আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ৪১
নূরজাহান আক্তার আলো
-‘রিদ চুপ কেন? কিছু বলার থাকলে বলো?
নিলুফা ইয়াসমিন উনার পুরো কথা শেষ করতেই আতিকুর রহমান উক্ত কথাটি বললেন রিদওয়ানকে। রিদওয়ান পূর্বের মতোই নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। মূলত মন দিয়েই শুনছিল সবার কথা। কুহু আর রিমি অনুষ্ঠানে কে কি রংয়ের শাড়ি/লেহেঙ্গা পরবে তা নিয়েও একচোট আলোচনা হয়ে গেছে।
ঠিক হলো কোন পার্লার থেকে তাদের সাজাতে আসবে। কোন কোম্পানির মেহেদি দিয়ে হাত রাঙাবে। মেয়েলি এসব আলোচনার মধ্য পুরুষরা এতক্ষণ চুপ’ই ছিল। তখন বাবার কথা শুনে রিদওয়ান একবার কুহুর দিকে তাকাল। মেয়েটা খুশিতে গদগদ করছে। চোখে, মুখে, উপচে
পড়ছে অবাধ খুশি। এই মুহূর্তে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে নিজের খুশি
পুরো পৃথিবীকে জানাতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে ধৈই ধৈই করে এক
একচোট নেচে নিতে। কারণ আর পাঁচটা মেয়ের মতো তারও ইচ্ছে ছিল লাল টুকটুকে শাড়ি পরে লাগে রাঙা বউ সাজবে। গা ভর্তি গয়না পরবে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বউ সেজে শখের পুরুষটাকে বর বেশে দুচোখ ভরে দেখবে। সেই খুশি উদযাপন করতে কখনো হাসবে; কখনো কাঁদবে। কিন্তু পরিস্থিতি তাকে বউ সাজার সুযোগই দেয় নি। দেখতে পারে নি পাগড়ি পরা বরের বেশে থাকা রিদওয়ানকে কেমন লাগবে দেখতে! খুব সাদামাটাভাবেই তাদের বিয়েটা সম্পূর্ণ হয়েছিল। শখের পুরুষকে পেলেও বউ সাজতে না পারার আফসোসটা তার রয়ে গেছে। অথচ আজ সেই স্বপ্নটা পূরণ হতে যাচ্ছে।
ওদিকে আতিকুর রহমান উনার জবাবের আশায় ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। তখন কুহু পাশ থেকে তার কোমরে একটা চিমটি কেটে বোঝাল কিছু একটা বলতে। চিমটিটা একটু জোরেই হয়ে গেছে৷ জ্বলে যাচ্ছে ওই জায়গাটা। সবার সামনে রিদওয়ান কুহুর চিমটি নীরবে হজম করে মৃদু হেসে জবাব দিলো,
-আমি কি বলবো? আপনারা বড়রা যেটা ভালো মনে হয় করুন ।’
-‘তা বললে হয় নাকি? তুমি একদিকে বড় ছেলে আবার আরেকদিকে ওই বাড়ির একমাত্র জামাই। অবশ্যই তোমার মতের দাম আছে। কিসে ভালো হবে; মন্দ হবে তা বলবে না তুমি?’
-‘যেখানে দুই পরিবারের মানুষগুলোকে নিয়ে আমার পরিবার। যেখানে খুব ভালো করেই জানি তারা আমার ভালো বৈ মন্দ চাইবে না। সেখানে তাদের সিদ্ধান্ত বেস্ট অপশন হবে। তাই আলাদা করে কিছু বলার কারণ দেখছি না। আমার সিদ্ধান্ত অনেক সময় অনেকের মনমতোও হবে না। যেহেতু আমরা সবাই আলাদা আলাদা মানুষ।’
