া নিয়েছেন উনি আপনার কে হন?” প্রশ্ন মৃন্ময়ের।
তরী আবার ও মিহি কন্ঠে জবাব দিল,
” আমার বাবা হন।”
মৃন্ময়ের মনে হাজারটা প্রশ্ন জাগল।হাজারটা কৌতুহল জন্ম নিল।কিন্তু সেগুলো প্রকাশ না করে বলল,
“আপনার বাবার আজ বিয়ে হয়েছে?”
“জি।”
“ফুল গুলো আপনার বাবার বাসর ঘর সাজানোর জন্য এনেছি।আপনার বাবা এই বয়সে বিয়ে করেছে ভাল কথা।এত ঢং করে বাসর সাজাতে হবে কেন বলুন তো।”
তরী কোনো জবাব দিলনা।মৃন্ময় বুঝতে পারল তরীর অস্বস্তি লাগছে।কথাটা বলা তরীকে উচিৎ হয়নি।
তরী মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমি আসি।” বলেই রওনা দিল।
মৃন্ময় পেছন থেকে ডেকে বলল,
“তরী দাঁড়াও।” মৃন্ময়ের ডাক শুনে মনে হল যেন কত যুগের চেনাজানা আছে।
তরী পেছন ফিরে তাকাল।মৃন্ময় বলল,
“তোমাকে তুমি করেই বললাম।একেবেরেই পিচ্চি দেখতে তুমি।”
তরী এবার ও কোনো উত্তর দিলনা।
মৃন্ময় বলল,
“কোন ক্লাসে পড়ো তুমি?”
তরী শান্ত কন্ঠে জবাব দিল,
“ক্লাস টেনে।”কথাটা বলে মৃন্ময়ের দিকে তাকাল।শান্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল,
” কিছু বলবেন? ডাকলেন?”
মৃন্ময় বলল, “হ্যাঁ, আমি একটা সিগারেট খাবো।তুমি ছাদের দরজায় দাঁড়াও।কেউ আসলে আমাকে জানাবে।আমার মা-বাবা কেউ এদিকে আসলে আমাকে সংকেত দিবে।”
তরী ভীষণ অবাক হল মৃন্ময়ের এমন প্রস্তাব শুনে।কি সাংঘাতিক ছেলে।চেনে নেই জানা নেই সিগারেট খাওয়ার জন্য পাহারা দিতে বলছে।মৃন্ময় তরীর মুখের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারল তরীর মনে কি চলছে।সে পকেট থেকে সিগারেট বের করতে করতে বলল,
“অবাক হলে মনে হল?”
তরী কিঞ্চিৎ বিরক্ত কন্ঠে বলল,
“তা অবাক হবোনা।মাত্রই পরিচয় আর আপনি আমাকে আপনার সিগারেট খাওয়ার জন্য পাহার দিতে বলছেন।”
মৃন্ময় মৃদু হেসে লাইটার দিয়ে সিগারেট টা ধরিয়ে বলল,
“আমি এমন-ই বুঝলে।যাকে ভাল লাগে দু’মিনিটে নিজের করে নিই।যাকে তাকে তো আর ভাল লাগেনা।”
তরী ওড়নার মুড়ো দিয়ে নাক চেপে ধরল।মৃন্ময় সিগারেটে টান দিয়ে নাক দিয়ে গলগল করে আকাশের দিকে ধোয়া ছেড়ে বলল,
“সিগারেট এর গন্ধ সহ্য করতে পারোনা?”
“না।”
মৃন্ময় ঘুরে দাঁড়াল।ঘুরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানতে টানতে বলল,
“তা আগে বলবে না।তাহলে অন্যদিকে ঘুরে সিগারেট খেতাম।” মৃন্ময় দ্রুত সিগারেট টেনে শেষ করে পেছনে ঘুরে দেখল তরী নেই।এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখল কোথাও তরী নেই।মৃন্ময় নিঃশব্দে হেসে মাথা চুলকালো আর বলল,
“রাতের আঁধারের মায়াবিনী দেখলাম আজ।”
“একবার আমার চোখে চোখ রেখে দেখো
মন হারাতে কতক্ষণ লাগে।”
একটা আননোন নাম্বার থেকে আজও সারাহ’র নাম্বারে মেসেজ এল।এমনিই সারাহ লজ্জা আর আপমানে বিরক্ত আছে।তার উপর এটা আবার কোন ঝামেলা।সেদিন আবার মেসেজ দিয়েছিলো।এমন রোমান্টিক মেসেজ দিচ্ছে কে? আশ্চর্য! সারাহ মনে মনে ভাবল আরিয়ান নয়তো।সারাহ’র সন্দিহান মন আরিয়ানকে ভেবে কতগুলো গালি মুখস্থ করল।এখন কেন এত রোমান্টিক মেসেজ দিচ্ছে।ফোন দিক আচ্ছা মত কথা শুনিয়ে ছাড়ব রং নাম্বার এর উছিলায়।এসব ভাবতে ভাবতেই উক্ত নাম্বার হতে ফোন এল।সারাহ তীব্র মেজাজের সাথে ফোন রিসিভ করে বলল,
“হ্যালো কে বলছেন?”
