সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৪০
নুসরাত সুলতানা সেঁজুতি
খোরশেদুল পলাশের সাথে যোগাযোগ করার অনেক চেষ্টা করেছেন। কিন্তু সব জায়গা থেকে তাকে ব্লক করে রেখেছে ছেলেটা। নাগালে পাবার কোনও উপায়ই নেই। ভদ্রলোক তারপর ফোন করলেন পলাশের বাবা-মাকে। আর ঠিক ততবার মুখের ওপর কল কেটেছেন তাঁরা।
শেষে হাল ছেড়ে বিমর্ষ চিত্তে বসে রইলেন খোরশেদ। এর মাঝে সালমা এলেন ঘরে। ওনার মুখেও সমান অন্ধকার। মন মেজাজ কারোরই ভালো নেই। মিথিলা ঠিক করে খাবার মুখে তুলছে না। খোরশেদেরও একই অবস্থা। দুজনকে খাওয়ার কথা বলতে বলতে সালমার মুখ ব্যথা হওয়ার যোগাড়। অবশ্য যা সব ঘটছে! গলা দিয়ে কারই বা দানা নামবে?
খোরশেদের হাতের মুঠোয় ফোন। চেহারায় ঘোর আমাবস্যা দেখে কপালে ভাঁজ ফেললেন তিনি। কাছে এসে শুধোলেন,
“ কী হয়েছে?”
ভদ্রলোক দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,
“ পলাশদের কারো সাথে যোগাযোগ করতে পারছি না।”
“ এখনও এসব নিয়ে পড়ে আছো? আর যোগাযোগ করে কী লাভ বলো তো! যা হওয়ার সে তো হয়েই গেছে। তালাকনামায় সই নিয়েছে যখন, কিছু কি আর বেঁচে আছে।”
খোরশেদের আহত ভঙ্গি নিমিষেই শক্ত হলো। অমন করেই বললেন,
“ তোমার কী মনে হয় আমি সব ঠিক করতে কল দিয়ে যাচ্ছি? না। অন্য কারণে দিচ্ছি। আমি জানতে চাই আমার মেয়ের সাথে ওরা এমন কেন করল! কীসের কম ছিল আমাদের? ওরা মোটামুটি যা চেয়েছে সবই দেয়ার চেষ্টা করেছি আমি। মেয়ের গা ভরে স্বর্ণ দিলাম। ছেলেকে মোটা চেইন,আংটি, দামি স্যুট-ব্যুট, ৭০ জনের কথা বলে একশ জন এসে গাণ্ডেপিণ্ডে খেয়ে গেল। সেসব কি এই ছয় মাসের মাথায় আমার মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার জন্যে?
এরপরেও সব আমি চুপচাপ মেনে নেব?”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“ তাহলে কী করবে? ওদের সাথে তর্ক করবে? না থানা-পুলিশ করবে? যেটাই করো না কেন,তাতে সম্মান কী বাড়বে আমাদের? না মেয়ের ঘর জোড়া লাগবে? উলটে ওদের শিক্ষা দিতে গিয়ে মেয়েটাকে দিনের পর দিন হেনস্তা হতে হবে না? আজ ঘটনা কেউ জানে না। কাল সবাই জানবে। আর সবার আগে আমার মেয়েকে কে কথা শোনাবে জানো? আম্মা। তিনি তো তোমার মতোই আরেকজন। মানুষের দূর্বলতা পেতে দেরি,সেটা নিয়ে খোঁচা দিয়ে দিয়ে ঘা বানাতে দেরি নেই। নিজের নাতনী হলেও মিথিলা ওনার কতটা অপছন্দের সেতো আর অজানা কিছু নয়। পুষ্পিতার সময়েই যা যা বলেছিল, সব আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে।”
শেষ টুকু বিড়বিড় করলেন সালমা। কিন্তু খোরশেদুলের কানে পরিষ্কার ঢুকেছে। টের পেলেন আচমকা বুকের বাপাশটা মুচড়ে উঠল ব্যথায়। কীসের ব্যথা এটা? তাঁর তো বুকের ব্যামো নেই। খোরশেদুলের মস্তিষ্কে হামলা চলল উত্তরের। জানিয়ে গেল, এ ব্যথা
অনুশোচনার।
চট করে কিছু অতীত বইয়ের পৃষ্ঠার মতো উলটে পালটে চোখের পর্দায় ভেসে উঠল। মনে পড়ে গেল মিথিলার সেই বিয়ের রাতের কথা।
স্বয়ং ওনার চোখের সামনে দিয়েই তো পুষ্পিতাকে বিট্টু মাস্তান তুলে নিয়ে গিয়েছিল। সবটা জায়গায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন খোরশেদুল। কিন্তু কিচ্ছুটি করেননি। করতে কী পারতেন না? চাইলে হয়ত আটকানোও যেতো। কিন্তু না, কিছু স্বার্থের তাগিদে কুঁলুপ এঁটেছিলেন মুখে। চেয়েছিলেন যা হচ্ছে হোক। পুষ্পিতার ক্ষতি হলে তাঁর তো কিছু নয়।
আর তারপর, তারপর মিথ্যে দোষ দিয়ে মেয়েটাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে অবধি দিয়েছিলেন, শুধুমাত্র দায়িত্ব হতে হাঁপ ছাড়বেন বলে।
এসব কী পাপের খাতায় যুক্ত হয়নি? আচ্ছ,এই কর্মফলটাই কি পাচ্ছেন এখন? কোনওভাবে ওনার অন্যায়ের জন্যেই কি মিথিলার সাথে এমন হোলো?