ছেলের এমন কড়া জবাব শুনে আতিকুল রহমান মুখ ভোঁতা করে বসে রইলেন। ছেলে যে উনার উপর রেগে আছে উনি জানেন। কারণ দুপুরে ছেলের সঙ্গে উনার একচোট ঝগড়াও হয়েছিল। ঝগড়ার কারণ রিমির জন্য উনি রুপকের চেয়েও আরো ভালো পাত্র চাচ্ছিলেন। সময় নিয়ে তা খুঁজতে চাচ্ছিলেন। রুপক যে ভালো নয়, তাও নয়। তবে নিজের মেয়ের জন্য সময় নিয়ে আরো ভালো কাউকে খোঁজা বাবা হিসেবে উনার গুরু দায়িত্ব। কিন্তু রিদওয়ানের কথা রুপক’ই রিমির জন্য বেস্ট কেউ। বন্ধুর সাপোর্ট করাতে উনার খুব রাগ হচ্ছিল। এক সম্পর্কের মধ্যে বারংবার অন্য সম্পূর্কের জোড়াতালি দেওয়াটা উনার পছন্দও হচ্ছিল না।
কারণ এতে সম্পূর্ক নষ্ট হওয়ার চান্স বেড়ে যায়। রুপক বন্ধু ছিল এরপর হলো বউয়ের বড় ভাই; সমন্ধি। বন্ধুকে আগে যেসব কথা শেয়ার করা যেতো
সমন্ধিকে কি সেসব শেয়ার করতে পারবে? পারবে না। বরং একপ্রকার অস্বস্তি কাজ করবে। আবার সমন্ধি যখন বোন জামাই হবে তখন তাদের মধ্যে আরেকধাপ দূরত্ব সৃষ্টি হবে। কিছু বলতে গেলে অথবা করতে গেলে দশবার ভাবতে হবে। মাথাতে রাখতে হবে বাড়ির জামাইকে কোনোভাবে চটানো যাবে না। এতে বোনের সংসারে অশান্তি হবে। কিন্তু এ কথাগুলো উনি ছেলেকে আর বোঝাতে পারলেন না। ছেলে একপ্রকার জেদ করেই এসব আয়োজন করেছে। নিজ উদোগ্যে সবাইকে জানিয়ে রুপক আর রিমির এনগেজমেন্টের ব্যবস্খা করেছে। এমনকি ছেলেটা এমন গোঁয়ার প্রকৃতির যে যাদের এনগেজমেন্ট তাদের কে বাদে সবাইকে জানিয়েছে।
বেচারা রিমি আর রুপক আকষ্মিক সারপ্রাইজে শক্ড। ছেলেটা আগেও এমন মর্জি মতো চলতো এখনো তাই। তার যেটা ভালো মনে হবে সেটাই করবে। এদিকে বাবা ছেলের নীরব অভিমান খুব সহজেই ধরে ফেললেন নিলুফা ইয়াসমিন। ইসমত আরা এবং কুহুর বাবাও বুঝলেন কিছু একটা হয়েছে। নয়তো রিদওয়ান তো এভাবে কথা বলার ছেলে না। এইদিকে রুপকে ওমন খুঁতখুঁত করতে লাগল যে তার আর রিমির সম্পর্কের কথা জানার পথে কোনো ঝামেলা হয়েছে নাকি তা নিয়ে। সবাই ভিতর ভিতর উদ্বিগ্ন। আর এই ব্যাপারটা খেয়াল করে নিলুফা ইয়াসমিন ছেলের দিকে ঘুরে বেশ গুছিয়ে বললেন,
-‘আমরা চাচ্ছি রুপক আর রিমির সঙ্গে তোমাদের অনুষ্ঠানটাও সারতে। সুইজারল্যান্ডে থাকাকালীন বিয়ের সময় কুহুর বাবা মা থাকতে পারেন নি। একমাত্র মেয়ের বিয়ে, অথচ বাবা-মা স্বশরীরে উপস্থিত থাকতে না পারাটা খুবই কষ্টদায়ক। এবার অনুষ্ঠান করলে উনারাও খুব খুশি হবেন।
জামাই হিসেবে তোমার দায়িত্ব উনাদের মন বুঝে চলা, তাই না? আমরা তাহলে দুই কাপলের বিয়ের আয়োজন করি। এতে আনন্দটাও দ্বিগুন হবে।’
মায়ের কথা শুনে রিদওয়ান কোনো জবাব দিলো না। বরং রিমি আর কুহুকে বলল ফ্রেশ হয়ে নিতে৷ অনেক রাত হয়েছে। তারা দু’জনেই বুঝল কিছু গুরুত্বপূর্ণ আলাপ করবে বড়রা। এসব আলোচনায় তাদের রাখবে না। এমন ইঙ্গিত বুঝে অগত্যা উঠে চলে গেল তারা। ওরা যেতেই এবার রিদওয়ান সরাসরি কথা তুলল,