সারাহ কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করল তবুও ওপাশ থেকে কোনো সাড়াশব্দ এলনা।সারাহ’র কাছে আশ্চর্য লাগল বিষয়টা।সে সমস্ত রুম জুড়ে পায়চারী করে বেড়াচ্ছে।এমনিই সারাহ মিনিটে মিনিটে রেগে যায়।তারপর এই আরয়ান কে সোজা গালি দিয়ে ভ’ স্ম করে দেওয়া পর্যন্ত তার শান্তি হচ্ছে না।পুনঃরায় আবার ও সে নাম্বার হতে ফোন এসছে। সারাহ সাথে সাথে ফোন রিসিভ করল।ফোন রিসিভ করব তেজের সাথে বলল,
“হ্যালো, সমস্যা কি? ফোন দিয়ে কথা বলেন না ক্যানো?”
এবার ও ফোনের ওপাশ থেকে কোনো কথা ভেষে এলনা।নিশ্চুপ রইলো ফোনের ওপাশের মানুষ। সারাহ কয়েকবার হ্যালো হ্যালো করতেই ওপাশ থেকে ফোন কেটে দিল।
সারাহ-র ধৈর্য্যর বারোটা বেজে গেল।নিজের মেজাজ কন্ট্রোল রাখতে না পেরে ফোন ছুঁড়ে মারল খাঁটের উপর।মনে মনে শুধু গালি মুখস্থ করছে। একবার খালি ফোনের ওপাশ থেকে কথা বলুক মুখস্থ বিদ্যাগুলো ঝেড়ে দিবো মাতৃভাষায়।আবারও সারাহ’র ফোন বেজে উঠল।সারাহ এইবার রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে কয়েকটা ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে ফোন রিসিভ করে বলল,
” শোন জন্মগত কু* ত্তা* আমাকে যদি আর কখনো ফোন দিস তাহলে জু*তা*র বা* ড়ি একটাও তোর পিঠে পড়বে না।সব গুলা পড়বে তোর গালে। আমার জু*তা দিয়ে পে*টা*ব না। পাড়া প্রতিবেশী সবার বাতিল জু* তা ধার করে এনে পে* টা* ব। তুই আমাকে কেন বার বার ফোন দিচ্ছিস। শোন আমি বিবাহিত। আমার স্বামী আছে। আমার স্বামীর এত সুন্দর চেহারা আমার সারাক্ষণ তার দিকে চেয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।ইচ্ছা করে চব্বিস ঘন্টা ও আমার সামমে বসে থাকুক।আমি চোখে ফেরাতে পারিনা আমার স্বামীর দিক থেকে।এইযে একটু আগে চলে গেল।সে চলে যেতেই ঘরে দরজা লাগিয়ে কাঁন্নাকাটি করেছি। সে চলে গেলেই হৃদয়ে বিরহ বাসা বাঁধে।আর যদি ফোন দিস সোজা পুলিশের কাছে যাব।কেউ আটকাতে পারবেনা।আমার স্বামীকে বলে তোর নামে পরকীয়ার মামলা দিবো।ভাবলি কি করে রোশান সিদ্দিকীর বউ হয়ে আমি তোর মত থার্ড ক্লাসের সাথে কথা বলব।”
সারাহ এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে মনে মনে বলল,
” লজ্জা থাকলে আর ফোন দিবেনা।”
এতক্ষণে ফোনের ওপাশে থাকা ব্যক্তি নিরবতা ভেঙে জবাব দিল,
“তোমাকে বিয়ে করে আর কি কি শুনতে হবে আমাকে কাইন্ডলি একটু বলবে?”
সারাহ’র চোখ দু’টো ছানাবড়া হয়ে গেল রোশানের কন্ঠস্বর শুনে।তার মানে ফোনের ওপাশে এতক্ষণ রোশান ছিল।সে রোশান কে বলেছে, ‘ তার সারাক্ষণ রোশানের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে।ওহ শীট এর চেয়ে মরণ ও ঢের ভাল।রোশান কি তার সব কথা শুনে নিয়েছে।
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪ (২)
সারাহ এর চেয়ে লজ্জা আর অপমান জীবনেও হয়নি।বার বার চরম অপমানিত তাকে হতে হচ্ছে।পৃথিবীর যাবতীয় অঘটন তার সাথেই ঘটে চলেছে।সব যেন রোশানের সামনেই ঘটছে।এই মুহুর্তে সারাহ’র ইচ্ছা করছে ইহলোক ত্যাগ করে পরলোকে গমন করতে।রোশান তাকে কোন লেভেলের ছ্যাচড়া ভাববে এটা ভেবেই যেন ম’রে যাচ্ছে।সারাহ কে চুপ থাকতে দেখে রোশান ফোনের ওপাশ থেকে গম্ভীর কন্ঠে বলল,
“তা আমাকে তোমার এত পছন আগে বলোনিতো?”