খোরশেদুলের নিভু নিভু চোখজোড়া সতর্কতায় হকচকিয়ে ওঠে।
অমন সরল মেয়ের প্রতি কুৎসিত অবিচার করার শাস্তিটাই কি এখন হাতে নাতে দেয়া হচ্ছে তাকে? খোরশেদ চোখ নামিয়ে নিজের ভাঙা হাতটা দেখলেন এক পল। মন বলল,চিন্তা বলল, বলল সমস্ত শরীরের শিরা-উপশিরাও, হ্যাঁ পাচ্ছেন।
স্তব্ধের ন্যায় বসে থাকা খোরশেদুলের ওপর নজর ফেললেন সালমা। গভীর ভাবনায় দেখে শুধালেন,,
“ কী ভাবছো?”
নড়ে উঠলেন ভদ্রলোক।
“ হু?”
তারপর আবার সেই ঠোঁট নামিয়ে চুপটি করে গেলেন। সালমা ভাবলেন হয়ত মিথিলার চিন্তা করছে। আশ্বাস দিয়ে বললেন,
“ তুমি এসব নিয়ে এতো ভেবো না খোরশেদ । যা হয়েছে মেনে নাও। আর,মিথিলার সামনে এ নিয়ে কোনও কথাও তুলো না। মেয়েটা এমনিতেই সদ্য ঘর ভাঙার শোকে কাহিল হয়ে আছে। এটা ওটা করে ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করলেও,আমি তো মা! আমি বুঝি। আমাদের এই সময় ওর পাশে থাকা উচিত। আমরা বরং ওকে ওর মতো ছেড়ে দিই।”
খোরশেদুল নিশ্চুপ। সালমা কথা শেষ করে উঠতে নিলেই, প্রশ্ন ছুড়লেন হুট করে,
“ আমি পুষ্পিতার সাথে অনেক অন্যায় করেছি,তাই না সালমা?”
ভদ্রমহিলা থমকে গেলেন স্থানে। অবাক চোখে বললেন,
“ হঠাৎ এই কথা!”
খোরশেদুলের কণ্ঠে ভাঙনের সুর,
“ আমার সত্যিই আজকে এমন মনে হচ্ছে সালমা। আমি হয়ত খুব বড়ো অপরাধ করে ফেললাম! নাহলে দেখো, পুষ্পিতা যতদিন আমাদের সাথে ছিল কখনও খারাপ কিছু হয়নি। ভালোই ছিলাম আমরা। এসব ঝামেলা ঝঞ্ঝাট কিচ্ছু ছিল না, কিচ্ছু না। অথচ ও যাওয়ার পরপরই আমাদের জীবনে কেমন আমূল একটা পরিবর্তন এসে গেল। ঘর থেকেও শান্তি নেই। কেমন কেমন করে যেন সংসারের সব শান্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে দেখেছ? এসব ওই অনাথ, বাপ-মা হারা মেয়েটার সাথে অমানুষের মতো আচরণের শাস্তি নয় তো সালমা?”
সালমা হাঁ করে চেয়ে রইলেন। মুখে টু শব্দ এলো না। চোখেমুখে অবিশ্বাস। এসব কি ঠিক শুনছেন? খোরশেদ সত্যিই অনুতপ্ত! কিন্তু এই দু কথায় অতীত ভুলে তিনি গলে যেতে পারলেন না । কঠোর চিবুকে বললেন,
“ পুষ্পিতাকে নিয়ে আমি তোমার সাথে কোনও আলোচনাই করতে চাই না।”
ফিরতে পা বাড়ালেন সালমা। তক্ষুনি হাতটা টেনে ধরলেন খোরশেদ। ভদ্রলোকের চোখে পানিতে চমকে গেলেন রমণী। স্তম্ভিত আওড়ালেন,
“ তুমি কাঁদছো খোরশেদ?”