-‘ আমি আমার দুই পরিবারকেই বলছি কথাগুলো পজেটিভভাবে ভেবে এরপর সিদ্ধান্ত নিবেন আপনারা। কথা হচ্ছে, আনুষ্ঠানিকভাবে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে চাচ্ছেন খুবই ভালো কথা। আল্লাহ দিলে আমাদের দুই পরিবারই যথেষ্ট স্বচ্ছল। দুই বিয়ের অনুষ্ঠান একসাথে করার সামর্থ্যও আমার দুই পরিবারেরই আছে। কিন্তু এসব করার আগে সবাইকে মনে রাখতে হবে কুহুর কথাটা। সে কিন্তু পুরোপুরি সুস্থ নয়।বলতে বাধ্য হচ্ছি, অনুষ্ঠান করুন, যার যা ইচ্ছে করুন, আমার বাঁধা নেই। কিন্তু কুহু আমার নজরের আড়াল যেন না হয়। এমন সিদ্ধান্তও যেন না নেওয়া হয় বিয়ের অনুষ্ঠানের আগ মুহূর্তে আমরা আলাদা থাকব। দু’জন দুই বাসায় থাকব। এমনকি বিয়ের আগে কথা বলা বা মুখ দেখাদেখিও বারণ।
এসবে আমি পক্ষপাতী নই। তারপরেও যদি নিয়মের দোহায় দিয়ে এসব করতেই হয়, তাহলে আমাদেন ব্যাপারটা স্কিপ করাই ভালো। রুপক আর রিমি বিয়েই জাঁকজমকভাবে সম্পূর্ণ করা হোক। আমাদের বিয়ে যখন হয়েই গেছে অনুষ্ঠান যে করতেই হবে এর কোনো মানে নেই। আমি আমার সিদ্ধান্ত জানালাম, এবার আপনারা যে যেটা ভালো মনে করেন করতে পারেন।
আমার কথাটা দৃষ্টিকটু লাগলেও আমার কিছু করার নেই। এর কারণও কুহু। এই অবধি এসে আমার সমস্ত কষ্টকে তো বৃর্থা হতে দিতে পারি না।
আশা করি সবাই বুঝেছেন আমি আসলে কি বলতে চাচ্ছি।’
রিদওয়ানের কথা শুনে এবার সবার কপালে দুঃচিন্তার ভাঁজ পড়ল।তবে
তার কথাটা যুক্তিযুক্ত। অনুষ্ঠান অনুষ্ঠান করে হেদিয়ে মরলে হবে না। যে বিপদ থেকে মেয়েটা সেরে উঠছে সেদিকেও নজর দিতে হবে। আরেকটা কথা না বললেই না রিদওয়ানের মতো কেউই কুহুর দিকে নজর রাখতে
পারবে না। একে তো বিয়ের বাড়ি। তার উপরে হাজার রকমের ব্যস্ততা।
তাছাড়া রিদওয়ান যে শুধু টাইম টু টাইম কুহুকে মেডিসিনই খাওয়াই তা নয়। কুহুকে নিয়মিত ব্যায়ামও করায়। যে ব্যয়াম ব্রেণ সচল রাখে। তার মুড কিসে ভালো হয় সেদিকে খুব খেয়াল রাখে রিদওয়ান। এমনকি সে কুহুকে একা থাকতেও দেয় না সে। একা থাকলে’ই কুহু ভাবনার জগতে ডুবে যায়। ভুল ভাবনায় নিজেকে বন্দি করে ফেলে। তখন তার পাগলামি বেড়ে যায়। আর রিদওয়ানকে ছাড়া কুহু কারো কথায় শুনবে না। দেখা যাবে অনুষ্ঠানের ঝামেলা দুই চার বেলার মেডিসিনও মিস করবে। যেটা হতে দেওয়া যাবে না, কোনো ভাবেই না। তাহলে এখন উপায়? অনুষ্ঠান করলে সবার কাজের ব্যস্ততা বাড়বে। গেস্ট আসবে। তাদের আপ্যায়ন করতে হবে। কাজের শেষ থাকবে না এরমধ্যে আলাদাভাবে কুহুকে কে সময় দিবে? মনে মনে এমন নানান কথা চিন্তা করল সবাই। কিন্তু কেউই কোনো সমাধান খুঁজে পেলো না। তখন ইসমত আরা বেগম বললেন,
-‘তাহলে রুপকের বিয়েতে কুহু আমার বাসায় যাবে না?ভাইয়ের বিয়েতে বোন উপস্থিত থাকবে না তা কি করে হয়?’
-‘তাই তো। কুহুকে ছাড়া কিভাবে কি হবে?’
