একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১১
Mousumi Akter
সারাহ’র অদ্ভুতভাবে হাসাহাসির কারণ বুঝতে পারছে না রোশান সিদ্দিকী। সে সন্দিহান চোখে সারাহ’র দিকে তাকিয়ে আছে। ভ্রু যুগল কুঁচকানো। টেবিলে টোকা দিয়ে সারাহ’র দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করল। টেবিলে টোকা পড়তেই সারাহ’র হাসি থেমে গেলো। সে রোশানের দিকে দৃষ্টি মেলল। রোশানের দৃষ্টিতে গভীর সন্দেহ। সারাহ চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে আছে রোশানের দিকে। তাও হাসি থামছেনা। পেইজের মেসেজ ডিলিট দিয়ে ঠোঁট টিপে হেসে ফোনটা রোশানের দিকে এগিয়ে দিলো। সারাহ’র চোখের দিকে তাকিয়ে রোশান শুকনো কাশি দিয়ে বলল,
‘ কার হার্ট এট্যাক করানোর ধান্ধায় এভাবে হাসছো?’
রোশানের গম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে সারাহ ঠিক বুঝে উঠতে পারলোনা রোশান কি তাকে রোমান্টিক কথা বলল? নাকি অপমান করলো। ছেলেরা তো রোমান্টিক কথা বলার সময় একটু লাজুক হেসে,মুচকি হেসে বলে আবার চোখ জুড়ে থাকে ভীষণ মুগ্ধতা। কিন্ত এই ভদ্র লোকের সরি এই অভদ্র লোকের মুখে তো করলার জুস ছাড়া অন্য কিছুই দেখতে পাচ্ছিনা। সারাহ মনে মনে বিরক্ত হচ্ছে। এই অসহ্য লোকটা তাকে একপ্রকাশ কনফিউশনে ফেলে দিলো এমন কঠিন প্রশ্ন করে। সারাহ মনে মনে বলছে, মাই নেইম ইজ সারাহ, আমাকে হেনস্থা করে পার পেয়ে যাওয়া অত সোজা কথা নয়৷ এখনি এমন একটা প্রশ্ন করলো লজ্জায় নাক মুখ একেবারে কেটে যাবে। সারাহ দুই কনুই টেবিলে রেখে দুই হাতের ওপর থুতনি রেখে সরাসরি দৃশ্য নিক্ষেপ করলো রোশানের দিকে। ঘন ঘন চোখের পলক ফেলে প্রশ্ন ছুঁড়লো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ কথাটা কি রোমান্টিক মুডে বললেন?’
রোশান ফোন স্ক্রল করছিলো। সারাহ’র প্রশ্ন কর্ণকুহরে যেতেই ফোনের স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে সারাহর চোখের দিকে তাকালো। বাম ভ্রু উঁচিয়ে পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়লো,
‘ সরি? কি বললে?’
সারাহ আমতা আমতা না করে সরাসরি বলল,
‘মাত্রই যে কথাটা বললেন ওটা কি রোমান্টিক মুডে বললেন?’
রোশান কপাল টানটান করে বলল,
‘ কথাটা তোমার রোমান্টিক মনে হলো কেন?’
কারণ প্রতিটা পুরুষ মানুষই সুন্দরী নারীর হাসির প্রেমে পড়ে। যেহেতু আমি সুন্দরী সেজন্যই কথাটা বললাম আরকি।
রোশানের ঠোঁটের কোনে বাঁকা হাসি৷ সে বাঁকা হাসি হেসে বলল,
‘ হাসি দেখে গলাই ফাঁ* সি নেওয়া ছেলে আমিনা। ‘
সারাহ একটু ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
‘ তাহলে বললেন কেন কথাটা?’