খোরশেদের চোখের জল কোটরেই রইল না। সত্যি সত্যি ঝরঝর করে কেঁদে ফেললেন ভদ্রলোক।
“ সালমা, আমার খুব অনুশোচনা হচ্ছে বিশ্বাস করো। আমার মন বলছে পুষ্পিতা আমাকে অভিশাপ দিয়েছে। হয়ত সেজন্যেই আমি, আমার মেয়ে, আমাদের ভালোটুকু আল্লাহ তুলে নিয়েছেন। নাহলে ছ-মাসের মাথায় আমার মেয়ের সংসার ভাঙবে কেন? অচেনা অজেনা লোকজন এসে আমাকেই বা পিটিয়ে যাবে কেন?”
সালমা নিরুত্তর! কখনও কি ভেবেছিলেন পুষ্পিতার জন্যেও স্বামীকে কাঁদতে দেখবেন এভাবে? মেয়ের তালাকের ব্যাপারটায় খোরশেদুলের ভেতরটা নড়বড়ে হয়ে গিয়েছে। ওপর থেকে সহজ রইলেও, ভেতর ভেতর যে একটু ভেশিই ভেঙে পড়েছেন,বুঝতে বাকী নেই ওনার। এই মুহুর্তে পুরোনো ক্ষততে নতুন করে নুন ছেটালেন না তিনি। আগের মতো পাশে বসে বললেন,
“ আচ্ছা ঠিক আছে, কেঁদো না। শান্ত হও। তুমি যে তোমার ভুলটা বুঝতে পেরেছ খোরশেদ, এই অনেক!”
খোরশেদ ঘনঘন মাথা নাড়লেন। হাঁসফাঁস করে বললেন,
“ ভুল নয় সালমা, ভুল নয়। এ পাপ,আমি পাপ করেছি!”
“ কীসের পাপ?”
স্ত্রীর প্রশ্নবিদ্ধ দৃষ্টির সুরাহা ভদ্রলোক দিতে পারেননি। কথার বানে তেড়ে আসা জ্বিভ সামলে নিলেন ত্রস্ত। সেদিন বিট্টু পুষ্পিতাকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা যে তার চোখের সামনেই ঘটা, বেমালুম চাপা দিলেন বুকে। এসব তিনি কাউকে জানাবেন না, কাউকে না। সালমা শুনলে তো কখনও ক্ষমা করবে না। যদি ছেড়ে চলে যায়!
মানুষ হিসেবে এমনিতেই স্বীয় সত্ত্বাকে অনেক নিচে নামিয়ে ফেলেছেন খোরশেদ। সালমা পাশে না থাকলে যে পুরোপুরি তলিয়ে যাবেন অন্ধকারে। তাই এড়িয়ে গেলেন সেসব। নিজের মতোন
ফ্যাসফ্যাসে আওড়ালেন,
“ আমি পুষ্পিতার কাছে ক্ষমা চাইব। ওকে পেলেই ক্ষমা চাইব। বলব সব অভিশাপ তুলে নিতে। আমার আর আমার মেয়ের জীবনে কি তাহলে একটু শান্তি ফিরে আসবে সালমা?”
সালমা কাষ্ঠ হাসলেন উত্তরে। বিড়বিড় করলেন,
“ আমার পুষ্পিতা কাউকে অভিশাপ দেয়ার মেয়েই নয়!”
নুহা ঘরে ঢুকতেই ভাঁজ বসল ভ্রুতে। বিছানায় হাঁটুতে থুতনি গুঁজে বসে আছে পুষ্পিতা। শুভ্র আননে একটুও প্রদীপ শিখা নেই। আবার কী হলো মেয়েটার! এই তো যাওয়ার আগে কত হাসি-হাসি দেখে গেল। স্যার স্যার করে লজ্জায় মুখে ফ্যানা তুলছিল প্রায়! হঠাৎ এমন গোমড়ামুখে কেন?
ও তড়িঘড়ি করে নিকটে এলো। নিচু চিবুকটা আঙুলে তুলে বলল,
“ কী হয়েছে? চেহারার এই অবস্থা কেন?”
পুষ্পিতা চোখ তুলে নামিয়ে আনল আবার। পানসে মুখবিবরে পরিবর্তন এলো না। বলল অমন,
“ লটারির ওখান থেকে ফোন করেছিল।”
“ লটারির ওখান থেকে?”
“ ওই যারা ফ্ল্যাটের দায়িত্বে।”
নূহা একটু চিন্তায় পড়ে গেল। পুষ্পিতাকে ওখান থেকে ফোন করবে,তীব্র এসব বলেনি। স্বায় মেলাল তাও,
“ ও আচ্ছা,কী বলল?”
“ এই সপ্তাহেই শিফ্ট করতে।”
নূহা খুশি হয়ে বলল,
“ আরে বাহ! এটা তো ভালো খবর! তুই তাহলে আজকেই গোছগাছ করে ফ্যাল। আমিও আম্মুকে বলে রাখছি।”
পুষ্পিতা সাথে সাথেই বলল,
“ আমি কোথাও যাব না।”
আকাশ থেকে পড়ার মতোন করে চাইল নূহা,
“ যাবি না, কেন?”