রুপক মাটির দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবছে। কুহু না থাকলে সে অনুষ্ঠানই করবে না। একটাই বোন তার। রিদওয়ান যত যাই বলুন বোনকে ছাড়া সে অনুষ্ঠান করার সিদ্ধান্ত নিবেই না। প্রয়োজনে সব বাতিল করা হবে। তারাও সাদামাটাভাবে বিয়ে করবে। অনুষ্ঠান না করলে বিয়েই হবে না এমনটাও না। নিজের মনের কথা রুপক সত্যি সত্যি চট করে বলে বসল,
-‘তাহলে অনুষ্ঠানের দরকার নেই। এখনই কাজি ডাক পারিবারিক ভাবে বিয়ে করে বউ নিয়ে চলে যাই। যেই অনুষ্ঠানে আমার বোন থাকবে না সেই অনুষ্ঠানের মানে হয় না।’
-‘ কিন্তু আমার বোনকে তো আমি এভাবে যেতে দিবো না।’
-‘আমি দিতে পারলে তুই দিতে পারবি না কেন? কুহুও তো আমার এক মাত্র বোন। রিমি তোর কাছে যতটা আদরে কুহুও আমার কাছে ততটাই আদরের। রিমির থেকেও সাদামাটা আয়োজনে কুুহুর তোর হাতে তুলে দিয়েছি আমি। তখন আমার খারাপ লাগে নি? আমি যখন তা পেরেছি তুইও পারবি।’
-‘উল্টো প্যাঁচ মারিস না। ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা কর।’
-‘কোনো বুঝাবুঝি হবে না। এখন হয় অনুষ্ঠানে রাজি হবি আর নয়তো কাজি ডেকে ঘরোয়াভাবে আমাদের বিয়েটাও দিবি। যদি একটাতেও রাজি না হোস, তাহলে আমার বোন আমি নিয়ে যাব।’
-‘তোর বোন আমার বউ। আমার বউয়ের ব্যাপারে আমি কোনো ছাড় দেবো না। তাই বলছি, কথা বাড়াস না।’
-‘তোর বউ আমার বোন। আমার বোন আমার বিয়েতে যদি না থাকে তাহলে আমি বিয়ের অনুষ্ঠানই করব না। তাই বলছি, কথা বাড়াস না।’
ওদের দুই বন্ধু এমন মতবিরোধ দেখে বাকিরা বিরক্ত হলেন। বোন, বউ করে এরাই পাগল হয়ে গেছে। অথচ একবারও ভাবছে না তাদের বোন, বউরাই অনুষ্ঠানে জন্য প্রহর গুনতে শুরু করেছে। কে কি করে সাজবে তা নিয়েও আলোচনা হয়ে গেছে। এখন যদি অনুষ্ঠান না হয় তাহলে ওরা দু’জনই কষ্ট পাবে। আতিকুল রহমান ধমকে এবার দু’জনকেই থামালেন।
কিন্তু তারা দু’জনই নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড় দেখে কেউ’ই আর কোনো সমাধান পেলেন না। কিছুক্ষণ এভাবে কেটে গেল। একটুপরে রিদওয়ান বলল,
-‘ এক কাজ করা যাক, একটা রিসোর্ট বুক করে ফেলি। সেখানে আমরা সবাই থাকব এবং সেখানেই যাবতীয় অনুষ্ঠানটা সম্পূর্ণ করা যাবে। এতে কারোরই আর এই বাড়ি, ওই বাড়ি যাওয়ার-আসার ঝামেলা থাকবে না। শুধু সময় মতো গেস্টদের লিস্ট দিয়ে দিলেই হবে।’
রিদওয়ানের সিদ্ধান্তটা সবারই পছন্দ হলো। বড়রাও রাজিও হলো এবং দেখে শুনে একটা রিসোর্ট বুক করার দায়িত্ব দেওয়া হলো রিদওয়ানকে।
এরপর আলোচনার সমাপ্তি ঘটিয়ে বড়রা বাসায় দিকে চলে গেল। আজ রুপকরা আজ এখানেই থাকবে। খাওয়া দাওয়ার পর্বও শেষ। তাই বড়রা যার যার বরাদ্দকৃত রুমে শুতে চলে গেলেন। তবে সবাই গেলেও দুই বন্ধু বসে আছে। দু’জনের দৃষ্টি যৌবণবতী চাঁদের দিকে। চাঁদ একটাই, অথচ তাদের ভাবনাও আলাদা। ভাবনার মানুষ আলাদা। রুপক বেশ কিছুক্ষণ নিজের ভাবনায় বুদ থেকে বলল,
-‘ কখনো ভেবেছিলি কুহুকে এতটা ভালোবেসে ফেলবি?’
-‘ভালোবাসি না আমি কাউকে।’
-‘এজন্যই বুঝি এসব যুক্তি দিয়ে চোখের আড়াল করা থেকে থামালি?’
-‘আপনি তো পন্ডিত সব বুঝে গেছেন?’