রোশান সারাহর দিকে একটু ঝুঁকলো। রোশানকে ঝুঁকতে দেখে সারাহ পেছন দিকে ঝুঁকলো। রোশান সারাহর দিকে ঝুঁকে কপাল টানটান করে বলল,
‘ আমি রোমান্টিকভাবে বলিনি বলে, খুব রেগে গিয়েছো মনে হচ্ছে?’ কথাটা সারাহর গায়ে লাগল।লজ্জায় যেন মাথা কা’টা যাচ্ছে। অপমানের হালকা ব্যাথায় চিনচিন করে উঠল বুক। এরই মাঝে ওয়েটার এসে হালকা কাশি দিলো। রোশান-সারাহ’কে এমন একটা অবস্থায় দেখে ওয়েটার লজ্জা পেলো। রোশান-সারাহ ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে ওরাও দু’জনে লজ্জা পেলো। রোশান দ্রুত সোজা হয়ে বসল। ওদের এমন অবস্থায় দেখা যাচ্ছিলো, যেন দু’জন দু’জনকে কিস করছে। ওয়েটার লাজুক হেসে জায়গা চেঞ্জ হাঁটা দিলো। ওয়েটারের বিশ্রী হাসি সারাহ’র অপমান আরোও কয়েকগুন বাড়িয়ে দিলো। সে সারাহ উঠে দাঁড়ালো। ওয়েটারের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে ঠিক তখনই রোশান সারাহ’র মুখ চেপে ধরে বসিয়ে দিলো। সারাহ মুখ থেকে রোশানের সাত সরিয়ে দিকে আগুনচোখে তাকিয়ে বলল,
‘ আমার মুখ চেপে ধরে বললেন কেন?’
রোশান দাঁতে দাঁত চেপে খুব আস্তে বলল,
‘ ওয়েটার কে ডাকছিলে কেন? সিনক্রিয়েট করবে না একদম। আশে-পাশে মানুষ আছে। কথাও লাউডলি বলবেনা।’
সারাহ আশে-পাশে তাকিয়ে দেখলো লোকজন আছে। তারা একান্তে সময় কাটাচ্ছে। মাঝে মাঝে দু’একজন তাদের দিকে তাকাচ্ছে। সারাহ ও চাপা কণ্ঠে বলল,
‘ ওই ছেলেটা ওভাবে হাসল কেন?’
‘ওর ইচ্ছা হয়েছে ওর হাসছে। তার জন্য কি তোমাকে কৈফিয়ত দিবে নাকি।’
‘ অবশ্যই কৈফিয়ত দিবে। ও মানুষের প্রাইভেট মুহুর্তে এসে হাসাহাসি করবে কেন? ‘
রোশান কপাল টানটান করল। খানিকটা টেনে উত্তর দিলো,
‘ তাই নাকি? তুমি তার মানে প্রাইভেট মুহূর্ত কাটাচ্ছিলে? ‘
এবার ও কথা বলে ধরা খেয়ে গেলো সারাহ। সে লজ্জায় আর অপমানে আবারও আহত হলো। দ্রুত কথা ঢাকতে বলল,
‘ ঠিক তা নয়। ওই ছেলেটা ভুল বুঝে হেসে গেলো। ওর ভুল ভাঙাতে হবে।’
‘ তা কি ভুল ভাঙাতে হবে?’
‘ ও আমাদের যেভাবে দেখেছে, তাতে ও ভেবেছে আমরা।’
রোশান ও জানে ছেলেটা কি ভেবেছে। তাও সে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। এবার ভ্রু উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
‘ ও ভেবেছে?’
সারাহ ঝাঁঝালো কন্ঠে বলল,
‘ কি ভেবেছে বুঝছেন না?’
রোশান মাথা নাড়িয়ে না সূচক বুঝিয়ে বলল,
‘ না’তো।’
সারাহ বিড়বিড় করে বলল,
‘ আনরোমান্টিক বুইড়া লোক একটা।’
রোশান ভ্রু উঁচিয়ে বলল,
‘ কিছু বললে?’