পুষ্পিতার নির্লিপ্ত জবাব,
“ আমার কোনও ফ্ল্যাটের দরকার নেই।”
নূহা ভড়কে গেল আরো। কণ্ঠে উদ্বেগ এনে বলল,
“ ওমা,এ কী কথা! হঠাৎ হয়েছেটা কী বলবি তো?”
পুষ্পিতা কাতর চোখ তুলল। মৃদূ চোটপাট টানল কথায়,
“ কী হয়েছে তুই জানিস না? স্যার এখানে থাকেন, তাহলে আমি ফ্ল্যাটে গিয়ে কী করব!”
নূহার গুটিয়ে থাকা কপাল সহসা টানটান হলো।
মনে মনে বলল,
“ ও আচ্ছা,তাহলে এই ব্যাপার!”
সাথে চটপট একটা কাজ করল সে। হাতের ফোন মেলে ব্যস্ত থাকার ভান করে বলল,
“ স্যার এখানে তাতে তোর কী?”
“ আমার কী মানে? তুই বুঝতে পারছিস না। আমি স্যারকে ছেড়ে যেতে পারব না। স্যার যেখানে থাকবেন,আমিও সেখানেই থাকব!”
“ ইস কী প্রেম! তাহলে স্যারকেও ফ্ল্যাটে নিয়ে চল!”
পুষ্পিতা ঠোঁট উলটে বলে,
“ নেয়া গেলে কি আর বসে থাকি? কবেই নিয়ে যেতাম। স্যার ছেলে হয়েই তো সমস্যাটা হয়ে গেল।”
নূহা ঠোঁট চেপে হাসি আটকাল।
এর মাঝেই ওর হাঁটু আকড়ে ধরল মেয়েটা। অনুনয় করল,”
“ নূহা তুই আর আন্টি মিলে ফ্ল্যাটে শিফট কর না প্লিজ! আমি বরং এখানেই থেকে যাই।”
“ এ্যা? কী যাতা বলছিস! তোকে এখানে রেখে আমরা চলে যাব? আম্মু মানবে কখনও? এমনিতেই তো যেতে রাজি ছিল না। কত করে বলে বলে তারপর একটু মানিয়েছি। এখন যদি শোনে তুই-ই যেতে চাইছিস না,তাহলে আম্মু কেন যাবে? তার থেকেও বড়ো কথা আমিই বা কেন তোর এসব অবান্তর আবদার শুনব?”
পুষ্পিতা নিঃসহায়ের মতোন বলল,
“ তাহলে আমি কী করব? স্যারকে ছেড়ে ওখানে আমি কক্ষনো যাব না।
প্রতিটাদিন সকালে বের হয়ে ওনাকে দেখি। বিকেলে কাপড় তুলতে গিয়েও ছাদে দেখতে পাই। রোজকার এই দেখাসাক্ষাৎ যে আমার একটা অভ্যেসে বদলে গেছে। এখন দূরে গিয়ে আমি ওনাকে ছেড়ে থাকতে পারব? এর চেয়ে ভালো হবে ওনাদের ফোন করে বলে দেই,বলি যে আমাকে ওসব বাড়ি-টাড়ি কিচ্ছু দিতে হবে না।”
পুষ্পিতা ফোন তুলতে গেলেই,ধড়ফড় করে আটকে দিলো নূহা।
“ আরে না না। কী করছিস? যেচে আসা সৌভাগ্যকে এইভাবে কেউ পায়ে ঠেলে দেয় গাধী! তুই যে তোর স্যার ছাড়া এখান থেকে নড়বি না,এটা আমাকে আগে বলিসনি কেন? আমি তাহলে এতো কষ্ট করে আম্মুকে রাজি করাতে যেতাম? সব ঠিক হওয়ার পর এখন মানা করলে,আম্মু কী ভাববে?”
ও নিষ্পাপের ন্যায় বলল,
“ আমি তো বুঝতে পারিনি ওরা এখনই শিফট করতে বলবে।”
“ তাহলে কী ভেবেছিলেন আপনি, বিয়ের পর একবারে বাচ্চাকাচ্চা সহ যেতে বলবে?”
“ তা না! উফ,আমি বোঝাতেই পারছি না।”
“ বোঝানোর দরকার নেই। এখন কী করবি তাই বল!”
পুষ্পিতা সেই একইরকম আফসোস করল,
“ স্যারকেও যদি নিয়ে যাওয়া যেতো! ইস!”
নূহা বলল,
“ যাবে না কেন? আলবাত যাবে। কিন্তু অবিবাহিত ছেলে তো আর আম্মু তোর সাথে এলাউ করবেন না। তাই বরং ভাব ওনাকে কীভাবে নিয়ে যাবি! ব্যাগে ভরে, না কোলে করে?”
“ ছিঃ অসভ্য!”