-‘বুঝলাম বলেই তো তোর সঙ্গে লেগে কৌশলে বড়দের রাজি করালাম।’
-‘আমি কাউকে ভালোবাসি না। আমি শুধু আমাকে ভালোবাসি।’
-‘ ওহ আচ্ছা আচ্ছা। তুই তোকে ভালোবাসি। তোর সঙ্গে কুহু জড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ তুই কুহুকেই ভালোবাসি। ‘
-‘খুব যুক্তিবিদ হয়ে গেছেন।’
একথা বলে রিদওয়ান হেসে ফেলল। এছাড়া সত্যি সত্যিই বড়রা এমন সিদ্ধান্ত নিতো। বিয়ের পর তারা একরাতও আলাদা থাকে নি। আলাদা থাকার কথা ভাবলেই কেন যেন দমবন্ধ হয়ে আসে। একথা তো বড়দের বলা যায় না যে, ‘বউয়ের বিরহে পাগল হয়ে যাব। প্রেমসাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি আমি। কেউ আমার বউকে আলাদা কোরো না। যদি করো তবে বউ তুলে আনতে পিছ পা হবো না আমি। বিয়ে করা বউকে নিয়ে পালাব আমি।’ ভদ্র সভ্য ছেলের মুখে এসব কথা কেউ সহ্য করতে পারবে না তাই একটু কৌশলে খাটালে হতো। এতে অনুষ্ঠানও হবে আবার বউটাও তার চোখের সামনেই থাকবে। রিদওয়ানকে হাসতে দেখে রুপকও হো হো করে হেসে ফেলল। তবে বোন জড়িয়ে আছে দেখে বেখাপ্পা কোনো কথা বলতে পারল না। এদিকে রিদওয়ানও তাই। তবে রিদওয়ান বলল,
-‘আমি কখনোই বলব না আমার বোনকে আমরা যেমন সুখে রেখেছি তুইও রাখিস। আমি বলব, তুই তোর মতো করেই আমার বোনকে দেখে শুনে রাখিস। তার ভুল গুলো শুধরে দিস। বাংলাদেশে জন্ম নিলেও সে বাংলাদেশের কালচার সম্পর্কে অনেককিছু জানে না। মানিয়ে নিবে তবে মানিয়ে নেওয়ার সময়টুকু দিস। পাশে থাকিস। সাপোর্ট দিস। সেও ছোট মানুষ। জেদ বেশি। কখনো যদি ওর সঙ্গে মতের মিল না হয় তাহলে সেই মুহূর্তে জোড়াজুড়ি করিস না। পরে ঠান্ডা মাথায় বুঝাস দেখবি বুঝবে।
বাবাকে খুব কম পেয়েছে তো তার সব আবদারের মানুষটা আমি। দেখ আমার কাছে এসে কেঁদে কেঁদে তোকে চাইল। আর আমিও প্রতিবারের মতো এবারও তার মুখের হাসি ফুটাতে তোর অনুমতি না নিয়ে আজকে এনগেজমেন্ট করিয়ে দিলাম।’
-‘এত বড় বাসাটা ফাঁকা হয়ে যাবে এজন্য কষ্ট পাচ্ছিস? সময় অসময়ে ভাইয়া, ভাইয়া করে কেউ দৌড়ে আসবে না, কারণে অকারণে জ্বালাতন করবে না, কতশত আবদার পূরণের জন্য পাগলামি করবে না, জুতোর ফিতা লুকিয়ে রাখবে না, ওয়ালেট থেকে চকচকে দশ বিশ টাকার নোট
হারিয়ে যাবে না, এজন্যই বুক ভার হয়ে আসছে তাই তো? জানিস আজ সকালে আমি বাসায় পা রাখতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল, এই বুঝি কুহু দৌড়ে আসবে। টাকা দাও! টাকা দাও! করে পিছু পিছু ঘুরবে। খালি হাতে বাসায় ফিরতে দেখে ভ্রুঁকুটি করে তাকিয়ে থাকবে। বোনগুলো সব এমনই সব। এরা মায়ার জিনিস। মায়া বাড়িয়ে নিজের বাসা শূন্য করে অন্যের বাসা আলোকিত করাই যেন এদের ধর্ম। কষ্ট পাস না, সব ঠিক হয়ে যাবে।’
আমায় রেখো প্রিয় শহরে পর্ব ৪০
রুপক হাসল। অথচ তার চোখে ছলছল করছে। রিদওয়ান চট করে উঠে দাঁড়িয়ে হাঁটা ধরল। তার পক্ষে বসে থাকা সম্ভব নয়। সে আর পিছু ফিরে তাকাল না। নয়তো বেহায়া চোখের পানি তাকে বন্ধুর কাছে ধরা খাইয়ে দেবে।