সারাহ এসির দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ এসিটা কি ঠিকঠাক চলছে না। প্রচন্ড গরম লাগছে আমার।’
‘মেজাজ সব সময় ৪২ ডিগ্রিতে থাকলে গরম তো লাগবেই।’
‘ এ বছরে এখনো বৃষ্টি হয়েছে যে আমার গরম লাগবেনা। সব দোষ আমার মেজাজের দিচ্ছেন।’
রোশান সারাহর লোহিতবর্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ খাবার ঠান্ডা হচ্ছে খাও।’
সারাহ খাবার মুখে নিয়ে খেতে খেতে বলল,
‘ ফোন থেকে ওদের এপ্স ই ডিলিট দিয়ে দিবো যদি বৃষ্টি না হয়। এপ্স এ দেখায় আজ বিকালে বৃষ্টি আছে। অথচ সারাবিকাল প্রখর রোদ থাকে। একটা মাস ধরে দেখে আসছি বৃষ্টি হবে।’
সারাহর ঠোঁটের কোনায় খাবার লেগে আছে। রোশান হাত দিয়ে সেটা ফেলে দিয়ে বলল,
‘ আজ বৃষ্টি হবে।’
সারাহ সে কথা পাত্তা না দিয়ে বলল,
‘ জীবনেও না।’
রোশান সারাহর অস্থির মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আজ বৃষ্টি হবে দেখে নিও।’
‘ এটা রেগুলার শুনছি, ওয়েদার এপ্স এ দেখছি। অথচ এ শহরে বৃষ্টি নেই। ‘
রোশান শান্ত কন্ঠে বলল,
‘ বললাম তো বৃষ্টি হবে আজ।’
সারাহ আঙুল দিয়ে তুড়ি বাজিয়ে বলল,
‘ বৃষ্টি যদি আজ হয়, এই পৃথিবীর সব চেয়ে কঠিন কাজ আমি করে দেখাবো প্রমিজ।’
রোশান ফোনের ওয়েদার এপ্স এর দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ তাই, কি করে দেখাবে।’
সারাহ সাত-পাঁচ কিচ্ছু না ভেবে বলল,
‘আপনার গালে চুমু দিবো। এর চেয়ে কঠিন কাজ তো আর নেই এ দুনিয়ায় নেই তাইনা?’
রোশানের চোখ দু’টো ছানাবড়া হয়ে এলো। সে বড় বড় চোখে সারাহর দিকে তাকালো। তার জীবনে এমন ভয়ংকর কথা আগে-পরে সে শোনেনি। সরাসরি কোনো মেয়ে তাকে এভাবে চুমু দিতে চায়নি। সারাহ মুখ দিয়ে কথাটা বলে মন দিয়ে খাচ্ছে। রোশান খাবার মুখে দিতে দিতে বলল,
‘ সিরিয়াসলি?’
‘ হ্যাঁ সিরিয়াসলি।’
‘ মনে থাকে যেন।’
‘ আরে যান যান, এই কাঠ ফাঁটা রোদে বৃষ্টি হবে তবেই না আপনার মত বুড়োর গালে চুমু খেতে হবে।’
রোশান বুড়ো শব্দটা শুনে ড্যাব ড্যাব চোখে সারাহর দিকে তাকিয়ে রইলো। টপিক্স চেঞ্জ করে আবার বলল,
‘ গহনার ডিজাইন কি দেখেছো?’
সারাহ খাওয়া বন্ধ করে রোশানের দিকে তাকিয়ে বলল,
‘ আমার আসলে গোল্ড পরে বিয়ে করার কোনো ইচ্ছা নেই।’
‘ তাহলে?’
‘ বললেই কি আর সে ইচ্ছে পূর্ণ হবে নাকি।’
‘ বলেই তো দেখো।’
‘ আমার ইচ্ছা ধবধবে সাদা গাউন পরে, মাথায়, গলায় সাদা বেলি ফুলের গহনা পরে পাহাড়ের চূড়ায় বসে বিয়ে করব।’
রোশান কিছুক্ষণ গম্ভীর থেকে বলল,
‘ আই উইশ তোমার এ স্বপ্ন একদিন পূর্ণ হবে।’
একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ১০
‘ আর কি পূর্ণ হবে? বিয়ে তো হয়েই গেছে শাবানা আপার মত। ইচ্ছে ছিলো বেলি ফুলের মালা দিয়ে আমার বাসর সাজানো হবে। সেই বাসরে আমি বসে থাকব। চারদিক থেকে মানুষ শুধু ছবি তুলবে।
কেন যেন রোশানের হাসি পেলো। সে স্মিথ হাসল। হেসে বলল,
‘ রাতে শাড়ি আর গহনার ডিজাইন পাঠিয়ে দিও। এই কড়া রোদে আর ঘোরাঘুরি করোনা।’
সারাহ বাসায় ফিরে রোশানের দেওয়া খামটা খুলে দেখল।খামটা খুলেই হা করে তাকিয়ে রইলো।