তীব্র তখন বন্ধুদের সাথে ক্যারম খেলছিল। হঠাৎ টুং করে ম্যাসেজ টোন বাজে। নূহার নাম জ্বলজ্বল করতে দেখে আলগোছে উঠে গেল সে। নাহিদকে বলল ওর হয়ে খেলতে।
নূহার ম্যাসেজ মানে পুষ্পিতাকে নিয়ে কিছু। আর ভিতু মেয়ের প্রসঙ্গ তীব্রর কাছে সব থেকে,সবার থেকে দামি! ও আরাম করে চেয়ারে বসল। নূহা ম্যাসেজ নয়, একটা তিন মিনিটের ভয়েস রেকর্ডিং পাঠিয়েছে। পুষ্পিতার একেকটি বোকা বোকা কথা, তাকে ছেড়ে যাওয়ার দুঃখ, হাহুতাশ সব শুনে কিছুক্ষণ মূক বনে থাকল সে। ভিতু মেয়ে ওকে রেখে যেতে চাইছে না? শুধুমাত্র ওর পাশাপাশি থাকবে বলে একটা ফ্ল্যাট পেয়েও ছেড়ে দিতে চাইছে?
তীব্রর চওড়া বুকে বৃষ্টি নামল। কিছু তৃপ্তির,কিছু শান্তির। জীবনে সে একদম ঠিক মেয়েকে বেছেছে। যার শুধু ওকে দরকার,এসব অর্থবিত্ত নয়। তারপর নূহার শেষ কথার পিঠে পুষ্পিতার অসভ্য বলাটুকুতে ভীষণ মজা পেলো তীব্র। ওখানেই আওয়াজ করে ফুরফুরে চিত্তে হেসে উঠল সে। এতো হাসির শব্দে বন্ধুরা খেলা রেখে ফটাফট ফিরে চাইল।
মিরাজ অবাক হয়ে বলল,
“ কী ব্যাপার? আমাদের ভিলেনের ঠোঁটে আজ হিরোর মতো হাসি কেন?”
মুশফিক বলল,
“ সেতো আর ভিলেন নেই। সে এখন শাহরুখ খান। দুহাত যখনই দুপাশে বাড়াবে, ওপাশ থেকে ভাবি ছুটে এসে জড়িয়ে ধরবে বুঝলি। নেচে নেচে গাইবে,
“ বাজিগার ও বাজিগার। তু হে বাড়া জাদুকর!”
সবাই হো হো করে হাসল। তবে নাহিদ বলল আরেক কথা,
“ ভাই বিট্টু প্রেমে পড়লে কী হবে! সারাদিন তো ওর সাথে আমি থাকি। আমিই জানি। রাগের সেই এক ফোঁটাও বদল নেই। কী মেজাজ এখনও! আমিই টিকতে পারছি না। বউ টিকবে কীভাবে বল?”
মিরাজ মিটিমিটি হেসে বলল,
“ বোকা ছেলে! বউ টেকাতে মেজাজ নয় মেশিন লাগে। বুঝেছ!”
সাথে চোখ টিপতেই,আবার হেসে উঠল ওরা।
নাহিদ বোকার মতোন শুধাল,
“ কীসের মেশিন?”
আরমান ওর গাল টিপে বলে,
“ ওলে বাবুতা! তুমি হরলিকস খেয়ে বড়ো হয়েছ না? তুমি এসব বুঝবে না।”
বন্ধুদের হাসি আর এই ঠাট্টা, নাহিদের সম্মানে এ এক মস্ত বড়ো আঘাত। কৌতূহল হলেও আর একটা কথাও সে কাউকে জিজ্ঞেস করল না।
তবে এর উত্তর তার চাই। দরকার পড়লে নূহার কাছে যাবে। উনি তো কবিতার মতোন সুন্দর করে কথা বলেন। জীবন নিয়ে কী দারুণ করে বলেছিল নাহিদ কে। সারাদিন ওই কথাগুলোই ওর মাথায় ঘুরেছে। এই বিষয়টা জিজ্ঞেস করলেও নিশ্চয়ই বলতে পারবেন উনি।
নূহার সাথে নাহিদের দেখা হলো পরের দিন দুপুর বেলা। ঘরের মেঝেতে চিপসের টুকরো,চানাচুর, কোকের বোতল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। নাহিদ প্রথমে ঝাড়ু দিয়েছে। ইয়া বড়ো ভ্যাকুয়াম ক্লিনার দিয়ে পরিষ্কার করছে এখন।
এই মিরাজরা প্রতি বৃহস্পতিবার হানা দেয় বাসায়। রাতভর আড্ডা,তাস খেলার পর ঘুমায় ভোর করে। উঠবেও সেই বিকেলে। বাকী ছয়দিনের মধ্যে আসা নিয়ে তীব্রর কড়া নিষেধাজ্ঞা। আজকেও সবাই নাক ডেকে ঘুমোচ্ছে। তীব্র নিজেও এতো তাড়াতাড়ি উঠবে কী না সন্দেহ! তাই সব খাটুনি ওর ঘাড়ে।
লম্বা ডাস্টার দিয়ে ফ্লোর মুছতে মুছতে নাহিদ বসার ঘরের ওইপাড় অবধি এলো। দরজাটা তখন ঠা করে খোলা। আচমকা নূহাকে যেতে দেখেই ডাক ছুড়ল সে। তবে আজ আর সম্বোধনে মিস নয়,সোজা নাম ধরে
“ নূহা! শুনছেন?”
মেয়েটা ওখানেই দাঁড়িয়ে যায়। নাহিদের কণ্ঠ হতে ছুটে আসা ডাক হৃদয় ছুঁয়ে দেয় সাথে। মুচকি হেসে এগিয়ে এলো ওখানে,
“ জি,কিছু বলবেন!”
“ ভেতরে আসুন।”
নূহা জুতো খুলে ঢুকল। নাহিদের অবস্থা দেখে ভ্রু তুলল কপালে,
“ আপনি ঘরও মোছেন?”
“ হ্যাঁ মানে ওই আর কী!”
নাহিদ লজ্জা পেয়েছে।
সেই পুরুষালি কুণ্ঠা দেখে হাসল নূহা। ছেলেটা একটু বেশিই সরল না? পুষ্পিতার চাইতেও অনেক বেশি গাধা। আর এই গাধাটা কী না ওর ভাগ্যেই জুটবে, ইস!
“ ডাকলেন কেন, বললেন না!”
নাহিদ মনে করে বলল,
“ ও হ্যাঁ হ্যাঁ, দাঁড়ান।”
তারপর হাতের ওসব ফেলে সে আরেকটু কাছে এসে দাঁড়াল। মুখোমুখি হয়ে বলল,
“ আপনি কি আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন?”
“ আপনার প্রশ্নের উত্তর দেব আমি? যে কী না আমার এসাইনমেন্ট করে দিয়েছে? মজা করছেন না তো?”
“ আরে এটাতো বইপত্রের কোনও ব্যাপার নয়। সম্পূর্ণ আলাদা একটা বিষয়। আমি আসলে বুঝতে পারছি না দেখেই আপনাকে বলা।”
নূহা বুকে হাত গুঁজল,
“ আচ্ছা,বলুন। জেনে থাকলে নিশ্চয়ই বলব।”
নাহিদ বলল,
“ হয়েছে কী বিট্টুর মে..”
ও শশব্যস্ত থামিয়ে দেয়।
“ আরে আস্তে আস্তে। এই নাম পুষ্পিতা শুনলে কী হবে ভেবেছেন?”
জ্বিভ কাটল নাহিদ,
“ সরি! সরি!”
তারপর ফিসফিস করল,
“ আসলে ওর কথা তো আপনি জানেন। খুব মেজাজি! তো কাল রাতে আমি এটা মিরাজকে বলার পর, ও বলল বউ মেজাজ দিয়ে রাখে না,রাখে মেশিন দিয়ে। আপনি কি জানেন ও কোন মেশিনের কথা বোঝাল?”
নূহা হতভম্ব,হতচেতন। ভ্যাবাচ্যাকার তোপে ঠোঁট দুটো ফাঁকা! পরপরই জ্বলে উঠল স্ফূলিঙ্গের মতো,
“ এ্যাই আপনি এসব অশ্লীল কথা বললেন কেন? আপনার এতো সাহস হলো কী করে হ্যাঁ?”
নাহিদ ভড়কে গেল খুব,
“ অশ্লীলের কী হলো? আমি তো শুধু মেশিনের কথা…”
নূহা আইঢাই করে কথা কেড়ে নেয়,
“ চুপ করুন। আর একটাও কথা নয়। বের হন৷ এক্ষুনি বের হন এখান থেকে।”
“ কিন্তু এটাতো আমর বাসা।”
“ উফ! তাইত।”
নূহা নিজেই হাঁটা ধরল। আবার ফিরে চেয়ে গজগজ করল রাগে,
“ আপনি খুব অসভ্য একটা লোক! আর আমি কী না আপনাকে সরল ভাবি? ছিঃ আপনারা সবাই অসভ্য! সবাই।”
হড়বড় করতে করতে নূহা বেরিয়ে গেল। নাহিদ অবোধের মতোন চেয়ে রইল সেদিকে। কী এমন বলেছে সে! এতো রেগে গেল কেন মেয়েটা?
পুষ্পিতাকে হাজার বুঝিয়েও ফ্ল্যাটে শিফট করা যাচ্ছে না। এই বোকা মেয়েও আজকে নিজের জেদে অটল। ওই এক কথা তার,তীব্রকে রেখে সে যাবে না মানে,যাবেই না। শেষে নূহা হার মানল। তার এতো জোরাজোরিই কারণও তীব্রই। মানুষটা এতো কষ্ট করে,কাঠখড় পুড়িয়ে ওকে একটা বাসা উপহার দিচ্ছে। আর মেয়ে না কি থাকবেই না সেখানে। না গেলে যে সব আনন্দ মাটি! একটা ফ্ল্যাট পাওয়াতে যে কিছু সীমাবদ্ধ নয় সেসব এখন কীভাবে বলবে নূহা?
উপায় বাতলাতে মেয়েটা আবার তীব্রর কাছে এলো। এ কদিন তাদের মিটিংয়ের সঠিক জায়গায় হলো ছাদ। আজকেও সেখানেই দুজনে। কিন্তু কারো মাথায় কিছু আসছে না। কীভাবে পুষ্পিতাকে একবারের জন্যে হলেও ফ্ল্যাটে নেয়া যাবে! নূহা জড়বস্তুর মতো ছাদের পাঁচিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে। মাঝেমধ্যে নখ কাটছে দাঁতে। তীব্র তখন পায়চারি করছে সামনে। একটা সময় থামল সে। বলল,
“ এক কাজ করো,ওকে গিয়ে বলো আধঘন্টার জন্য হলেও ফ্ল্যাটটা দেখে আসতে। আর বলবে,আমিও যাব। যদি রাজি হয় এতে!”
নূহার আইডিয়া পছন্দ হলো। তীব্র সাথে যাবে শুনলে পুষ্পিতা মহাকাশেও যেতে প্রস্তুত।
সানন্দে মাথা নেড়ে চটপট ছুটে গেল সে।
বের হলো পুষ্পিতাকে বগলদাবা করে। মেয়েটা সেই তখনও নিষ্পৃহ! যেখানে ও থাকবে না,সেখানে গিয়ে করবেটা কী? কিন্তু তীব্র যাচ্ছে যখন,তখন আর গাঁইগুঁই করল না।
এ বাড়ি থেকে ওই বাড়ির পথ রিকশার। ভাড়াও কম। আয়েশা খাতুন আজ বাড়িতে। তবে সাথে গেলেন না তিনি। সত্যি বলতে পুষ্পিতার ফ্ল্যাট জেতা নিয়ে আনন্দ হলেও,ওখানে থাকা না থাকা নিয়ে তার বিশেষ মাথা ব্যথা নেই। মেয়েটা যেখানে ইচ্ছে থাকল,তাতে ক্ষতি কী? এখানে থাকাতে তার তো অসুবিধে কিছু হচ্ছে না। বরং নূহার সময় কাটে। এতো বড়ো মেয়েকে একটা শূন্য বাসায় একা রাখতে হয় না। গল্প করার জন্যে মনের মতো একটা সঙ্গী পেয়েছে সে। আর যদি ওখানে থাকতে চায়,তাও থাকুক! মোট কথা পুরো ব্যাপারখানাই তিনি পুষ্পিতার মর্জির ওপর ছেড়ে রেখেছেন।
পনের মিনিটের মাথায় পুষ্পিতার সেই নতুন গন্তব্য এলো। সদরের সবচেয়ে উঁচু ভবন এটা। পুষ্পিতা হাঁ করে ফেলল,এখানকার একটা ফ্ল্যাট ও দশ টাকায় জিতেছে ভেবে।
ও রিকশা থেকে নামতে নামতে একবার চারপাশটা দেখল । অধৈর্য চিত্তে শুধাল
“ স্যার?”
“ আরে আসবে আসবে,তুই চল।”
ফ্ল্যাটের ভেতরে ঢুকে পুষ্পিতার ভ্রু কপালে ওঠার যোগাড়। এতো সুন্দর! খোলামেলা! আলো বাতাসে ভরতি। কত বড়ো বড়ো বারান্দা! মেঝের সাদা টাইলস গুলোও হীরের মতোন চকচকে।
আচ্ছা,মানুষের টাকা-পয়সার কি কোনও মায়া নেই? একটা লটারিতে কেউ এমন বাড়ি দেয়?
নূহা পুষ্পিতার পেছনে দাঁড়িয়ে। পুষ্পিতা চারপাশ দেখতে দেখতে আরো ভেতরে ঢুকল। প্রতিটা ঘরে মানানসই আসববাব পাতানো দেখে অবাক না হয়ে পারল না। বিভ্রান্ত কণ্ঠে বলল,
“ এসব ফার্নিচার কার?”
নূহার উত্তর তৈরি,
“ কেন তোর? মানে যারা ফ্ল্যাট দিয়েছে তাদের। এগুলোও তো ফ্রি!”
পুষ্পিতার খটকা লাগল এবার। এমনিতেই একটা ফ্ল্যাট,তারওপর আবার আসবাব ফ্রিতে! সন্দিহান চোখমুখ দেখে অপ্রস্তুত ভাব জোর করে ঠেসে রাখল নূহা। হেসে বলল,
“ আরে এতো কী ভাবছিস,এখনও তো ভেতরটাই দেখলি না। আয় আয়!”
পুষ্পিতাকে আর একটাও প্রশ্ন করার সুযোগ দিলো না সে। টেনেটুনে সাথে নিয়ে চলল। শোবার ঘরে পা রেখেই চমকে উঠল পুষ্পিতা। বিছানার পাশের দেয়ালে সালমা আর রাহাতের সাথে তার নিজের ছবি লাগানো। ওইতো এক পাশে সে, আরেকপাশে ছোট্ট রাহাত। কী সুন্দর মমতায় পাখির মতো দুজনকে আগলে রেখেছে মনি। ফ্রেমে নয়, ছবিটা যেন রঙ-তুলিতে আঁকা। পুষ্পিতা স্তব্ধের মতো দাঁড়িয়ে রইল কিছুক্ষণ। তারপর দোর থেকে দৌড়ে এলো কাছে। ছবিটা এতো বড়ো! আধিপত্য পুরো দেয়াল জুড়ে।
পাগলের মতো সেই ছবিতে হাত বোলায় পুষ্পিতা। কতদিন পর দেখছে ওদের! সে একবার রাহাতের চোখ – নাক -ঠোঁট সব ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখে। মনিকে ধরে আরেকবার। আবেগে কোটরে জল ছুটে এলো।
কণ্ঠনালীতে উপচে উঠল তুফানের মতো কান্নার স্রোত। দুহাত মেলে দেয়ালের সাথে সাথে মা-ভাইয়ের ছবিটাকেও আকড়ে ধরল সে। ডাকল বোজা গলায়,
“ মনি! আমার মনি!”
নূহাও সমান বিস্মিত। তীব্র বলেছিল পুষ্পিতার জন্যে সারপ্রাইজ রেখেছে,কিন্তু সেটা যে এদের ছবি দিয়ে,ও জানতোই না। এইজন্যেই সেদিন পুষ্পিতার কোনও ফ্যামিলি ফটো আছে কী না জিজ্ঞেস করেছিল? কিন্তু ওর কাছে তো ছিল না। তাহলে কোথায় পেলেন উনি?
নূহা অত দূর আর ভাবে না। এইটুকুতেই তীব্রর প্রতি সম্মান আর শ্রদ্ধায় শতবার লুটোপুটি খেল। এমন চমৎকার সারপ্রাইজ হয়ত গোটা পৃথিবীতে হয় না।
( এখানে ধর্মকে টানার কোনও দরকার নেই। ছবির কথাগুলো গল্পের প্রয়োজনেই দেয়া। যারা হালাল-হারাম বিবেচনায় গল্প পড়েন,তাদের রোমান্টিক গল্প স্কিপ করাই শ্রেয়)
পুষ্পিতার কাছে তো রাহাত আর মনিই ওর পরিবার। ওর পৃথিবী! কিন্তু মেয়েটার মনের খবর তীব্র ভাইয়া কীভাবে বুঝলেন?
তার ধ্যান ছুটল পুষ্পিতার কাঁন্নায়। কত গুলো মাস পর একটু দেখছে সবাইকে। হোক ছবিতে। তাও ছুঁতে পারছে তো। হঠাৎ কী ভেবে সচকিত হলো মেয়েটা । কান্না ভুলে ত্রস্ত ফিরল পেছনে। প্রশ্ন ছুড়ল ভেজা স্বরে,
“ এসব কে করেছে?”
পুষ্পিতার সিক্ত পল্লবের চুইয়ে পড়া জল,মোমের মতো লালচে মুখে মায়ার পাহাড় এড়িয়ে নূহা মিথ্যে বলতে পারল না। স্বীকার করল এক কথায়,
“ তোর তীব্র স্যার!”
সে আমার সন্ধ্যাপ্রদীপ পর্ব ৩৯
হতবিহ্বল পুষ্পিতাকে কোনও কথা বলার সময় দিলো না প্রকৃতি। খোলা দোর দিয়ে তখনই ভেতরে ঢুকল তীব্র। মসমসে জুতোর শব্দে ওরা দুজনেই চাইল এদিকে।
তীব্র হাসল একটু। কিন্তু সেই হাসি পুষ্পিতা দেখেনি। খেয়ালও করেনি। মানুষটার শুভ্র,সাদা মুখখানা তার বুকের ঝড় বাড়িয়ে দিয়েছে আজ। যে ঝড়ে উলটেপালটে গেল ভালো-মন্দ,বাছ-বিচার, ঠিক ভুল!
সব কিছুকে শিকেয় তুলে হাওয়ার বেগে ছুটে এলো পুষ্পিতা।
তীব্রকে পাথর করতে, থমকে রাখতে হামলে পড়ল তার চওড়া বুকের মধ্যে।